জুনাইদ আহমেদ পলক
আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি, আর স্বপ্নপূরণ করা যে কতটা কষ্টসাধ্য তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু স্বপ্নটা যখন হয়ে ওঠে একটি জাতির, হয়ে ওঠে একটি দেশের তখন তা পূরণের ক্ষেত্রে যে কতটা পথ পাড়ি দিতে হয়, কতটা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে যেতে হয়, কত হাজার বাঁধা অতিক্রম করে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে হয় তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মহাকাশের বুকে বাংলাদেশের প্রথম অর্জন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ! একটি জাতির দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নপূরণ করে দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। পিতার মতই বিরল নেতৃত্বগুণের অধিকারিবঙ্গবন্ধু কন্যা পুরো জাতির মহাকাশ জয়ের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১উৎক্ষেপণের মাধ্যমে। ১২ মে বাংলাদেশের মহাকাশ জয়ের এক অনস্বীকার্য মাহেন্দ্রক্ষণ।
বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দর্শন ও স্মার্ট বাংলাদেশ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন দূরদর্শী নেতৃত্বগুণের অধিকারী। অর্থাৎ বর্তমানে থেকে তিনি ভবিষ্যৎ দেখতে পেতেন। মহান স্বাধীনতার প্রায় ২৪ বছর আগে দেশভাগেরও পূর্বে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে তিনি আমাদের দিয়েছেন একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, সদ্য স্বাধীন দেশকে সুখী ও সমৃদ্ধ করে তুলতেও নিয়েছেন উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও কর্মের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাবো তাঁর সকল কার্যক্রম দেশের জন্য, দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। দূরদর্শী এই নেতা বাঙালী জাতিকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন যাকে মূলত বঙ্গবন্ধুর তিনটি দর্শন হিসেবে উল্লেখ করতে পারি। জাতির পিতার রাজনৈতিক মুক্তির দর্শনের ফলে আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে সফলতা এবং ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মুক্তির দর্শনকে বাস্তবায়িত করেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর সাংস্কৃতিক মুক্তির দর্শন যা মূলত সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্ন, সেই সোনার বাংলার আধুনিক রূপ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা আবারো সফল হবো ইনশাল্লাহ।
একজন রাষ্ট্রনায়কের যুগোপযুগি ও সঠিক সিদ্ধান্তের ফলে দেশ ও জাতির অভূতপূর্ব উন্নয়ন বয়ে আনতে পারে। আবার সিদ্ধান্তহীনতায় দেশ ও জাতি পিছিয়ে যেতে পারে কয়েকশ বছর। দেশ কীভাবে পিছিয়ে যায় সে দৃষ্টান্ত জামায়ত-বিএনপি সরকার দেখিয়েছে। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে এমন অজুহাত দেখিয়ে ১৯৯২ সালে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার বিনা অর্থে সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। শুধু তাই নয় মোবাইল ফোনের বাজারেও মনোপলি তৈরি করে, বিএনপি’র মন্ত্রী মোরশেদ খানের সিটি সেলকে মনোপলি ব্যবসার সুযোগ করে দিয়ে।
আবার দেশ কীভাবে একজন নেতার ভিশনারি নেতৃত্বে উন্নয়নের উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে, কীভাবে পুরো জাতির জীবনমান পরিবর্তন করে দিতে পারেন একজন রাষ্ট্রনায়ক তার অন্যতম উদাহরণ বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।জাতির পিতা যেমন যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়েও একটি জ্ঞানভিত্তিক আধুনিক সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ, কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণে উদ্যোগ গ্রহণ, আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) ও আন্তর্জাতিক পোস্টাল ইউনিয়ন(ইউপিইউ) এর সদস্যপদ গ্রহণ, বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাসহ যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্ষুদা-দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশের বীজ বপন করেছেন।
