alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

স্মার্ট দেশ গড়তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রচেষ্টা

শফিউল আজিম

: রোববার, ২৬ মে ২০২৪

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পদার্পণের পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। আকাশপথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য আকাশে ‘শান্তির নীড়’ সেøাগান নিয়ে ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার-১২৬ জারির মাধ্যমে একটি ডিসি-৩ এয়ারক্রাফট দিয়ে শুরু হয় বিমানের যাত্রা। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে প্রথম অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে বাংলাদেশে বিমান পরিবহনের শুভ সূচনা হয়। বঙ্গবন্ধু ৪ বছরের কম সময় পেলেও এই স্বল্প সময়ে বহরে যুক্ত করেন সর্বমোট ১২টি উড়োজাহাজ। এ ১২টি উড়োজাহাজের মাধ্যমে তিনি ৫টি অভ্যন্তরীণ, ৪টি আঞ্চলিক ও ১টি দূরবর্তীসহ মোট ১০টি গন্তব্যে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উড়োজাহাজ কেনার জন্য রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি প্রদানের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের ২১টি উড়োজাহাজ বিমান বহরে যুক্ত করেছেন এবং ওয়ার্ল্ড এভিয়েশন সেক্টরে বাংলাদেশের অবস্থানকে শক্তিশালী ও সুসংহত করেছেন। বিমানের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ তিনি নিজস্ব উড়োজাহাজসমূহের মনোরম ও চিত্রাকর্ষক নামকরণ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপকল্পের সাথে সংগতি রেখে এবং তার সার্বিক দিকনির্দেশনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে। যার মাধ্যমে বিমানের সবাই কার্যক্রমে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও কার্যকরি ব্যবস্থাপনার সমন্বয়, যাত্রীসেবা, ফ্লাইট অপারেশন ও সার্বিক এয়ারলাইন্স পরিচালনার গুণগতমান উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ‘স্মার্ট এয়ারলাইন্স’ করার পরিকল্পনা ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান আছে।

স্মার্ট টিকিটিং সিস্টেম : কম্পিউটারাইজড এয়ারলাইন্স রিজার্ভেশন সিস্টেম, ঝধনৎব চঝঝ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একটি প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে একজন যাত্রীর টিকিট ক্রয় থেকে শুরু করে যাত্রার সমাপ্তির সবাই কার্যক্রম যুগোপযোগী ও যাত্রীবান্ধব হয়েছে।

ইন্টিগ্রেটেড পেমেন্ট সিস্টেম : ৩৪টি ব্যাংকিং চ্যানেলের ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, আই-ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেম, ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঘরে বসে ওয়েবসাইট ও কল সেন্টারের মাধ্যমে টিকিট ক্রয় করা যায়।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন স্মার্ট সলিউশনের সফল বাস্তবায়ন : ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন স্মার্ট সলিউশনের সফল বাস্তবায়ন করে বিমান ‘ন্যাশনাল কেরিয়ার’ হিসেবে বাংলাদেশ এভিয়েশন ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ডিজিটাল গ্রাহকসেবা : ঝধনৎব ডিপার্চার কন্ট্রোলের সহযোগিতায় বিমান একটি প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে ভ্রমণকারীদের চেক-ইন সম্পন্ন করা ও ভ্রমণকারীর গন্তব্য দেশের নিয়ম অনুসারে প্যাসেঞ্জার অচওঝ সিস্টেমের মাধ্যমে অগ্রিম তথ্য প্রেরণ করা হয়, যা তাকে গন্তব্য দেশে প্রবেশে সহায়তা করে থাকে।

স্মার্ট কল সেন্টার : সম্মানিত যাত্রীদের সার্বক্ষণিক সেবার জন্য বিমান ১৩৬৩৬ শর্ট কোডের মাধ্যমে স্মার্ট কল সেন্টার চালু করেছে।

অপারেশনে প্রযুক্তিগত ইন্টিগ্রেশন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে স্মার্ট এয়ারলাইন হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ হিসেবে জার্মানির লুফথানসা সিস্টেমের বিশ্বখ্যাত ফ্লাইট ডিসপ্যাচ সল্যুশন ‘খওউঙ ঋষরমযঃ ৪উ’ চালু করা হয়েছে।

