মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
জলবায়ু পরিবর্তন উদ্বেগজনক হারে বাড়ায় বদলে গেছে প্রাকৃতিক পরিবেশের স্বাভাবিক ক্যালেন্ডার। সঠিকসময়ে ফলন হচ্ছে না,পানির লবণাক্ততা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা এবং অসময়ে তীব্র দাবদাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি আঘাত করছে দারিদ্র্যসীমাকে। ধনী দেশগুলোতে জলবায়ুগত পরিবর্তন তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে যতটা না প্রভাবিত করে, ঠিক ততটাই প্রভাবিত করে দরিদ্র দেশগুলোকে অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে। ধনী দেশগুলোতে পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য সম্পদ এবং নেটওয়ার্ক এবং অনিয়মিত আবহাওয়ার ঘটনা এবং দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য আরও স্থিতিস্থাপক অবকাঠামো (যেমন- পানির ব্যবস্থা এবং আবাসন) থাকার প্রবণতা রয়েছে।
যদিও দরিদ্র দেশগুলোর প্রায় সবসময়ই কম সম্পদ এবং দুর্বল অবকাঠামো থাকে, যা তাদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। চরম আবহাওয়ার ধরণ,প্রাকৃতিক বিপত্তি এবং খাদ্য ও পানির ঘাটতি দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে এবং দরিদ্র মানুষদের ব্যর্থ ফসল, ধ্বংস হওয়া বাড়ি এবং স্বাস্থ্য সংকট থেকে পুনরুদ্ধার করা ততো কঠিন। আমাদের দেশে যারা আয় এবং খাদ্যের জন্য চাষাবাদের ওপর নির্ভর করে, তাদের জন্য প্রভাব বিশেষভাবে প্রকট। দুর্বল ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতি এবং টেকসই উন্নয়ন মাটির ক্ষয় ও মরুকরণ সহ জমির অবক্ষয় ঘটাচ্ছে,যা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবকে ত্বরান্বিত করছে এবং উচ্চ তাপমাত্রা, পরিবর্তিত বৃষ্টিপাতের ধরণ এবং বর্ধিত জলের ঘাটতি ভূমির বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে খাদ্য উৎপাদনের অনুপযোগী করে তুলছে।
যখন দুর্যোগ আঘাত হানে, তারাই কম শক্তি এবং কম সম্পদের অধিকারী যারা সর্বদাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে তারা দারিদ্র্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে, কারণ যারা খরা বা বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের অবশ্যই কম দামে তাদের জমি বা গবাদিপশু বিক্রি করতে হবে, কার্যকরভাবে দরিদ্র থেকে ধনীদের কাছে সম্পদ স্থানান্তর করতে হবে। এটি অনুমান করা হয়েছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে, জলবায়ু পরিবর্তন ১২০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিতে পারে। আমাদের দেশে জলবায়ুর ঝুঁকি বাড়ায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এখন দারিদ্র্যের শীর্ষ সীমায় এসেছে।
বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনাগুলোর ৯৫ শতাংশই ঘটে বন্যা ও ঝড়ের কারণে। তাই দারিদ্র্য নিরসন প্রকল্পে জলবায়ু পরিবর্তনে মানবসৃষ্ট হুমকিসমূহকে প্রতিহত করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় রিসাইকেলিং প্রক্রিয়াকে গতিশীল করার পাশাপাশি পলি-ইথিলিনের ব্যবহার কমাতে হবে। ব্যয়বহুল এবং দরিদ্র মানের স্বাস্থ্য যতœ সেবার কারণে দরিদ্ররা তাদের এলাকায় সঠিক স্বাস্থ্যপরিসেবা অভাবে ভুগছে। বিশেষত বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্যপ্রবণতা ও কম ৩৭.৯২% নিরাপদ শৌচাগারের প্রতুলতা বিদ্যমান। তাই নিরাপদ শৌচাগার বিনির্মানের অন্তরায়গুলোকে অপসারণ করতে হবে।
বিদ্যমান কৃষিকাজে পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষত আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য আমাদের লবণাক্ততা–সহিষ্ণু শস্য, ফল ও ফসল খুঁজতে হবে। এছাড়াও যেসব অঞ্চলে নিয়মিত প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘটে সেসব অঞ্চলে শস্যবীমা খুবই প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণু শহর গড়ে তোলায় সামগ্রিক দৃষ্টিপাতে দারিদ্র্য নিরসন করা টেকসই উন্নয়নকে একধাপ এগিয়ে রাখতে সহায়তা করবে।
সুমাইয়া আকতার
