মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘দপ্তরি কাম প্রহরী’ পদ ও আন্দোলনের পোস্টমর্টেম
‘বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্মচারী ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে আন্দোলন করছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম প্রহরিরা। তাদের সমস্যা একেবারে ছোট নয়, গুরুতর। অনেকে প্রশ্ন করেন প্রাথমিকের দপ্তরিরা আন্দোলনে কেন? আবার এদের বারবার তাড়িয়েই বা দেয়া হচ্ছে কেন? এটা বুঝতে এদের সমস্যগুলো আগে বুঝতে হবে; জল-কামান দিয়ে অধিদপ্তরের সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে বোধকরি সমস্যার সমাধান করা যাবে না। রোগ কোথায় তা আগে খুঁজে বের করতে হবে, তারপর ওষুধ।
সমস্যার কেন্দ্রে আছে ২টি নীতিমালা ও ১টি পরিপত্র। তাই আন্দোলনকারীদের সমস্যাগুলোকে এ তিনটির সাচে ফেলে বিশ্লেষণ করা করা দরকার। এরপর সমাধান পাওয়া যাবে আশাকরি। আন্দোলনকারীরা যে সমস্যাগুলো উল্লেখ করে আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছে।
সমস্যা নম্বর ১: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করেও তারা ন্যায্য বেতন-ভাতা পাচ্ছে না।
সমস্যার উৎস : অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১০/০৬/২০১৯ তারিখের পরিপত্রে সেবার ‘ক্যাটাগরি-৫’ এ এদের বেতন নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে যে, সেবা প্রদানকারী ঢাকা মেট্রোপলিটন অঞ্চলের হলে ১৭, ৬১০ টাকা, বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও সাভার পৌর অঞ্চলের হলে ১৬, ৬২০ টাকা এবং দেশের অন্য সকল অঞ্চলের হলে ১৬, ১৩০ টাকা বেতন প্রপ্য হবে।
অর্থের হিসাবে এ বেতনকে কম বলার কোনো সুযোগ নেই। এটা এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাই স্কুল লেভেলের বি.এড করা শিক্ষকদের বেতনের চেয়েও ১৩০ টাকা বেশি!
সমস্যা নম্বর ২: এদেরকে দিনে দাপ্তরিক কাজ ও রাতে প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতে হয়।
সমস্যার উৎস : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণিত ‘আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী পদে জনবল সংগ্রহ নীতিমালা, ২০১৯’ এ আউটসোর্সিং সেবাকারীদের কোন কর্মঘণ্টা উল্লেখ নেই। সঙ্গেসঙ্গে নীতিমালার ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা অংশের (ঘ) তে বলা হয়েছে যে, ‘দপ্তরী কাম প্রহরী পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে নৈশ প্রহরার জন্য উপযুক্ত, সাইকেল চালনায় পারদর্শী, সুঠাম দেহের অধিকারী পুরুষ প্রার্থীদের নির্বাচন করিতে হইবে।’ এখানে প্রথমত সেবাকারীর কর্মঘণ্টার নেই দ্বিতীয়ত ‘নৈশ প্রহরার জন্য উপযুক্ত’ অংশটুকু জুড়ে দেয়া হয়েছে। ফলাফল এদেরকে দিয়ে রাতে প্রহরার ডিউটি করানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আবার অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রণিত’ আউটসোর্সিং (outsourcing) প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা, ২০১৮’ এর ৭(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘সেবা ক্রয়কারী ঘোষিত নির্ধারিত সেবাঘণ্টা, সেবা প্রদানকারীর সেবাসময় হিসেবে বিবেচিত হবে।’ অর্থাৎ যে সময় নির্ধারণ করে চুক্তি করা হয়েছে সে সময় পর্যন্ত সেবাকারী সেবা প্রদান করতে বাধ্য।
একজন শ্রমিককে দিয়ে দিনে ও রাতে ডিউটি করানো অমানবিক। আন্দোলনের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রখেছে বলেই আমার বিশ্বাস। তাই এ অংশটি খুবই গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করা দরকার।
সমস্যা নম্বর ৩: এদের বাৎসরিক কোনো ছুটি নেই।
সমস্যার উৎস : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত ২০১৯ সালের উক্ত নীতিমালার ১০(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে যোগদানকৃত দপ্তরি কাম প্রহরি সরকারি ছুটি ব্যতীত নৈমিত্তিক বা অন্য কোন ছুটি প্রাপ্য হইবেন না। তবে দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘটনা, অসুস্থতা জনিত কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে এবং উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বার্ষিক সর্বোচ্চ ৭(সাত) দিন ছুটি মঞ্জুর করিতে পারিবেন।’
