alt

মুক্ত আলোচনা

বিবেকের লড়াই

রহমান মৃধা

: রোববার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

আচ্ছা আমরা যেমন করে আমাদের প্রিয়জনদের ভালোবাসি, অনুভব করি, ঠিক সেই রকম অনুভূতি এবং ভালোবাসা কি তৈরি করতে পেরেছি স্রষ্টার প্রতি? যেমন ধরুন সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানো নিয়ে আমরা নিন্দা করেছি ঠিকই কিন্তু যদি এমন হতো কুরআন নয় আমার ছেলেকে যদি কেউ পোড়াতো, আমি কি শুধু নিন্দা করেই ক্ষান্ত হতাম বা আমি কি পারতাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে? না। কারণ আমার ভালোবাসা, মায়া প্রচন্ড তীব্র আমার আপন জনের প্রতি। আমি স্রষ্টার গুণগান গাই শুধুমাত্র ভয়ে কারণ মাঝে মধ্যে বিপদ আমায় তাড়া করে তাই। আমাকে স্রষ্টার প্রতি ভয় নয় ভালোবাসা তৈরি করতে হবে।

তবে আমি মাঝে মাঝে ভাবি জিন আগুনের তৈরি তাদের মধ্য থেকে ইবলিশ শয়তান হলো এবং সেই ইবলিশ কেন আমাদের মন্দ পথে নিয়ন্ত্রণ করবে? আমরা না স্রষ্টার সৃষ্ট জীব? আমাদের মধ্যে এই শয়তান কেন ঠাঁই পেলো!

যেহেতু বলা হয়েছে ফেরেশতারা শুধু আল্লাহর নির্দেশে চলে তাহলে ইবলিশ কেন আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করলো? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না যেমনটি যদি বলি ডিম না মুরগী আগে হয়েছে! তারপরও আমি পবিত্র কুরআনের কিছু সূরা এবং আয়াত তুলে ধরেছি বিষয়টি বুঝার জন্য।

সূরা বাকারাহ, আয়াত ৩৪ -এ বর্ণনা রয়েছে “যখন ‘আমি’ ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, ‘আদমের প্রতি সিজদা করো’, তখন তারা সিজদা করেছিল, তবে ইবলিস ছাড়া। ইবলিসকে তার জ্ঞান এবং যোগ্যতার জন্য ফেরেশতা উপাধি দেয়া হয় (ইবলিস আসলে একজন সম্মানিত ফেরেশতা ছিল আর তাই তার নতুন নাম দেয়া হয় আজাজিল, অর্থাৎ ইবলিস জেনেটিকালি জিন হলেও সে ফেরেশতার সম্মানপ্রাপ্ত ছিল। এরপর আদমকে সিজদার আদেশ অমান্য করার পর তার নাম হয় ইবলিস বা অভিশপ্ত)। ইবলিস ফেরেশতা ছিল না, এর আরও একটা প্রমাণ হলো সে যদি ফেরেশতা হতো তাহলে আল্লাহ্র নির্দেশ অমান্য করতো না। কারণ কুরআনেই ফেরেশতাদের প্রাথমিক গুণ সম্পর্কে বলা হয়েছে- “তারা আল্লাহ্র আদেশ অমান্য করে না, এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।” [সূরা আত-তাহরীম ৬৬:৬] ইবলিস যে জিন ছিল এব্যাপারে কুরআনে পরিষ্কার আয়াত রয়েছে- “‘আমি’ যখন ফেরেশতাদেরকে বললাম, “আদমের প্রতি সিজদা করো’, তারা সবাই করেছিল, ইবলিস ছাড়া—সে ছিল জিনদের একজন।” [সূরা আল-কাহফ ১৮:৫০]

আদম (আ.)-কে সেজদা করার নির্দেশ অমান্য করেছিল ইবলিস। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অমান্য করার কারণে শয়তানে পরিণত হয়েছে সে। এর আগে শয়তান বলতে কেউ ছিল না। তাহলে তাকে কে ধোঁকা দিয়েছিল? এই প্রশ্নটি আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি।