ঠিক তেমনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর রোপন করা বীজটি অঙ্কুরিত হয়ে চারা গাছে রূপান্তরিত হয়েছে। মাঝে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে দিলেও আশার আলো দেখান বঙ্গবন্ধু কন্যা। এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ: রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করেন। এই পরিকল্পনার নেপথ্য কারিগর বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। যথাযথ আলো হাওয়া আর নিয়মিত যতেœর ফলে চারাগাছটি পরিণত হয় বৃক্ষে। মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়ের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করেবাস্তবায়িত হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন আর অগ্রযাত্রায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের। ফলে ধারাবাহিক জয়যাত্রায় গত ১৬ বছরে বাংলাদেশ পরিণত হয় সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে। ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত বৃক্ষটি ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেএক বিরাট মহীরূহে রূপান্তরিত হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
মুজিব থেকে সজীব: দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের জয়যাত্রা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন দূরদর্শী নেতৃত্বগুণের অধিকারী। বর্তমানে থেকে তিনি ভবিষ্যৎ দেখতে পেতেন। মহান স্বাধীনতার প্রায় ২৪ বছর আগে দেশভাগেরও পূর্বে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছেন। দূরদর্শী এই নেতা বাঙালী জাতিকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। জাতির পিতার রাজনৈতিক মুক্তির দর্শনের ফলে আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ; ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মুক্তির দর্শনকে বাস্তবায়িত করে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের; যা মূলত বঙ্গবন্ধুর সাংস্কৃতিক মুক্তির দর্শন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই দীর্ঘ উন্নয়ন যাত্রাকে সহজ করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু দৌহিত্র, ডিজিটাল বাংলাদেশের আর্কিটেক্ট সজীব ওয়াজেদ জয়। মুজিব থেকে সজীব অর্থ্যাৎ বঙ্গবন্ধু, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়ের নেতৃত্বের পরম্পরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে এসেছে যার ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা হয়েছি অনন্য, বিশ্বে হয়েছি উন্নয়নের রোল মডেল।
দেশকে এগিয়ে নিতে হলে, দেশের মানুষের কল্যাণ বাস্তবায়ন করতে চাইলে আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ও যথাযথব্যবহারের বিকল্প নেই বলে ধারণা দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে সাথে নিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব করে তুলতে হবে বলে এইখাতের সকল উন্নয়ন ও বাস্তবায়নকে অন্যতম গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এমনকি বাংলাদেশের মহাকাশ যাত্রার শুরুটাও করে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ-ভূ কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমেবাংলাদেশের মহাকাশ যাত্রার পথ সুগম করে দেন। একটি সদ্য স্বাধীন দেশের তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন এবং স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নত যোগাযোগ স্থাপনের জন্য চালু করা হয় দেশের প্রথম এই উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রটি। যার মাধ্যমে বর্হিঃবিশ্বের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপিত হয় বাংলাদেশের। মূলতউপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রটি উদ্বোধনই ছিল বাংলাদেশের মহাকাশ যাত্রার প্রথম সোপান। জাতির পিতার হাতে উদ্বোধন হওয়া এই কেন্দ্রটিআগামী ১৪ জুন পূর্ণ করবে ৪৯ তম বছর!
