alt

উপ-সম্পাদকীয়

চেকের মামলায় জেল খাটলেও টাকা আদায়ের আইনি প্রক্রিয়া

সিরাজ প্রামাণিক

: বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

চেক ডিজঅনারের মামলায় জেল খাটলেও কিন্তু টাকা পরিশোধ করতে হবে। এর থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় নেই। নতুবা সরাজীবন জেলেই থাকতে হবে। আর বাদীপক্ষ যদি আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী কোন পদক্ষেপ না নেন, সেক্ষেত্রেই আসামি পরবর্তী জেল ও টাকা আদায়ের হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন। যে আদালত আসামিকে জেল দিয়েছেন, বাদীপক্ষ, অর্থাৎ পাওনাদার ওই আদালতেই ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ ধারার বিধান মোতাবেক টাকা আদায়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে আবেদন করতে পারবেন। ৩৮৬ (১) (বি) ধারার বিধান অনুযায়ী আদালত লেভি ওয়ারেন্ট ইস্যু করে তা কার্যকরী করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অর্থাৎ ডিসি সাহেবের কাছে প্রেরণ করবেন। উক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দায়িকের অর্থাৎ আসামির স্থাবর সম্পত্তি উক্ত লেভি ওয়ারেন্টের তফসিলে বর্ণিত সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয়ের উদ্যোগ নেবেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যদি বুঝতে পারেন যে, দায়িক আগেই উক্ত স্থাবর সম্পত্তি অন্যত্র বিক্রি/বন্ধক রেখেছে তাহলে তিনি উক্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন এবং দায়িকের ওই সম্পত্তি ব্যতীত অন্য কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি আছে কিনা সেই মর্মে অবহিত করতে পাওনাদারকে নির্দেশ দেবেন। যদি দায়িকের অন্য কোন সম্পত্তি পাওয়া যায় তাহলে তিনি সেটা ক্রোক ও বিক্রয় করে ডিক্রিদারের টাকা আদায়ের উদ্যোগ নেবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, দায়িক যদি মামলা দায়ের হওয়ার আগেই সম্পত্তি বিক্রি করে থাকে তাহলে ওই ক্রেতার স্বার্থে বিঘœ ঘটানো যাবে না। তবে চেকের মামলা চলাকালীন আসামি পাওনাদারকে বঞ্চিত করতে জমি অন্যত্র বিক্রি করলে, সেক্ষেত্রে কিন্তু লেভি ওয়ারেন্টের কার্যক্রম বন্ধ রাখা যাবে না। কারণ তখন ধরে নিতে হবে যে, দায়িক তার কাছে প্রাপ্য টাকা যাতে আদায় না করা যায় সে জন্যই কৌশলে অনুরূপ হস্তান্তর করেছে। এখানে বলে রাখা দরকার যে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ (১) (বি) ধারার বিধান মোতাবেক যে লেভি ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়, সেটা মূলত দেওয়ানি আদালতের ডিক্রি হিসেবে গণ্য হয় এবং দেওয়ানি আদালতে ডিক্রি যেভাবে কার্যকর করা যায় একইভাবে সেটা কার্যকর করা যাবে। এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ করা দরকার যে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লেভি ওয়ারেন্ট পৌঁছার পর সেটা সরকারি দাবি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তিনি সেটা আদায়ের জন্য ১৯১৩ সালের সরকারি দাবি আদায় আইনের