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
জলবায়ু পরিবর্তন উদ্বেগজনক হারে বাড়ায় বদলে গেছে প্রাকৃতিক পরিবেশের স্বাভাবিক ক্যালেন্ডার। সঠিকসময়ে ফলন হচ্ছে না,পানির লবণাক্ততা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা এবং অসময়ে তীব্র দাবদাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি আঘাত করছে দারিদ্র্যসীমাকে। ধনী দেশগুলোতে জলবায়ুগত পরিবর্তন তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে যতটা না প্রভাবিত করে, ঠিক ততটাই প্রভাবিত করে দরিদ্র দেশগুলোকে অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে। ধনী দেশগুলোতে পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য সম্পদ এবং নেটওয়ার্ক এবং অনিয়মিত আবহাওয়ার ঘটনা এবং দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য আরও স্থিতিস্থাপক অবকাঠামো (যেমন- পানির ব্যবস্থা এবং আবাসন) থাকার প্রবণতা রয়েছে।
যদিও দরিদ্র দেশগুলোর প্রায় সবসময়ই কম সম্পদ এবং দুর্বল অবকাঠামো থাকে, যা তাদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। চরম আবহাওয়ার ধরণ,প্রাকৃতিক বিপত্তি এবং খাদ্য ও পানির ঘাটতি দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে এবং দরিদ্র মানুষদের ব্যর্থ ফসল, ধ্বংস হওয়া বাড়ি এবং স্বাস্থ্য সংকট থেকে পুনরুদ্ধার করা ততো কঠিন। আমাদের দেশে যারা আয় এবং খাদ্যের জন্য চাষাবাদের ওপর নির্ভর করে, তাদের জন্য প্রভাব বিশেষভাবে প্রকট। দুর্বল ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতি এবং টেকসই উন্নয়ন মাটির ক্ষয় ও মরুকরণ সহ জমির অবক্ষয় ঘটাচ্ছে,যা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবকে ত্বরান্বিত করছে এবং উচ্চ তাপমাত্রা, পরিবর্তিত বৃষ্টিপাতের ধরণ এবং বর্ধিত জলের ঘাটতি ভূমির বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে খাদ্য উৎপাদনের অনুপযোগী করে তুলছে।
যখন দুর্যোগ আঘাত হানে, তারাই কম শক্তি এবং কম সম্পদের অধিকারী যারা সর্বদাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে তারা দারিদ্র্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে, কারণ যারা খরা বা বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের অবশ্যই কম দামে তাদের জমি বা গবাদিপশু বিক্রি করতে হবে, কার্যকরভাবে দরিদ্র থেকে ধনীদের কাছে সম্পদ স্থানান্তর করতে হবে। এটি অনুমান করা হয়েছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে, জলবায়ু পরিবর্তন ১২০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিতে পারে। আমাদের দেশে জলবায়ুর ঝুঁকি বাড়ায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এখন দারিদ্র্যের শীর্ষ সীমায় এসেছে।
বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনাগুলোর ৯৫ শতাংশই ঘটে বন্যা ও ঝড়ের কারণে। তাই দারিদ্র্য নিরসন প্রকল্পে জলবায়ু পরিবর্তনে মানবসৃষ্ট হুমকিসমূহকে প্রতিহত করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় রিসাইকেলিং প্রক্রিয়াকে গতিশীল করার পাশাপাশি পলি-ইথিলিনের ব্যবহার কমাতে হবে। ব্যয়বহুল এবং দরিদ্র মানের স্বাস্থ্য যতœ সেবার কারণে দরিদ্ররা তাদের এলাকায় সঠিক স্বাস্থ্যপরিসেবা অভাবে ভুগছে। বিশেষত বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্যপ্রবণতা ও কম ৩৭.৯২% নিরাপদ শৌচাগারের প্রতুলতা বিদ্যমান। তাই নিরাপদ শৌচাগার বিনির্মানের অন্তরায়গুলোকে অপসারণ করতে হবে।
বিদ্যমান কৃষিকাজে পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষত আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য আমাদের লবণাক্ততা–সহিষ্ণু শস্য, ফল ও ফসল খুঁজতে হবে। এছাড়াও যেসব অঞ্চলে নিয়মিত প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘটে সেসব অঞ্চলে শস্যবীমা খুবই প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণু শহর গড়ে তোলায় সামগ্রিক দৃষ্টিপাতে দারিদ্র্য নিরসন করা টেকসই উন্নয়নকে একধাপ এগিয়ে রাখতে সহায়তা করবে।
সুমাইয়া আকতার