মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শিশুদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষায় পরিবার ও সমাজের ভূমিকা
শিশু-কিশোররা অনুকরণ প্রিয়। হাজার কথার চেয়ে একটা বাস্তব উদাহরণকেই তারা খুব দ্রুত বুঝে নেয়। বড়রা ছোটদের কাছ থেকে কিছু সুনির্দিষ্ট ও ইতিবাচক আচরণ যেমন, বড়দের সম্মান ও শ্রদ্ধা করা এবং বাধ্যগত থেকে আদেশ, উপদেশ, নির্দেশ ও অনুরোধ প্রতিপালনের প্রত্যাশা করে। শিশু থেকে তরুণ বয়সীদের কাছ থেকে অবাধ্যতা, উচ্ছৃঙ্খলতা ও অসদাচরণ পরিবার ও সমাজের কারোরই কাম্য নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকের আধুনিক সময়ে এদেরই একটা বড় অংশ প্রত্যাশিত আচরণ ও অভ্যাসের চর্চা থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। শিষ্টাচার, শ্রদ্ধাবোধ ও সৌজন্যতার সীমা প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিস্তৃত হচ্ছে খামখেয়ালি ও অসম্মানজনক আচরণের পরিধি। এমন অপ্রত্যাশিত বর্তমানের নেপথ্যে যেমন কিছু কারণ রয়েছে তেমনি দায় রয়েছে পরিবার ও সমাজের। পরিবারই হলো আমাদের প্রথম পাঠশালা। একজন শিশু বা কিশোর দিনের সিংহভাগ সময় কাটায় মা-বাবা ও পরিবারের অপরাপর সদস্যদের সান্নিধ্যে। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, মূল্যবোধ ও প্রত্যাশিত সামাজিক সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ সব পাঠ তার পরিবার থেকেই পাওয়ার কথা। এক্ষেত্রে তার ঘাটতি, পরিবারের সদস্যদের একে অপরের প্রতি নেতিবাচক আচরণ এবং কলহের সরাসরি প্রভাব পড়ে ছোটদের মনে। তারা সেই আচরণের অনুকরণে উদ্বুদ্ধ হয়। তাছাড়া, বয়ঃসন্ধিকালে প্রতিটি শিশু-কিশোর শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশেষ যত্নের দাবিদার। কিন্তু অনেকক্ষেত্রে পরিবারিক প্রতিকূল পরিবেশ ও অভিভাবকদের অসচেতনতায় তারা বিশেষ যত্ন হতে বঞ্চিত হয়। নিয়ন্ত্রণহীন স্বাধীনতা, বয়ঃসন্ধিকালীন আবেগ, পরিবার ও সমাজে শিষ্টাচার ও প্রকৃত মূল্যবোধের চর্চার অনুপস্থিতিতে তারা পরিবার ও সমাজের বয়স্ক সদস্যগণের প্রতি প্রত্যাশিত সম্মান, শ্রদ্ধা ও বাধ্যগত আচরণের প্রত্যাশা পূরণ ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে, উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতি ও ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার ছোটদের বিগড়ে দিচ্ছে। তাদের অসৌজন্যতা ও বদভ্যাসে ব্যস্ত করছে অপসংস্কৃতি ও মূল্যবোধ বিবর্জিত বিনোদন। আবার, ছোটদের কাছ থেকে বড়রা যেমন শিষ্টাচার ও মূল্যবোধের চর্চা প্রত্যাশা করেন তেমনি ছোটরাও বড়দের কাছ থেকে আদর ও ভালোবাসার পাশাপাশি ইতিবাচক মূল্যায়নের আশা করে। শিশু-কিশোর ও তরুণদের সুঅভ্যাস ও আচরণে অভ্যস্ত করতে মুখের কথা বা শাসন অপেক্ষা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সুশৃঙ্খল পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ এবং ছোটদের প্রতি বড়দের সমীহপূর্ণ আচরণ। নৈতিক অবক্ষয়ের অভিশাপ থেকে ছোটদের বাঁচাতে হলে বড়দের কর্তৃত্বপূর্ণ আচরণে লাগাম টেনে মনোযোগ বাড়াতে হবে সুষ্ঠু সংস্কৃতি ও মূল্যবোধপূর্ণ পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা সংগঠনের প্রতি। পরিবারে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতের পাশাপাশি বড়দের আচার-আচরণেও তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে। কারণ, ছোটদের আমরা যে পরিবেশে রাখব সেই পরিবেশের শিক্ষায় তারা বড় হবে। বিশৃঙ্খল ও অসামাজিক আচরণ, ত্রুটিপূর্ণ অভ্যাস, শিষ্টাচারবহির্ভূত চলাফেরার স্বাধীনতায় বাস করে আমরা যদি ছোটদের পারিবারিক ও সামাজিক শিষ্টাচার, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ এবং নিয়ন্ত্রিত চলাফেরায় অভ্যস্ত করতে চাই তবে তা কখনোই সম্ভব নয়।
আবু ফারুক
সহকারী শিক্ষক
ভাগ্যকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
সদর, বান্দরবান।
