মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
ওজোন স্তর ক্ষতির কারণে ধ্বংস হচ্ছে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য। বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। ওজোন স্তরের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে হলে আগে জেনে নিতে হবে ওজোন স্তর কী এবং আমাদের পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ওজোন স্তরের ভূমিকা কী?
ওজোন স্তর হলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের একটি স্তর, যেখানে বেশি মাত্রায় গ্যাস থাকে। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমন্ডলের মধ্যে ১৫-৩০ কিমি উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাসযুক্ত যে বায়ুর স্তরটি রয়েছে, তাকে ওজোন স্তর বলা হয়। ১৯১৩ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী ফ্যাব্রি এবং বুশল সর্বপ্রথম ওজোন স্তরের উপস্থিতি আবিষ্কার করেন। জীবের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এবং পৃথিবীকে জীবের বসবাসযোগ্য গ্রহ বজায় রাখতে ওজোন স্তরের গুরুত্ব অপরিসীম। এই স্তরে ওজোন গ্যাসের একটি পর্দা আছে যা সূর্য থেকে আসা বিচ্ছুরিত অতিবেগুনী রশ্মিকে শোষণ করে ভূপৃষ্ঠে আসতে দেয় না, যার ফলে জীবজগৎ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাই।
ওজোন স্তরের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে। ফলে প্রাণীজগৎ এবং জীবজগৎ উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানবদেহের দেহ গঠনের একক হলো কোষ। অতিবেগুনী রশ্মি কোষের উপর খুবই ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। এটা কোষের সৃষ্টি এবং বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে এবং অনেক ক্ষেত্রে কোষগুলোকে ভেঙে ফেলতে পারে। ফলে
মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। এছাড়াও চোখে ছানি পড়া, নখ ও চুল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া, ত্বকের ক্যানসার এবং অন্যান্য মরণব্যাধি রোগসহ গড় আয়ু হ্রাস পেতে পারে। মানুষ চতুর প্রাণী হওয়ার কারনে নিজেদের বুদ্ধিমাত্তা দিয়ে বসবাস উপযোগী বাসস্থান নির্মাণ ও প্রতিকূল পরিবেশেও নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করে এখনো পৃথিবীতে টিকে আছে; কিন্তু অবলা প্রাণীগুলো প্রতিকূল পরিবেশে নিজেদের বাসস্থান ও খাদ্য উৎপাদনে ব্যার্থ হয়ে ইতোমধ্যে অনেক বিলুপ্ত হয়েছে; ওজোন স্তরের ক্ষতি এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ আরো অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
অপরদিকে, ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণে উদ্ভিদের ওপরও ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে উদ্ভিদের পাতাগুলো আকারে ছোট ও হলুদ হয়ে যাবে অর্থাৎ উদ্ভিদ ক্লোরোসিস রোগাক্রান্ত হয়ে পড়বে। খদ্যশস্যের ক্ষতি হবে, বীজের উৎকর্ষতা নষ্ট হবে, ফসলের রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বৃদ্ধি পাবে, সমুদ্র শৈবাল এবং প্লাংটন ধ্বংস হয়ে যাবে, উদ্ভিদের অকাল মৃত্যু প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে।
প্রাকৃতিক অথবা অপ্রাকৃতিক দুইভাবেই ওজোন স্তর ধ্বংস হয়। প্রাকৃতিক কারনগুলার মধ্যে রয়েছে বজ্রপাত, রাসায়নিক বিক্রিয়া, অতিবেগুনী রশ্মি ইত্যাদি। ওজোন স্তর বিনাশের পিছনে মূলত মনুষ্যসৃষ্টি কারণগুলাই বেশি দায়ী। ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য মনুষ্যসৃষ্টি বেশকিছু গ্যাসকে দায়ী করা হয়, এর ভিতর ক্লোরোফ্লোরোকার্ব গ্যাস বিশেষভাবে উল্লেখযেগ্য।
ওজন স্তর ধ্বংস প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতোমধ্যে ওজন স্তর ধ্বংস রোধে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মন্ট্রিল চুক্তি ও এজেন্ডা-২১ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ওজোন স্তরর সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৮৭ সালে কানাডার মন্ট্রিলে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিটিতে ওজন স্তর রক্ষার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। উপস্থিত দেশগুলো এই পদক্ষেপগুলো মেনে নিয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
শেখ আব্দুল্লাহ
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
বৃহস্পতিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৩
ওজোন স্তর ক্ষতির কারণে ধ্বংস হচ্ছে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য। বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। ওজোন স্তরের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে হলে আগে জেনে নিতে হবে ওজোন স্তর কী এবং আমাদের পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ওজোন স্তরের ভূমিকা কী?