বিধান অনুসরণ করবেন। এ আইনের ১৪ ধারার বিধান মোতাবেক সার্টিফিকেট অফিসার (ক) সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয় করা অথবা বিনা ক্রোকে বিক্রয়ের মাধ্যমে অথবা (খ) যে কোন ডিক্রি ক্রোক করে অথবা (গ) সার্টিফিকেট দেনদারকে গ্রেপ্তার করে কিংবা সব কটি পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে টাকা আদায় করতে পারবেন। যদি দেনাদারের কোন সম্পত্তি না থাকে তাহলে সরকারি দাবি আদায় আইনের ১৪ ধারার বিধান অবলম্বন করে দেনাদারকে দেওয়ানি কয়েদে আটক রেখে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করবেন। উচ্চ আদালতের একটি কেস স্টাডি উপস্থাপন করলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে উঠবে। পাবনার জেলা প্রশাসক বিগত ২৮/৮/১৯৯০, ২৭/৯/১৯৯০, ২/১০/১৯৯০ইং ও ৪/১০/১৯৯০ ইং তারিখে বেড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবরে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কাছে ত্রাণ হিসেবে বিতরণের জন্যে ২০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করেছিল। তৎপর বিগত ৮/১০/১৯৯০ ইং তারিখে বেড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একই উদ্দেশ্যে উক্ত চাল থেকে ২০ মেট্রিক টন চাল বেড়া পৌরসভার কমিশনার আসামি রওশন আলীর বরাবরে বরাদ্দ করলে রওশন আলীর ১১/১০/১৯৯০ ইং তারিখে উক্ত ২০ মেট্রিক টন চাল বেড়া খাদ্য গুদাম থেকে এ শর্তে গ্রহণ করেছিল যে, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজনের কাছে তিনি মাস্টার রোলের ভিত্তিতে ত্রাণ কর্মকর্তার সম্মুখে তা বিতরণ করবেন এবং বিতরণের একদিনের মধ্যে মাস্টার রোল উপজেলা পরিষদের কাছে জমা দেবেন। কিন্তু আসামি ১,৯৬,৮০০.০০/- টাকা মূল্যের ২০ মেট্রিক টন চাল তার এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের কাছে বিতরণ না করে আত্মসাৎ করায় তার বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি দমন বিভাগের কর্মকর্তা উক্ত ধারার অপরাধে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র পেশ করেছিল। উক্ত অভিযোগে আপিলকারী আসামিকে বিভাগীয় বিশেষ বিচারকের আদালতে অভিযুক্ত করা হলে তিনি উক্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বিচার প্রার্থনা করায় ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং দলিলপত্র বিবেচনা করে বিভাগীয় বিশেষ বিচারক আপিলকারীকে দ-বিধির ৪০৯ ও ১৯৪৭ ইং সালের ২নং আইনে ৫(২) ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদ- ও ১,৯৬,৮০০.০০/- টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদ-ে দ-িত করেছিল। তদ্বারা সংক্ষুব্ধ হয়ে আপিলকারী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়ের করেছিল। শুনানি অন্তে হাইকোর্ট বিভাগ আপিলটি ডিসমিস করে দিয়ে বিভাগীয় বিশেষ বিচারককে জরিমানার ১,৯৬,৮০০.০০/- টাকা আপিলকারীর কাছ থেকে আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। (মো. রওশন আলী বনাম রাষ্ট্র, ২০০২ বি.এল.ডি. পৃষ্ঠা ৩৩) এটি স্পষ্টভাবে সকলের বোঝা দরকার যে, ফৌজদারি আদালত কর্তৃক আসামির ওপর আরোপিত জরিমানা শারীরিক দ-ের পরিবর্তে আর্থিক দ- বিশেষ। সেক্ষেত্রে আসামি জরিমানা প্রদান করার পরিবর্তে তদব্যর্থতায় তার ওপর আরোপিত কারাদ- ভোগ করা বেছে নিতে পারে না। কারণ ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ ধারার বিধানানুসারে জরিমানা দেওয়ানি আদালতের ডিক্রির মতো একটি অবশ্য পরিশোধ্য আদেশ বিশেষ। যদি আসামিকে জরিমানা পরিশোধ করার ব্যর্থতার জন্যে স্বেচ্ছায় তদপরিবর্তে তার ওপর আরোপিত কারাদ- ভোগ করার সুযোগ প্রদান করা হয় তাহলে জরিমানার উদ্দেশ্যেই ব্যাহত হবে। ফৌজদারি আদালত কর্তৃক আসামির ওপর আরোপিত জরিমানা আর্থিক দ- বিধায় তা সরকারি পাওনা হিসাবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ ধারার বিধানানুসারে ও পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে। দুর্নীতির মামলায় আসামিকে তছরুফকৃত মালামালের মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ এ কারণে জরিমানা করা হয় যে তদ্বারা রাষ্ট্রীয় ক্ষতির ক্ষতিপূরণ হতে পারে। যদি তা না করা হয় তাহলে অপরাধীকে তদ্রুপ অপরাধ করতে উৎসাহিত করা হবে। এরূপভাবে জরিমানা সরকারের পাওনা হিসেবে দ-প্রাপ্ত ব্যক্তির সম্পদের ওপর একটি দায় বিশেষ এবং তা তার মৃত্যুর পরও আদায়যোগ্য। শুধু যে ক্ষেত্রে জরিমানার অর্থ দ-িত ব্যক্তির সম্পদের দ্বারা পরিশোধ করা যায় না সে ক্ষেত্রে দ-িত ব্যক্তিকে জরিমানার পরিবর্তে কারাদ- ভোগ করতে হয় এবং অন্য ক্ষেত্রে নয়।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

