মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
পরিবেশ সুস্থ রাখতে গাছের অবদান অনস্বীকার্য। শৈশব থেকে একটি নবজাতক যেমন ক্রমে বড় হয়ে উপার্জনক্ষম হয় তেমনই একটি বীজ ক্রমে চারা গাছ থেকে বৃক্ষে পরিণত হয়ে প্রকৃতির কাছে ঋণ রূপে প্রাণিজগতের অস্তিত্ব রক্ষার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেয়। এখন পৃথিবীর সব দেশের মানুষই গাছের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। প্রাণিকুলের ওপর গাছ সবচেয়ে বড় অবদানটি রাখে। তারা আমাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং প্রকৃতি থেকে বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নেয়। আমরা অক্সিজেন গ্রহণ করি এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ত্যাগ করি, যা সালোক সংশ্লেষণের ঠিক বিপরীত।
গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাব মোকাবিলার পদ্ধতি হিসেবেও গাছের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বায়ুমন্ডলে বিষাক্ত গ্যাস সঞ্চারের ফলে গ্রহের বায়ুমন্ডল আগের চেয়ে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। শিল্পবিপ্লবের পর থেকে এটি আরও বেশি দূষিত করছে। একটি পরিণত গাছ প্রতি বছর ২২ কেজির বেশি বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রকৃতি থেকে শোষণ করে। গাছ মাটি ক্ষয় রোধ করে, গাছ মাটিকে আর্দ্র রাখে। গাছ শব্দদূষণ হ্রাস করে। শহরাঞ্চল সাধারণত একটি কোলাহলপূর্ণ এলাকা। প্রতিনিয়ত এখানে ব্যাপকহারে শব্দ দূষণ হয়। কিন্তু শহরের কোন পার্কে যদি আপনি গিয়ে থাকেন তাহলে খেয়াল করবেন, শহরের অন্যান্য অনেক জায়গা থেকে কতটা কম শব্দ শুনতে পাচ্ছেন।
গাছ আমাদের সূর্যের হাত থেকেও রক্ষা করে এবং সতেজ করে। গ্রীষ্মকাল মাথার ওপরে সূর্যের তির্যক রশ্মি যখন কিরণ দেয় তখনও গাছ আমাদের পরম বন্ধু হিসেবে আবির্ভূত হয়। গাছ আমাদের ছায়া দেয় এবং তাদের পাতাগুলো দিয়ে জলীয়বাষ্প ছেড়ে দেয়। এ ছাড়া গাছ থেকে আমরা কাঠ আহরণ করি। আমাদের যে আসবাবপত্রের প্রয়োজন তার অধিকাংশ তৈরি হয় গাছ থেকে আহরণকৃত কাঠ থেকে। তাছাড়া গাছ আমাদের খাদ্য সরবরাহ করে। গাছ এ বিশ্বের শোভাবর্ধন করে, সবুজে সাজিয়ে রেখেছে এ পৃথিবীকে।
এত উপকার এত অবদানের পরেও আমরা অবাধে বন উজাড় করছি। কারণে অকারণে গাছ কাটছি। বিশ্বজুড়ে বনভূমি উজাড়ের হার এখন উদ্বেগজনক। ন্যাচারের গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি বছর সমগ্র পৃথিবীতে গড়ে ১৫ বিলিয়ন গাছ কাটা পড়ছে। শিল্পের প্রসারের পর থেকে পৃথিবীতে প্রায় ৩২ শতাংশ বনভূমি কমেছে, যা ক্রমাগত হারে বেড়েই চলেছে। আমাজনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে আমাজন বনের ব্রাজিল অংশ আগুনে জ্বলছিল। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ আগুনের পরিমাণ ৮৪ শতাংশ বেশি ছিল। ফুসফুস খ্যাত আমাজনকে জ্বলতে দেখে বিশ্বনেতাসহ সাধারণ মানুষ সবাই চিন্তায় পড়ে যান।
এভাবেই ক্রমাগত প্রকৃতি থেকে গাছ কমতে থাকলে সমগ্র পৃথিবী ব্যাপক হুমকির মধ্যে পড়বে। পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষা করা দুষ্কর হয়ে উঠবে। বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বাড়ছে। দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় তো বটেই, ব্যক্তি পর্যায়েও গাছ লাগাতে এগিয়ে আসতে হবে। তাই সর্বত্র গাছ লাগানোর উদ্যোগ বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। তাই ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’-এই স্লোগানের যথাযথ অনুধাবন করে আমরা গাছ লাগাব এবং পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করব।
ইসতিয়াক আহমেদ হিমেল
কুষ্টিয়া