ডেটা-পরিচালিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ : বিগ ডেটা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (অও), মেশিন লার্নিং (গখ) ব্যবহার করে ফ্লাইট প্রফিটেবিলিটি বৃদ্ধি করার জন্য রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে টিকিটের বিভিন্ন আরবিডি (রিজার্ভেশন বুকিং ডেজিগনেটর) নির্ধারণ করা হয়।

টেকসই উদ্যোগ : স্মার্ট ডিভাইস (বডি ক্যামেরা) যুক্ত করার মাধ্যমে ব্যাগেজ পরিষেবার আধুনিকায়ন ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। ৫-এ টেকনোলজি ব্যবহার করে বডি ক্যামেরাসহ অন্যান্য পরিষেবাগুলোর আরও আধুনিকায়ন ও সেন্ট্রাল মনিটরিং এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের কাজ চলমান আছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যে কার্গো পরিষেবাগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করে বিমান একটি স্বয়ংক্রিয় কার্গো ব্যবস্থাপনা এবং ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করার পথে রয়েছে। এই সিস্টেমটি দক্ষ এবং স্বচ্ছ কার্গো বুকিং, ট্র্যাকিং এবং হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়া প্রদান করবে, যার ফলে পরিষেবার গুণগতমান উন্নত হবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্গো অপারেশন থেকে আয় বৃদ্ধি পাবে।

পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিবেশবান্ধব এয়ারলাইন হিসেবে গড়ে ওঠার লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য নতুন প্রজন্মের ফুয়েল-এফিশিয়েন্ট এয়ারক্রাফটের ব্যবহার এবং বিভিন্ন পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্পে অংশগ্রহণ। কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য বিভিন্ন গ্রিন অপারেশনাল প্র্যাকটিস চালু করা, যেমন কাগজহীন অফিস, ডিজিটাল ডকুমেন্টেশন এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণের ব্যবহার।

স্মার্ট লয়্যালটি প্রোগ্রাম : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রীদের জন্য একটি স্মার্ট লয়্যালটি প্রোগ্রাম চালু করেছে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত যাত্রীরা বিশেষ সুবিধা এবং অফার উপভোগ করতে পারেন, যা যাত্রীদের সাথে সংস্থার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করে।

মোবাইল ওয়ালেট ইন্টিগ্রেশন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিভিন্ন মোবাইল ওয়ালেট সেবা যেমন বিকাশ, নগদ এবং অন্যান্য ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের সাথে ইন্টিগ্রেশন করেছে, যা যাত্রীদের জন্য টিকিট ক্রয় এবং অন্যান্য পেমেন্ট কার্যক্রম আরও সহজ করেছে।

রিয়েল-টাইম ফ্লাইট ট্র্যাকিং : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রীদের জন্য রিয়েল-টাইম ফ্লাইট ট্র্যাকিং সেবা চালু করেছে। যাত্রীরা তাদের ফ্লাইটের বর্তমান অবস্থান এবং সময়সূচি সহজেই ট্র্যাক করতে পারেন, যা তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা আরও সহজ করে তোলে।

সামাজিক দায়বদ্ধতা : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিভিন্ন সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম (ঈঝজ) গ্রহণ করেছে, যা সমাজের কল্যাণে ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম, স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত।

অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্ব করেছে, যা তাদের প্রযুক্তিগত ও অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়েছে।

উন্নত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং : বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা উন্নত করার জন্য নতুন প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে, যা বিমানের পরিষেবা দক্ষতা ও যাত্রী সন্তুষ্টি বৃদ্ধি করেছে।