‘বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের পালনকর্তার কাছে, মানুষের অধিপতির কাছে, মানুষের মাবুদের কাছে, কুমন্ত্রণাদানকারী অনিষ্ট থেকে, যে গা ঢাকা দেয়, যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। জিনদের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে’ (সুরা নাস: ১-৬)।

‘আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী’ (সুরা ক্বাফ: ১৬)।

‘নিশ্চয় নাফস মন্দ কাজের নির্দেশ দিয়ে থাকে’ (সুরা ইউসুফ: ৫২)।

নফসের ধোঁকার ভিত্তি হলো চিন্তা ভাবনা ও যুক্তি। আর শয়তান তার নিজস্ব যুক্তিভিত্তিক ধোঁকায় পরে আদমকে সেজদা করা থেকে বিরত থেকেছিল। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছে যে, সিজদা করছো না, যখন আমি তোমাকে নির্দেশ দিয়েছি’? সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে’ (সুরা আরাফ: ১২)। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইবলিস ছিল জ্বিন জাতির অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ তাআলা মানুষ ও জ্বিনকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। অর্থাৎ চিন্তা ও কাজের স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং বলে দিয়েছেন যে, কর্ম অনুযায়ী পরকালে তাদের বিচার হবে। ‘হে মানুষ ও জ্বিন! অচিরেই তোমাদের (হিসাব নিকাশের) প্রতি মনোনিবেশ করবো’ (সুরা রহমান: ৭৮)। ইবলিস যেহেতু জ্বিন, তাই সে নফসের ধোঁকায় পড়ে তার স্বাধীনতা প্রয়োগ করতে গিয়ে অহংকার করেছে। অর্থাৎ তার মনে হয়েছে, মাটির তৈরি মানুষকে সেজদা করা শোভনীয় হবে না। কিন্তু সে তার এই অহংকারী মনোভাব এমনভাবে প্রকাশ করেছে যে, স্বয়ং স্রষ্টার আদেশই অমান্য করেছে। ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনবে ও সৎকর্ম করবে, তারাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য পুরস্কার হিসেবে রয়েছে স্থায়ী জান্নাত; যার নিম্নদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়, সেথায় তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। এটি তার জন্য যে তার প্রতিপালককে সমীহ করে’ (সুরা বাইয়্যিনাহ: ৭-৮)।

মাথায় এ ধরনের চিন্তা নিয়ে পড়ন্ত বিকেলে হাঁটছি, আকাশ মেঘে ভরা, বাতাস বইছে বেশ। ওরা একা নয়, সংখ্যায় অনেক। আকাশে পাখা মেলে, এক অপুর্ব সুন্দর মালা গেঁথে দলবদ্ধ হয়ে উড়ন্ত এক ঝাঁক বুনোহাঁস; হঠাৎ চোখের পলকে ঝাঁপিয়ে পড়লো বাল্টিক সাগরের বুকে। কী চমৎকার মধুর মিলন এ বুনোহাঁসগুলোর মাঝে! সবাই এক সঙ্গে চলছে! অবাক হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছি আমি। এমন একটি মধুময় সময়ে বিবেক এসে হাজির, জিজ্ঞেস করলো–নিঃশব্দে নীরবে বাল্টিক সাগরের বিস্তির্ণ দুপাড়ের অসংখ্য গাছপালার মাঝে হেঁটে চলেছ আর কী ভাবছো? বললাম, না মানে আমি এ বুনোহাঁসগুলোকে দেখছি। তাদের নৈতিকতার পতন হয়নি। তারা আমাদের মতো মানবতার পতন ঘটায়নি। তারা মানুষের নির্লজ্জ চরিত্রের পরিচয় দেয়নি। তারা জ্ঞানবিহীন, নিরক্ষর বা খাদ্যবিহীন নাগরিকের মতো আচরণ করেনি। তারা এক সঙ্গে কী সুন্দর করে চলাফেরা করছে আমি তা দেখছি আর ভাবছি! আমরা কোটি কোটি সবল সংগ্রামী মানুষ আজও জাগাতে পারিনি আমাদের মনুষ্যত্বকে। হিংসা, ঘৃণা, অহংকার, পরশ্রীকাতরতা, অবিশ্বাস গ্রাস করতে চলেছে আমাদের বিশ্বাস, মায়া-মমতা, করুণা, প্রেম, প্রীতি আর ভালোবাসাকে!