অর্থাৎ দুর্ঘটনা বা অসুস্থতা ছাড়া এই সাত দিনও ছুটি কার্যকর হবে না।
এছাড়া ১০(খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সরকারি দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘটনা ব্যতীত অন্য কোন কারণে দপ্তরী কাম প্রহরী পদে যোগদানকৃত ব্যক্তি কর্মে অনুপস্থিতকাল ১৫ (পনেরো) কর্মদিবসের বেশি হইলে তাহার চুক্তি সরাসরি বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।’
একদিকে অনুপস্থতির জন্য বেতন কর্তনের বিধান (১১ এর ক অনুচ্ছেদ, প্রা.ও গণ.নীতিমালা ২০১৯) রাখা হয়েছে অপরদিকে ‘সরকারি দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘটনা ব্যতীত’ ১৫ কর্মদিবস অনুপস্থিতির জন্য চুক্তি বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে। ফলে চুক্তিকৃত সেবা দানকারীর (এখানে দপ্তরি কাম প্রহরি) ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামজিক প্রয়োজন উপেক্ষিত হলেও তার কোন প্রতিক্রিয়া দেখানোর কোন সুজোগ নেই।
এটাও তাদের আন্দোলনে প্ররোচিত করেছে বলে মনে হয়।
সমস্যা নম্বর ৪: এদের কোন উৎসব ভাতা প্রদান করা হয় না।
সমস্যার উৎস : অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১০/০৬/২০১৯ তারিখে জারীকৃত পরিপত্রের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘উল্লিখিত সেবা মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমপর্যায়ের কর্মচারীদের মাসিক প্রারম্ভিক মূল বেতন, বাড়িভাড়া ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাৎসরিক দুটি উৎসব ভাতা যোগ করে মাসিক সেবামূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সে কারণে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত কর্মীগণ পৃথকভাবে উৎসব প্রণোদনা ও নববর্ষ প্রণোদনা প্রাপ্য হবেন না।’
যে চারটি সমস্যার কথা উল্লেখ কারা হয়েছে তার প্রথমটি শুধুই দাবির জন্য দাবি ছাড়া কিছু নয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সমস্যা আসলেই উপেক্ষা করার মতো নয়। আর চতুর্থ সমস্যার বিষয়টি প্রত্যেক দপ্তরি কাম প্রহরিরা জানে। কারণ যোগদানের চুক্তিতে এগুলো উল্লেখ ছিলো এবং তারা কোনো উৎসব ভাতা পাবেন না এটা জেনেই যোগদান করেছে।
এগুলো প্রকৃত অর্থে আন্দোলনের মূল কারণ নয়। বরং মূল কারণ হলো যে, এসব দপ্তরি কাম প্রহরিদের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাদের চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। এটা বুঝতে পেরে এই মাটির জন্যেই তাদের আন্দোলন।
অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব আউটসোর্সিং সেবাকারীকে বহিরাগত শ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করেছে। সুতরাং বহিরাগত শ্রমিক কোন কোন সুবিধা পেতে পারে সে অনুযায়ী নীতিমালা প্রস্তুত করেছে। ফলে এদের কোন ভবিষ্যৎ চিন্তা তারা করেনি।
আবার পুরো নীতিমালাজুড়ে এসব কর্মী ছাঁটাই এর নানাবিধ কানাগলি। এরা জানে প্রতি মাসে তাদের হাজিরা উপজেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়। সে রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে তার বেতন। একটু এদিক সেদিক হলেই বেতন কর্তন আর ছাঁটায়ের সম্ভাবনা। ফলে দিন-রাত ডিউটি করলেও প্রতিবাদ করার সুযোগ নেই। ছুটি নেই, পেনশন নেই, বোনাস নেই, মোটকথা এখানে কোন ভবিষ্যৎ নেই, তাই রাত্রির ঘুম নেই, আবার কিছু করারও নেই।
বোধকরি এগুলো থেকেই আন্দোলনের সূত্রপাত। যেহেতু তারা সরকারি অফিসে চাকরি করে সেহেতু পদগুলো পার্মান্যান্ট করার জন্য রাজস্ব খাতে নেয়ার আন্দোলন করা ছাড়া এদের আর কোনো অপশন ছিলো না। এদের মতো একই সমস্যায় আছে আউটসোর্সিংয়ের বাকি ১১টি পদ। শুধু একটি নয় ১২টি পদের সমস্যা সমাধান করতে না পারলে আরও আন্দোলন হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এসএম মিনহাজ কাদির
মহেশপুর, ঝিনাইদহ।
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
