বেকারত্ব দেশের বড় একটি সমস্যা। দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে চাকরি খুঁজছেন। কিন্তু চাকরি মিলছে না। চাকরি না পাওয়া এসব মানুষ জীবনের হিসাব মেলাতে পারছেন না। তাদের মনে জন্ম নিচ্ছে অনেক প্রশ্ন, দেখা দিচ্ছে হতাশা, যা ক্ষোভে পরিণত হচ্ছে। অনেকে মনে করেন, সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেপথ্যে অন্যতম একটি কারণ ছিল বেকার জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও চাকরিপ্রত্যাশীদের নানা আন্দোলন করতে দেখা যাচ্ছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন সার্টিফিকেটধারী মোট বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৮২ হাজার। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে কর্মহীনদের সংখ্যা প্রায় আট লাখ। অথচ ২০১৭ সালে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ছিল চার লাখের কিছু বেশি।
দেশের বেকারত্ব সমস্যা কেন মিটছে না, এতসংখ্যক শিক্ষিত বেকার কেন তৈরি হচ্ছে সেটা একটা প্রশ্ন। গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেছেন, ‘দেশের বেকারত্বের হার দেখে বোঝা যায় উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একদিকে যেমন মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে পেটেন্ট বা কপিরাইট তৈরির মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারছে না, আবার বিদ্যমান বা ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে যুগের প্রয়োজনে যে ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতার চাহিদা তৈরি হচ্ছে, তা বর্তমানে চালু গতানুগতিক বিষয় ও কোর্সগুলো ঠিকমতো পূরণ করতে পারছে না।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অর্জিত শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজ দেশে সৃষ্টি হচ্ছে না। আবার এর বিপরীতটাও সত্য। পরিবর্তিত বিশ্বে যে ধরনের কাজ সৃষ্টি হচ্ছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না অনেকেই। শিক্ষিত তরুণরা যেমন পছন্দমতো চাকরি পাচ্ছেন না, তেমন অনেক নিয়োগকর্তা যোগ্য লোক পাচ্ছেন না।
কেবল সরকারি চাকরি দিয়ে বেকারত্বের সমস্যা দূর করা সম্ভব নয়। সরকারি এক হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে গড়ে ৭১ হাজারের বেশি সরকারি চাকরি হয়েছে। অথচ প্রতি বছর শ্রমবাজারে ২০-২২ লাখ তরুণ গোষ্ঠী নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। এসব তরুণের কর্মসংস্থানের বড় ভরসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কোভিডের পর থেকে প্রত্যাশামতো বিনিয়োগ না হওয়ায় সেখানেও কর্মসংস্থান বাড়ছে না। বিদেশে যারা কাজ করতে যাচ্ছেন তাদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বেকারত্ব পুরোপুরি নিরসন করা হয়তো সম্ভব হবে না। অনেক উন্নত দেশেও বেকার জনগোষ্ঠী রয়েছে। তবে বেকারত্বের হার যৌক্তিক সীমার মধ্যে রাখার চেষ্টা থাকা দরকার। এজন্য কর্মসংস্থান বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বিনিয়োগ বাড়ানোর পথ খুঁজতে হবে। পাশাপাশি যুযোগপোযোগী শিক্ষার ব্যবস্থাও থাকা জরুরি। কর্মক্ষেত্র তৈরি করা হলো কিন্তু যোগ্য লোক তৈরি হলো না বা শিক্ষিত মানুষ গড়ে তোলা হলো কিন্তু কাজের সুযোগ সৃষ্টি হলো নাÑ এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা চাই।
শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪
বেকারত্ব দেশের বড় একটি সমস্যা। দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে চাকরি খুঁজছেন। কিন্তু চাকরি মিলছে না। চাকরি না পাওয়া এসব মানুষ জীবনের হিসাব মেলাতে পারছেন না। তাদের মনে জন্ম নিচ্ছে অনেক প্রশ্ন, দেখা দিচ্ছে হতাশা, যা ক্ষোভে পরিণত হচ্ছে। অনেকে মনে করেন, সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেপথ্যে অন্যতম একটি কারণ ছিল বেকার জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও চাকরিপ্রত্যাশীদের নানা আন্দোলন করতে দেখা যাচ্ছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন সার্টিফিকেটধারী মোট বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৮২ হাজার। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে কর্মহীনদের সংখ্যা প্রায় আট লাখ। অথচ ২০১৭ সালে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ছিল চার লাখের কিছু বেশি।
দেশের বেকারত্ব সমস্যা কেন মিটছে না, এতসংখ্যক শিক্ষিত বেকার কেন তৈরি হচ্ছে সেটা একটা প্রশ্ন। গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেছেন, ‘দেশের বেকারত্বের হার দেখে বোঝা যায় উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একদিকে যেমন মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে পেটেন্ট বা কপিরাইট তৈরির মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারছে না, আবার বিদ্যমান বা ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে যুগের প্রয়োজনে যে ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতার চাহিদা তৈরি হচ্ছে, তা বর্তমানে চালু গতানুগতিক বিষয় ও কোর্সগুলো ঠিকমতো পূরণ করতে পারছে না।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অর্জিত শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজ দেশে সৃষ্টি হচ্ছে না। আবার এর বিপরীতটাও সত্য। পরিবর্তিত বিশ্বে যে ধরনের কাজ সৃষ্টি হচ্ছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না অনেকেই। শিক্ষিত তরুণরা যেমন পছন্দমতো চাকরি পাচ্ছেন না, তেমন অনেক নিয়োগকর্তা যোগ্য লোক পাচ্ছেন না।
কেবল সরকারি চাকরি দিয়ে বেকারত্বের সমস্যা দূর করা সম্ভব নয়। সরকারি এক হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে গড়ে ৭১ হাজারের বেশি সরকারি চাকরি হয়েছে। অথচ প্রতি বছর শ্রমবাজারে ২০-২২ লাখ তরুণ গোষ্ঠী নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। এসব তরুণের কর্মসংস্থানের বড় ভরসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কোভিডের পর থেকে প্রত্যাশামতো বিনিয়োগ না হওয়ায় সেখানেও কর্মসংস্থান বাড়ছে না। বিদেশে যারা কাজ করতে যাচ্ছেন তাদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বেকারত্ব পুরোপুরি নিরসন করা হয়তো সম্ভব হবে না। অনেক উন্নত দেশেও বেকার জনগোষ্ঠী রয়েছে। তবে বেকারত্বের হার যৌক্তিক সীমার মধ্যে রাখার চেষ্টা থাকা দরকার। এজন্য কর্মসংস্থান বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বিনিয়োগ বাড়ানোর পথ খুঁজতে হবে। পাশাপাশি যুযোগপোযোগী শিক্ষার ব্যবস্থাও থাকা জরুরি। কর্মক্ষেত্র তৈরি করা হলো কিন্তু যোগ্য লোক তৈরি হলো না বা শিক্ষিত মানুষ গড়ে তোলা হলো কিন্তু কাজের সুযোগ সৃষ্টি হলো নাÑ এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা চাই।