প্রতিক্রিয়াশীলতার ছায়াতলে কেবলই অন্ধকার

স্মরণ : গুরু রবিদাস জী

মাঘী পূর্ণিমা : সম্প্রীতির মধুময় স্মৃতি

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার বিপজ্জনক বাস্তবতা

পুলিশে কেমন সংস্কার চাই?

সত্যিই কি ইউএসএআইডি বন্ধ হয়ে যাবে

রম্যগদ্য: “গো টু দ্য ডেভিল”

এত ক্রোধ, প্রতিহিংসা আর অস্থিরতাÑ সবই কি স্বৈরাচারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া!

কীভাবে আইন মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায়?

কেন এই ধ্বংস?

প্রসঙ্গ: সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

পশ্চিমবঙ্গ : রাজনৈতিক হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ : উত্তরণের উপায়

কুষ্ঠ : স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে ইস্যুটি কেন গুরুত্বপূর্ণ

ঔপনিবেশিকতা নাকি মানবতার অবমূল্যায়ন?

রম্যগদ্য : ‘নারী মানেই ব্যভিচারী...’

প্রসঙ্গ: সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫

ছবি

নীরদ সি চৌধুরী : পেন্ডুলামের মতো দোলায়মান এক বাঙালি চরিত্র

ভোজবাজি ও ভানুমতির খেলা

সড়কে কিশোর মোটরবাইকার : নিয়ন্ত্রণ জরুরি

মব জাস্টিস আইনের শাসনের পরিপন্থি

ছবি

গভীর সংকট আর বড় সম্ভাবনা পাশাপাশি হাঁটছে

জ্ঞানদায়িনী মা সরস্বতী দেবী

‘সংখ্যাস্বল্প’ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা কেন প্রয়োজন?

সব ক্ষেত্রে বাংলাকে প্রাধান্য দিন

গুজব : মানবসৃষ্ট দুর্যোগ

অন্তর্বর্তী সরকার: নাগরিকদের প্রত্যাশা কি পূরণ হবে?

পাঠ্যবই সংকটে থমকে গেছে শিক্ষার চাকা

আরজি কর : শাসক রোষে ভিকটিমের পরিবার

চাই কৃষি খাতের টেকসই উন্নয়ন

একটি দেয়ালচিত্র ও কিছু কথা

শুল্ক বনাম উদ্ভাবন যুদ্ধ

রম্যগদ্য : “ডক্টর.জ্বী-ভাগো...”