ওজোন স্তর হলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের একটি স্তর, যেখানে বেশি মাত্রায় গ্যাস থাকে। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমন্ডলের মধ্যে ১৫-৩০ কিমি উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাসযুক্ত যে বায়ুর স্তরটি রয়েছে, তাকে ওজোন স্তর বলা হয়। ১৯১৩ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী ফ্যাব্রি এবং বুশল সর্বপ্রথম ওজোন স্তরের উপস্থিতি আবিষ্কার করেন। জীবের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এবং পৃথিবীকে জীবের বসবাসযোগ্য গ্রহ বজায় রাখতে ওজোন স্তরের গুরুত্ব অপরিসীম। এই স্তরে ওজোন গ্যাসের একটি পর্দা আছে যা সূর্য থেকে আসা বিচ্ছুরিত অতিবেগুনী রশ্মিকে শোষণ করে ভূপৃষ্ঠে আসতে দেয় না, যার ফলে জীবজগৎ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাই।
ওজোন স্তরের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে। ফলে প্রাণীজগৎ এবং জীবজগৎ উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানবদেহের দেহ গঠনের একক হলো কোষ। অতিবেগুনী রশ্মি কোষের উপর খুবই ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। এটা কোষের সৃষ্টি এবং বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে এবং অনেক ক্ষেত্রে কোষগুলোকে ভেঙে ফেলতে পারে। ফলে
মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। এছাড়াও চোখে ছানি পড়া, নখ ও চুল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া, ত্বকের ক্যানসার এবং অন্যান্য মরণব্যাধি রোগসহ গড় আয়ু হ্রাস পেতে পারে। মানুষ চতুর প্রাণী হওয়ার কারনে নিজেদের বুদ্ধিমাত্তা দিয়ে বসবাস উপযোগী বাসস্থান নির্মাণ ও প্রতিকূল পরিবেশেও নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করে এখনো পৃথিবীতে টিকে আছে; কিন্তু অবলা প্রাণীগুলো প্রতিকূল পরিবেশে নিজেদের বাসস্থান ও খাদ্য উৎপাদনে ব্যার্থ হয়ে ইতোমধ্যে অনেক বিলুপ্ত হয়েছে; ওজোন স্তরের ক্ষতি এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ আরো অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
অপরদিকে, ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণে উদ্ভিদের ওপরও ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে উদ্ভিদের পাতাগুলো আকারে ছোট ও হলুদ হয়ে যাবে অর্থাৎ উদ্ভিদ ক্লোরোসিস রোগাক্রান্ত হয়ে পড়বে। খদ্যশস্যের ক্ষতি হবে, বীজের উৎকর্ষতা নষ্ট হবে, ফসলের রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বৃদ্ধি পাবে, সমুদ্র শৈবাল এবং প্লাংটন ধ্বংস হয়ে যাবে, উদ্ভিদের অকাল মৃত্যু প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে।
প্রাকৃতিক অথবা অপ্রাকৃতিক দুইভাবেই ওজোন স্তর ধ্বংস হয়। প্রাকৃতিক কারনগুলার মধ্যে রয়েছে বজ্রপাত, রাসায়নিক বিক্রিয়া, অতিবেগুনী রশ্মি ইত্যাদি। ওজোন স্তর বিনাশের পিছনে মূলত মনুষ্যসৃষ্টি কারণগুলাই বেশি দায়ী। ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য মনুষ্যসৃষ্টি বেশকিছু গ্যাসকে দায়ী করা হয়, এর ভিতর ক্লোরোফ্লোরোকার্ব গ্যাস বিশেষভাবে উল্লেখযেগ্য।
ওজন স্তর ধ্বংস প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতোমধ্যে ওজন স্তর ধ্বংস রোধে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মন্ট্রিল চুক্তি ও এজেন্ডা-২১ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ওজোন স্তরর সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৮৭ সালে কানাডার মন্ট্রিলে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিটিতে ওজন স্তর রক্ষার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। উপস্থিত দেশগুলো এই পদক্ষেপগুলো মেনে নিয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
শেখ আব্দুল্লাহ