alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

পে-স্কেল যেন একটি দীর্ঘশ্বাস

কেএম মাসুম বিল্লাহ

: বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪

২০১৫ সালে সর্বশেষ অষ্টম পে-স্কেল ঘোষিত হলেও নয় বছর পেরিয়ে গেলেও নবম পে-স্কেল আলোর মুখ দেখেনি। করোনাপরবর্তী অর্থনীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিগত সরকারের মেগা প্রকল্পের দুর্নীতি ও বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে, মাছ-মাংসের দাম গত দুই বছরে প্রায় ৪০-৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে, এমনকি ভোজ্যতেলও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে যানবাহন ভাড়াও বেড়েছে ৫০-১০০% পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণ প্রতিদিনই কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। এখন বাজারে ৬০-৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না, মাছের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ, ইলিশ যেন মধ্যবিত্তের জন্য বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে। একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা যে বেতন পান, তা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কেনা যায়, যা পরিস্থিতির ভয়াবহতাকে ইঙ্গিত করে। বাজারে হাজার টাকা নিয়ে গেলে এখন ব্যাগ ভরে বাজার হয় না। এ অবস্থায় অসাধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও, সাধারণ চাকরিজীবীদের পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।

অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলের অধীনে ২০তম গ্রেডের একজন কর্মচারীর বেতন সর্বসাকুল্যে ১২-১৩ হাজার টাকা, যা দিয়ে জীবনযাপন করা এখন কার্যত অসম্ভব। একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার বেতন সর্বসাকুল্যে ৩১-৩২ হাজার টাকা এবং ১০ম শ্রেণীর কর্মকর্তার বেতন ২৩-২৪ হাজার টাকা, যা একজন শ্রমিকের বেতনের চেয়ে সামান্য বেশি। গত দুই বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় প্রায় ৫০% বেড়েছে, অথচ বেতন রয়ে গেছে অপরিবর্তিত। এ অবস্থায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবীরা চরম হতাশায় ভুগছে। ২০১৫ সালে যেসব টাকায় একটি পরিবার চালানো সম্ভব ছিল, ২০২৪ সালে তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, ফলে যারা নতুন করে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন তাদের জন্য জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য এই পরিস্থিতি যেনো আরেকটু বেশি কষ্টকর।

১৯৭৩ সালে প্রথম পে-স্কেল ঘোষণার পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৪২ বছরে মোট আটটি পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়েছে, অর্থাৎ গড়ে প্রতি পাঁচ বছর পরপর নতুন পে-স্কেল এসেছে। প্রথম থেকে অষ্টম পে-স্কেল পর্যন্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতি ৫-৬ বছর পর বাজার মূল্য ও মাথাপিছু আয় অনুযায়ী নতুন পে-স্কেল দেওয়া হয়েছে। তবে ২০১৫ সালের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি নতুন গতি পেয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ১৪৬৬ মার্কিন ডলার, যা বর্তমানে বেড়ে ২৮২৪ ডলারে পৌঁছেছে। গত আট বছরে মানুষের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হলেও বেতন স্কেল সমন্বয় করা হয়নি। একই সময় বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে, ফলে চাকরিজীবীদের বেতনও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করা অত্যন্ত জরুরি। দশ বছরে দেশের মাথাপিছু আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, কিন্তু সরকারি চাকরিজীবীরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের ক্রয়ক্ষমতা না বাড়ায় তারা সামাজিকভাবেও পিছিয়ে পড়ছে। তাই ২০১৫ সালের পর অন্তত একটি পে-স্কেল দেওয়া যৌক্তিক ছিল।

