alt

চিঠিপত্র

চিঠিপত্র : চলচ্চিত্রে ধূমপান বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি

: শনিবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

চলচ্চিত্রে ধূমপান বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি

নাটক, সিনেমা বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত। দেশের অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী টেলিভিশন কিংবা ইউটিউব চ্যানেলে নাটক, সিনেমা দেখে অবসর সময় কাটিয়ে থাকেন। আর এসব নাটক, সিনেমা বিভিন্ন ভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে থাকে। অনেকসময় দেখা যায় এসব নাটকের বিভিন্ন দৃশ্যপট কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনে অনুসরণ করার চেষ্টা করে। অভিনেতা-অভেনেত্রী যে ধরনের পোশাক পরে, যে ধরনের ডায়ালগ উচ্চারণ করে তারা তার অনুকরণ করে।

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলেই ধূমপানের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিš‘ বর্তমানে অভিনয় দৃশ্যে ধূমপানের ব্যাপককতা দিনদিন বেড়েই চলছে। বিভিন্ন নাটক কিংবা সিনেমাতে নেতিবাচক চরিত্র চিত্রায়ণে, কখনো জ্ঞানের তাৎপর্য বোঝাতে, নায়ক বা ভিলেন হতাশাগ্রস্ত হলে নেশাদ্রব্য সেবনের চিত্রায়ন করাসহ অহরহ ধূমপানের দৃশ্যের ব্যবহার বাড়ছে। যা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উঠতি বয়সী দর্শকদের ধূমপান ও নেশাদ্রব্য সেবনে অনুপ্রাণিত করছে।

নাটক, সিনেমায় ধূমপান, নেশাদ্রব্য সেবনের দৃশ্য তরুণদের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়। এর ফলে তারা ধূমপানকে স্বাভাবিক অভ্যাস বলে মনে করে এবং এর স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি তারা ভূলে যায়। নায়ক, নায়িকাকে অনুকরণ করতে গিয়ে অনেক কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী ধূমপান করে থাকে এবং ধূমপানকে তারা ফ্যাশন কিংবা আধুনিকতা বলে মনে করে।

এ বিষয়ে ২০১৩ সালে শুধু তরুণদের ওপর একটি গবেষণা করে গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো সার্ভে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী বিদ্যালয়গামী ছেলেমেয়েদের ৭ শতাংশ তামাক ব্যবহার করে। এর মধ্যে ছেলে ৯ শতাংশ এবং মেয়ে ৩ শতাংশ। প্রতিবছর দেড় লাখের বেশি মানুষ কেবল তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণে মারা যায়।

যদিও ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) এবং ‘জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা ২০১৭ -তে চলচ্চিত্রে ধূমপান ও নেশাদ্রব্যের ব্যবহারের প্রতি নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা ও নির্দেশনা দেওয়া আছে তবুও তা মানছেন না এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রণীত আইনটি গ্রন্থগত ‘কালো অক্ষর’ হয়েই আছে। নেই এর কোন বাস্তব প্রয়োগ।

স¤প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত শাকিব খান অভিনীত ‘শাহেন শাহ’ চল”িচত্রের একাধিক দৃশ্যে সিগারেটের ব্যবহার করা হলেও কোনও সতর্কবার্তা ব্যবহার করা হয়নি। বরং নানা রঙে-ঢঙে সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার সম্পর্কিত এমন ভূরি ভূরি দৃশ্য অন্যান্য নাটক-সিনেমায়ও খুঁজলে পাওয়া যাবে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গত ১১ মার্চ ( বুধবার) চার সচিবসহ মোট পাঁচজনকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।

জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী, চলচ্চিত্রে তামাক, তামাকজাত পণ্য, মদ বা অ্যালকোহল সেবন ও অন্যান্য মাদক গ্রহণ দেখানো যাবে না। তবে চরিত্রের প্রয়োজনে মদ ও সিগারেট সেবন প্রদর্শন আবশ্যক হলে এসংক্রান্ত আইন/ বিধি অনুযায়ী এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও দর্শকদের অবহিত করতে হবে।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫-এর ৫(ঙ) ধারায় ‘বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বা লভ্য ও প্রচারিত সিনেমা, নাটক এবং প্রামাণ্যচিত্রে ধূমপান ও অন্যান্য তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’ তবে কাহিনীর প্রয়োজনে এমন কোনো দৃশ্য অন্তর্ভুক্ত করা হলে, সেক্ষেত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০১৫ দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে সতর্কীকরণ বার্তা জুড়ে দেয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বিধিমালার ৫(ক) বলছে, ‘তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রদর্শনকালে পর্দার মাঝখানে পর্দার আকারের অন্তত এক-পঞ্চমাংশ স্থানজুড়ে কালো জমিনের ওপর সাদা অক্ষরে বাংলা ভাষায় ‘ধূমপান/তামাক সেবন মৃত্যু ঘটায়’ শীর্ষক সতর্কবাণী প্রদর্শন করিতে হইবে এবং উক্তরূপ দৃশ্য যতক্ষণ চলিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সতর্কবাণী প্রদর্শন অব্যাহত রাখতে হবে।’ সিনেমা প্রদর্শনকালেও বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণের নির্দেশনা রয়েছে।

বিধিমালার ৫(গ) অনুযায়ী, ‘প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য রয়েছে এরূপ সিনেমা আরম্ভ হইবার পূর্বে, বিরতির পূর্বে ও পরে এবং সিনেমা প্রদর্শনের শেষে অন্যূন ২০ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত সম্পূর্ণ পর্দাজুড়ে ‘ধূমপান/তামাক সেবন মৃত্যু ঘটায়’ শীর্ষক সতর্কবাণী বাংলা ভাষায় প্রদর্শন করতে হবে। কোনো ব্যক্তি এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডনীয় হবে এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করলে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন।’

এরকম অনেক নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও, এর বাস্তবায়ন যে কতটুকু তা সময়ই বলে দিচ্ছে। দিন দিন বেড়েই চলছে নাটক, সিনেমায় তামাকজাত দ্রব্য ও নেশাদ্রব্যের ব্যবহার। এ যেন সরাসরি বিজ্ঞাপন দেয়া সম্ভব নয় বলে, কৌশলে নির্মাতাদের ব্যবহার করছে সিগারেট কোম্পানিগুলো।

তামাক ও নেশাদ্রব্যের ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে দেশে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে সরকার পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও তামাক নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্বসহকারে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন। তবুও দেখা যায় তামাক নিয়ন্ত্রণ কাজে কোন গতিশীলতা আসছে না।

ধূমপান ও তামাক সেবন হচ্ছে মাদক সেবনের প্রবেশ পথ। ধূমপানের মাধ্যমে নেশার জগতে প্রবেশ করে তরুণদের অনেকে মাদকের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নানা সংকট তৈরি করছে। আর এ তরুণরা ধূমপানে জড়ানোর পেছনে উৎসাহিতকরণ ভূমিকা রাখছে নাটক, সিনেমায় নেশাদ্রব্যের ব্যাপক ব্যবহার। এজন্য তরুণদের নেশা থেকে দূরে রাখতে এবং তামাকমুক্ত আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নাটক, সিনেমায় ধূমপান ও নেশাদ্রব্যের দৃশ্যপট ধারণ বন্ধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া অতীব জরুরি।

জয়নুল হক

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের শেষ কোথায়?

টেকসই উন্নয়ন ও আদিবাসীদের অধিকার

শব্দদূষণ বন্ধ হবে কবে?

চট্টগ্রাম দোহাজারী অংশে রেল চালু হোক

দেশের প্রথম শহীদ মিনারের উপেক্ষিত ইতিহাস

তরুণদের হীনমন্যতা ও মত প্রকাশে অনীহা

বন সংরক্ষণ ও উন্নয়ন

শুধু ফেব্রুয়ারিতে ভাষার দরদ?

ভাষা ও সাহিত্যের মিলনমেলা

জমি দখলের ক্ষতিপূরণ চাই

পুরান ঢাকায় মশার উৎপাত

গুইমারায় স্বাস্থ্যসেবা সংকট : অবিলম্বে সমাধান প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু : একটি জাতীয় সংকট

নাম পাল্টে গেলে কত কী যে হয়

অনুপ্রেরণা হোক তুলনাহীন

দূষণ রোধে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা হ্রাস জরুরি

পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা বাড়ান

গণরুম প্রথার বিলুপ্তি কবে?