ঠিক এমন সময় ভাবনা বললো, কারণ জানতে যদি সত্যি ইচ্ছে হয় তাহলে ডাকো আজ সবাইকে, কথা বলতে হবে সবার সঙ্গে। দেখছি বিবেক বেশ অস্থির হয়ে পড়েছে, আমি বললাম –কী ব্যাপার বিবেক তুমিই তো আমাকে প্রশ্ন করলে প্রথমে? বিবেক বললো, হঠাৎ এ পড়ন্ত বিকেলে তুমি সবাইকে নিয়ে বসে এতো পুরণো এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে কি?

আমি বললাম, তুমি পাশে থাকলে না পারার তো কারণ দেখছিনা! আমাকে সেই জন্মের পর সবাই শুধু আদর, স্নেহ, মমতা, সহানুভূতি, প্রেম, প্রীতি এবং ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তুলেছে। যে ভালোবাসায় ছিলো না কোনো শর্ত, ছিলো না কোনো স্বার্থ, সে ভালোবাসায় ছিলো শুধু ভালোবাসা। হঠাৎ শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা দিতেই যতসব ঝামেলা শুরু হলো!

মনে হলো বিবেক তার স্মৃতিচারণ করছে আমাকে দিয়ে। মনের আনন্দে শুনছে এবং বেশ আবেগ প্রবণ হয়েছে। সে সব কিছু জেনেও না জানার ভান করে জিজ্ঞেস করলো, –ঝামেলা শুরু হলো মানে? আমি বললাম, বিনা শর্তে এবং বিনা স্বার্থে সবকিছু যেমন পেয়েছি এখন সেভাবে দিতে কেমন যেন বাঁধা শুরু হয়েছে!

আমার মনে হয় এর পেছনে তোমার (বিবেকের) বড় প্রভাব রয়েছে। বিবেক বললো, আমাকে কেন জড়ালে হঠাৎ? বললাম, শোনো, ঢং করো না আর সাধু সেজো না। আমার ছোটবেলার সব পাওয়া, যা ছিল শুধু ভালোবাসার পাওয়া সেটা তোমার সহ্য হয়নি। বিবেক কিছু বলতেই আমি বললাম, কোনো কথা নয়, আজ তোমাকে সব শুনতে হবে। আমার শৈশব শেষ হতেই তুমি নানা ধরণের সঙ্গ যোগাড় করেছ, যেমন লোভ-লালসা, ঘৃণা, পরশ্রীকাতরতা, হিংসা-বিদ্বেষ আরো কত কী! কী দরকার ছিল সবার সঙ্গে মেশার? তুমি একবারও এদের বাঁধা দাওনি কারণ কী? বিবেক বলল, আরে আমিও তো তোমার মতো ছোট ছিলাম, তখন অতো সব বুঝেছি নাকি? দোষকে দেখিয়ে বিবেক বললো, এ সবের জন্য দোষের বেশ ভূমিকা রয়েছে। বুঝতেই পারিনি আমাদের আশে পাশে নিঃশব্দে নীরবে দোষ হেঁটে চলেছে! দোষ রেগে বিবেককে বললো, তুমি সব সময় জেলাস, পরশ্রীকাতর আর হিংসাকে প্রশ্রয় দিয়েছ তাই তোমাকে আমি ঘৃণা করি। আমি ওদের কথা শুনে বললাম, তোমাদের কি লজ্জা-শরম বলে কিছুই নেই? দোষ বললো, ‘লজ্জা’? সবাই যখন নেমকহারাম হয়েছে তখন আবার লজ্জা কিসের? বিবেক একটানা বিশ্লেষণ দিতে শুরু করল। সে বলল, জীবনের শুরু থেকে দেয়া-নেয়ার শিক্ষা হয়নি। ছোটবেলা শুধু পেয়েছি, আস্তে আস্তে বড় হয়েছি, চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে।