বাংলাদেশের মহাকাশ জয় ও টেলিযোগাযোগ সুবিধার ব্যাপক প্রসার
বঙ্গবন্ধুর অবিসাংবাদিত নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পেয়েছে সমুদ্র জয়ের স্বীকৃতি। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলদেশের মহাকাশ জয় তাই এক অনন্য ইতিহাস। জলে স্থলে মহাকাশে বাংলাদেশের জয় নিয়ে এসেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই জয়যাত্রায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশে থেকে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় রেখে চলেছেন অনন্য ভূমিকা।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে কন্যার হাতে। পিতার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। বাঙালি জাতির মহাকাশ জয়ের বিজয়গাঁথা পায় পরিণতি। প্রতিশ্রুতি পূরণ ওমহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের লক্ষ্য স্থির করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালের মে মাসে বিটিআরসি’র একজন কমিশনারকে আহ্বায়ক করে স্যাটেলাইট কমিটিগঠন করে দেন। সেইসাথে নির্দেশনা প্রদান করেন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতিমূলক কার্যাক্রম শুরু করার জন্য। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পন্ন, অরবিটাল স্লট লিজ গ্রহণ এবং ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর স্যাটেলাইট নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্নের মধ্য দিয়ে প্রকল্পের মূল কার্যক্রম শুরু হয়। তারপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ; ২০১৮ সালের ১২ মে। এদিন মহাকাশের বুকে বাংলাদেশের পতাকা অঙ্কিত ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণ করা হয়। কোটি বাঙালির স্বপ্ন বাস্তব করে নিজ কক্ষপথে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যাত্রা শুরু করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নামাঙ্কিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ আজ উৎক্ষেপণের ৬ষ্ঠতম বছরে পদার্পণ করেছে। যার উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বিশ্বের ৫৭তম স্যাটেলাইট অধিকারি দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে বাংলাদেশ। এদিন দেশ ও জাতির এক গৌরবময় অধ্যায় রচনা করার পাশাপাশি আমরা বিশ্ব স্যাটেলাইট যোগাযোগ শিল্পের এক সমম্ভাবনাময় বাজারেও পদার্পণ করেছি। সেইসাথে দেশের চাহিদা মিটিয়ে কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্রডকাস্ট, ডিটিএইচ এবং ভিএসএটি সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে এই সেক্টরে সেবা প্রদানকারি দেশ হিসেবে আমাদের জন্য সম্ভাবনাময় বিলিয়ন ডলারের বাজার উন্মুক্ত হয়েছে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন বাজারের আকার ছিল ২৮৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ধারণা করা হচ্ছে ২০৩২ সাল নাগাদ এই বাজারের পরিধি ৬১৫.৭ বিলিয়ন ইউএস ডলারে পৌঁছাবে।বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই বিশাল সম্ভাবনাময় বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এটা কীভাবে সম্ভব হয়েছে? এটা সম্ভব হয়েছে মাননীয় জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশনারি নেতৃত্ব, দৃঢ়তা এবং অদম্য সাহসের ফলে। তাঁর নেতৃত্বগুণেই একসময়ের‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর ৩৫তম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। ‘ডিজিটাল থেকে স্মার্ট’বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় মহাকাশ বিজয় জাতীয় জীবনের অগ্রযাত্রায় এক অভাবনীয় সোপান।মহাকাশ বিজয়ের এই মাহেন্দ্রক্ষণটি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথবেয়ে অর্জিত হয়েছে। এই অর্জন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশনারি নেতৃত্ব এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের দূরদৃষ্টি সম্পন্ন চিন্তার স্বর্ণালি ফসল।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ সুবিধার ব্যাপক প্রসার ঘটছে। সমগ্র দেশের স্থল ও জলসীমায় নিরবচ্ছিন্নভাবে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচারের নিশ্চয়তা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।বিস্তৃত অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ও শক্তিশালী মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় আ্যাকসেস টু ইনফরমেশন নিশ্চিত করেছেবঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। এর ফলে দেশের ৩১টি দ্বীপ ও ৩৪টি প্রত্যন্ত ইউনিয়নে টেলিযোগাযোগ সংযোগ স্থাপন করে ডিজিটাল ডিভাইড দূর করা সম্ভব হয়েছে।
