কামরুজ্জামান
দেশে ভিক্ষাবৃত্তি এখনো চলছে। কে প্রয়োজনে করছে আর কে প্রতারণা করছে বোঝা মুশকিল। আমার বাড়ি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌরসভায়। অসংখ্য শিল্প কারখানা গড়ে উঠায় শ্রীপুর পৌর এলাকা এখন শিল্পাঞ্চল। ছোট্ট আয়তনের শ্রীপুর পৌরসভায় বর্তমান স্থানীয় মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার। অভিগমিত জনসংখ্যা হবে আরও দেড় লাখ। এই মোট প্রায় তিন লাখ লোকের বসবাস। এছাড়া ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক শ্রীপুর পৌরসভার ঠিক মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়ায় বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পেট্রল পাম্প, সি এন জি পাম্প, মসজিদ ও দোকানপাট গড়ে উঠায় ভিক্ষুকদের পদচারণা সবসময়ই দেখা যায়।
দুটো ঘটনা বলে লেখাটি শুরু করছি। প্রথম ঘটনাটি হচ্ছেÑআমাদের এলাকায় গত প্রায় এক বছর যাবত দেখছি একজন মধ্য বয়সী লোক তার বামহাত ব্যান্ডেজ করা এবং একটা ছেঁড়া লুঙ্গি গলা থেকে শরীরের বামদিকে প্যাঁচিয়ে ডানহাতে থালা নিয়ে ভিক্ষা করছে। আমি নিজেও এক দুইবার টাকা দিয়েছি। লোকটা বেশভূষায় ভিক্ষুকের মতোই দেখতে। ভিক্ষা করতে করতে একদিন আমার বাসায় এসে ভিক্ষার জন্য হাঁক ছাড়ে। আমি তাকে দেখে একটু সময় নিয়ে কথা বলি। সে অকপটে স্বীকার করে তার প্রতারণার কথা। এবং সে এটাও বলে প্রথম প্রথম ভিক্ষা বেশি পেত। এখন অনেকেই তার প্রতারণা জেনে যাওয়ায় আয় কমে গেছে। তবে যারা নতুন বা চেনে না তারা টাকা-পয়সা দিয়ে থাকে। সে আরও বলে। কাজ করতে তার ভালো লাগে না। ভিক্ষা করতেই ভালো লাগে। আমি আগ্রহ নিয়ে বললাম, যদি কেউ মাইর দেয়। সে খুব বিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর দিল, স্যার আমরা গরিব মানুষ। যারা জানে তাদের কেউ কেউ বকা দেয় কিন্তু মারে না।
দ্বিতীয় ঘটনাটি হচ্ছেÑপ্রতিদিনই সিএনজি পাম্পে গ্যাস নিতে হয় আমাকে। গাড়ি পাম্পে ঢুকলে অন্তত দুই থেকে তিনজন ভিক্ষুক আসবে ভিক্ষার জন্য। পোড়াবাড়ি খান পাম্পের ঘটনা। মধ্যবয়সী মহিলা ভিক্ষা চাইলেন। আমি বললাম আপনি কাজ করেন না কেন? উত্তর দিলেন-টাকা দিলে দেন না দিলে না দেন। আবার উল্টো প্রশ্ন করেন কেন? আমি বললাম, ভিক্ষা করা তো ভালো কাজ না। এবার মহিলা ক্ষেপে গেল এবং আমার প্রতি রাগ দেখাতে দেখাতে দূরে গিয়ে দাঁড়াল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে সিএনজি দেয়া লোকটা বলল, স্যার এদের কাজ দিলেও কাজ করবে না। সারাদিনে এরা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করে। আপনি হয়তো টাকা-পয়সা দেবেন না কিন্তু এমন এমন মানুষ আসে যারা ১০০, ৫০০ টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকে। এভাবে টাকা পায় বলে তাদের নেশা হয়ে গেছে। অন্য কাজ করে না। অন্য কাজ এদের ভালোও লাগে না। আমি লোকটাকে বললাম, এদের কারণে তো প্রকৃত অসহায়রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের মতো মানুষ বুঝি না কে দারিদ্র্যের কারণে ভিক্ষা করছে আর কে স্বভাব দোষে ভিক্ষা করছে।
আরও আশ্চর্য বিষয় হচ্ছেÑএই রকম ভিক্ষা চাওয়ায় আমি একদিন এক মহিলাকে ভিক্ষার জন্য ৫ টাকার একটা কয়েন প্রদান করি। মহিলা পরিষ্কার ভাষায় আমাকে জানিয়ে দেয়, সে ৫ টাকা ভিক্ষা নেয় না। তার কথায় আমি অবাক হই!