বুধবার, ০৪ নভেম্বর ২০২০
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘দপ্তরি কাম প্রহরী’ পদ ও আন্দোলনের পোস্টমর্টেম
‘বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্মচারী ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে আন্দোলন করছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম প্রহরিরা। তাদের সমস্যা একেবারে ছোট নয়, গুরুতর। অনেকে প্রশ্ন করেন প্রাথমিকের দপ্তরিরা আন্দোলনে কেন? আবার এদের বারবার তাড়িয়েই বা দেয়া হচ্ছে কেন? এটা বুঝতে এদের সমস্যগুলো আগে বুঝতে হবে; জল-কামান দিয়ে অধিদপ্তরের সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে বোধকরি সমস্যার সমাধান করা যাবে না। রোগ কোথায় তা আগে খুঁজে বের করতে হবে, তারপর ওষুধ।
সমস্যার কেন্দ্রে আছে ২টি নীতিমালা ও ১টি পরিপত্র। তাই আন্দোলনকারীদের সমস্যাগুলোকে এ তিনটির সাচে ফেলে বিশ্লেষণ করা করা দরকার। এরপর সমাধান পাওয়া যাবে আশাকরি। আন্দোলনকারীরা যে সমস্যাগুলো উল্লেখ করে আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছে।
সমস্যা নম্বর ১: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করেও তারা ন্যায্য বেতন-ভাতা পাচ্ছে না।
সমস্যার উৎস : অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১০/০৬/২০১৯ তারিখের পরিপত্রে সেবার ‘ক্যাটাগরি-৫’ এ এদের বেতন নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে যে, সেবা প্রদানকারী ঢাকা মেট্রোপলিটন অঞ্চলের হলে ১৭, ৬১০ টাকা, বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও সাভার পৌর অঞ্চলের হলে ১৬, ৬২০ টাকা এবং দেশের অন্য সকল অঞ্চলের হলে ১৬, ১৩০ টাকা বেতন প্রপ্য হবে।
অর্থের হিসাবে এ বেতনকে কম বলার কোনো সুযোগ নেই। এটা এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাই স্কুল লেভেলের বি.এড করা শিক্ষকদের বেতনের চেয়েও ১৩০ টাকা বেশি!
সমস্যা নম্বর ২: এদেরকে দিনে দাপ্তরিক কাজ ও রাতে প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতে হয়।
সমস্যার উৎস : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণিত ‘আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী পদে জনবল সংগ্রহ নীতিমালা, ২০১৯’ এ আউটসোর্সিং সেবাকারীদের কোন কর্মঘণ্টা উল্লেখ নেই। সঙ্গেসঙ্গে নীতিমালার ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা অংশের (ঘ) তে বলা হয়েছে যে, ‘দপ্তরী কাম প্রহরী পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে নৈশ প্রহরার জন্য উপযুক্ত, সাইকেল চালনায় পারদর্শী, সুঠাম দেহের অধিকারী পুরুষ প্রার্থীদের নির্বাচন করিতে হইবে।’ এখানে প্রথমত সেবাকারীর কর্মঘণ্টার নেই দ্বিতীয়ত ‘নৈশ প্রহরার জন্য উপযুক্ত’ অংশটুকু জুড়ে দেয়া হয়েছে। ফলাফল এদেরকে দিয়ে রাতে প্রহরার ডিউটি করানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আবার অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রণিত’ আউটসোর্সিং (outsourcing) প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা, ২০১৮’ এর ৭(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘সেবা ক্রয়কারী ঘোষিত নির্ধারিত সেবাঘণ্টা, সেবা প্রদানকারীর সেবাসময় হিসেবে বিবেচিত হবে।’ অর্থাৎ যে সময় নির্ধারণ করে চুক্তি করা হয়েছে সে সময় পর্যন্ত সেবাকারী সেবা প্রদান করতে বাধ্য।
একজন শ্রমিককে দিয়ে দিনে ও রাতে ডিউটি করানো অমানবিক। আন্দোলনের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রখেছে বলেই আমার বিশ্বাস। তাই এ অংশটি খুবই গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করা দরকার।
সমস্যা নম্বর ৩: এদের বাৎসরিক কোনো ছুটি নেই।
সমস্যার উৎস : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত ২০১৯ সালের উক্ত নীতিমালার ১০(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে যোগদানকৃত দপ্তরি কাম প্রহরি সরকারি ছুটি ব্যতীত নৈমিত্তিক বা অন্য কোন ছুটি প্রাপ্য হইবেন না। তবে দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘটনা, অসুস্থতা জনিত কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে এবং উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বার্ষিক সর্বোচ্চ ৭(সাত) দিন ছুটি মঞ্জুর করিতে পারিবেন।’