স্যাটেলাইটউৎক্ষেপণের আগেবাংলাদেশকে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার দিতে হতো, এই বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আমরা এখন সাশ্রয় করতে পারছি। এছাড়া ট্রান্সপন্ডার লিজের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবার পাশাপাশি টেলিমেডিসিন, ডিজিটাল লার্নিং, ডিজিটাল এডুকেশন, ডিটিএইচ প্রভৃতি সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। ১৪টি সি ব্যান্ড এবং ২৬টি কিউ ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডারসহ মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ সার্কভুক্ত দেশগুলোয় টেলিযোগাযোগ সুবিধা প্রদান করার ব্যবস্থা রয়েছে।
সম্ভাবনাময় আগামী ও প্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ২০২৫ সালের মধ্যে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশের প্রথম স্যাটেলাইটের মাধ্যমে স্যাটেলাইট নির্ভর সম্প্রচার ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। এখন আমাদের লক্ষ্য স্যাটেলাইট সেক্টরে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের সক্ষমতা অর্জন।সেলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ ভূ-পৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফলতার ওপর ভিত্তি করে আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এর উৎক্ষেপণের কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে চলেছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের জন্য সরকারের আলাদা কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই-১ এর অর্জিত আয়েই আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হবো। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ জাতীয় জীবনের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হতে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরও একটি নতুন যুগে পদার্পণ করবে।বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ওপর নির্ভর করে আমরা চর ও দ্বীপসহ দুর্গম অঞ্চলের ডিজিটাল কানেকটিভিটি তৈরি করছি। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এখন আন্তঃযোগাযোগের জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে।নিজস্ব স্যাটেলাইট রয়েছে বলেই আমরা বেতার ও টিভি চ্যানেলসমূহের সম্প্রচারসহ দেশের দুর্গম এলাকায় টেলিমেডিসিনের মত কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ের দিকনির্দেশনায় আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। তিনিই দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎপক্ষেণের গুরুত্ব আমাদের সামনে তুলে ধরেন। আগামীর বর্ধিষ্ণু প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সক্ষম হতে হবে, তা না হলে ভবিষ্যত প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত বিনির্মাণের লক্ষ্যে পরিকল্পনার গ্রহণ করেছে; যার নেতৃত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।সকল সীমাবব্ধতা অতিক্রম করে বাংলাদেশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বেএগিয়ে চলেছে। কোভিডকালীন সারা বিশ্বের স্থবির জীবনধারার বিপরীতে বাংলাদেশের জীবনধারা ছিলো সচল। ডিজিটাল সংযুক্তির মহাসড়কে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ মানুষের জীবনধারা পাল্টে দিয়েছে। সর্বত্র ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। দেশের প্রায়সব এলাকায় ফোরজি নেটওয়ার্কে আওতায় চলে এসেছে, প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে উচ্চগতির ইন্টারনেট।ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার ফলে দেশের তেরকোটিরও অধিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীএবং আঠার কোটিরও অধিক মোবাইল সীম ব্যবহারকারী রয়েছে।
দেশে গড়ে উঠা শক্তিশালী ডিজিটাল অবকাঠামোর ওপর স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ফলে উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে অভাবনীয় সফলতায় বিশ্বে আজ বাংলাদেশ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। স্মার্ট বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বিস্ময়, উন্নত এক বাংলাদেশ, বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার বাংলাদেশ, আমাদের গর্বের বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। মূলত স্মার্ট বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়নের পথবেয়ে গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী অগ্রগতির বর্তমান এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালে অনেক আগেই বাংলাদেশ তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে- ইনশাল্লাহ!