আগামী নির্বাচন কবে হবেÑরাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটা একটা বড় প্রশ্ন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যার উত্তর কারও জানা নেই। অনেক ‘যদি’ আর ‘কিন্তু’র বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে এই প্রশ্ন। কোনো কোনো আলোচনায় একটি ‘যৌক্তিক সময়’র পর নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। তবে ‘যৌক্তিক সময়’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সেখানে তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ আগামী ১৮ মাসের মধ্যে হতে পারে। অর্থাৎ সেই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হবে। সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সেনাপ্রধান সমর্থন দিয়ে যাবেন।
এই প্রথম একটা ধারণা পাওয়া গেল যে, দেশে নির্বাচন হতে কত সময় লাগতে পারে। তবে ধারণাটি পাওয়া গেল এমন একজনের কাছ থেকে যার কাছ থেকে এটা পাওয়ার কথা নয়। সাক্ষাৎকারে নির্বাচন ছাড়াও আরও কিছু বিষয় নিয়ে সেনাপ্রধান কথা বলেছেন। এসব কথা তিনি প্রকাশ্যে বলতে পারেন কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আমরা জানি না যে, নির্বাচন নিয়ে দেয়া সেনাপ্রধানের বক্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের চিন্তা কিনা। সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলছে। বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ে সংস্কারের উদ্যোগ ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গৃহীত সংস্কার কাজের সময় দীর্ঘায়িত হবে বলে মনে করছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেছেন তিনি।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আগামী নির্বাচন আটকে আছে সম্ভাব্য সংস্কারের মধ্যে। সংস্কারের গতি-প্রকৃতিও স্পষ্ট নয়। কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে যে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে সেগুলোর কাজ আগামী ১ অক্টোবরে শুরু হওয়ার কথা। প্রতিবেদন দেয়ার কথা ডিসেম্বরের মধ্যে। সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। একটি কমিশনের প্রধান রদবদল হয়েছে। তবে কারণ কী, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। কথা ছিল, এসব কমিশনের প্রধান বাকি সদস্যদের নির্বাচন করবেন। কিন্তু বাকি সদস্যদের নাম এখনো ঘোষণা করা হয়নি। সংস্কার কমিশন কবে কাজ শুরু করবে, প্রতিবেদন কবে দেবে আর অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা কবে শুরু হবে?
সংস্কার নিয়ে অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। যেসব সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে সেটা কারা করবে। যারা সংস্কার করবে তাদের জনতার ম্যান্ডেট আছে কিনা। সংস্কার কীভাবে করা হবে? এর বৈধতা কে, কীভাবে দেবে?
নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংস্কার হবে কিনা বা হলেও সেটা টেকসই হবে কিনা সেই প্রশ্ন রয়েছে। বর্তমানে ক্রিয়াশীল সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির মহাসচিব এর আগে বলেছেন, সংবিধানের আমূল পরিবর্তন বা নতুন সংবিধানের জন্য জনগণের নির্বাচিত সংসদই শ্রেয়। তিনি এও বলেছেন নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হয় তত ভালো।
দেশের অনেক ক্ষেত্রেই সংস্কার প্রয়োজন। মানুষ এই প্রয়োজন অনুভব করছে। কিন্তু উপরের প্রশ্নগুলোর সমাধান হওয়া জরুরি। সংস্কার যত ভালোই হোক না কেন জনতার ম্যান্ডেট ছাড়া তা টিকবে কিনা সেটা ভেবে দেখতে হবে। সংস্কারকাজে সবপক্ষকে আস্থায় নেয়া জরুরি, ঐকমত্য থাকা জরুরি।
আমরা মনে করি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার দরকার। তবে মনে রাখতে হবে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। কোনো সংস্কার করতে হয়তো খুব কম সময় লাগতে পারে আবার কোনো সংস্কার করতে দু-এক যুগ লাগতে পারে। কাজেই বুঝেশুনে কাজ করা দরকার। সংস্কার বা নির্বাচন নিয়ে কালক্ষেপণ হলে সেটা দেশের জন্য কল্যাণকর হবে না।
সংস্কার শুরু করা দরকার এবং সে কাজে ঐকমত্য থাকতে হবে। মানুষের সমর্থন থাকতে হবে, তাদের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে। নইলে যত ভালো উদ্যোগই নেয়া হোক না কেন সেটা ভেস্তে যেতে পারে। আমরা চাই না সংস্কারকাজ প্রশ্নবিদ্ধ হোক।
সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নিয়ে ওঠা প্রশ্নেরও মীমাংসা জরুরি। বিদেশি গণমাধ্যমে সেনাপ্রধান যে সময়সীমার কথা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাম-লী কি সেভাবেই চিন্তা করছেন। আমাদের মনে হয়, বিষয়টা স্পষ্ট হওয়া উচিত। আর এটা স্পষ্ট করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আগামী নির্বাচন কবে হবেÑরাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটা একটা বড় প্রশ্ন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যার উত্তর কারও জানা নেই। অনেক ‘যদি’ আর ‘কিন্তু’র বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে এই প্রশ্ন। কোনো কোনো আলোচনায় একটি ‘যৌক্তিক সময়’র পর নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। তবে ‘যৌক্তিক সময়’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সেখানে তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ আগামী ১৮ মাসের মধ্যে হতে পারে। অর্থাৎ সেই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হবে। সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সেনাপ্রধান সমর্থন দিয়ে যাবেন।
এই প্রথম একটা ধারণা পাওয়া গেল যে, দেশে নির্বাচন হতে কত সময় লাগতে পারে। তবে ধারণাটি পাওয়া গেল এমন একজনের কাছ থেকে যার কাছ থেকে এটা পাওয়ার কথা নয়। সাক্ষাৎকারে নির্বাচন ছাড়াও আরও কিছু বিষয় নিয়ে সেনাপ্রধান কথা বলেছেন। এসব কথা তিনি প্রকাশ্যে বলতে পারেন কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আমরা জানি না যে, নির্বাচন নিয়ে দেয়া সেনাপ্রধানের বক্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের চিন্তা কিনা। সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলছে। বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ে সংস্কারের উদ্যোগ ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গৃহীত সংস্কার কাজের সময় দীর্ঘায়িত হবে বলে মনে করছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেছেন তিনি।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আগামী নির্বাচন আটকে আছে সম্ভাব্য সংস্কারের মধ্যে। সংস্কারের গতি-প্রকৃতিও স্পষ্ট নয়। কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে যে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে সেগুলোর কাজ আগামী ১ অক্টোবরে শুরু হওয়ার কথা। প্রতিবেদন দেয়ার কথা ডিসেম্বরের মধ্যে। সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। একটি কমিশনের প্রধান রদবদল হয়েছে। তবে কারণ কী, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। কথা ছিল, এসব কমিশনের প্রধান বাকি সদস্যদের নির্বাচন করবেন। কিন্তু বাকি সদস্যদের নাম এখনো ঘোষণা করা হয়নি। সংস্কার কমিশন কবে কাজ শুরু করবে, প্রতিবেদন কবে দেবে আর অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা কবে শুরু হবে?
সংস্কার নিয়ে অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। যেসব সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে সেটা কারা করবে। যারা সংস্কার করবে তাদের জনতার ম্যান্ডেট আছে কিনা। সংস্কার কীভাবে করা হবে? এর বৈধতা কে, কীভাবে দেবে?
নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংস্কার হবে কিনা বা হলেও সেটা টেকসই হবে কিনা সেই প্রশ্ন রয়েছে। বর্তমানে ক্রিয়াশীল সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির মহাসচিব এর আগে বলেছেন, সংবিধানের আমূল পরিবর্তন বা নতুন সংবিধানের জন্য জনগণের নির্বাচিত সংসদই শ্রেয়। তিনি এও বলেছেন নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হয় তত ভালো।
দেশের অনেক ক্ষেত্রেই সংস্কার প্রয়োজন। মানুষ এই প্রয়োজন অনুভব করছে। কিন্তু উপরের প্রশ্নগুলোর সমাধান হওয়া জরুরি। সংস্কার যত ভালোই হোক না কেন জনতার ম্যান্ডেট ছাড়া তা টিকবে কিনা সেটা ভেবে দেখতে হবে। সংস্কারকাজে সবপক্ষকে আস্থায় নেয়া জরুরি, ঐকমত্য থাকা জরুরি।
আমরা মনে করি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার দরকার। তবে মনে রাখতে হবে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। কোনো সংস্কার করতে হয়তো খুব কম সময় লাগতে পারে আবার কোনো সংস্কার করতে দু-এক যুগ লাগতে পারে। কাজেই বুঝেশুনে কাজ করা দরকার। সংস্কার বা নির্বাচন নিয়ে কালক্ষেপণ হলে সেটা দেশের জন্য কল্যাণকর হবে না।
সংস্কার শুরু করা দরকার এবং সে কাজে ঐকমত্য থাকতে হবে। মানুষের সমর্থন থাকতে হবে, তাদের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে। নইলে যত ভালো উদ্যোগই নেয়া হোক না কেন সেটা ভেস্তে যেতে পারে। আমরা চাই না সংস্কারকাজ প্রশ্নবিদ্ধ হোক।
সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নিয়ে ওঠা প্রশ্নেরও মীমাংসা জরুরি। বিদেশি গণমাধ্যমে সেনাপ্রধান যে সময়সীমার কথা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাম-লী কি সেভাবেই চিন্তা করছেন। আমাদের মনে হয়, বিষয়টা স্পষ্ট হওয়া উচিত। আর এটা স্পষ্ট করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে।