মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া দরকার। যদি কারিগরি শিক্ষাকে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুনভাবে সাজানো হয়, তবে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা সম্ভব হবে। বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারের বিবেচনা করা উচিৎ। এ লক্ষ্যে দেশে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির জন্য আগামী বছর অষ্টম শ্রেণী থেকে বাধ্যতামূলক কারিগরি শিক্ষা চালু করতে যাচ্ছে সরকার।
কারিগরি শিক্ষা চালু হলে তা শিক্ষার্থীরা ধারণ করে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারবে কিনা তা গবেষণা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে দেশে যে শিল্প-কারখানাগুলো রয়েছে সেগুলোর নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে কী ধরনের কারিগরি শিক্ষার প্রচলন করা হলে তা শিল্পে প্রয়োগযোগ্য হবে সেটা জানতে হবে। যারা কারিগরি শিক্ষা প্রদান করবেন, তারা হাতে-কলমে এ শিক্ষা প্রদানে সক্ষম কিনা সেই বিষয়টিও ভাবতে হবে।
কৃষিনির্ভর কারিগরি দক্ষতা বাড়িয়ে এর মাধ্যমে গবেষকদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ধারণার সফল বাস্তবায়ন সম্ভব। এর ফলে কৃষিক্ষেত্র হতে পারে কর্মমুখী শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ১০ বছরে শিল্পায়নে জিডিপির হার হবে ৩৫ শতাংশ। তবে যদি কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ও প্রয়োগ যথাযথভাবে ঘটানো যায় তবে তা এ হারকেও ছাড়িয়ে যাবে।
দেশে কারিগরি শিক্ষায় ইতিবাচক মনোভাব গড়ে না ওঠায়, এক্ষেত্রেও শ্রেণীগত নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা কারিগরি শিক্ষাকে সেভাবে গ্রহণ করছে না। সরকার কর্মমুখী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে ৫টি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। পলিসি ও প্রজেক্ট ফর্মুলেশন টাস্কফোর্স, ইন্ডাস্ট্রি ও ইন্সটিটিউট লিংকেজ টাস্কফোর্স, টিভিইটি এনরোলমেন্ট টাস্কফোর্স, কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট টাস্কফোর্স এবং জব মার্কেট অ্যাসেসমেন্ট ও এমপ্লয়মেন্ট টাস্কফোর্স। যদি এ মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি মানুষকে আগ্রহী করা যায়, তবে এ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।
কারিগরি শিক্ষার কারিকুলাম এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে মানুষের কল্পনাশক্তি তার কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। কেন কারিগরি শিক্ষায় চিন্তা ও কল্পনাশক্তির কথা বলা হচ্ছে? কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে অনেক মানুষের একই ধরনের কারিগরি জ্ঞান গড়ে উঠবে, কিন্তু পার্থক্য থাকবে শুধু চিন্তা ও কল্পনাশক্তির ক্ষেত্রে। হাতে-কলমে শিক্ষার মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে যন্ত্রচালিত রোবট বানালে চলবে না, বরং কীভাবে সে কারিগরি জ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে চিন্তার বৈচিত্র্য ঘটাতে পারে, সে বিষয়টিও ভাবতে হবে।
মনস্তত্ত্ব, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি বিষয়গুলো কি তাহলে থাকবে না? থাকবে। তবে এ বিষয়ে জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে কারিগরি জ্ঞানও থাকতে হবে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত আমাদের দেশের ১ শতাংশ লোক কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ছিল। এখন তা ১৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কারিগরি শিক্ষাকে ঢেলে সাজিয়ে যুগোপযোগী করে এর বাস্তববায়ন ঘটানো সম্ভব। আর সেটা সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
মিজানুর রহমান মিজান
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শনিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৩
কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া দরকার। যদি কারিগরি শিক্ষাকে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুনভাবে সাজানো হয়, তবে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা সম্ভব হবে। বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারের বিবেচনা করা উচিৎ। এ লক্ষ্যে দেশে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির জন্য আগামী বছর অষ্টম শ্রেণী থেকে বাধ্যতামূলক কারিগরি শিক্ষা চালু করতে যাচ্ছে সরকার।
কারিগরি শিক্ষা চালু হলে তা শিক্ষার্থীরা ধারণ করে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারবে কিনা তা গবেষণা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে দেশে যে শিল্প-কারখানাগুলো রয়েছে সেগুলোর নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে কী ধরনের কারিগরি শিক্ষার প্রচলন করা হলে তা শিল্পে প্রয়োগযোগ্য হবে সেটা জানতে হবে। যারা কারিগরি শিক্ষা প্রদান করবেন, তারা হাতে-কলমে এ শিক্ষা প্রদানে সক্ষম কিনা সেই বিষয়টিও ভাবতে হবে।
কৃষিনির্ভর কারিগরি দক্ষতা বাড়িয়ে এর মাধ্যমে গবেষকদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ধারণার সফল বাস্তবায়ন সম্ভব। এর ফলে কৃষিক্ষেত্র হতে পারে কর্মমুখী শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ১০ বছরে শিল্পায়নে জিডিপির হার হবে ৩৫ শতাংশ। তবে যদি কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ও প্রয়োগ যথাযথভাবে ঘটানো যায় তবে তা এ হারকেও ছাড়িয়ে যাবে।
দেশে কারিগরি শিক্ষায় ইতিবাচক মনোভাব গড়ে না ওঠায়, এক্ষেত্রেও শ্রেণীগত নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা কারিগরি শিক্ষাকে সেভাবে গ্রহণ করছে না। সরকার কর্মমুখী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে ৫টি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। পলিসি ও প্রজেক্ট ফর্মুলেশন টাস্কফোর্স, ইন্ডাস্ট্রি ও ইন্সটিটিউট লিংকেজ টাস্কফোর্স, টিভিইটি এনরোলমেন্ট টাস্কফোর্স, কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট টাস্কফোর্স এবং জব মার্কেট অ্যাসেসমেন্ট ও এমপ্লয়মেন্ট টাস্কফোর্স। যদি এ মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি মানুষকে আগ্রহী করা যায়, তবে এ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।
কারিগরি শিক্ষার কারিকুলাম এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে মানুষের কল্পনাশক্তি তার কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। কেন কারিগরি শিক্ষায় চিন্তা ও কল্পনাশক্তির কথা বলা হচ্ছে? কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে অনেক মানুষের একই ধরনের কারিগরি জ্ঞান গড়ে উঠবে, কিন্তু পার্থক্য থাকবে শুধু চিন্তা ও কল্পনাশক্তির ক্ষেত্রে। হাতে-কলমে শিক্ষার মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে যন্ত্রচালিত রোবট বানালে চলবে না, বরং কীভাবে সে কারিগরি জ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে চিন্তার বৈচিত্র্য ঘটাতে পারে, সে বিষয়টিও ভাবতে হবে।
মনস্তত্ত্ব, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি বিষয়গুলো কি তাহলে থাকবে না? থাকবে। তবে এ বিষয়ে জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে কারিগরি জ্ঞানও থাকতে হবে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত আমাদের দেশের ১ শতাংশ লোক কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ছিল। এখন তা ১৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কারিগরি শিক্ষাকে ঢেলে সাজিয়ে যুগোপযোগী করে এর বাস্তববায়ন ঘটানো সম্ভব। আর সেটা সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
মিজানুর রহমান মিজান