আমাদের সেই অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ইতোমধ্যে এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমাদের সন্তানেরা মহাকাশবিজ্ঞান, পরমাণুপ্রযুক্তি, সমুদ্রবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্র, সংস্কৃতি ও প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারছে। সেইসাথেসজীব ওয়াজেদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র গাজীপুর এবং সজীব ওয়াজেদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র বেতবুনিয়া থেকে দেশের সন্তানেরাই উদ্বোধনের দিন থেকে অদ্যাবধি দক্ষতার সাথে স্যাটেলাইটটি পরিচালনা করছে। এটাও বাংলাদেশের এক বিশাল অর্জন। তবে আমরা এমন স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে বাংলাদেশের সন্তানেরা নিজ দেশের মাটিতে স্যাটেলাইট তৈরি করবে এবং উৎক্ষেপণও করবে। শুধু তা-ই নয় আমরা এমন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে দেশের মাটি থেকে মহাকাশে যাবে বাংলাদেশে তৈরি করা রকেট। এমনই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ধাপে ধাপে আমাদের এগিয়ে নিয়ে চলেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
(লেখক: প্রতিমন্ত্রী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়)
জুনাইদ আহমেদ পলক
সোমবার, ১৩ মে ২০২৪
আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি, আর স্বপ্নপূরণ করা যে কতটা কষ্টসাধ্য তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু স্বপ্নটা যখন হয়ে ওঠে একটি জাতির, হয়ে ওঠে একটি দেশের তখন তা পূরণের ক্ষেত্রে যে কতটা পথ পাড়ি দিতে হয়, কতটা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে যেতে হয়, কত হাজার বাঁধা অতিক্রম করে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে হয় তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মহাকাশের বুকে বাংলাদেশের প্রথম অর্জন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ! একটি জাতির দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নপূরণ করে দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। পিতার মতই বিরল নেতৃত্বগুণের অধিকারিবঙ্গবন্ধু কন্যা পুরো জাতির মহাকাশ জয়ের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১উৎক্ষেপণের মাধ্যমে। ১২ মে বাংলাদেশের মহাকাশ জয়ের এক অনস্বীকার্য মাহেন্দ্রক্ষণ।
বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দর্শন ও স্মার্ট বাংলাদেশ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন দূরদর্শী নেতৃত্বগুণের অধিকারী। অর্থাৎ বর্তমানে থেকে তিনি ভবিষ্যৎ দেখতে পেতেন। মহান স্বাধীনতার প্রায় ২৪ বছর আগে দেশভাগেরও পূর্বে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে তিনি আমাদের দিয়েছেন একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, সদ্য স্বাধীন দেশকে সুখী ও সমৃদ্ধ করে তুলতেও নিয়েছেন উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও কর্মের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাবো তাঁর সকল কার্যক্রম দেশের জন্য, দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। দূরদর্শী এই নেতা বাঙালী জাতিকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন যাকে মূলত বঙ্গবন্ধুর তিনটি দর্শন হিসেবে উল্লেখ করতে পারি। জাতির পিতার রাজনৈতিক মুক্তির দর্শনের ফলে আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে সফলতা এবং ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মুক্তির দর্শনকে বাস্তবায়িত করেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর সাংস্কৃতিক মুক্তির দর্শন যা মূলত সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্ন, সেই সোনার বাংলার আধুনিক রূপ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা আবারো সফল হবো ইনশাল্লাহ।
একজন রাষ্ট্রনায়কের যুগোপযুগি ও সঠিক সিদ্ধান্তের ফলে দেশ ও জাতির অভূতপূর্ব উন্নয়ন বয়ে আনতে পারে। আবার সিদ্ধান্তহীনতায় দেশ ও জাতি পিছিয়ে যেতে পারে কয়েকশ বছর। দেশ কীভাবে পিছিয়ে যায় সে দৃষ্টান্ত জামায়ত-বিএনপি সরকার দেখিয়েছে। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে এমন অজুহাত দেখিয়ে ১৯৯২ সালে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার বিনা অর্থে সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। শুধু তাই নয় মোবাইল ফোনের বাজারেও মনোপলি তৈরি করে, বিএনপি’র মন্ত্রী মোরশেদ খানের সিটি সেলকে মনোপলি ব্যবসার সুযোগ করে দিয়ে।