কিন্তু কৈশোরে ছোটবেলার মতো না চাইতে পাওয়াটা বন্ধ হয়েছে। শরীরে জটিলতা দেখা দিয়েছে, যৌবনের আবির্ভাব হয়েছে। এমন সময় আশপাশের সবকিছু জালের মতো আমাকে (বিবেককে) ঘিরে ফেলেছে। যে যা বলছে শুনছি আর গ্রহণ করছি। সবকিছু তো বুঝতে পারিনি। আমি বললাম, কেন তোমার মুরব্বিরা ছিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল, বাবা-মা ছিল তারা কী করেছে? তারা কি ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা এসবের পার্থক্য শেখায়নি? বিবেক বললো, আমি তো তাদেরকেই ফলো করেছি? ভাবনা হঠাৎ বিষয়টি ধরলো, তাহলে সমাজের পরিকাঠামো এর জন্য দায়ী? আমার পাশে ভালোবাসা, সে চুপচাপ সব শুনছে। তাকে বললাম, কী তুমি তো ছোটবেলা থেকেই ছিলে নিঃশর্ত এবং নিঃস্বার্থ, পরে যৌবনে ঘৃণার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক এতো নির্মম হলো কী করে? ভালোবাসা বললো, সব ন্যাটার গোড়া হলো এ বিনিময়। বিনিময়ের কথা বলতেই সে বেশ ক্ষেপে গেল। বিনিময় বললো, ছোটবেলা থেকে সবকিছু ফ্রি পেয়ে পেয়ে হয়েছো স্বার্থপর, আর কত দিন চলবে বলো? শুধু নিতে শিখেছো, কেউ শেখায়নি তোমাকে যে দিতেও হয়। ভালোবাসার মুখের ওপর যখন বিনিময় এ অপ্রিয় সত্যকথাগুলো বললো, ভালোবাসা তখন বেশ দুঃখ পেলো।

এদিকে বিশ্বাস বললো ভালোবাসাকে, কী ব্যাপার ভালোবাসা? আমি তো সব সময় জানতাম তোমার ভালোবাসায় শুধু ভালোবাসা রয়েছে। ভালোবাসা বললো, সবই ঠিক ছিল আগে, এ ভেজাল ঢুকে সব কিছুর বারোটা বাজিয়েছে। এবার ভেজাল ক্ষেপে গেল। বললো, –শোনো, আমাকে আর দোষকে না জড়িয়ে চরিত্রকে আগে ঠিক করো। তোমাদের ঐ চরিত্রের নেই কোন ঠিক, তারপর লোভ-লালসা চারপাশে ঘুরঘুর করছে। এসব ঠিক না করে আমাদের পিছে লেগে লাভ হবে না।

আলোচনা চলছে, হঠাৎ ধৈর্য বললো, সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, চলো উঠতে হবে। ভাবনা আমার যাবার বেলায় শুধু বললো, সবই জানলে এবং শুনলে কিন্তু নিজের কথা কিছুই বললে না! ফিরতে দেরি হলো তবুও যেতে যেতে ভাবনাকে বললাম, শোধরানোর সময় কি নেই ভাবনা? ভাবনা আমাকে শুধু বললো, ‘তুমি কি সেই আগের মতই আছ, নাকি অনেকখানি বদলে গেছ? জানতে ইচ্ছে করে’!

বিবেক বললো, –আমি আগের মতো নেই, আমার অনেক পরিবর্তন হয়েছে, আমি অনেক পাল্টে গেছি। আমি উদার হয়েছি, আমি মেনে নিতে শিখেছি না পাওয়াকে। আমাকে যদি কেউ ভালো না বাসে আমি তাকে খুন করিনা, এসিড মারিনা বা সরাসরি ঘৃণা করিনা। আমি সুশিক্ষা এবং জ্ঞানের সমন্বয়ে ভয়কে জয় করতে শিখেছি। আমি আমার অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়ে বুঝতে শিখেছি ভালোবাসার মধ্যে রয়েছে বিনিময় যেখানে জোর জুলুমের কোনো জায়গা নেই। ভালোবাসায় রয়েছে শুধু ভালোবাসা।

[লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

রেসলিং

কোটা সমাচার

বাজেট ২০২৪-২৫: তথ্যপ্রযুক্তি খাতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের যাত্রা শুরু হোক এবার

