alt

opinion » post-editorial

শ্রমিকের উন্নয়ন ছাড়া গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়

সাজ্জাদ হোসেন রিজু

: শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

রাজধানী ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধান খুঁজতে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বেশকিছু নির্দেশনা ও সেগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা হয় বলে গণমাধ্যমে আমরা জেনেছি।

প্রস্তাবগুলোর পাশাপাশি আমাদের একমত হওয়া দরকার যে, আমরা আসলেই সড়কপথে শৃঙ্খলা ফেরাতে চাই। তা না হলে সকল পরিকল্পনা শুধুমাত্র কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আসলে সড়কে যারা কাজ করেন সেই সব ড্রাইভার, কন্ডাক্টর ও হেলপারদের মানোন্নয়ন ছাড়া সড়কপথে শৃঙ্খলা ফেরানো কষ্টকর হবে; কারণ সচেতন ব্যক্তি ছাড়া পরিবেশের উন্নয়ন অসম্ভব যা আমাদের বিদ্যমান আইনেই বলা রয়েছে। আইনের কথাগুলো বলার আগে বাংলাদেশে ড্রাইভিং পেশা নিয়ে কিছু বলতে চাই।

সামগ্রিকভাবে চিন্তা করতে গেলে একটি দেশের অর্থনৈতিক অবদানের মাপকাঠি বিবেচনায় ড্রাইভিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পেশা। দেশের গণপরিবহন খাতের (যাত্রীবাহী ও মালবাহী) ভিত্তিই দাঁড়িয়ে আছে এই ড্রাইভারদের অবদানের ওপর ভিত্তি করে। এ দেশের সস্তা ও সহজলভ্য শ্রম বাজারের কারণে ড্রাইভার, কন্ডাক্টর ও হেলপার খুঁজে পাওয়াটা খুবই সোজা। যে কেউ চাইলেই সহজে কোনমতে ড্রাইভিং শিখে এই পেশায় নেমে পড়তে পারে আবার কম বেতনে যথেচ্ছভাবে তাদের খাটিয়েও নেওয়া যায়। ফলে আমাদের দেশে ড্রাইভিং পুরোপুরি শ্রমিক শ্রেণীর পেশা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

অথচ আইন অনুযায়ী ড্রাইভিং পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তি অর্থাৎ ড্রাইভারদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম, ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণী পাশ, মোটরযান চালনার যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াসহ বেশকিছু টেকনিক্যাল ও নন-টেকনিক্যাল বিষয়াদি উত্তীর্ণ হয়ে মোটরযান নিয়ে রাস্তায় নামার কথা (সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮, দ্বিতীয় অধ্যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান) যা বাংলাদেশে কখনই পরিপালন হয়নি। যদি যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রসঙ্গ আসে তাহলে ড্রাইভারদের যোগ্যতা ও দক্ষাতাকে আর দশটি পেশার সাথে তুলনা করে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই। কিন্তু এবাবে কখনই ভাবা হয়নি বলেই এই পেশা মানসম্মত পেশা না হয়ে ধীরে ধীরে শ্রমিক শ্রেণীর পেশা হিসেবে অবমূল্যায়িত হয়েছে। আজ একজন নিরক্ষর কিশোর ছেলের হাতে আমরা বাসের স্টিয়ারিং তুলে দিয়ে নিজেদেরকেই ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছি। ঢাকা শহরে বহু লেগুনা বা টেম্পোচালক আছে যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স তো দূরের কথা ১৮ বছরই পূর্ণ হয়নি। এই যদি হয় বাস্তবতা তাহলে সড়কপথে কিভাবে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব? জানজট নিরসনের আগে সড়কের পরিবেশের প্রতি নজর দেওয়াটাই কি সমীচীন ছিল না?

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর চতুর্থ অধ্যায়ে মোটরযানের ফিটনেস সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলা আছে। এটাও বলা আছে যে, ফিটনেসের অনুপযোগী কোনো মোটরযানের ক্ষেত্রে ফিটনেস সনদ প্রদান করা হলে সনদ প্রদানকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। আইনের এক শর্তই যদি সঠিকভাবে পরিপালন হতো তাহলে ঢাকা শহরের প্রায় অর্ধেকের বেশি যানবাহন রাস্তায় চলাচলের যোগ্যতা হারাতো। আর যেসকল কর্মকর্তা এইসকল যানবাহনের লাইসেন্স দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি।

