শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ
বিশ্বব্যাপী মানবিক সেবা ও সহানুভূতির প্রতীক রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের নীতিগুলোকে স্মরণ ও সম্মান জানাতে প্রতি বছর ৮ মে পালিত হয় বিশ্ব রেড ক্রস দিবস। এ দিনটি রেড ক্রস আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী হেনরি ডুনান্টের জন্মদিন। ১৮২৮ সালের এই দিনে তিনি সুইজারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন।
রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের কাজের পরিধি বিস্তৃতÑপ্রাকৃতিক দুর্যোগ, সশস্ত্র সংঘাত কিংবা অন্য যে কোনো সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করাই তাদের মূল লক্ষ্য। এই আন্তর্জাতিক আন্দোলন সাতটি মৌলিক নীতিকে ভিত্তি করে পরিচালিত হয়Ñ মানবতা, পক্ষপাতহীনতা, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা, স্বেচ্ছাসেবিতা, একতা ও সার্বজনীনতা।
বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি) এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। ১৯১টি জাতীয় সমিতি, স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৬ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছায় এ সংস্থা। মানবিক সংকটে প্রতিক্রিয়া জানানো, দুর্যোগে উদ্ধার ও পুনর্বাসন এবং স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা অপরিসীম।
২০২৫ সালের বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবসের প্রতিপাদ্যÑ ‘মানবতাকে বাঁচিয়ে রাখা’। এই প্রতিপাদ্যের মধ্য দিয়ে শুধু সহানুভূতির চর্চাই নয়, মানবিক কর্মীদের সুরক্ষা ও স্বীকৃতির দাবি জোরালোভাবে উত্থাপিত হয়েছে।
আইএফআরসি জানিয়েছে, গত এক বছরে তাদের নেটওয়ার্কে কর্মরত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মী। এর মধ্যে শুধু ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে নিহত হয়েছেন ২২ জন (ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের ১৮ জন, ইসরায়েলের ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডোমের ৪ জন)। এছাড়া লিবিয়া, সুদান, ইথিওপিয়া এবং ইরানেও নিহত হয়েছেন আরও ৮ জন। এদের সম্মানে তৈরি করা হয়েছে একটি বিশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি ভিডিও। একইসাথে বিশ্বব্যাপী স্বেচ্ছাসেবকদের সাহস ও অবদানের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবকদের কিছু গল্প
সিরিয়াÑমুহাম্মদ গাজাউইয়া : লাতাকিয়ার অগ্নিকা-ে ১৫ সদস্যের একটি পরিবারকে উদ্ধার করেন তিনি। এক সপ্তাহব্যাপী এই মিশনে গাজাউইয়া ও তার দল আগুন নেভাতে সাহায্য করেন এবং খাদ্য ও পানি বিতরণ করেন।
জাপানÑমাকোতো মোরিওকা : ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারির ভূমিকম্পে নিজের পরিবারসহ নিরাপদে সরে গিয়ে অন্যদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেন। রেড ক্রসের দুর্যোগ প্রস্তুতি প্রশিক্ষণ তার জন্য সহায়ক হয়।
মেক্সিকোÑলুপিতা ডুরান : মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তের মরুভূমিতে ‘দ্য রেসার’ নামে একটি যান নিয়ে ঘুরে ঘুরে অভিবাসীদের কাছে জরুরি চিকিৎসা ও পানি পৌঁছে দেন।
তুরস্কÑহাফিজে নাজ এরগুনি : ভূমিকম্প পরবর্তী সময় বন্ধুদের নিয়ে তাঁবুর শহরে স্বেচ্ছাসেবী হয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘ঐক্যে শক্তি আছে। আমরা একসঙ্গে কাজ করে অনেক কিছু করতে পেরেছি।’
জাম্বিয়াÑইমানুয়েল চিলুফ্যা : মাত্র ১২ বছর বয়সে স্বেচ্ছাসেবকতা শুরু করা ইমানুয়েল বর্তমানে একজন মেডিকেল ছাত্র এবং রেড ক্রসের যুব শাখার নেতা। কলেরা প্রাদুর্ভাবে অসুস্থদের চিকিৎসাসেবা, পরিবার পুনঃসংযোগ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।
আমাদের দায়িত্ব বিশ্ব রেড ক্রস দিবস শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়Ñ এটি মানবিক দায়িত্ব পালনের স্মারক। যারা নিঃস্বার্থভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ান, তাদের সম্মান জানানোর দিন। এই দিন আমাদের শেখায়, মানবতা কেবল তত্ত্বে নয়, বাস্তবে প্রয়োগেই প্রকৃত।
এ উপলক্ষে আমাদের উচিত সহানুভূতিশীল হওয়া, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সমাজে অবদান রাখা এবং দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। রেড ক্রসের শিক্ষা আমাদের মানবিকতার সীমানা বাড়িয়ে দেয় জাতি, ধর্ম, ভাষা, মতÑ সব সীমার ওপারে।
[লেখক : সংবাদকর্মী]