রেলসেবার মান বাড়ান

নওগাঁ সরকারি কলেজের সংকট

টিকিটের দাম আকাশচুম্বী

জকিগঞ্জে গ্রামীণ সড়কের দুরবস্থা

রেলে দুর্নীতি

নবায়নযোগ্য শক্তির বিকল্প নেই

পথশিশুদের ভয়ঙ্কর নেশাদ্রব্য থেকে রক্ষা করুন

ঢাকা-ময়মনসিংহ ননস্টপ ট্রেন ও ডাবল লাইন নির্মাণের দাবি

শিশুদের প্রতি প্রতিহিংসা বন্ধ করুন

চরবাসীর নদী পারাপারে নিরাপত্তার প্রয়োজন

জন্মনিবন্ধন সেবায় অতিরিক্ত অর্থ আদায় : ব্যবস্থা নিন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে স্পিডব্রেকার চাই

উন্নয়নের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান কারিগরি শিক্ষা

পোস্তগোলায় নিম্নমানের ড্রেন নির্মাণ

দিনমজুর সংকটে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত

পানাম সেতু : ঐতিহ্য রক্ষায় অবহেলা নয়

যাত্রাবাড়ীর চৌরাস্তা থেকে ধোলাইখাল বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তার দুরবস্থা

tab

চিঠিপত্র

চিঠিপত্র : চলচ্চিত্রে ধূমপান বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

শনিবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

চলচ্চিত্রে ধূমপান বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি

নাটক, সিনেমা বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত। দেশের অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী টেলিভিশন কিংবা ইউটিউব চ্যানেলে নাটক, সিনেমা দেখে অবসর সময় কাটিয়ে থাকেন। আর এসব নাটক, সিনেমা বিভিন্ন ভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে থাকে। অনেকসময় দেখা যায় এসব নাটকের বিভিন্ন দৃশ্যপট কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনে অনুসরণ করার চেষ্টা করে। অভিনেতা-অভেনেত্রী যে ধরনের পোশাক পরে, যে ধরনের ডায়ালগ উচ্চারণ করে তারা তার অনুকরণ করে।

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলেই ধূমপানের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিš‘ বর্তমানে অভিনয় দৃশ্যে ধূমপানের ব্যাপককতা দিনদিন বেড়েই চলছে। বিভিন্ন নাটক কিংবা সিনেমাতে নেতিবাচক চরিত্র চিত্রায়ণে, কখনো জ্ঞানের তাৎপর্য বোঝাতে, নায়ক বা ভিলেন হতাশাগ্রস্ত হলে নেশাদ্রব্য সেবনের চিত্রায়ন করাসহ অহরহ ধূমপানের দৃশ্যের ব্যবহার বাড়ছে। যা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উঠতি বয়সী দর্শকদের ধূমপান ও নেশাদ্রব্য সেবনে অনুপ্রাণিত করছে।

নাটক, সিনেমায় ধূমপান, নেশাদ্রব্য সেবনের দৃশ্য তরুণদের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়। এর ফলে তারা ধূমপানকে স্বাভাবিক অভ্যাস বলে মনে করে এবং এর স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি তারা ভূলে যায়। নায়ক, নায়িকাকে অনুকরণ করতে গিয়ে অনেক কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী ধূমপান করে থাকে এবং ধূমপানকে তারা ফ্যাশন কিংবা আধুনিকতা বলে মনে করে।

এ বিষয়ে ২০১৩ সালে শুধু তরুণদের ওপর একটি গবেষণা করে গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো সার্ভে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী বিদ্যালয়গামী ছেলেমেয়েদের ৭ শতাংশ তামাক ব্যবহার করে। এর মধ্যে ছেলে ৯ শতাংশ এবং মেয়ে ৩ শতাংশ। প্রতিবছর দেড় লাখের বেশি মানুষ কেবল তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণে মারা যায়।

যদিও ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) এবং ‘জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা ২০১৭ -তে চলচ্চিত্রে ধূমপান ও নেশাদ্রব্যের ব্যবহারের প্রতি নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা ও নির্দেশনা দেওয়া আছে তবুও তা মানছেন না এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রণীত আইনটি গ্রন্থগত ‘কালো অক্ষর’ হয়েই আছে। নেই এর কোন বাস্তব প্রয়োগ।