উক্ত আইনের ষষ্ঠ অধ্যায় অনুযায়ী মহাসড়কের ঢাল থেকে উভয় পার্শ্বে ১০ মিটারের মধ্যে অবৈধভাবে কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী স্থাপনা (যেমন- হাট-বাজার, দোকান, ইত্যাদি) নির্মাণ করা যাবে না; কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগায় এইসব অনিয়ম চললেও কখনই এইসব অবাঞ্চিত স্থাপনা উচ্ছেদে কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায়নি। আমরা ফুটপাতে হাঁটতে চাই, কিন্তু ফুটপাত অবৈধ দখলের কারণে তা পারি না, ফলে এই চাপটি মূল সড়কের উপরেই এসে পড়ছে।

ফুটপাত অবৈধ দখলের ফলে মূল সড়ক সরু হয়ে জানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এটি বোঝাতে নিশ্চয়ই প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার প্রয়োজন নেই। এসব অনিয়ম ছাড়াও সড়কে চাঁদাবাজি, গণপরিবহনের আসন সংখ্যা ও নির্ধারিত ভাড়া মেনে না চলা, যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করা, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী ৮ ঘণ্টা শ্রম নিশ্চিত না করা ও যথাযথভাবে ড্রাইভার, কন্ডাক্টর ও হেলপারদের নিয়োগপত্র প্রদান না করা, প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা না করে যথেচ্ছভাবে যানবাহনের নিবন্ধন প্রদান করা ইত্যাদি তো আছেই। ফলে দেশের গণপরিবহন (যাত্রীবাহী ও মালবাহী) একটি বিশৃঙ্খল অবস্থায় এসে পৌঁছেছে যা থেকে উত্তোরণের জন্য আমাদের কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। অবিলম্বে, নির্দিষ্ট সময় বেধে দিয়ে ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, টেম্পো ইত্যাদি মোটরযান রাস্তা থেকে উঠিয়ে দিতে হবে। মোটর চালিত রিকসা চলাচল বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্রধান সড়কে পায়ে চালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করতে হবে, রিকশা চলবে মহল্লার অলিগলিতে।

স্বল্প দূরত্বের জন্য টেম্পো বা লেগুনা এবং বেশি দূরত্বের জন্য বাস রূটের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে গণপরিবহন সহজ ও সাশ্রয়ী হয়। এতে করে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার হ্রাস পাবে। বাস থাকবে একেকটি কোম্পানির অধীনে এবং যেখানে কর্মরত প্রতিটি ড্রাইভার, কন্ডাক্টর ও হেলপারগণ যথাযথ প্রকৃয়ায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও নিয়োগপ্রাপ্ত হতে হবে। টেম্পো ও অটোরিকশা থাকবে ব্যক্তিগত কিন্তু তা অবশ্যই লাইসেন্স ও রূট পারমিটের আওতায় থাকবে।

রুট পারমিটের আওতার বাহিরের এলাকায় চালানোর সুযোগ থাকবে না। পরিবহন সেক্টরে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। নতুন যানবাহন ক্রয়ের জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো দ্রুত সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়। সর্বোপরি, ড্রাইভিং পেশাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যাতে শিক্ষিত ও সচেতন উদ্যোক্তারা এই পেশায় এগিয়ে আসেন এবং রাস্তায় শৃঙ্খলা বজায়ে রাখা সম্ভব হয়। রাস্তায় যারা কাজ করে তাদের অবস্থার উন্নয়ন ছাড়া গণপরিবহনের শৃঙ্খলা আনয়ন সম্ভব নয়। পরিবহন শ্রমিকদের অবস্থার উন্নয়ন ছাড়া গণপরিবহনের শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়।

[লেখক : ব্যাংক কর্মকর্তা ]

শারদীয় পূজার দিনলিপি

ঋণের জন্য আত্মহত্যা, ঋণ নিয়েই চল্লিশা

জাকসু নির্বাচন ও হট্টগোল: আমাদের জন্য শিক্ষণীয় কী?

নরসুন্দর পেশার গুরুত্ব ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন

বিভাগভিত্তিক এমপিআর নির্বাচন পদ্ধতি

প্ল্যাটফর্ম সমাজে বাংলাদেশ: জ্ঞানের ভবিষ্যৎ কার হাতে?

আনন্দবেদনার হাসপাতাল: সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ছবি

ভিন্ন ধরনের নির্বাচন, ভিন্ন ধরনের ফল

বেসরকারি খাতে সিআইবি’র যাত্রা: ঋণ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত

স্বাস্থ্যসেবায় মানবিকতা প্রতিষ্ঠা হোক

ছবি

নেপালে সরকার পতন ও বামপন্থীদের ভবিষ্যৎ

ডাকসু নির্বাচন ও সংস্কারপ্রয়াস: রাজনৈতিক চিন্তার নতুন দিগন্ত

নির্বাচন কি সব সমস্যার সমাধান

জিতিয়া উৎসব

ছবি

অলির পর নেপাল কোন পথে?