সীমান্ত সড়ক পশ্চাদপদ পার্বত্য অঞ্চলকে উন্নয়নের স্রোতধারায় একীভূত করেছে

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১: উন্নত ও সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশের মহাকাশ জয়

ছবি

নাটোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

রিলিফ

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

tab

মুক্ত আলোচনা

বিবেকের লড়াই

রহমান মৃধা

রোববার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

আচ্ছা আমরা যেমন করে আমাদের প্রিয়জনদের ভালোবাসি, অনুভব করি, ঠিক সেই রকম অনুভূতি এবং ভালোবাসা কি তৈরি করতে পেরেছি স্রষ্টার প্রতি? যেমন ধরুন সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানো নিয়ে আমরা নিন্দা করেছি ঠিকই কিন্তু যদি এমন হতো কুরআন নয় আমার ছেলেকে যদি কেউ পোড়াতো, আমি কি শুধু নিন্দা করেই ক্ষান্ত হতাম বা আমি কি পারতাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে? না। কারণ আমার ভালোবাসা, মায়া প্রচন্ড তীব্র আমার আপন জনের প্রতি। আমি স্রষ্টার গুণগান গাই শুধুমাত্র ভয়ে কারণ মাঝে মধ্যে বিপদ আমায় তাড়া করে তাই। আমাকে স্রষ্টার প্রতি ভয় নয় ভালোবাসা তৈরি করতে হবে।

তবে আমি মাঝে মাঝে ভাবি জিন আগুনের তৈরি তাদের মধ্য থেকে ইবলিশ শয়তান হলো এবং সেই ইবলিশ কেন আমাদের মন্দ পথে নিয়ন্ত্রণ করবে? আমরা না স্রষ্টার সৃষ্ট জীব? আমাদের মধ্যে এই শয়তান কেন ঠাঁই পেলো!

যেহেতু বলা হয়েছে ফেরেশতারা শুধু আল্লাহর নির্দেশে চলে তাহলে ইবলিশ কেন আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করলো? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না যেমনটি যদি বলি ডিম না মুরগী আগে হয়েছে! তারপরও আমি পবিত্র কুরআনের কিছু সূরা এবং আয়াত তুলে ধরেছি বিষয়টি বুঝার জন্য।

সূরা বাকারাহ, আয়াত ৩৪ -এ বর্ণনা রয়েছে “যখন ‘আমি’ ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, ‘আদমের প্রতি সিজদা করো’, তখন তারা সিজদা করেছিল, তবে ইবলিস ছাড়া। ইবলিসকে তার জ্ঞান এবং যোগ্যতার জন্য ফেরেশতা উপাধি দেয়া হয় (ইবলিস আসলে একজন সম্মানিত ফেরেশতা ছিল আর তাই তার নতুন নাম দেয়া হয় আজাজিল, অর্থাৎ ইবলিস জেনেটিকালি জিন হলেও সে ফেরেশতার সম্মানপ্রাপ্ত ছিল। এরপর আদমকে সিজদার আদেশ অমান্য করার পর তার নাম হয় ইবলিস বা অভিশপ্ত)। ইবলিস ফেরেশতা ছিল না, এর আরও একটা প্রমাণ হলো সে যদি ফেরেশতা হতো তাহলে আল্লাহ্র নির্দেশ অমান্য করতো না। কারণ কুরআনেই ফেরেশতাদের প্রাথমিক গুণ সম্পর্কে বলা হয়েছে- “তারা আল্লাহ্র আদেশ অমান্য করে না, এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।” [সূরা আত-তাহরীম ৬৬:৬] ইবলিস যে জিন ছিল এব্যাপারে কুরআনে পরিষ্কার আয়াত রয়েছে- “‘আমি’ যখন ফেরেশতাদেরকে বললাম, “আদমের প্রতি সিজদা করো’, তারা সবাই করেছিল, ইবলিস ছাড়া—সে ছিল জিনদের একজন।” [সূরা আল-কাহফ ১৮:৫০]

আদম (আ.)-কে সেজদা করার নির্দেশ অমান্য করেছিল ইবলিস। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অমান্য করার কারণে শয়তানে পরিণত হয়েছে সে। এর আগে শয়তান বলতে কেউ ছিল না। তাহলে তাকে কে ধোঁকা দিয়েছিল? এই প্রশ্নটি আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি।