অষ্টম জাতীয় পে-স্কেল ঘোষণার পর থেকেই ১১-২০ গ্রেডের কর্মকর্তারা বৈষম্যের অভিযোগ তুলে আন্দোলন করেছেন। সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে নবম জাতীয় পে-স্কেলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে ৮ম পে-স্কেলের ২০টি গ্রেড কমিয়ে ১০টি গ্রেডে নিয়ে আসা, গ্রেডভেদে বৈষম্য কমানো এবং ৪০% মহার্ঘ্য ভাতা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নবম জাতীয় পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবি একান্তই যৌক্তিক। যতদিন পর্যন্ত এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হয়, ততদিন মহার্ঘ্য ভাতা দিয়ে এ অবস্থার সাময়িক সমাধান করা উচিত।

[লেখক : ব্যাংকার]

লবণাক্ততায় ডুবছে উপকূল

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ও বাস্তবতা

সড়ক দুর্ঘটনার সমাজতত্ত্ব: আইন প্রয়োগের ব্যর্থতা ও কাঠামোর চক্রাকার পুনরুৎপাদন

ছবি

অস্থির সময় ও অস্থির সমাজের পাঁচালি

ভারতে বামপন্থার পুনর্জাগরণ: ব্যাধি ও প্রতিকার

চিপনির্ভরতা কাটিয়ে চীনের উত্থান

একতার বাতাসে উড়ুক দক্ষিণ এশিয়ার পতাকা

ছবি

স্মরণ: শহীদ ডা. মিলন ও বৈষম্যহীন ব্যবস্থার সংগ্রাম

মনে পুরানো দিনের কথা আসে, মনে আসে, ফিরে আসে...

রাসায়নিক দূষণ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি

আছদগঞ্জের শুটকি : অতীতের গৌরব, বর্তমানের দুঃসময়

নবান্নের আনন্দ ও আমনের ফলন

‘প্রশ্ন কোরো না, প্রশ্ন সর্বনাশী’

ভূমিকম্প, অর্থনৈতিক চাপ এবং অনিশ্চয়তা: মানসিকতার নতুন অর্থনীতি

নবম পে স্কেল ও এর আর্থসামাজিক প্রভাব

মৃত্যুদণ্ড, তারপর...

জমির ভুয়া দলিল কীভাবে বাতিল করবেন?

জুলাই সনদ আদিবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি

ব্যাংকের দুরবস্থা থামানো যাচ্ছে না কেন

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্টহপারের প্রাদুর্ভাব

বৈষম্য, অপচয় ও খাদ্যনিরাপত্তার সংকট

“বাঙালি আমরা, নহিতো...”

নারী নির্যাতন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সমাজের দায়

কাঁপছে ডলারের সিংহাসন

ত্রিশতম জলবায়ু সম্মেলন : প্রতীকী প্রদর্শনী, নাকি বৈশ্বিক জলবায়ু রাজনীতির বাঁক নেওয়ার মুহূর্ত?

অপরিণত নবজাতক : ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও যত্নের জরুরি বাস্তবতা

বাংলাদেশী উত্তরাধিকার: প্রবাস-জীবন ও আমাদের সংস্কৃতি

রাজনীতিতে ভাষার সহনীয় প্রয়োগ

ভারত : এসআইআর এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন

মনে কী দ্বিধা নিয়ে...

নিরাপদ সড়ক ভাবনা

অপরিকল্পিত বাঁধ-শিল্পায়নে বিপর্যস্ত বরেন্দ্র কৃষি

ছবি

মামদানি দেখালেন নেতৃত্বের মূল পরিচয় কী

চেকের মামলায় বৈধ বিনিময়, লেনদেন, দেনা-পাওনা প্রমাণ ছাড়া আর জেল নয়

নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত ভাবনা

মাদকাসক্তি: শুধু নিরাময় নয়, চাই সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