বায়ুদূষণ মনিটরিংয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার

ছবি

যোগেন ম-লের ‘বহুজনবাদী’ রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

চেকের মামলায় জেল খাটলেও টাকা আদায়ের আইনি প্রক্রিয়া

সিরাজ প্রামাণিক

বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

চেক ডিজঅনারের মামলায় জেল খাটলেও কিন্তু টাকা পরিশোধ করতে হবে। এর থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় নেই। নতুবা সরাজীবন জেলেই থাকতে হবে। আর বাদীপক্ষ যদি আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী কোন পদক্ষেপ না নেন, সেক্ষেত্রেই আসামি পরবর্তী জেল ও টাকা আদায়ের হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন। যে আদালত আসামিকে জেল দিয়েছেন, বাদীপক্ষ, অর্থাৎ পাওনাদার ওই আদালতেই ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ ধারার বিধান মোতাবেক টাকা আদায়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে আবেদন করতে পারবেন। ৩৮৬ (১) (বি) ধারার বিধান অনুযায়ী আদালত লেভি ওয়ারেন্ট ইস্যু করে তা কার্যকরী করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অর্থাৎ ডিসি সাহেবের কাছে প্রেরণ করবেন। উক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দায়িকের অর্থাৎ আসামির স্থাবর সম্পত্তি উক্ত লেভি ওয়ারেন্টের তফসিলে বর্ণিত সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয়ের উদ্যোগ নেবেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যদি বুঝতে পারেন যে, দায়িক আগেই উক্ত স্থাবর সম্পত্তি অন্যত্র বিক্রি/বন্ধক রেখেছে তাহলে তিনি উক্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন এবং দায়িকের ওই সম্পত্তি ব্যতীত অন্য কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি আছে কিনা সেই মর্মে অবহিত করতে পাওনাদারকে নির্দেশ দেবেন। যদি দায়িকের অন্য কোন সম্পত্তি পাওয়া যায় তাহলে তিনি সেটা ক্রোক ও বিক্রয় করে ডিক্রিদারের টাকা আদায়ের উদ্যোগ নেবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, দায়িক যদি মামলা দায়ের হওয়ার আগেই সম্পত্তি বিক্রি করে থাকে তাহলে ওই ক্রেতার স্বার্থে বিঘœ ঘটানো যাবে না। তবে চেকের মামলা চলাকালীন আসামি পাওনাদারকে বঞ্চিত করতে জমি অন্যত্র বিক্রি করলে, সেক্ষেত্রে কিন্তু লেভি ওয়ারেন্টের কার্যক্রম বন্ধ রাখা যাবে না। কারণ তখন ধরে নিতে হবে যে, দায়িক তার কাছে প্রাপ্য টাকা যাতে আদায় না করা যায় সে জন্যই কৌশলে অনুরূপ হস্তান্তর করেছে। এখানে বলে রাখা দরকার যে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ (১) (বি) ধারার বিধান মোতাবেক যে লেভি ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়, সেটা মূলত দেওয়ানি আদালতের ডিক্রি হিসেবে গণ্য হয় এবং দেওয়ানি আদালতে ডিক্রি যেভাবে কার্যকর করা যায় একইভাবে সেটা কার্যকর করা যাবে। এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ করা দরকার যে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লেভি ওয়ারেন্ট পৌঁছার পর সেটা সরকারি দাবি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তিনি সেটা আদায়ের জন্য ১৯১৩ সালের সরকারি দাবি আদায় আইনের

