অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে ক্রিয়াশীল প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চেয়েছে। দলটি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি তুলেছে। তারা অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করার ওপর জোর দিয়েছে। সংলাপে অংশ নেয়া আরও কয়েকটি দল একই কথা বলেছে। তবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সক্রিয় বিরোধিতা করা জামায়াতে ইসলামী ভিন্ন কথা বলেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলছেন তাদের মূল লক্ষ্য নির্বাচন। তবে নির্বাচন কবে হবে সেটা অন্তর্বর্তী সরকার স্পষ্ট করেছে না । সরকার নির্বাচনের আগে কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার করতে চাচ্ছে। এ লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠিত হয়েছে। কিন্তু এখনো তাদের কাজ দৃশ্যমান হয়নি। বলা হচ্ছে, এসব কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট দেবে।
সরকারকে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে তার অবস্থান পরিষ্কার করত হবে। তাদের বলতে হবে, তারা কী করতে চায়, কতদূর যেতে চায়। তাদের কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ আছে কিনা সেটাও পরিষ্কার করতে হবে।
কোনো কিছু অস্পষ্ট রেখে কোনো কাজ করা হলে তার ফল কখনো ভালো হয় না। সংস্কার ও নির্বাচনের সময়সীমা বলতে হবে, এর রোডম্যাপ থাকতে হবে। আর এ কাজে দেশে একটি ঐকমত্য তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে যে, সংস্কার করার কতখানি এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের রয়েছে, এই সরকারের কি কোনো ম্যান্ডেট আছে।
দেশে সংস্কার জরুরি। সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত সরকার সব সংস্কারের দায়িত্ব পেয়েছে কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংস্কার করার দায়িত্ব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের। গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত নির্বাচন। নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র সম্ভব নয়। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে মানুষকে তাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে দিতে হবে। গণতন্ত্রের পথে ফেরায় বিলম্ব ঘটলে সেটা আদতে কারও জন্য ভালো হয় না। অতীতে দেশবাসীর এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা হয়েছে।
এক-এগারোর পর সংস্কারের কথা বলে দেশে আরও জটিল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল। তখন দুর্নীতি দূর করার কথা বলা হয়েছে জোরেশোরে। বাস্তবে এর ফল উল্টো হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এটা মাথায় রাখতে হবে।
আমরা বলতে চাই, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যার যতটুকু এখতিয়ার সে ততটুকুই করবে। অভিজ্ঞতা বলছে দেশে গণতন্ত্রের সমস্যার মূলে রয়েছে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের উৎকট শাসন’। এজন্য অনেকে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে দায়ী করেন। বিদ্যমান ব্যবস্থায় মোট প্রদত্ত ভোটের অর্ধেকের কম ভোট পেয়েও একটি দলের পক্ষে নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যে কারণে একটি দলের সামনে সব কিছু কুক্ষিগত করার, কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করার সুযোগ হয়। দেশের এটার শুরু ২০০১ সালের নির্বাচন থেকে। ২০০৮ সালে এরই পুনরাবৃত্তি হয়েছে।
অনেকে মনে করেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার করলে কর্তৃত্ববাদী শাসনের পথের প্রথম দুয়ার বন্ধ হবে। সেখানে দৃষ্টি দেয়া এবং ঐকমত্য তৈরি করাই প্রধান কাজ হাওয়া উচিত। দেশে যত দ্রুত গণতন্ত্র ফিরবে, শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কাজ তত সহজ হবে। দেশে এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। পোশাক কারখানায় শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। মসজিদ, মন্দির, মাজার প্রভৃতিতে হামলা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই সরকারকে নিশ্চুপ বসে থাকতে দেখা গেছে। এভাবে রাষ্ট্র চলতে পারে না।
সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে ক্রিয়াশীল প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চেয়েছে। দলটি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি তুলেছে। তারা অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করার ওপর জোর দিয়েছে। সংলাপে অংশ নেয়া আরও কয়েকটি দল একই কথা বলেছে। তবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সক্রিয় বিরোধিতা করা জামায়াতে ইসলামী ভিন্ন কথা বলেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলছেন তাদের মূল লক্ষ্য নির্বাচন। তবে নির্বাচন কবে হবে সেটা অন্তর্বর্তী সরকার স্পষ্ট করেছে না । সরকার নির্বাচনের আগে কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার করতে চাচ্ছে। এ লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠিত হয়েছে। কিন্তু এখনো তাদের কাজ দৃশ্যমান হয়নি। বলা হচ্ছে, এসব কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট দেবে।
সরকারকে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে তার অবস্থান পরিষ্কার করত হবে। তাদের বলতে হবে, তারা কী করতে চায়, কতদূর যেতে চায়। তাদের কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ আছে কিনা সেটাও পরিষ্কার করতে হবে।
কোনো কিছু অস্পষ্ট রেখে কোনো কাজ করা হলে তার ফল কখনো ভালো হয় না। সংস্কার ও নির্বাচনের সময়সীমা বলতে হবে, এর রোডম্যাপ থাকতে হবে। আর এ কাজে দেশে একটি ঐকমত্য তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে যে, সংস্কার করার কতখানি এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের রয়েছে, এই সরকারের কি কোনো ম্যান্ডেট আছে।
দেশে সংস্কার জরুরি। সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত সরকার সব সংস্কারের দায়িত্ব পেয়েছে কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংস্কার করার দায়িত্ব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের। গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত নির্বাচন। নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র সম্ভব নয়। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে মানুষকে তাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে দিতে হবে। গণতন্ত্রের পথে ফেরায় বিলম্ব ঘটলে সেটা আদতে কারও জন্য ভালো হয় না। অতীতে দেশবাসীর এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা হয়েছে।
এক-এগারোর পর সংস্কারের কথা বলে দেশে আরও জটিল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল। তখন দুর্নীতি দূর করার কথা বলা হয়েছে জোরেশোরে। বাস্তবে এর ফল উল্টো হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এটা মাথায় রাখতে হবে।
আমরা বলতে চাই, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যার যতটুকু এখতিয়ার সে ততটুকুই করবে। অভিজ্ঞতা বলছে দেশে গণতন্ত্রের সমস্যার মূলে রয়েছে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের উৎকট শাসন’। এজন্য অনেকে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে দায়ী করেন। বিদ্যমান ব্যবস্থায় মোট প্রদত্ত ভোটের অর্ধেকের কম ভোট পেয়েও একটি দলের পক্ষে নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যে কারণে একটি দলের সামনে সব কিছু কুক্ষিগত করার, কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করার সুযোগ হয়। দেশের এটার শুরু ২০০১ সালের নির্বাচন থেকে। ২০০৮ সালে এরই পুনরাবৃত্তি হয়েছে।
অনেকে মনে করেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার করলে কর্তৃত্ববাদী শাসনের পথের প্রথম দুয়ার বন্ধ হবে। সেখানে দৃষ্টি দেয়া এবং ঐকমত্য তৈরি করাই প্রধান কাজ হাওয়া উচিত। দেশে যত দ্রুত গণতন্ত্র ফিরবে, শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কাজ তত সহজ হবে। দেশে এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। পোশাক কারখানায় শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। মসজিদ, মন্দির, মাজার প্রভৃতিতে হামলা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই সরকারকে নিশ্চুপ বসে থাকতে দেখা গেছে। এভাবে রাষ্ট্র চলতে পারে না।