মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
অপরূপ বাংলার প্রকৃতিতে চলছে শীতের আমেজ। কুয়াশার চাদর ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে সূর্যিমামা। ঘাসের ওপরে শিশিরের ছোঁয়া আর কুয়াশাচ্ছন্ন সকালের রাস্তাঘাট সমস্বরে শীতের আর্বিভাবকে জানান দিচ্ছে। গ্রামের কর্মব্যস্ত কৃষক ছুটছে ক্ষেত-খামারে, গাছিরা ব্যস্ত হয়ে উঠেছে খেজুর গাছ কাটায়। চারিদিকে সৌন্দর্যের ছড়াছড়িতে প্রকৃতি যেন আপন মনে সাজতে শুরু করেছে।
এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও হিমালয়ের পাদদেশ আর রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখিরা। বিশেষ করে সাইবেরিয়া, ফিলিপিন্স, আসাম, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ডসহ তিব্বতের উপত্যকা অঞ্চল থেকে শীতের তীব্র প্রকোপে এসব পাখিরা নিজেদের কিছুদিনের জন্য এই পরিবেশে মানিয়ে নেয়। নির্দিষ্ট একটা সময় শেষে তারা আবারও হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ফিরে যায় তাদের স্থায়ী আবাসস্থলে। মূলত খাদ্য ও পরিবেশগত কিছু সুবিধায় নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য তারা নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য দেশান্তর হয়ে আমাদের দেশে পাড়ি দেয়। অতিরিক্ত শীতের কারনে বহু পথ পাড়ি দিয়ে আসা এসব পাখিদের পালক পড়ে যায়। পরবর্তী এ পরিবেশে বেশকিছু থাকার পর অনুকূল পরিবেশ পেয়ে তারা আবারও স্বাভাবিক গড়নে ফিরে আসে।
আগত এসব অতিথি পাখিদের নিরাপদ এই আবাসস্থলে হানা দেয় আমাদের দেশের একশ্রেণীর অতিলোভী শিকারিরা। তারা ফাঁদ পেতে থাকে বসে এই মৌসুমের জন্য। তাদের এমন অমানবিক নিষ্ঠুর কাজের জন্য কমতে শুরু করেছে অতিথি পাখির বিচরণ। যা আমাদের প্রকৃতির জন্য হুমকিস্বরূপ। পাখি শিকারিদের এমন আচারণ বন্ধ করা না করা গেলে একটা সময় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। যা আমাদের জন্য কোনভাবেই কাম্য নয়।
পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘এক দশক আগেও এ দেশে ২০০ থেকে ২১৫ প্রজাতির অতিথি পাখি আসত। তবে এ সংখ্যা বছর গড়াতেই ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে।’ যার অন্যতম কারণ হলো অবাধে পাখি শিকার আর জলাভূমির সংকট। আমাদের মধ্যে প্রকৃতিপ্রেমের বড় ঘাটতি তৈরি করছে। পাশাপাশি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের পরিবেশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অতিথি পাখির জন্য ১২টি অভয়ারণ্য থাকার কথা রয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে তাদের বাসযোগ্য অভয়ারণ্য বলতে যা বোঝায় তা আজও পরিপূর্ণভাবে গড়ে উঠেনি। এর বাইরে গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল, জলাশয়ের পরিবেশ আরও কমতে শুরু করেছে। যার ফলে অতিথি পাখির সংখ্যা কমার পাশাপাশি যারা আসছে তারাও অনুকূল আবহাওয়া পাচ্ছে না।
এসব পাখিদের রক্ষা করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিসচেতনতা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনের ২৬ ধারা মতে, পাখি শিকার ও হত্যা দন্ডনীয় অপরাধ। এ আইনে বলা হয়েছে, পোষা পাখি লালন-পালন, খামার স্থাপন, কেনা-বেচার জন্য লাইসেন্স নিতে হবে। না নিলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। তবে শুধু আইন প্রণয়ন করে অতিথি পাখি রক্ষা করা সম্ভব নয়। আইনের এসব ধারা কতৃপক্ষকে মাঠপর্যায়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতা আর আমাদের মধ্যে প্রকৃতিপ্রেম ছাড়া আগত এসব অতিথি পাখির জন্য নিরাপদ অভয়ারণ্যে তৈরি করা কিংবা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব নয়।
রিয়াদ হোসেন
