alt

মুক্ত আলোচনা

টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা : এক হারানো সম্ভাবনার খোঁজে

রহিম আব্দুর রহিম

: বুধবার, ২১ মে ২০২৫

পৃথিবীতে গণমাধ্যমের যৌবনকাল ঠিক কবে থেকে শুরু, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। তবে ইতিহাসের পথ ধরে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম রেডিওর প্রচলন ঘটে। এই রেডিওর মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের তথ্যের আদান-প্রদান ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সূচনা হয়। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলে এই মাধ্যমের কদর ছড়িয়ে পড়ে আমাদের উপমহাদেশেও।

পরে ১৯২৬ সালের দিকে স্কটিশ বিজ্ঞানী লোগি বেয়ার্ড আবিষ্কার করেন মানুষের মুখচ্ছবির সাদা-কালো বৈদ্যুতিক সম্প্রচার পদ্ধতি। তার এই উদ্ভাবন অনুপ্রেরণা জোগায় রুশ বংশোদ্ভূত প্রকৌশলী আইজাক শোয়েনবার্গকে, যিনি প্রথম কার্যকরভাবে টেলিভিশন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৩৬ সালে বিবিসি প্রথম টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু করে, যা ১৯৪৫ সালের মধ্যে পূর্ণতা পায়। এরপর ১৯৫০ সাল নাগাদ টেলিভিশন হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় গণমাধ্যম।

এই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে টেলিভিশনের প্রথম সম্প্রচার শুরু হয়। তখন বেশিরভাগ অনুষ্ঠান ছিল সচেতনতামূলকÑকৃষি, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, উর্দু শেখার ক্লাস, রম্য কথকতা, কাওয়ালী ও গজলের মতো অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো।

স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান টেলিভিশনের নাম বদলে হয়ে যায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), আর পাকিস্তান রেডিও রূপ নেয় বাংলাদেশ বেতারে। এরপর থেকেই বাংলাদেশ বেতারের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে এবং ধীরে ধীরে টেলিভিশনের সম্প্রচার হয়ে ওঠে মানুষের বিনোদন ও শিক্ষার মুখ্য মাধ্যম। সে সময় বিদ্যুতায়ন না থাকলেও ব্যাটারিচালিত টেলিভিশন গ্রামেগঞ্জে প্রদর্শিত হতো, আর তা ঘিরে থাকতো শত শত নারী, পুরুষ ও শিশু-কিশোর।

শিক্ষা, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ, কৃষ্টি-সভ্যতার প্রসারে বিটিভির বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে ‘জাতীয় টেলিভিশন স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতা’ ছিল অন্যতম শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান। দেশের নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চৌকস শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতায় পরে পল্লী এলাকার শিক্ষার্থীরাও সুযোগ পেতে শুরু করে। বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা হয়ে ওঠে বিটিভির সর্বাধিক জনপ্রিয় ও গঠনমূলক অনুষ্ঠান।

সেই সময় সারাদেশের স্কুল ও কলেজগুলোতে গড়ে ওঠে ডিবেট ক্লাব, যা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল সহপাঠ কার্যক্রমের অনন্য ক্ষেত্র তৈরি করে। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা যুক্তি, বিশ্লেষণ ও প্রকাশভঙ্গির চর্চায় মেধার বিকাশ ঘটায়।

কিন্তু ২০১৭ সালের দিকে জাতীয় টেলিভিশন স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার গঠন ও বিস্তারে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আমন্ত্রণপ্রাপ্ত দলের সংখ্যা কমে আসে, আয়োজনে সংকোচন দেখা দেয়। এরপর কোভিড-১৯ মহামারির সময় বিটিভির অন্যান্য অনুষ্ঠানের মতো এটিও মুখ থুবড়ে পড়ে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম, মানবিকতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, পরিবেশ-প্রতিবেশ, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুশাসন, কৃষি ও অর্থনীতিসহ সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তার যে যৌক্তিক ভিত্তি গড়ে ওঠার সুযোগ ছিল, তা আজ ব্যাহত হচ্ছে।

এক সময় বিটিভিতে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার সম্প্রচার সরাসরি দেখত ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি দর্শক। এটি হয়ে উঠেছিল জ্ঞান অর্জনের এক অনন্য প্ল্যাটফর্ম। অথচ আজ সারাদেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহপাঠ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। শুধু রুটিন শিক্ষার বাইরেও যে সৃজনশীল কর্মকা- প্রয়োজন, তা এখন কার্যত অনুপস্থিত।

এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় টেলিভিশনের বিতর্ক প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিকাশের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিটিভির অন্যান্য সচেতনতামূলক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে এই প্রতিযোগিতাটি ছিল অনন্য সাধারণ। এটি কেবল একটি শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানই নয়; বরং এটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, উদ্যোক্তা ও শুভাকাক্সক্ষীদের চিন্তা ও কর্মের অনুপ্রেরণার উৎসও বটে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই জাতীয় অনুষ্ঠানটি পুনরায় পুরোদমে সম্প্রচারের উদ্যোগ নেবেনÑ এমন প্রত্যাশা সবার।

[লেখক : শিক্ষক]

বিশ্ব রেড ক্রস দিবস

আত্মরক্ষার খালি-হাতের ইতিহাস ও আধুনিক বিস্তার

বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর : সমাজ সংস্কারের পথিকৃৎ

ছবি

বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস “বিজয় বসন্ত“গ্রন্থের লেখক

পয়লা বৈশাখ : বাঙালির সংহতি চেতনার সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কমরেড রূপনারায়ণ রায়

সাংবাদিক-সাহিত্যিক কাজী মোহাম্মদ ইদরিসের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে কিছু কথা