‘বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের পালনকর্তার কাছে, মানুষের অধিপতির কাছে, মানুষের মাবুদের কাছে, কুমন্ত্রণাদানকারী অনিষ্ট থেকে, যে গা ঢাকা দেয়, যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। জিনদের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে’ (সুরা নাস: ১-৬)।

‘আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী’ (সুরা ক্বাফ: ১৬)।

‘নিশ্চয় নাফস মন্দ কাজের নির্দেশ দিয়ে থাকে’ (সুরা ইউসুফ: ৫২)।

নফসের ধোঁকার ভিত্তি হলো চিন্তা ভাবনা ও যুক্তি। আর শয়তান তার নিজস্ব যুক্তিভিত্তিক ধোঁকায় পরে আদমকে সেজদা করা থেকে বিরত থেকেছিল। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছে যে, সিজদা করছো না, যখন আমি তোমাকে নির্দেশ দিয়েছি’? সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে’ (সুরা আরাফ: ১২)। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইবলিস ছিল জ্বিন জাতির অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ তাআলা মানুষ ও জ্বিনকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। অর্থাৎ চিন্তা ও কাজের স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং বলে দিয়েছেন যে, কর্ম অনুযায়ী পরকালে তাদের বিচার হবে। ‘হে মানুষ ও জ্বিন! অচিরেই তোমাদের (হিসাব নিকাশের) প্রতি মনোনিবেশ করবো’ (সুরা রহমান: ৭৮)। ইবলিস যেহেতু জ্বিন, তাই সে নফসের ধোঁকায় পড়ে তার স্বাধীনতা প্রয়োগ করতে গিয়ে অহংকার করেছে। অর্থাৎ তার মনে হয়েছে, মাটির তৈরি মানুষকে সেজদা করা শোভনীয় হবে না। কিন্তু সে তার এই অহংকারী মনোভাব এমনভাবে প্রকাশ করেছে যে, স্বয়ং স্রষ্টার আদেশই অমান্য করেছে। ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনবে ও সৎকর্ম করবে, তারাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য পুরস্কার হিসেবে রয়েছে স্থায়ী জান্নাত; যার নিম্নদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়, সেথায় তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। এটি তার জন্য যে তার প্রতিপালককে সমীহ করে’ (সুরা বাইয়্যিনাহ: ৭-৮)।

মাথায় এ ধরনের চিন্তা নিয়ে পড়ন্ত বিকেলে হাঁটছি, আকাশ মেঘে ভরা, বাতাস বইছে বেশ। ওরা একা নয়, সংখ্যায় অনেক। আকাশে পাখা মেলে, এক অপুর্ব সুন্দর মালা গেঁথে দলবদ্ধ হয়ে উড়ন্ত এক ঝাঁক বুনোহাঁস; হঠাৎ চোখের পলকে ঝাঁপিয়ে পড়লো বাল্টিক সাগরের বুকে। কী চমৎকার মধুর মিলন এ বুনোহাঁসগুলোর মাঝে! সবাই এক সঙ্গে চলছে! অবাক হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছি আমি। এমন একটি মধুময় সময়ে বিবেক এসে হাজির, জিজ্ঞেস করলো–নিঃশব্দে নীরবে বাল্টিক সাগরের বিস্তির্ণ দুপাড়ের অসংখ্য গাছপালার মাঝে হেঁটে চলেছ আর কী ভাবছো? বললাম, না মানে আমি এ বুনোহাঁসগুলোকে দেখছি। তাদের নৈতিকতার পতন হয়নি। তারা আমাদের মতো মানবতার পতন ঘটায়নি। তারা মানুষের নির্লজ্জ চরিত্রের পরিচয় দেয়নি। তারা জ্ঞানবিহীন, নিরক্ষর বা খাদ্যবিহীন নাগরিকের মতো আচরণ করেনি। তারা এক সঙ্গে কী সুন্দর করে চলাফেরা করছে আমি তা দেখছি আর ভাবছি! আমরা কোটি কোটি সবল সংগ্রামী মানুষ আজও জাগাতে পারিনি আমাদের মনুষ্যত্বকে। হিংসা, ঘৃণা, অহংকার, পরশ্রীকাতরতা, অবিশ্বাস গ্রাস করতে চলেছে আমাদের বিশ্বাস, মায়া-মমতা, করুণা, প্রেম, প্রীতি আর ভালোবাসাকে!