বিমানবন্দরে ডিজিটাল সেবা : স্মার্ট এয়ারলাইন্স উদ্যোগের অংশ হিসেবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে ডিজিটাল সেবা চালু করা হয়েছে; যেমন- বায়োমেট্রিক চেক-ইন, স্বয়ংক্রিয় বোর্ডিং গেট এবং ডিজিটাল ব্যাগেজ ট্র্যাকিং।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। জাতীয় বাজেটে বিমানের জন্য কোন বরাদ্দ থাকে না। অর্থাৎ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সম্পূর্ণ নিজস্ব আয়ে পরিচালিত একটি সংস্থা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আয় করেছে এবং লাভের ধারা বজায় রেখে সরকারের লাভজনক কোম্পানিসমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ধরে রেখেছে। পাশাপাশি বিমানের নিজস্ব আয় থেকে বহরে থাকা উড়োজাহাজসমূহের কিস্তি পরিশোধসহ লিজে থাকা কয়েকটি উড়োজাহাজও ক্রয় করেছে, যা বিমানের আর্থিক সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। দূরদর্শী পরিচালনা-পর্ষদ, নির্বাহী পরিচালক, দক্ষ ও কর্মঠ জনবল, আধুনিক উড়োজাহাজ, ডিজিটাল সেবার অন্তর্ভুক্তিকরণের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স হয়ে উঠেছে যাত্রীবান্ধব ও স্মার্ট এয়ারলাইন্স।

[লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স]

কমরেড ইলা মিত্রের শততম জন্মজয়ন্তী

কত মৃত্যু হলে জাগবে বিবেক?

বৈষম্যের বিবিধ মুখ

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি আইনি সহায়তা

গাজা : এখন শান্তি রক্ষা করবে কে?

দোসর, বাই ডিফল্ট!

জমি কেনা দাগে দাগে কিন্তু ভোগদখল একদাগে

রাষ্ট্র কি শুধু শিক্ষকদের বেলায় এসে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে?

শতরঞ্জ কি খিলাড়ী

শিক্ষক থাকে রাজপথে, আর পুলিশ ছাড়ে থানা

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা : স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবিষ্যৎ কী?

ছবি

শ্লীলতা, অশ্লীলতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অবক্ষয়ের চোরাবালিতে আলোর দিশারী

অটোমেশন ও দেশের যুব কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ

দুর্যোগে ভয় নয়, প্রস্তুতিই শক্তি

বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন

ছবি

‘আল্লাহ তুই দেহিস’: এ কোন ঘৃণার আগুন, ছড়িয়ে গেল সবখানে!

চেকের মামলায় আসামী যেসব ডিফেন্স নিয়ে খালাস পেতে পারেন

খেলনাশিল্প: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

প্রান্তিক মানুষের হৃদয়ে ফিরে আসা কালো মেঘ

গীর্জায় হামলার নেপথ্যে কী?

সংঘের শতবর্ষের রাজনৈতিক তাৎপর্য

দুর্নীতি আর চাঁদাবাজি রাজনৈতিক-সংস্কৃতির অংশ

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

বাংলার সংস্কৃতি : উৎস, বিবর্তন ও বর্তমান সমাজ-মনন

রম্যগদ্য: শিক্ষা সহজ, বিদ্যা কঠিন

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জনগণের ভূমিকা উপেক্ষিত

শ্রমজীবী মানুষের শোভন কর্মসংস্থান

মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের বাস্তবতা

প্রবারণার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটনের শেষ সুযোগ?

পাহাড় থেকে সমতল: আদিবাসী নারীর নিরাপত্তা

সোশ্যাল মিডিয়ার ‘লাইক’ সংস্কৃতি: আসক্তি নাকি নতুন যোগাযোগ?

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যু

মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক পরিবর্তন: আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি

রম্যগদ্য: “কেশ ফ্যালায় ভাই, কেশ ফ্যালায়...”