স¤প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত শাকিব খান অভিনীত ‘শাহেন শাহ’ চল”িচত্রের একাধিক দৃশ্যে সিগারেটের ব্যবহার করা হলেও কোনও সতর্কবার্তা ব্যবহার করা হয়নি। বরং নানা রঙে-ঢঙে সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার সম্পর্কিত এমন ভূরি ভূরি দৃশ্য অন্যান্য নাটক-সিনেমায়ও খুঁজলে পাওয়া যাবে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গত ১১ মার্চ ( বুধবার) চার সচিবসহ মোট পাঁচজনকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।

জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী, চলচ্চিত্রে তামাক, তামাকজাত পণ্য, মদ বা অ্যালকোহল সেবন ও অন্যান্য মাদক গ্রহণ দেখানো যাবে না। তবে চরিত্রের প্রয়োজনে মদ ও সিগারেট সেবন প্রদর্শন আবশ্যক হলে এসংক্রান্ত আইন/ বিধি অনুযায়ী এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও দর্শকদের অবহিত করতে হবে।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫-এর ৫(ঙ) ধারায় ‘বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বা লভ্য ও প্রচারিত সিনেমা, নাটক এবং প্রামাণ্যচিত্রে ধূমপান ও অন্যান্য তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’ তবে কাহিনীর প্রয়োজনে এমন কোনো দৃশ্য অন্তর্ভুক্ত করা হলে, সেক্ষেত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০১৫ দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে সতর্কীকরণ বার্তা জুড়ে দেয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বিধিমালার ৫(ক) বলছে, ‘তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রদর্শনকালে পর্দার মাঝখানে পর্দার আকারের অন্তত এক-পঞ্চমাংশ স্থানজুড়ে কালো জমিনের ওপর সাদা অক্ষরে বাংলা ভাষায় ‘ধূমপান/তামাক সেবন মৃত্যু ঘটায়’ শীর্ষক সতর্কবাণী প্রদর্শন করিতে হইবে এবং উক্তরূপ দৃশ্য যতক্ষণ চলিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সতর্কবাণী প্রদর্শন অব্যাহত রাখতে হবে।’ সিনেমা প্রদর্শনকালেও বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণের নির্দেশনা রয়েছে।

বিধিমালার ৫(গ) অনুযায়ী, ‘প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য রয়েছে এরূপ সিনেমা আরম্ভ হইবার পূর্বে, বিরতির পূর্বে ও পরে এবং সিনেমা প্রদর্শনের শেষে অন্যূন ২০ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত সম্পূর্ণ পর্দাজুড়ে ‘ধূমপান/তামাক সেবন মৃত্যু ঘটায়’ শীর্ষক সতর্কবাণী বাংলা ভাষায় প্রদর্শন করতে হবে। কোনো ব্যক্তি এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডনীয় হবে এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করলে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন।’

এরকম অনেক নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও, এর বাস্তবায়ন যে কতটুকু তা সময়ই বলে দিচ্ছে। দিন দিন বেড়েই চলছে নাটক, সিনেমায় তামাকজাত দ্রব্য ও নেশাদ্রব্যের ব্যবহার। এ যেন সরাসরি বিজ্ঞাপন দেয়া সম্ভব নয় বলে, কৌশলে নির্মাতাদের ব্যবহার করছে সিগারেট কোম্পানিগুলো।

তামাক ও নেশাদ্রব্যের ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে দেশে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে সরকার পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও তামাক নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্বসহকারে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন। তবুও দেখা যায় তামাক নিয়ন্ত্রণ কাজে কোন গতিশীলতা আসছে না।

ধূমপান ও তামাক সেবন হচ্ছে মাদক সেবনের প্রবেশ পথ। ধূমপানের মাধ্যমে নেশার জগতে প্রবেশ করে তরুণদের অনেকে মাদকের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নানা সংকট তৈরি করছে। আর এ তরুণরা ধূমপানে জড়ানোর পেছনে উৎসাহিতকরণ ভূমিকা রাখছে নাটক, সিনেমায় নেশাদ্রব্যের ব্যাপক ব্যবহার। এজন্য তরুণদের নেশা থেকে দূরে রাখতে এবং তামাকমুক্ত আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নাটক, সিনেমায় ধূমপান ও নেশাদ্রব্যের দৃশ্যপট ধারণ বন্ধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া অতীব জরুরি।

জয়নুল হক

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

back to top