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২
অপরূপ বাংলার প্রকৃতিতে চলছে শীতের আমেজ। কুয়াশার চাদর ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে সূর্যিমামা। ঘাসের ওপরে শিশিরের ছোঁয়া আর কুয়াশাচ্ছন্ন সকালের রাস্তাঘাট সমস্বরে শীতের আর্বিভাবকে জানান দিচ্ছে। গ্রামের কর্মব্যস্ত কৃষক ছুটছে ক্ষেত-খামারে, গাছিরা ব্যস্ত হয়ে উঠেছে খেজুর গাছ কাটায়। চারিদিকে সৌন্দর্যের ছড়াছড়িতে প্রকৃতি যেন আপন মনে সাজতে শুরু করেছে।
এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও হিমালয়ের পাদদেশ আর রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখিরা। বিশেষ করে সাইবেরিয়া, ফিলিপিন্স, আসাম, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ডসহ তিব্বতের উপত্যকা অঞ্চল থেকে শীতের তীব্র প্রকোপে এসব পাখিরা নিজেদের কিছুদিনের জন্য এই পরিবেশে মানিয়ে নেয়। নির্দিষ্ট একটা সময় শেষে তারা আবারও হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ফিরে যায় তাদের স্থায়ী আবাসস্থলে। মূলত খাদ্য ও পরিবেশগত কিছু সুবিধায় নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য তারা নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য দেশান্তর হয়ে আমাদের দেশে পাড়ি দেয়। অতিরিক্ত শীতের কারনে বহু পথ পাড়ি দিয়ে আসা এসব পাখিদের পালক পড়ে যায়। পরবর্তী এ পরিবেশে বেশকিছু থাকার পর অনুকূল পরিবেশ পেয়ে তারা আবারও স্বাভাবিক গড়নে ফিরে আসে।
আগত এসব অতিথি পাখিদের নিরাপদ এই আবাসস্থলে হানা দেয় আমাদের দেশের একশ্রেণীর অতিলোভী শিকারিরা। তারা ফাঁদ পেতে থাকে বসে এই মৌসুমের জন্য। তাদের এমন অমানবিক নিষ্ঠুর কাজের জন্য কমতে শুরু করেছে অতিথি পাখির বিচরণ। যা আমাদের প্রকৃতির জন্য হুমকিস্বরূপ। পাখি শিকারিদের এমন আচারণ বন্ধ করা না করা গেলে একটা সময় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। যা আমাদের জন্য কোনভাবেই কাম্য নয়।
পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘এক দশক আগেও এ দেশে ২০০ থেকে ২১৫ প্রজাতির অতিথি পাখি আসত। তবে এ সংখ্যা বছর গড়াতেই ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে।’ যার অন্যতম কারণ হলো অবাধে পাখি শিকার আর জলাভূমির সংকট। আমাদের মধ্যে প্রকৃতিপ্রেমের বড় ঘাটতি তৈরি করছে। পাশাপাশি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের পরিবেশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অতিথি পাখির জন্য ১২টি অভয়ারণ্য থাকার কথা রয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে তাদের বাসযোগ্য অভয়ারণ্য বলতে যা বোঝায় তা আজও পরিপূর্ণভাবে গড়ে উঠেনি। এর বাইরে গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল, জলাশয়ের পরিবেশ আরও কমতে শুরু করেছে। যার ফলে অতিথি পাখির সংখ্যা কমার পাশাপাশি যারা আসছে তারাও অনুকূল আবহাওয়া পাচ্ছে না।
এসব পাখিদের রক্ষা করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিসচেতনতা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনের ২৬ ধারা মতে, পাখি শিকার ও হত্যা দন্ডনীয় অপরাধ। এ আইনে বলা হয়েছে, পোষা পাখি লালন-পালন, খামার স্থাপন, কেনা-বেচার জন্য লাইসেন্স নিতে হবে। না নিলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। তবে শুধু আইন প্রণয়ন করে অতিথি পাখি রক্ষা করা সম্ভব নয়। আইনের এসব ধারা কতৃপক্ষকে মাঠপর্যায়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতা আর আমাদের মধ্যে প্রকৃতিপ্রেম ছাড়া আগত এসব অতিথি পাখির জন্য নিরাপদ অভয়ারণ্যে তৈরি করা কিংবা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব নয়।
রিয়াদ হোসেন
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