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

স্মার্ট দেশ গড়তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রচেষ্টা

শফিউল আজিম

রোববার, ২৬ মে ২০২৪

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পদার্পণের পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। আকাশপথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য আকাশে ‘শান্তির নীড়’ সেøাগান নিয়ে ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার-১২৬ জারির মাধ্যমে একটি ডিসি-৩ এয়ারক্রাফট দিয়ে শুরু হয় বিমানের যাত্রা। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে প্রথম অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে বাংলাদেশে বিমান পরিবহনের শুভ সূচনা হয়। বঙ্গবন্ধু ৪ বছরের কম সময় পেলেও এই স্বল্প সময়ে বহরে যুক্ত করেন সর্বমোট ১২টি উড়োজাহাজ। এ ১২টি উড়োজাহাজের মাধ্যমে তিনি ৫টি অভ্যন্তরীণ, ৪টি আঞ্চলিক ও ১টি দূরবর্তীসহ মোট ১০টি গন্তব্যে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উড়োজাহাজ কেনার জন্য রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি প্রদানের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের ২১টি উড়োজাহাজ বিমান বহরে যুক্ত করেছেন এবং ওয়ার্ল্ড এভিয়েশন সেক্টরে বাংলাদেশের অবস্থানকে শক্তিশালী ও সুসংহত করেছেন। বিমানের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ তিনি নিজস্ব উড়োজাহাজসমূহের মনোরম ও চিত্রাকর্ষক নামকরণ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপকল্পের সাথে সংগতি রেখে এবং তার সার্বিক দিকনির্দেশনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে। যার মাধ্যমে বিমানের সবাই কার্যক্রমে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও কার্যকরি ব্যবস্থাপনার সমন্বয়, যাত্রীসেবা, ফ্লাইট অপারেশন ও সার্বিক এয়ারলাইন্স পরিচালনার গুণগতমান উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ‘স্মার্ট এয়ারলাইন্স’ করার পরিকল্পনা ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান আছে।

স্মার্ট টিকিটিং সিস্টেম : কম্পিউটারাইজড এয়ারলাইন্স রিজার্ভেশন সিস্টেম, ঝধনৎব চঝঝ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একটি প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে একজন যাত্রীর টিকিট ক্রয় থেকে শুরু করে যাত্রার সমাপ্তির সবাই কার্যক্রম যুগোপযোগী ও যাত্রীবান্ধব হয়েছে।

ইন্টিগ্রেটেড পেমেন্ট সিস্টেম : ৩৪টি ব্যাংকিং চ্যানেলের ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, আই-ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেম, ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঘরে বসে ওয়েবসাইট ও কল সেন্টারের মাধ্যমে টিকিট ক্রয় করা যায়।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন স্মার্ট সলিউশনের সফল বাস্তবায়ন : ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন স্মার্ট সলিউশনের সফল বাস্তবায়ন করে বিমান ‘ন্যাশনাল কেরিয়ার’ হিসেবে বাংলাদেশ এভিয়েশন ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ডিজিটাল গ্রাহকসেবা : ঝধনৎব ডিপার্চার কন্ট্রোলের সহযোগিতায় বিমান একটি প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে ভ্রমণকারীদের চেক-ইন সম্পন্ন করা ও ভ্রমণকারীর গন্তব্য দেশের নিয়ম অনুসারে প্যাসেঞ্জার অচওঝ সিস্টেমের মাধ্যমে অগ্রিম তথ্য প্রেরণ করা হয়, যা তাকে গন্তব্য দেশে প্রবেশে সহায়তা করে থাকে।

স্মার্ট কল সেন্টার : সম্মানিত যাত্রীদের সার্বক্ষণিক সেবার জন্য বিমান ১৩৬৩৬ শর্ট কোডের মাধ্যমে স্মার্ট কল সেন্টার চালু করেছে।

অপারেশনে প্রযুক্তিগত ইন্টিগ্রেশন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে স্মার্ট এয়ারলাইন হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ হিসেবে জার্মানির লুফথানসা সিস্টেমের বিশ্বখ্যাত ফ্লাইট ডিসপ্যাচ সল্যুশন ‘খওউঙ ঋষরমযঃ ৪উ’ চালু করা হয়েছে।

ডেটা-পরিচালিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ : বিগ ডেটা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (অও), মেশিন লার্নিং (গখ) ব্যবহার করে ফ্লাইট প্রফিটেবিলিটি বৃদ্ধি করার জন্য রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে টিকিটের বিভিন্ন আরবিডি (রিজার্ভেশন বুকিং ডেজিগনেটর) নির্ধারণ করা হয়।