বিধান অনুসরণ করবেন। এ আইনের ১৪ ধারার বিধান মোতাবেক সার্টিফিকেট অফিসার (ক) সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয় করা অথবা বিনা ক্রোকে বিক্রয়ের মাধ্যমে অথবা (খ) যে কোন ডিক্রি ক্রোক করে অথবা (গ) সার্টিফিকেট দেনদারকে গ্রেপ্তার করে কিংবা সব কটি পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে টাকা আদায় করতে পারবেন। যদি দেনাদারের কোন সম্পত্তি না থাকে তাহলে সরকারি দাবি আদায় আইনের ১৪ ধারার বিধান অবলম্বন করে দেনাদারকে দেওয়ানি কয়েদে আটক রেখে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করবেন। উচ্চ আদালতের একটি কেস স্টাডি উপস্থাপন করলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে উঠবে। পাবনার জেলা প্রশাসক বিগত ২৮/৮/১৯৯০, ২৭/৯/১৯৯০, ২/১০/১৯৯০ইং ও ৪/১০/১৯৯০ ইং তারিখে বেড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবরে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কাছে ত্রাণ হিসেবে বিতরণের জন্যে ২০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করেছিল। তৎপর বিগত ৮/১০/১৯৯০ ইং তারিখে বেড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একই উদ্দেশ্যে উক্ত চাল থেকে ২০ মেট্রিক টন চাল বেড়া পৌরসভার কমিশনার আসামি রওশন আলীর বরাবরে বরাদ্দ করলে রওশন আলীর ১১/১০/১৯৯০ ইং তারিখে উক্ত ২০ মেট্রিক টন চাল বেড়া খাদ্য গুদাম থেকে এ শর্তে গ্রহণ করেছিল যে, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজনের কাছে তিনি মাস্টার রোলের ভিত্তিতে ত্রাণ কর্মকর্তার সম্মুখে তা বিতরণ করবেন এবং বিতরণের একদিনের মধ্যে মাস্টার রোল উপজেলা পরিষদের কাছে জমা দেবেন। কিন্তু আসামি ১,৯৬,৮০০.০০/- টাকা মূল্যের ২০ মেট্রিক টন চাল তার এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের কাছে বিতরণ না করে আত্মসাৎ করায় তার বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি দমন বিভাগের কর্মকর্তা উক্ত ধারার অপরাধে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র পেশ করেছিল। উক্ত অভিযোগে আপিলকারী আসামিকে বিভাগীয় বিশেষ বিচারকের আদালতে অভিযুক্ত করা হলে তিনি উক্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বিচার প্রার্থনা করায় ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং দলিলপত্র বিবেচনা করে বিভাগীয় বিশেষ বিচারক আপিলকারীকে দ-বিধির ৪০৯ ও ১৯৪৭ ইং সালের ২নং আইনে ৫(২) ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদ- ও ১,৯৬,৮০০.০০/- টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদ-ে দ-িত করেছিল। তদ্বারা সংক্ষুব্ধ হয়ে আপিলকারী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়ের করেছিল। শুনানি অন্তে হাইকোর্ট বিভাগ আপিলটি ডিসমিস করে দিয়ে বিভাগীয় বিশেষ বিচারককে জরিমানার ১,৯৬,৮০০.০০/- টাকা আপিলকারীর কাছ থেকে আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। (মো. রওশন আলী বনাম রাষ্ট্র, ২০০২ বি.এল.ডি. পৃষ্ঠা ৩৩) এটি স্পষ্টভাবে সকলের বোঝা দরকার যে, ফৌজদারি আদালত কর্তৃক আসামির ওপর আরোপিত জরিমানা শারীরিক দ-ের পরিবর্তে আর্থিক দ- বিশেষ। সেক্ষেত্রে আসামি জরিমানা প্রদান করার পরিবর্তে তদব্যর্থতায় তার ওপর আরোপিত কারাদ- ভোগ করা বেছে নিতে পারে না। কারণ ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ ধারার বিধানানুসারে জরিমানা দেওয়ানি আদালতের ডিক্রির মতো একটি অবশ্য পরিশোধ্য আদেশ বিশেষ। যদি আসামিকে জরিমানা পরিশোধ করার ব্যর্থতার জন্যে স্বেচ্ছায় তদপরিবর্তে তার ওপর আরোপিত কারাদ- ভোগ করার সুযোগ প্রদান করা হয় তাহলে জরিমানার উদ্দেশ্যেই ব্যাহত হবে। ফৌজদারি আদালত কর্তৃক আসামির ওপর আরোপিত জরিমানা আর্থিক দ- বিধায় তা সরকারি পাওনা হিসাবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ ধারার বিধানানুসারে ও পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে। দুর্নীতির মামলায় আসামিকে তছরুফকৃত মালামালের মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ এ কারণে জরিমানা করা হয় যে তদ্বারা রাষ্ট্রীয় ক্ষতির ক্ষতিপূরণ হতে পারে। যদি তা না করা হয় তাহলে অপরাধীকে তদ্রুপ অপরাধ করতে উৎসাহিত করা হবে। এরূপভাবে জরিমানা সরকারের পাওনা হিসেবে দ-প্রাপ্ত ব্যক্তির সম্পদের ওপর একটি দায় বিশেষ এবং তা তার মৃত্যুর পরও আদায়যোগ্য। শুধু যে ক্ষেত্রে জরিমানার অর্থ দ-িত ব্যক্তির সম্পদের দ্বারা পরিশোধ করা যায় না সে ক্ষেত্রে দ-িত ব্যক্তিকে জরিমানার পরিবর্তে কারাদ- ভোগ করতে হয় এবং অন্য ক্ষেত্রে নয়।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

back to top