আবার দেশ কীভাবে একজন নেতার ভিশনারি নেতৃত্বে উন্নয়নের উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে, কীভাবে পুরো জাতির জীবনমান পরিবর্তন করে দিতে পারেন একজন রাষ্ট্রনায়ক তার অন্যতম উদাহরণ বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।জাতির পিতা যেমন যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়েও একটি জ্ঞানভিত্তিক আধুনিক সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ, কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণে উদ্যোগ গ্রহণ, আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) ও আন্তর্জাতিক পোস্টাল ইউনিয়ন(ইউপিইউ) এর সদস্যপদ গ্রহণ, বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাসহ যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্ষুদা-দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশের বীজ বপন করেছেন।
ঠিক তেমনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর রোপন করা বীজটি অঙ্কুরিত হয়ে চারা গাছে রূপান্তরিত হয়েছে। মাঝে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে দিলেও আশার আলো দেখান বঙ্গবন্ধু কন্যা। এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ: রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করেন। এই পরিকল্পনার নেপথ্য কারিগর বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। যথাযথ আলো হাওয়া আর নিয়মিত যতেœর ফলে চারাগাছটি পরিণত হয় বৃক্ষে। মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়ের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করেবাস্তবায়িত হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন আর অগ্রযাত্রায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের। ফলে ধারাবাহিক জয়যাত্রায় গত ১৬ বছরে বাংলাদেশ পরিণত হয় সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে। ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত বৃক্ষটি ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেএক বিরাট মহীরূহে রূপান্তরিত হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
মুজিব থেকে সজীব: দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের জয়যাত্রা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন দূরদর্শী নেতৃত্বগুণের অধিকারী। বর্তমানে থেকে তিনি ভবিষ্যৎ দেখতে পেতেন। মহান স্বাধীনতার প্রায় ২৪ বছর আগে দেশভাগেরও পূর্বে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছেন। দূরদর্শী এই নেতা বাঙালী জাতিকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। জাতির পিতার রাজনৈতিক মুক্তির দর্শনের ফলে আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ; ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মুক্তির দর্শনকে বাস্তবায়িত করে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের; যা মূলত বঙ্গবন্ধুর সাংস্কৃতিক মুক্তির দর্শন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই দীর্ঘ উন্নয়ন যাত্রাকে সহজ করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু দৌহিত্র, ডিজিটাল বাংলাদেশের আর্কিটেক্ট সজীব ওয়াজেদ জয়। মুজিব থেকে সজীব অর্থ্যাৎ বঙ্গবন্ধু, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়ের নেতৃত্বের পরম্পরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে এসেছে যার ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা হয়েছি অনন্য, বিশ্বে হয়েছি উন্নয়নের রোল মডেল।
দেশকে এগিয়ে নিতে হলে, দেশের মানুষের কল্যাণ বাস্তবায়ন করতে চাইলে আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ও যথাযথব্যবহারের বিকল্প নেই বলে ধারণা দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে সাথে নিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব করে তুলতে হবে বলে এইখাতের সকল উন্নয়ন ও বাস্তবায়নকে অন্যতম গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এমনকি বাংলাদেশের মহাকাশ যাত্রার শুরুটাও করে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ-ভূ কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমেবাংলাদেশের মহাকাশ যাত্রার পথ সুগম করে দেন। একটি সদ্য স্বাধীন দেশের তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন এবং স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নত যোগাযোগ স্থাপনের জন্য চালু করা হয় দেশের প্রথম এই উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রটি। যার মাধ্যমে বর্হিঃবিশ্বের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপিত হয় বাংলাদেশের। মূলতউপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রটি উদ্বোধনই ছিল বাংলাদেশের মহাকাশ যাত্রার প্রথম সোপান। জাতির পিতার হাতে উদ্বোধন হওয়া এই কেন্দ্রটিআগামী ১৪ জুন পূর্ণ করবে ৪৯ তম বছর!