পে-স্কেল যেন একটি দীর্ঘশ্বাস

কেএম মাসুম বিল্লাহ

বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪

২০১৫ সালে সর্বশেষ অষ্টম পে-স্কেল ঘোষিত হলেও নয় বছর পেরিয়ে গেলেও নবম পে-স্কেল আলোর মুখ দেখেনি। করোনাপরবর্তী অর্থনীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিগত সরকারের মেগা প্রকল্পের দুর্নীতি ও বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে, মাছ-মাংসের দাম গত দুই বছরে প্রায় ৪০-৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে, এমনকি ভোজ্যতেলও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে যানবাহন ভাড়াও বেড়েছে ৫০-১০০% পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণ প্রতিদিনই কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। এখন বাজারে ৬০-৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না, মাছের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ, ইলিশ যেন মধ্যবিত্তের জন্য বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে। একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা যে বেতন পান, তা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কেনা যায়, যা পরিস্থিতির ভয়াবহতাকে ইঙ্গিত করে। বাজারে হাজার টাকা নিয়ে গেলে এখন ব্যাগ ভরে বাজার হয় না। এ অবস্থায় অসাধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও, সাধারণ চাকরিজীবীদের পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।

অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলের অধীনে ২০তম গ্রেডের একজন কর্মচারীর বেতন সর্বসাকুল্যে ১২-১৩ হাজার টাকা, যা দিয়ে জীবনযাপন করা এখন কার্যত অসম্ভব। একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার বেতন সর্বসাকুল্যে ৩১-৩২ হাজার টাকা এবং ১০ম শ্রেণীর কর্মকর্তার বেতন ২৩-২৪ হাজার টাকা, যা একজন শ্রমিকের বেতনের চেয়ে সামান্য বেশি। গত দুই বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় প্রায় ৫০% বেড়েছে, অথচ বেতন রয়ে গেছে অপরিবর্তিত। এ অবস্থায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবীরা চরম হতাশায় ভুগছে। ২০১৫ সালে যেসব টাকায় একটি পরিবার চালানো সম্ভব ছিল, ২০২৪ সালে তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, ফলে যারা নতুন করে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন তাদের জন্য জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য এই পরিস্থিতি যেনো আরেকটু বেশি কষ্টকর।

১৯৭৩ সালে প্রথম পে-স্কেল ঘোষণার পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৪২ বছরে মোট আটটি পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়েছে, অর্থাৎ গড়ে প্রতি পাঁচ বছর পরপর নতুন পে-স্কেল এসেছে। প্রথম থেকে অষ্টম পে-স্কেল পর্যন্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতি ৫-৬ বছর পর বাজার মূল্য ও মাথাপিছু আয় অনুযায়ী নতুন পে-স্কেল দেওয়া হয়েছে। তবে ২০১৫ সালের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি নতুন গতি পেয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ১৪৬৬ মার্কিন ডলার, যা বর্তমানে বেড়ে ২৮২৪ ডলারে পৌঁছেছে। গত আট বছরে মানুষের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হলেও বেতন স্কেল সমন্বয় করা হয়নি। একই সময় বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে, ফলে চাকরিজীবীদের বেতনও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করা অত্যন্ত জরুরি। দশ বছরে দেশের মাথাপিছু আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, কিন্তু সরকারি চাকরিজীবীরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের ক্রয়ক্ষমতা না বাড়ায় তারা সামাজিকভাবেও পিছিয়ে পড়ছে। তাই ২০১৫ সালের পর অন্তত একটি পে-স্কেল দেওয়া যৌক্তিক ছিল।

অষ্টম জাতীয় পে-স্কেল ঘোষণার পর থেকেই ১১-২০ গ্রেডের কর্মকর্তারা বৈষম্যের অভিযোগ তুলে আন্দোলন করেছেন। সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে নবম জাতীয় পে-স্কেলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে ৮ম পে-স্কেলের ২০টি গ্রেড কমিয়ে ১০টি গ্রেডে নিয়ে আসা, গ্রেডভেদে বৈষম্য কমানো এবং ৪০% মহার্ঘ্য ভাতা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নবম জাতীয় পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবি একান্তই যৌক্তিক। যতদিন পর্যন্ত এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হয়, ততদিন মহার্ঘ্য ভাতা দিয়ে এ অবস্থার সাময়িক সমাধান করা উচিত।

[লেখক : ব্যাংকার]

back to top