রম্যগদ্য: “মরেও বাঁচবি নারে পাগলা...”

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শ্রীপুর পৌরসভা

ভূরিভোজ, উচ্ছেদ এবং আদিবাসী পাহাড়িয়া

অনলাইন সংস্কৃতিতে হাস্যরসের সমাজবিজ্ঞান

মামলাজট নিরসনে দেওয়ানি কার্যবিধির সংস্কার

বাস্তব মস্কো বনাম বিভ্রান্ত ইউরোপ

ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি

সড়ক দুর্ঘটনা: কারও মৃত্যু সাধারণ, কারও মৃত্যু বিশেষ

ঐকমত্য ছাড়াও কিছু সংস্কার সম্ভব

আবার বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সংকটে সাধারণ মানুষ

ডায়াবেটিস রোগীর সেবা ও জনসচেতনতা

ভিন্ন ধরনের ডাকসু নির্বাচন

ডাকসু নির্বাচন : পেছনে ফেলে আসি

প্রসঙ্গ : এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ

“কোপা চাটিগাঁ...”

ই-কমার্স হতে পারে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন

ভারত-চীনের নতুন সমীকরণ

সাইবার যুগে মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা

ছবি

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

একজন নাগরিকের অভিমানী বিদায় ও রাষ্ট্রের নৈতিক সংকট

tab

opinion » post-editorial

শ্রমিকের উন্নয়ন ছাড়া গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়

সাজ্জাদ হোসেন রিজু

শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

রাজধানী ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধান খুঁজতে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বেশকিছু নির্দেশনা ও সেগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা হয় বলে গণমাধ্যমে আমরা জেনেছি।

প্রস্তাবগুলোর পাশাপাশি আমাদের একমত হওয়া দরকার যে, আমরা আসলেই সড়কপথে শৃঙ্খলা ফেরাতে চাই। তা না হলে সকল পরিকল্পনা শুধুমাত্র কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আসলে সড়কে যারা কাজ করেন সেই সব ড্রাইভার, কন্ডাক্টর ও হেলপারদের মানোন্নয়ন ছাড়া সড়কপথে শৃঙ্খলা ফেরানো কষ্টকর হবে; কারণ সচেতন ব্যক্তি ছাড়া পরিবেশের উন্নয়ন অসম্ভব যা আমাদের বিদ্যমান আইনেই বলা রয়েছে। আইনের কথাগুলো বলার আগে বাংলাদেশে ড্রাইভিং পেশা নিয়ে কিছু বলতে চাই।

সামগ্রিকভাবে চিন্তা করতে গেলে একটি দেশের অর্থনৈতিক অবদানের মাপকাঠি বিবেচনায় ড্রাইভিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পেশা। দেশের গণপরিবহন খাতের (যাত্রীবাহী ও মালবাহী) ভিত্তিই দাঁড়িয়ে আছে এই ড্রাইভারদের অবদানের ওপর ভিত্তি করে। এ দেশের সস্তা ও সহজলভ্য শ্রম বাজারের কারণে ড্রাইভার, কন্ডাক্টর ও হেলপার খুঁজে পাওয়াটা খুবই সোজা। যে কেউ চাইলেই সহজে কোনমতে ড্রাইভিং শিখে এই পেশায় নেমে পড়তে পারে আবার কম বেতনে যথেচ্ছভাবে তাদের খাটিয়েও নেওয়া যায়। ফলে আমাদের দেশে ড্রাইভিং পুরোপুরি শ্রমিক শ্রেণীর পেশা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

অথচ আইন অনুযায়ী ড্রাইভিং পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তি অর্থাৎ ড্রাইভারদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম, ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণী পাশ, মোটরযান চালনার যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াসহ বেশকিছু টেকনিক্যাল ও নন-টেকনিক্যাল বিষয়াদি উত্তীর্ণ হয়ে মোটরযান নিয়ে রাস্তায় নামার কথা (সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮, দ্বিতীয় অধ্যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান) যা বাংলাদেশে কখনই পরিপালন হয়নি। যদি যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রসঙ্গ আসে তাহলে ড্রাইভারদের যোগ্যতা ও দক্ষাতাকে আর দশটি পেশার সাথে তুলনা করে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই। কিন্তু এবাবে কখনই ভাবা হয়নি বলেই এই পেশা মানসম্মত পেশা না হয়ে ধীরে ধীরে শ্রমিক শ্রেণীর পেশা হিসেবে অবমূল্যায়িত হয়েছে। আজ একজন নিরক্ষর কিশোর ছেলের হাতে আমরা বাসের স্টিয়ারিং তুলে দিয়ে নিজেদেরকেই ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছি। ঢাকা শহরে বহু লেগুনা বা টেম্পোচালক আছে যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স তো দূরের কথা ১৮ বছরই পূর্ণ হয়নি। এই যদি হয় বাস্তবতা তাহলে সড়কপথে কিভাবে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব? জানজট নিরসনের আগে সড়কের পরিবেশের প্রতি নজর দেওয়াটাই কি সমীচীন ছিল না?