বাংলাদেশের মহাকাশ জয় ও টেলিযোগাযোগ সুবিধার ব্যাপক প্রসার
বঙ্গবন্ধুর অবিসাংবাদিত নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পেয়েছে সমুদ্র জয়ের স্বীকৃতি। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলদেশের মহাকাশ জয় তাই এক অনন্য ইতিহাস। জলে স্থলে মহাকাশে বাংলাদেশের জয় নিয়ে এসেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই জয়যাত্রায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশে থেকে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় রেখে চলেছেন অনন্য ভূমিকা।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে কন্যার হাতে। পিতার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। বাঙালি জাতির মহাকাশ জয়ের বিজয়গাঁথা পায় পরিণতি। প্রতিশ্রুতি পূরণ ওমহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের লক্ষ্য স্থির করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালের মে মাসে বিটিআরসি’র একজন কমিশনারকে আহ্বায়ক করে স্যাটেলাইট কমিটিগঠন করে দেন। সেইসাথে নির্দেশনা প্রদান করেন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতিমূলক কার্যাক্রম শুরু করার জন্য। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পন্ন, অরবিটাল স্লট লিজ গ্রহণ এবং ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর স্যাটেলাইট নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্নের মধ্য দিয়ে প্রকল্পের মূল কার্যক্রম শুরু হয়। তারপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ; ২০১৮ সালের ১২ মে। এদিন মহাকাশের বুকে বাংলাদেশের পতাকা অঙ্কিত ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণ করা হয়। কোটি বাঙালির স্বপ্ন বাস্তব করে নিজ কক্ষপথে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যাত্রা শুরু করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নামাঙ্কিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ আজ উৎক্ষেপণের ৬ষ্ঠতম বছরে পদার্পণ করেছে। যার উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বিশ্বের ৫৭তম স্যাটেলাইট অধিকারি দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে বাংলাদেশ। এদিন দেশ ও জাতির এক গৌরবময় অধ্যায় রচনা করার পাশাপাশি আমরা বিশ্ব স্যাটেলাইট যোগাযোগ শিল্পের এক সমম্ভাবনাময় বাজারেও পদার্পণ করেছি। সেইসাথে দেশের চাহিদা মিটিয়ে কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্রডকাস্ট, ডিটিএইচ এবং ভিএসএটি সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে এই সেক্টরে সেবা প্রদানকারি দেশ হিসেবে আমাদের জন্য সম্ভাবনাময় বিলিয়ন ডলারের বাজার উন্মুক্ত হয়েছে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন বাজারের আকার ছিল ২৮৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ধারণা করা হচ্ছে ২০৩২ সাল নাগাদ এই বাজারের পরিধি ৬১৫.৭ বিলিয়ন ইউএস ডলারে পৌঁছাবে।বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই বিশাল সম্ভাবনাময় বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এটা কীভাবে সম্ভব হয়েছে? এটা সম্ভব হয়েছে মাননীয় জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশনারি নেতৃত্ব, দৃঢ়তা এবং অদম্য সাহসের ফলে। তাঁর নেতৃত্বগুণেই একসময়ের‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর ৩৫তম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। ‘ডিজিটাল থেকে স্মার্ট’বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় মহাকাশ বিজয় জাতীয় জীবনের অগ্রযাত্রায় এক অভাবনীয় সোপান।মহাকাশ বিজয়ের এই মাহেন্দ্রক্ষণটি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথবেয়ে অর্জিত হয়েছে। এই অর্জন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশনারি নেতৃত্ব এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের দূরদৃষ্টি সম্পন্ন চিন্তার স্বর্ণালি ফসল।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ সুবিধার ব্যাপক প্রসার ঘটছে। সমগ্র দেশের স্থল ও জলসীমায় নিরবচ্ছিন্নভাবে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচারের নিশ্চয়তা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।বিস্তৃত অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ও শক্তিশালী মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় আ্যাকসেস টু ইনফরমেশন নিশ্চিত করেছেবঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। এর ফলে দেশের ৩১টি দ্বীপ ও ৩৪টি প্রত্যন্ত ইউনিয়নে টেলিযোগাযোগ সংযোগ স্থাপন করে ডিজিটাল ডিভাইড দূর করা সম্ভব হয়েছে।
স্যাটেলাইটউৎক্ষেপণের আগেবাংলাদেশকে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার দিতে হতো, এই বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আমরা এখন সাশ্রয় করতে পারছি। এছাড়া ট্রান্সপন্ডার লিজের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবার পাশাপাশি টেলিমেডিসিন, ডিজিটাল লার্নিং, ডিজিটাল এডুকেশন, ডিটিএইচ প্রভৃতি সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। ১৪টি সি ব্যান্ড এবং ২৬টি কিউ ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডারসহ মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ সার্কভুক্ত দেশগুলোয় টেলিযোগাযোগ সুবিধা প্রদান করার ব্যবস্থা রয়েছে।