রেসলিং

কোটা সমাচার

বাজেট ২০২৪-২৫: তথ্যপ্রযুক্তি খাতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের যাত্রা শুরু হোক এবার

সীমান্ত সড়ক পশ্চাদপদ পার্বত্য অঞ্চলকে উন্নয়নের স্রোতধারায় একীভূত করেছে

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১: উন্নত ও সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশের মহাকাশ জয়

ছবি

নাটোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

রিলিফ

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

tab

মুক্ত আলোচনা

টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা : এক হারানো সম্ভাবনার খোঁজে

রহিম আব্দুর রহিম

বুধবার, ২১ মে ২০২৫

পৃথিবীতে গণমাধ্যমের যৌবনকাল ঠিক কবে থেকে শুরু, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। তবে ইতিহাসের পথ ধরে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম রেডিওর প্রচলন ঘটে। এই রেডিওর মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের তথ্যের আদান-প্রদান ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সূচনা হয়। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলে এই মাধ্যমের কদর ছড়িয়ে পড়ে আমাদের উপমহাদেশেও।

পরে ১৯২৬ সালের দিকে স্কটিশ বিজ্ঞানী লোগি বেয়ার্ড আবিষ্কার করেন মানুষের মুখচ্ছবির সাদা-কালো বৈদ্যুতিক সম্প্রচার পদ্ধতি। তার এই উদ্ভাবন অনুপ্রেরণা জোগায় রুশ বংশোদ্ভূত প্রকৌশলী আইজাক শোয়েনবার্গকে, যিনি প্রথম কার্যকরভাবে টেলিভিশন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৩৬ সালে বিবিসি প্রথম টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু করে, যা ১৯৪৫ সালের মধ্যে পূর্ণতা পায়। এরপর ১৯৫০ সাল নাগাদ টেলিভিশন হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় গণমাধ্যম।

এই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে টেলিভিশনের প্রথম সম্প্রচার শুরু হয়। তখন বেশিরভাগ অনুষ্ঠান ছিল সচেতনতামূলকÑকৃষি, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, উর্দু শেখার ক্লাস, রম্য কথকতা, কাওয়ালী ও গজলের মতো অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো।

স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান টেলিভিশনের নাম বদলে হয়ে যায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), আর পাকিস্তান রেডিও রূপ নেয় বাংলাদেশ বেতারে। এরপর থেকেই বাংলাদেশ বেতারের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে এবং ধীরে ধীরে টেলিভিশনের সম্প্রচার হয়ে ওঠে মানুষের বিনোদন ও শিক্ষার মুখ্য মাধ্যম। সে সময় বিদ্যুতায়ন না থাকলেও ব্যাটারিচালিত টেলিভিশন গ্রামেগঞ্জে প্রদর্শিত হতো, আর তা ঘিরে থাকতো শত শত নারী, পুরুষ ও শিশু-কিশোর।

শিক্ষা, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ, কৃষ্টি-সভ্যতার প্রসারে বিটিভির বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে ‘জাতীয় টেলিভিশন স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতা’ ছিল অন্যতম শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান। দেশের নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চৌকস শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতায় পরে পল্লী এলাকার শিক্ষার্থীরাও সুযোগ পেতে শুরু করে। বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা হয়ে ওঠে বিটিভির সর্বাধিক জনপ্রিয় ও গঠনমূলক অনুষ্ঠান।

সেই সময় সারাদেশের স্কুল ও কলেজগুলোতে গড়ে ওঠে ডিবেট ক্লাব, যা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল সহপাঠ কার্যক্রমের অনন্য ক্ষেত্র তৈরি করে। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা যুক্তি, বিশ্লেষণ ও প্রকাশভঙ্গির চর্চায় মেধার বিকাশ ঘটায়।

কিন্তু ২০১৭ সালের দিকে জাতীয় টেলিভিশন স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার গঠন ও বিস্তারে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আমন্ত্রণপ্রাপ্ত দলের সংখ্যা কমে আসে, আয়োজনে সংকোচন দেখা দেয়। এরপর কোভিড-১৯ মহামারির সময় বিটিভির অন্যান্য অনুষ্ঠানের মতো এটিও মুখ থুবড়ে পড়ে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম, মানবিকতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, পরিবেশ-প্রতিবেশ, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুশাসন, কৃষি ও অর্থনীতিসহ সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তার যে যৌক্তিক ভিত্তি গড়ে ওঠার সুযোগ ছিল, তা আজ ব্যাহত হচ্ছে।

এক সময় বিটিভিতে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার সম্প্রচার সরাসরি দেখত ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি দর্শক। এটি হয়ে উঠেছিল জ্ঞান অর্জনের এক অনন্য প্ল্যাটফর্ম। অথচ আজ সারাদেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহপাঠ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। শুধু রুটিন শিক্ষার বাইরেও যে সৃজনশীল কর্মকা- প্রয়োজন, তা এখন কার্যত অনুপস্থিত।

এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় টেলিভিশনের বিতর্ক প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিকাশের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিটিভির অন্যান্য সচেতনতামূলক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে এই প্রতিযোগিতাটি ছিল অনন্য সাধারণ। এটি কেবল একটি শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানই নয়; বরং এটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, উদ্যোক্তা ও শুভাকাক্সক্ষীদের চিন্তা ও কর্মের অনুপ্রেরণার উৎসও বটে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই জাতীয় অনুষ্ঠানটি পুনরায় পুরোদমে সম্প্রচারের উদ্যোগ নেবেনÑ এমন প্রত্যাশা সবার।

[লেখক : শিক্ষক]

back to top