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর চতুর্থ অধ্যায়ে মোটরযানের ফিটনেস সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলা আছে। এটাও বলা আছে যে, ফিটনেসের অনুপযোগী কোনো মোটরযানের ক্ষেত্রে ফিটনেস সনদ প্রদান করা হলে সনদ প্রদানকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। আইনের এক শর্তই যদি সঠিকভাবে পরিপালন হতো তাহলে ঢাকা শহরের প্রায় অর্ধেকের বেশি যানবাহন রাস্তায় চলাচলের যোগ্যতা হারাতো। আর যেসকল কর্মকর্তা এইসকল যানবাহনের লাইসেন্স দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি।

উক্ত আইনের ষষ্ঠ অধ্যায় অনুযায়ী মহাসড়কের ঢাল থেকে উভয় পার্শ্বে ১০ মিটারের মধ্যে অবৈধভাবে কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী স্থাপনা (যেমন- হাট-বাজার, দোকান, ইত্যাদি) নির্মাণ করা যাবে না; কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগায় এইসব অনিয়ম চললেও কখনই এইসব অবাঞ্চিত স্থাপনা উচ্ছেদে কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায়নি। আমরা ফুটপাতে হাঁটতে চাই, কিন্তু ফুটপাত অবৈধ দখলের কারণে তা পারি না, ফলে এই চাপটি মূল সড়কের উপরেই এসে পড়ছে।

ফুটপাত অবৈধ দখলের ফলে মূল সড়ক সরু হয়ে জানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এটি বোঝাতে নিশ্চয়ই প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার প্রয়োজন নেই। এসব অনিয়ম ছাড়াও সড়কে চাঁদাবাজি, গণপরিবহনের আসন সংখ্যা ও নির্ধারিত ভাড়া মেনে না চলা, যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করা, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী ৮ ঘণ্টা শ্রম নিশ্চিত না করা ও যথাযথভাবে ড্রাইভার, কন্ডাক্টর ও হেলপারদের নিয়োগপত্র প্রদান না করা, প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা না করে যথেচ্ছভাবে যানবাহনের নিবন্ধন প্রদান করা ইত্যাদি তো আছেই। ফলে দেশের গণপরিবহন (যাত্রীবাহী ও মালবাহী) একটি বিশৃঙ্খল অবস্থায় এসে পৌঁছেছে যা থেকে উত্তোরণের জন্য আমাদের কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। অবিলম্বে, নির্দিষ্ট সময় বেধে দিয়ে ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, টেম্পো ইত্যাদি মোটরযান রাস্তা থেকে উঠিয়ে দিতে হবে। মোটর চালিত রিকসা চলাচল বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্রধান সড়কে পায়ে চালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করতে হবে, রিকশা চলবে মহল্লার অলিগলিতে।

স্বল্প দূরত্বের জন্য টেম্পো বা লেগুনা এবং বেশি দূরত্বের জন্য বাস রূটের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে গণপরিবহন সহজ ও সাশ্রয়ী হয়। এতে করে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার হ্রাস পাবে। বাস থাকবে একেকটি কোম্পানির অধীনে এবং যেখানে কর্মরত প্রতিটি ড্রাইভার, কন্ডাক্টর ও হেলপারগণ যথাযথ প্রকৃয়ায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও নিয়োগপ্রাপ্ত হতে হবে। টেম্পো ও অটোরিকশা থাকবে ব্যক্তিগত কিন্তু তা অবশ্যই লাইসেন্স ও রূট পারমিটের আওতায় থাকবে।

রুট পারমিটের আওতার বাহিরের এলাকায় চালানোর সুযোগ থাকবে না। পরিবহন সেক্টরে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। নতুন যানবাহন ক্রয়ের জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো দ্রুত সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়। সর্বোপরি, ড্রাইভিং পেশাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যাতে শিক্ষিত ও সচেতন উদ্যোক্তারা এই পেশায় এগিয়ে আসেন এবং রাস্তায় শৃঙ্খলা বজায়ে রাখা সম্ভব হয়। রাস্তায় যারা কাজ করে তাদের অবস্থার উন্নয়ন ছাড়া গণপরিবহনের শৃঙ্খলা আনয়ন সম্ভব নয়। পরিবহন শ্রমিকদের অবস্থার উন্নয়ন ছাড়া গণপরিবহনের শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়।

[লেখক : ব্যাংক কর্মকর্তা ]

back to top