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
বুধবার, ০৩ মার্চ ২০২১
শিশুদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষায় পরিবার ও সমাজের ভূমিকা
শিশু-কিশোররা অনুকরণ প্রিয়। হাজার কথার চেয়ে একটা বাস্তব উদাহরণকেই তারা খুব দ্রুত বুঝে নেয়। বড়রা ছোটদের কাছ থেকে কিছু সুনির্দিষ্ট ও ইতিবাচক আচরণ যেমন, বড়দের সম্মান ও শ্রদ্ধা করা এবং বাধ্যগত থেকে আদেশ, উপদেশ, নির্দেশ ও অনুরোধ প্রতিপালনের প্রত্যাশা করে। শিশু থেকে তরুণ বয়সীদের কাছ থেকে অবাধ্যতা, উচ্ছৃঙ্খলতা ও অসদাচরণ পরিবার ও সমাজের কারোরই কাম্য নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকের আধুনিক সময়ে এদেরই একটা বড় অংশ প্রত্যাশিত আচরণ ও অভ্যাসের চর্চা থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। শিষ্টাচার, শ্রদ্ধাবোধ ও সৌজন্যতার সীমা প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিস্তৃত হচ্ছে খামখেয়ালি ও অসম্মানজনক আচরণের পরিধি। এমন অপ্রত্যাশিত বর্তমানের নেপথ্যে যেমন কিছু কারণ রয়েছে তেমনি দায় রয়েছে পরিবার ও সমাজের। পরিবারই হলো আমাদের প্রথম পাঠশালা। একজন শিশু বা কিশোর দিনের সিংহভাগ সময় কাটায় মা-বাবা ও পরিবারের অপরাপর সদস্যদের সান্নিধ্যে। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, মূল্যবোধ ও প্রত্যাশিত সামাজিক সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ সব পাঠ তার পরিবার থেকেই পাওয়ার কথা। এক্ষেত্রে তার ঘাটতি, পরিবারের সদস্যদের একে অপরের প্রতি নেতিবাচক আচরণ এবং কলহের সরাসরি প্রভাব পড়ে ছোটদের মনে। তারা সেই আচরণের অনুকরণে উদ্বুদ্ধ হয়। তাছাড়া, বয়ঃসন্ধিকালে প্রতিটি শিশু-কিশোর শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশেষ যত্নের দাবিদার। কিন্তু অনেকক্ষেত্রে পরিবারিক প্রতিকূল পরিবেশ ও অভিভাবকদের অসচেতনতায় তারা বিশেষ যত্ন হতে বঞ্চিত হয়। নিয়ন্ত্রণহীন স্বাধীনতা, বয়ঃসন্ধিকালীন আবেগ, পরিবার ও সমাজে শিষ্টাচার ও প্রকৃত মূল্যবোধের চর্চার অনুপস্থিতিতে তারা পরিবার ও সমাজের বয়স্ক সদস্যগণের প্রতি প্রত্যাশিত সম্মান, শ্রদ্ধা ও বাধ্যগত আচরণের প্রত্যাশা পূরণ ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে, উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতি ও ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার ছোটদের বিগড়ে দিচ্ছে। তাদের অসৌজন্যতা ও বদভ্যাসে ব্যস্ত করছে অপসংস্কৃতি ও মূল্যবোধ বিবর্জিত বিনোদন। আবার, ছোটদের কাছ থেকে বড়রা যেমন শিষ্টাচার ও মূল্যবোধের চর্চা প্রত্যাশা করেন তেমনি ছোটরাও বড়দের কাছ থেকে আদর ও ভালোবাসার পাশাপাশি ইতিবাচক মূল্যায়নের আশা করে। শিশু-কিশোর ও তরুণদের সুঅভ্যাস ও আচরণে অভ্যস্ত করতে মুখের কথা বা শাসন অপেক্ষা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সুশৃঙ্খল পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ এবং ছোটদের প্রতি বড়দের সমীহপূর্ণ আচরণ। নৈতিক অবক্ষয়ের অভিশাপ থেকে ছোটদের বাঁচাতে হলে বড়দের কর্তৃত্বপূর্ণ আচরণে লাগাম টেনে মনোযোগ বাড়াতে হবে সুষ্ঠু সংস্কৃতি ও মূল্যবোধপূর্ণ পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা সংগঠনের প্রতি। পরিবারে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতের পাশাপাশি বড়দের আচার-আচরণেও তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে। কারণ, ছোটদের আমরা যে পরিবেশে রাখব সেই পরিবেশের শিক্ষায় তারা বড় হবে। বিশৃঙ্খল ও অসামাজিক আচরণ, ত্রুটিপূর্ণ অভ্যাস, শিষ্টাচারবহির্ভূত চলাফেরার স্বাধীনতায় বাস করে আমরা যদি ছোটদের পারিবারিক ও সামাজিক শিষ্টাচার, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ এবং নিয়ন্ত্রিত চলাফেরায় অভ্যস্ত করতে চাই তবে তা কখনোই সম্ভব নয়।
আবু ফারুক
সহকারী শিক্ষক
ভাগ্যকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
সদর, বান্দরবান।