সম্ভাবনাময় আগামী ও প্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ২০২৫ সালের মধ্যে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশের প্রথম স্যাটেলাইটের মাধ্যমে স্যাটেলাইট নির্ভর সম্প্রচার ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। এখন আমাদের লক্ষ্য স্যাটেলাইট সেক্টরে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের সক্ষমতা অর্জন।সেলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ ভূ-পৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফলতার ওপর ভিত্তি করে আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এর উৎক্ষেপণের কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে চলেছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের জন্য সরকারের আলাদা কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই-১ এর অর্জিত আয়েই আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হবো। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ জাতীয় জীবনের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হতে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরও একটি নতুন যুগে পদার্পণ করবে।বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ওপর নির্ভর করে আমরা চর ও দ্বীপসহ দুর্গম অঞ্চলের ডিজিটাল কানেকটিভিটি তৈরি করছি। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এখন আন্তঃযোগাযোগের জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে।নিজস্ব স্যাটেলাইট রয়েছে বলেই আমরা বেতার ও টিভি চ্যানেলসমূহের সম্প্রচারসহ দেশের দুর্গম এলাকায় টেলিমেডিসিনের মত কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ের দিকনির্দেশনায় আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। তিনিই দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎপক্ষেণের গুরুত্ব আমাদের সামনে তুলে ধরেন। আগামীর বর্ধিষ্ণু প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সক্ষম হতে হবে, তা না হলে ভবিষ্যত প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত বিনির্মাণের লক্ষ্যে পরিকল্পনার গ্রহণ করেছে; যার নেতৃত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।সকল সীমাবব্ধতা অতিক্রম করে বাংলাদেশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বেএগিয়ে চলেছে। কোভিডকালীন সারা বিশ্বের স্থবির জীবনধারার বিপরীতে বাংলাদেশের জীবনধারা ছিলো সচল। ডিজিটাল সংযুক্তির মহাসড়কে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ মানুষের জীবনধারা পাল্টে দিয়েছে। সর্বত্র ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। দেশের প্রায়সব এলাকায় ফোরজি নেটওয়ার্কে আওতায় চলে এসেছে, প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে উচ্চগতির ইন্টারনেট।ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার ফলে দেশের তেরকোটিরও অধিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীএবং আঠার কোটিরও অধিক মোবাইল সীম ব্যবহারকারী রয়েছে।
দেশে গড়ে উঠা শক্তিশালী ডিজিটাল অবকাঠামোর ওপর স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ফলে উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে অভাবনীয় সফলতায় বিশ্বে আজ বাংলাদেশ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। স্মার্ট বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বিস্ময়, উন্নত এক বাংলাদেশ, বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার বাংলাদেশ, আমাদের গর্বের বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। মূলত স্মার্ট বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়নের পথবেয়ে গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী অগ্রগতির বর্তমান এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালে অনেক আগেই বাংলাদেশ তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে- ইনশাল্লাহ!আমাদের সেই অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ইতোমধ্যে এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমাদের সন্তানেরা মহাকাশবিজ্ঞান, পরমাণুপ্রযুক্তি, সমুদ্রবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্র, সংস্কৃতি ও প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারছে। সেইসাথেসজীব ওয়াজেদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র গাজীপুর এবং সজীব ওয়াজেদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র বেতবুনিয়া থেকে দেশের সন্তানেরাই উদ্বোধনের দিন থেকে অদ্যাবধি দক্ষতার সাথে স্যাটেলাইটটি পরিচালনা করছে। এটাও বাংলাদেশের এক বিশাল অর্জন। তবে আমরা এমন স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে বাংলাদেশের সন্তানেরা নিজ দেশের মাটিতে স্যাটেলাইট তৈরি করবে এবং উৎক্ষেপণও করবে। শুধু তা-ই নয় আমরা এমন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে দেশের মাটি থেকে মহাকাশে যাবে বাংলাদেশে তৈরি করা রকেট। এমনই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ধাপে ধাপে আমাদের এগিয়ে নিয়ে চলেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
(লেখক: প্রতিমন্ত্রী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়)