ঠিক এমন সময় ভাবনা বললো, কারণ জানতে যদি সত্যি ইচ্ছে হয় তাহলে ডাকো আজ সবাইকে, কথা বলতে হবে সবার সঙ্গে। দেখছি বিবেক বেশ অস্থির হয়ে পড়েছে, আমি বললাম –কী ব্যাপার বিবেক তুমিই তো আমাকে প্রশ্ন করলে প্রথমে? বিবেক বললো, হঠাৎ এ পড়ন্ত বিকেলে তুমি সবাইকে নিয়ে বসে এতো পুরণো এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে কি?

আমি বললাম, তুমি পাশে থাকলে না পারার তো কারণ দেখছিনা! আমাকে সেই জন্মের পর সবাই শুধু আদর, স্নেহ, মমতা, সহানুভূতি, প্রেম, প্রীতি এবং ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তুলেছে। যে ভালোবাসায় ছিলো না কোনো শর্ত, ছিলো না কোনো স্বার্থ, সে ভালোবাসায় ছিলো শুধু ভালোবাসা। হঠাৎ শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা দিতেই যতসব ঝামেলা শুরু হলো!

মনে হলো বিবেক তার স্মৃতিচারণ করছে আমাকে দিয়ে। মনের আনন্দে শুনছে এবং বেশ আবেগ প্রবণ হয়েছে। সে সব কিছু জেনেও না জানার ভান করে জিজ্ঞেস করলো, –ঝামেলা শুরু হলো মানে? আমি বললাম, বিনা শর্তে এবং বিনা স্বার্থে সবকিছু যেমন পেয়েছি এখন সেভাবে দিতে কেমন যেন বাঁধা শুরু হয়েছে!

আমার মনে হয় এর পেছনে তোমার (বিবেকের) বড় প্রভাব রয়েছে। বিবেক বললো, আমাকে কেন জড়ালে হঠাৎ? বললাম, শোনো, ঢং করো না আর সাধু সেজো না। আমার ছোটবেলার সব পাওয়া, যা ছিল শুধু ভালোবাসার পাওয়া সেটা তোমার সহ্য হয়নি। বিবেক কিছু বলতেই আমি বললাম, কোনো কথা নয়, আজ তোমাকে সব শুনতে হবে। আমার শৈশব শেষ হতেই তুমি নানা ধরণের সঙ্গ যোগাড় করেছ, যেমন লোভ-লালসা, ঘৃণা, পরশ্রীকাতরতা, হিংসা-বিদ্বেষ আরো কত কী! কী দরকার ছিল সবার সঙ্গে মেশার? তুমি একবারও এদের বাঁধা দাওনি কারণ কী? বিবেক বলল, আরে আমিও তো তোমার মতো ছোট ছিলাম, তখন অতো সব বুঝেছি নাকি? দোষকে দেখিয়ে বিবেক বললো, এ সবের জন্য দোষের বেশ ভূমিকা রয়েছে। বুঝতেই পারিনি আমাদের আশে পাশে নিঃশব্দে নীরবে দোষ হেঁটে চলেছে! দোষ রেগে বিবেককে বললো, তুমি সব সময় জেলাস, পরশ্রীকাতর আর হিংসাকে প্রশ্রয় দিয়েছ তাই তোমাকে আমি ঘৃণা করি। আমি ওদের কথা শুনে বললাম, তোমাদের কি লজ্জা-শরম বলে কিছুই নেই? দোষ বললো, ‘লজ্জা’? সবাই যখন নেমকহারাম হয়েছে তখন আবার লজ্জা কিসের? বিবেক একটানা বিশ্লেষণ দিতে শুরু করল। সে বলল, জীবনের শুরু থেকে দেয়া-নেয়ার শিক্ষা হয়নি। ছোটবেলা শুধু পেয়েছি, আস্তে আস্তে বড় হয়েছি, চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে।