টেকসই উদ্যোগ : স্মার্ট ডিভাইস (বডি ক্যামেরা) যুক্ত করার মাধ্যমে ব্যাগেজ পরিষেবার আধুনিকায়ন ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। ৫-এ টেকনোলজি ব্যবহার করে বডি ক্যামেরাসহ অন্যান্য পরিষেবাগুলোর আরও আধুনিকায়ন ও সেন্ট্রাল মনিটরিং এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের কাজ চলমান আছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যে কার্গো পরিষেবাগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করে বিমান একটি স্বয়ংক্রিয় কার্গো ব্যবস্থাপনা এবং ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করার পথে রয়েছে। এই সিস্টেমটি দক্ষ এবং স্বচ্ছ কার্গো বুকিং, ট্র্যাকিং এবং হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়া প্রদান করবে, যার ফলে পরিষেবার গুণগতমান উন্নত হবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্গো অপারেশন থেকে আয় বৃদ্ধি পাবে।

পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিবেশবান্ধব এয়ারলাইন হিসেবে গড়ে ওঠার লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য নতুন প্রজন্মের ফুয়েল-এফিশিয়েন্ট এয়ারক্রাফটের ব্যবহার এবং বিভিন্ন পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্পে অংশগ্রহণ। কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য বিভিন্ন গ্রিন অপারেশনাল প্র্যাকটিস চালু করা, যেমন কাগজহীন অফিস, ডিজিটাল ডকুমেন্টেশন এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণের ব্যবহার।

স্মার্ট লয়্যালটি প্রোগ্রাম : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রীদের জন্য একটি স্মার্ট লয়্যালটি প্রোগ্রাম চালু করেছে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত যাত্রীরা বিশেষ সুবিধা এবং অফার উপভোগ করতে পারেন, যা যাত্রীদের সাথে সংস্থার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করে।

মোবাইল ওয়ালেট ইন্টিগ্রেশন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিভিন্ন মোবাইল ওয়ালেট সেবা যেমন বিকাশ, নগদ এবং অন্যান্য ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের সাথে ইন্টিগ্রেশন করেছে, যা যাত্রীদের জন্য টিকিট ক্রয় এবং অন্যান্য পেমেন্ট কার্যক্রম আরও সহজ করেছে।

রিয়েল-টাইম ফ্লাইট ট্র্যাকিং : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রীদের জন্য রিয়েল-টাইম ফ্লাইট ট্র্যাকিং সেবা চালু করেছে। যাত্রীরা তাদের ফ্লাইটের বর্তমান অবস্থান এবং সময়সূচি সহজেই ট্র্যাক করতে পারেন, যা তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা আরও সহজ করে তোলে।

সামাজিক দায়বদ্ধতা : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিভিন্ন সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম (ঈঝজ) গ্রহণ করেছে, যা সমাজের কল্যাণে ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম, স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত।

অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্ব করেছে, যা তাদের প্রযুক্তিগত ও অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়েছে।

উন্নত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং : বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা উন্নত করার জন্য নতুন প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে, যা বিমানের পরিষেবা দক্ষতা ও যাত্রী সন্তুষ্টি বৃদ্ধি করেছে।

বিমানবন্দরে ডিজিটাল সেবা : স্মার্ট এয়ারলাইন্স উদ্যোগের অংশ হিসেবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে ডিজিটাল সেবা চালু করা হয়েছে; যেমন- বায়োমেট্রিক চেক-ইন, স্বয়ংক্রিয় বোর্ডিং গেট এবং ডিজিটাল ব্যাগেজ ট্র্যাকিং।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। জাতীয় বাজেটে বিমানের জন্য কোন বরাদ্দ থাকে না। অর্থাৎ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সম্পূর্ণ নিজস্ব আয়ে পরিচালিত একটি সংস্থা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আয় করেছে এবং লাভের ধারা বজায় রেখে সরকারের লাভজনক কোম্পানিসমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ধরে রেখেছে। পাশাপাশি বিমানের নিজস্ব আয় থেকে বহরে থাকা উড়োজাহাজসমূহের কিস্তি পরিশোধসহ লিজে থাকা কয়েকটি উড়োজাহাজও ক্রয় করেছে, যা বিমানের আর্থিক সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। দূরদর্শী পরিচালনা-পর্ষদ, নির্বাহী পরিচালক, দক্ষ ও কর্মঠ জনবল, আধুনিক উড়োজাহাজ, ডিজিটাল সেবার অন্তর্ভুক্তিকরণের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স হয়ে উঠেছে যাত্রীবান্ধব ও স্মার্ট এয়ারলাইন্স।

[লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স]

back to top