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০২২
পরিবেশ সুস্থ রাখতে গাছের অবদান অনস্বীকার্য। শৈশব থেকে একটি নবজাতক যেমন ক্রমে বড় হয়ে উপার্জনক্ষম হয় তেমনই একটি বীজ ক্রমে চারা গাছ থেকে বৃক্ষে পরিণত হয়ে প্রকৃতির কাছে ঋণ রূপে প্রাণিজগতের অস্তিত্ব রক্ষার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেয়। এখন পৃথিবীর সব দেশের মানুষই গাছের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। প্রাণিকুলের ওপর গাছ সবচেয়ে বড় অবদানটি রাখে। তারা আমাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং প্রকৃতি থেকে বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নেয়। আমরা অক্সিজেন গ্রহণ করি এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ত্যাগ করি, যা সালোক সংশ্লেষণের ঠিক বিপরীত।
গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাব মোকাবিলার পদ্ধতি হিসেবেও গাছের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বায়ুমন্ডলে বিষাক্ত গ্যাস সঞ্চারের ফলে গ্রহের বায়ুমন্ডল আগের চেয়ে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। শিল্পবিপ্লবের পর থেকে এটি আরও বেশি দূষিত করছে। একটি পরিণত গাছ প্রতি বছর ২২ কেজির বেশি বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রকৃতি থেকে শোষণ করে। গাছ মাটি ক্ষয় রোধ করে, গাছ মাটিকে আর্দ্র রাখে। গাছ শব্দদূষণ হ্রাস করে। শহরাঞ্চল সাধারণত একটি কোলাহলপূর্ণ এলাকা। প্রতিনিয়ত এখানে ব্যাপকহারে শব্দ দূষণ হয়। কিন্তু শহরের কোন পার্কে যদি আপনি গিয়ে থাকেন তাহলে খেয়াল করবেন, শহরের অন্যান্য অনেক জায়গা থেকে কতটা কম শব্দ শুনতে পাচ্ছেন।
গাছ আমাদের সূর্যের হাত থেকেও রক্ষা করে এবং সতেজ করে। গ্রীষ্মকাল মাথার ওপরে সূর্যের তির্যক রশ্মি যখন কিরণ দেয় তখনও গাছ আমাদের পরম বন্ধু হিসেবে আবির্ভূত হয়। গাছ আমাদের ছায়া দেয় এবং তাদের পাতাগুলো দিয়ে জলীয়বাষ্প ছেড়ে দেয়। এ ছাড়া গাছ থেকে আমরা কাঠ আহরণ করি। আমাদের যে আসবাবপত্রের প্রয়োজন তার অধিকাংশ তৈরি হয় গাছ থেকে আহরণকৃত কাঠ থেকে। তাছাড়া গাছ আমাদের খাদ্য সরবরাহ করে। গাছ এ বিশ্বের শোভাবর্ধন করে, সবুজে সাজিয়ে রেখেছে এ পৃথিবীকে।
এত উপকার এত অবদানের পরেও আমরা অবাধে বন উজাড় করছি। কারণে অকারণে গাছ কাটছি। বিশ্বজুড়ে বনভূমি উজাড়ের হার এখন উদ্বেগজনক। ন্যাচারের গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি বছর সমগ্র পৃথিবীতে গড়ে ১৫ বিলিয়ন গাছ কাটা পড়ছে। শিল্পের প্রসারের পর থেকে পৃথিবীতে প্রায় ৩২ শতাংশ বনভূমি কমেছে, যা ক্রমাগত হারে বেড়েই চলেছে। আমাজনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে আমাজন বনের ব্রাজিল অংশ আগুনে জ্বলছিল। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ আগুনের পরিমাণ ৮৪ শতাংশ বেশি ছিল। ফুসফুস খ্যাত আমাজনকে জ্বলতে দেখে বিশ্বনেতাসহ সাধারণ মানুষ সবাই চিন্তায় পড়ে যান।
এভাবেই ক্রমাগত প্রকৃতি থেকে গাছ কমতে থাকলে সমগ্র পৃথিবী ব্যাপক হুমকির মধ্যে পড়বে। পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষা করা দুষ্কর হয়ে উঠবে। বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বাড়ছে। দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় তো বটেই, ব্যক্তি পর্যায়েও গাছ লাগাতে এগিয়ে আসতে হবে। তাই সর্বত্র গাছ লাগানোর উদ্যোগ বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। তাই ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’-এই স্লোগানের যথাযথ অনুধাবন করে আমরা গাছ লাগাব এবং পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করব।
ইসতিয়াক আহমেদ হিমেল
কুষ্টিয়া