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ
বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫
বিশ্বব্যাপী মানবিক সেবা ও সহানুভূতির প্রতীক রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের নীতিগুলোকে স্মরণ ও সম্মান জানাতে প্রতি বছর ৮ মে পালিত হয় বিশ্ব রেড ক্রস দিবস। এ দিনটি রেড ক্রস আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী হেনরি ডুনান্টের জন্মদিন। ১৮২৮ সালের এই দিনে তিনি সুইজারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন।
রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের কাজের পরিধি বিস্তৃতÑপ্রাকৃতিক দুর্যোগ, সশস্ত্র সংঘাত কিংবা অন্য যে কোনো সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করাই তাদের মূল লক্ষ্য। এই আন্তর্জাতিক আন্দোলন সাতটি মৌলিক নীতিকে ভিত্তি করে পরিচালিত হয়Ñ মানবতা, পক্ষপাতহীনতা, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা, স্বেচ্ছাসেবিতা, একতা ও সার্বজনীনতা।
বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি) এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। ১৯১টি জাতীয় সমিতি, স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৬ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছায় এ সংস্থা। মানবিক সংকটে প্রতিক্রিয়া জানানো, দুর্যোগে উদ্ধার ও পুনর্বাসন এবং স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা অপরিসীম।
২০২৫ সালের বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবসের প্রতিপাদ্যÑ ‘মানবতাকে বাঁচিয়ে রাখা’। এই প্রতিপাদ্যের মধ্য দিয়ে শুধু সহানুভূতির চর্চাই নয়, মানবিক কর্মীদের সুরক্ষা ও স্বীকৃতির দাবি জোরালোভাবে উত্থাপিত হয়েছে।
আইএফআরসি জানিয়েছে, গত এক বছরে তাদের নেটওয়ার্কে কর্মরত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মী। এর মধ্যে শুধু ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে নিহত হয়েছেন ২২ জন (ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের ১৮ জন, ইসরায়েলের ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডোমের ৪ জন)। এছাড়া লিবিয়া, সুদান, ইথিওপিয়া এবং ইরানেও নিহত হয়েছেন আরও ৮ জন। এদের সম্মানে তৈরি করা হয়েছে একটি বিশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি ভিডিও। একইসাথে বিশ্বব্যাপী স্বেচ্ছাসেবকদের সাহস ও অবদানের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবকদের কিছু গল্প
সিরিয়াÑমুহাম্মদ গাজাউইয়া : লাতাকিয়ার অগ্নিকা-ে ১৫ সদস্যের একটি পরিবারকে উদ্ধার করেন তিনি। এক সপ্তাহব্যাপী এই মিশনে গাজাউইয়া ও তার দল আগুন নেভাতে সাহায্য করেন এবং খাদ্য ও পানি বিতরণ করেন।
জাপানÑমাকোতো মোরিওকা : ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারির ভূমিকম্পে নিজের পরিবারসহ নিরাপদে সরে গিয়ে অন্যদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেন। রেড ক্রসের দুর্যোগ প্রস্তুতি প্রশিক্ষণ তার জন্য সহায়ক হয়।
মেক্সিকোÑলুপিতা ডুরান : মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তের মরুভূমিতে ‘দ্য রেসার’ নামে একটি যান নিয়ে ঘুরে ঘুরে অভিবাসীদের কাছে জরুরি চিকিৎসা ও পানি পৌঁছে দেন।
তুরস্কÑহাফিজে নাজ এরগুনি : ভূমিকম্প পরবর্তী সময় বন্ধুদের নিয়ে তাঁবুর শহরে স্বেচ্ছাসেবী হয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘ঐক্যে শক্তি আছে। আমরা একসঙ্গে কাজ করে অনেক কিছু করতে পেরেছি।’
জাম্বিয়াÑইমানুয়েল চিলুফ্যা : মাত্র ১২ বছর বয়সে স্বেচ্ছাসেবকতা শুরু করা ইমানুয়েল বর্তমানে একজন মেডিকেল ছাত্র এবং রেড ক্রসের যুব শাখার নেতা। কলেরা প্রাদুর্ভাবে অসুস্থদের চিকিৎসাসেবা, পরিবার পুনঃসংযোগ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।
আমাদের দায়িত্ব বিশ্ব রেড ক্রস দিবস শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়Ñ এটি মানবিক দায়িত্ব পালনের স্মারক। যারা নিঃস্বার্থভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ান, তাদের সম্মান জানানোর দিন। এই দিন আমাদের শেখায়, মানবতা কেবল তত্ত্বে নয়, বাস্তবে প্রয়োগেই প্রকৃত।
এ উপলক্ষে আমাদের উচিত সহানুভূতিশীল হওয়া, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সমাজে অবদান রাখা এবং দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। রেড ক্রসের শিক্ষা আমাদের মানবিকতার সীমানা বাড়িয়ে দেয় জাতি, ধর্ম, ভাষা, মতÑ সব সীমার ওপারে।
[লেখক : সংবাদকর্মী]