অর্থাৎ দুর্ঘটনা বা অসুস্থতা ছাড়া এই সাত দিনও ছুটি কার্যকর হবে না।
এছাড়া ১০(খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সরকারি দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘটনা ব্যতীত অন্য কোন কারণে দপ্তরী কাম প্রহরী পদে যোগদানকৃত ব্যক্তি কর্মে অনুপস্থিতকাল ১৫ (পনেরো) কর্মদিবসের বেশি হইলে তাহার চুক্তি সরাসরি বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।’
একদিকে অনুপস্থতির জন্য বেতন কর্তনের বিধান (১১ এর ক অনুচ্ছেদ, প্রা.ও গণ.নীতিমালা ২০১৯) রাখা হয়েছে অপরদিকে ‘সরকারি দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘটনা ব্যতীত’ ১৫ কর্মদিবস অনুপস্থিতির জন্য চুক্তি বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে। ফলে চুক্তিকৃত সেবা দানকারীর (এখানে দপ্তরি কাম প্রহরি) ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামজিক প্রয়োজন উপেক্ষিত হলেও তার কোন প্রতিক্রিয়া দেখানোর কোন সুজোগ নেই।
এটাও তাদের আন্দোলনে প্ররোচিত করেছে বলে মনে হয়।
সমস্যা নম্বর ৪: এদের কোন উৎসব ভাতা প্রদান করা হয় না।
সমস্যার উৎস : অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১০/০৬/২০১৯ তারিখে জারীকৃত পরিপত্রের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘উল্লিখিত সেবা মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমপর্যায়ের কর্মচারীদের মাসিক প্রারম্ভিক মূল বেতন, বাড়িভাড়া ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাৎসরিক দুটি উৎসব ভাতা যোগ করে মাসিক সেবামূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সে কারণে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত কর্মীগণ পৃথকভাবে উৎসব প্রণোদনা ও নববর্ষ প্রণোদনা প্রাপ্য হবেন না।’
যে চারটি সমস্যার কথা উল্লেখ কারা হয়েছে তার প্রথমটি শুধুই দাবির জন্য দাবি ছাড়া কিছু নয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সমস্যা আসলেই উপেক্ষা করার মতো নয়। আর চতুর্থ সমস্যার বিষয়টি প্রত্যেক দপ্তরি কাম প্রহরিরা জানে। কারণ যোগদানের চুক্তিতে এগুলো উল্লেখ ছিলো এবং তারা কোনো উৎসব ভাতা পাবেন না এটা জেনেই যোগদান করেছে।
এগুলো প্রকৃত অর্থে আন্দোলনের মূল কারণ নয়। বরং মূল কারণ হলো যে, এসব দপ্তরি কাম প্রহরিদের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাদের চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। এটা বুঝতে পেরে এই মাটির জন্যেই তাদের আন্দোলন।
অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব আউটসোর্সিং সেবাকারীকে বহিরাগত শ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করেছে। সুতরাং বহিরাগত শ্রমিক কোন কোন সুবিধা পেতে পারে সে অনুযায়ী নীতিমালা প্রস্তুত করেছে। ফলে এদের কোন ভবিষ্যৎ চিন্তা তারা করেনি।
আবার পুরো নীতিমালাজুড়ে এসব কর্মী ছাঁটাই এর নানাবিধ কানাগলি। এরা জানে প্রতি মাসে তাদের হাজিরা উপজেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়। সে রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে তার বেতন। একটু এদিক সেদিক হলেই বেতন কর্তন আর ছাঁটায়ের সম্ভাবনা। ফলে দিন-রাত ডিউটি করলেও প্রতিবাদ করার সুযোগ নেই। ছুটি নেই, পেনশন নেই, বোনাস নেই, মোটকথা এখানে কোন ভবিষ্যৎ নেই, তাই রাত্রির ঘুম নেই, আবার কিছু করারও নেই।
বোধকরি এগুলো থেকেই আন্দোলনের সূত্রপাত। যেহেতু তারা সরকারি অফিসে চাকরি করে সেহেতু পদগুলো পার্মান্যান্ট করার জন্য রাজস্ব খাতে নেয়ার আন্দোলন করা ছাড়া এদের আর কোনো অপশন ছিলো না। এদের মতো একই সমস্যায় আছে আউটসোর্সিংয়ের বাকি ১১টি পদ। শুধু একটি নয় ১২টি পদের সমস্যা সমাধান করতে না পারলে আরও আন্দোলন হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এসএম মিনহাজ কাদির
মহেশপুর, ঝিনাইদহ।