কিন্তু কৈশোরে ছোটবেলার মতো না চাইতে পাওয়াটা বন্ধ হয়েছে। শরীরে জটিলতা দেখা দিয়েছে, যৌবনের আবির্ভাব হয়েছে। এমন সময় আশপাশের সবকিছু জালের মতো আমাকে (বিবেককে) ঘিরে ফেলেছে। যে যা বলছে শুনছি আর গ্রহণ করছি। সবকিছু তো বুঝতে পারিনি। আমি বললাম, কেন তোমার মুরব্বিরা ছিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল, বাবা-মা ছিল তারা কী করেছে? তারা কি ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা এসবের পার্থক্য শেখায়নি? বিবেক বললো, আমি তো তাদেরকেই ফলো করেছি? ভাবনা হঠাৎ বিষয়টি ধরলো, তাহলে সমাজের পরিকাঠামো এর জন্য দায়ী? আমার পাশে ভালোবাসা, সে চুপচাপ সব শুনছে। তাকে বললাম, কী তুমি তো ছোটবেলা থেকেই ছিলে নিঃশর্ত এবং নিঃস্বার্থ, পরে যৌবনে ঘৃণার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক এতো নির্মম হলো কী করে? ভালোবাসা বললো, সব ন্যাটার গোড়া হলো এ বিনিময়। বিনিময়ের কথা বলতেই সে বেশ ক্ষেপে গেল। বিনিময় বললো, ছোটবেলা থেকে সবকিছু ফ্রি পেয়ে পেয়ে হয়েছো স্বার্থপর, আর কত দিন চলবে বলো? শুধু নিতে শিখেছো, কেউ শেখায়নি তোমাকে যে দিতেও হয়। ভালোবাসার মুখের ওপর যখন বিনিময় এ অপ্রিয় সত্যকথাগুলো বললো, ভালোবাসা তখন বেশ দুঃখ পেলো।

এদিকে বিশ্বাস বললো ভালোবাসাকে, কী ব্যাপার ভালোবাসা? আমি তো সব সময় জানতাম তোমার ভালোবাসায় শুধু ভালোবাসা রয়েছে। ভালোবাসা বললো, সবই ঠিক ছিল আগে, এ ভেজাল ঢুকে সব কিছুর বারোটা বাজিয়েছে। এবার ভেজাল ক্ষেপে গেল। বললো, –শোনো, আমাকে আর দোষকে না জড়িয়ে চরিত্রকে আগে ঠিক করো। তোমাদের ঐ চরিত্রের নেই কোন ঠিক, তারপর লোভ-লালসা চারপাশে ঘুরঘুর করছে। এসব ঠিক না করে আমাদের পিছে লেগে লাভ হবে না।

আলোচনা চলছে, হঠাৎ ধৈর্য বললো, সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, চলো উঠতে হবে। ভাবনা আমার যাবার বেলায় শুধু বললো, সবই জানলে এবং শুনলে কিন্তু নিজের কথা কিছুই বললে না! ফিরতে দেরি হলো তবুও যেতে যেতে ভাবনাকে বললাম, শোধরানোর সময় কি নেই ভাবনা? ভাবনা আমাকে শুধু বললো, ‘তুমি কি সেই আগের মতই আছ, নাকি অনেকখানি বদলে গেছ? জানতে ইচ্ছে করে’!

বিবেক বললো, –আমি আগের মতো নেই, আমার অনেক পরিবর্তন হয়েছে, আমি অনেক পাল্টে গেছি। আমি উদার হয়েছি, আমি মেনে নিতে শিখেছি না পাওয়াকে। আমাকে যদি কেউ ভালো না বাসে আমি তাকে খুন করিনা, এসিড মারিনা বা সরাসরি ঘৃণা করিনা। আমি সুশিক্ষা এবং জ্ঞানের সমন্বয়ে ভয়কে জয় করতে শিখেছি। আমি আমার অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়ে বুঝতে শিখেছি ভালোবাসার মধ্যে রয়েছে বিনিময় যেখানে জোর জুলুমের কোনো জায়গা নেই। ভালোবাসায় রয়েছে শুধু ভালোবাসা।

[লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

back to top