আমাদের দেশে ভিক্ষাবৃত্তি কেন বেশি? বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন, প্রয়োজন তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা। একটা সমাজে মানুষের কাজ দেখে বোঝা যায় সমাজ জীবনের প্রকৃত চিত্র। ভিক্ষাবৃত্তি কখনো ভালো কাজ নয়। সব ধর্মে ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
এখন কথা হলোÑআমাদের দেশে অসহায় কারা? সাহায্য সহযোগিতা কারা পাবে? যাদের শারীরিক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে, যারা অসহায়, প্রতিবন্ধী, যাদের সাহায্য করার মতো কেউ নেই তারাই মূলত সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। অন্ধ কিংবা একেবারেই চোখে দেখে না, হাঁটাচলা করতে পারে না, বয়স্ক অসহায় মানুষ, বিভিন্ন কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে সব হারানো অসহায় মানুষ। এই সব মানুষ সাহায্য সহযোগিতা চাইতে পারে (সাময়িক সময়ের জন্য)। এই সব ক্ষেত্রে সমাজের মানুষের এবং রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব রয়েছে সহযোগিতা করার।
আমাদের দেশের ভিক্ষাবৃত্তির বাস্তব চিত্র ভয়াবহ এবং করুণ। ছোট শিশু থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী, মধ্য বয়সী পুরুষ-মহিলা এবং বয়স্ক নারী-পুরুষ পর্যন্ত ভিক্ষাবৃত্তির মতো ঘৃণ্য কাজটি করে। ভিক্ষাবৃত্তিকে এখন সামাজিক পেশা বানিয়ে ফেলা হয়েছে। কারণ হচ্ছে-ভিক্ষা যারা করে তারা পেশাজীবীদের মতো সকালে নাস্তা খেয়ে বের হয়, সারাদিন একই জায়গায় ভিক্ষা করে। সন্ধ্যা বা তার পরে বাড়ি ফিরে আসে। এটাকে পেশা না বলার কোনো কারণ নেই। রাজধানী ঢাকা শহরসহ বাংলাদেশের বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহরগুলোতেও এই দৃশ্য দেখা যায়।
ভিক্ষা যারা করে এটা তাদের এক ধরনের নেশা বলা যায়। দুটো বিষয়ের সঙ্গে এরা অভ্যস্ত হয়ে যায়- ১. প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে ইন্টারেকশন হয়। ২. কম বেশি টাকা হাতে আসেই। দুজন তিনজন হয়তো ফিরিয়ে দেয় কিন্তু এর মধ্যে একজন টাকা-পয়সা দিয়ে যায়। টাকা হাতে পাওয়াটাই এক ধরনের নেশা।
আমাদের দেশের মানুষ আবেগপ্রবণ। বিশেষ করে ধর্মীয় আবেগ খুব বেশি। সওয়াব হবে, জান্নাত পাবে, সুখ শান্তি হবে, উন্নতি হবে ইত্যাদির আশায় দান-খয়রাত করে থাকে। এ ক্ষেত্রে হাতপাতা মানুষগুলোকে ফিরিয়ে দিতে চায় না। আর এভাবেই ভিক্ষাবৃত্তি জিইয়ে থাকছে সমাজে। ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মানুষ রয়েছে এরা কাজ করতে অনীহাবোধ করে। ফলে ভিক্ষা করেই চলে সবসময়।
ভিক্ষাবৃত্তিকে একটা শ্রেণীর মানুষ প্রতারণা হিসাবে নিয়ে অপরাধ অপকর্মে জড়িয়ে থাকে। এরা লেবাস পরিবর্তন করে ভিক্ষাবৃত্তি করে। আবার সুযোগ পেলে চুরি ডাকাতিও করে। মানুষকে মিথ্যা বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে থাকে। ভিক্ষাবৃত্তি এখন বড় ধরনের ব্যবসা সিন্ডিকেট। এক শ্রেণীর লোক এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এরা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে, ছোট ছোট শিশু ও পথশিশুদের প্রতিবন্ধী বানিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার করে, অনেক সংখ্যক ভিক্ষুক নিয়ে দলবাজি করে অপরাধ সংগঠন করে। এসব করে থাকে মূলত অর্থ উপার্জন করার জন্য। ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তারা প্রায় সবাই মাদকাসক্ত। ভিক্ষাবৃত্তি যেমন ভালো কাজ নয় তেমনি ভিক্ষাবৃত্তি সমাজের নৈতিক ও আর্থিক চরিত্রকেও বাস্তবে প্রকাশ করে। একটা রাষ্ট্রের মৌলিক উন্নয়ন হলো-সার্বজনীন উন্নয়ন। এর জন্য রাষ্ট্রকে ভিক্ষাবৃত্তি নিরুৎসাহিত করতে হবে, প্রয়োজনে বন্ধ করতে হবে। প্রকৃত অসহায়দের খুঁজে বের করে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নিতে হবে। আর স্বেচ্ছায় ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণকারী প্রতারণাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে পারলে সমাজে আরও অনেক অপরাধ কমে আসবে।
[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর ]
কামরুজ্জামান
বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫
দেশে ভিক্ষাবৃত্তি এখনো চলছে। কে প্রয়োজনে করছে আর কে প্রতারণা করছে বোঝা মুশকিল। আমার বাড়ি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌরসভায়। অসংখ্য শিল্প কারখানা গড়ে উঠায় শ্রীপুর পৌর এলাকা এখন শিল্পাঞ্চল। ছোট্ট আয়তনের শ্রীপুর পৌরসভায় বর্তমান স্থানীয় মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার। অভিগমিত জনসংখ্যা হবে আরও দেড় লাখ। এই মোট প্রায় তিন লাখ লোকের বসবাস। এছাড়া ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক শ্রীপুর পৌরসভার ঠিক মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়ায় বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পেট্রল পাম্প, সি এন জি পাম্প, মসজিদ ও দোকানপাট গড়ে উঠায় ভিক্ষুকদের পদচারণা সবসময়ই দেখা যায়।
দুটো ঘটনা বলে লেখাটি শুরু করছি। প্রথম ঘটনাটি হচ্ছেÑআমাদের এলাকায় গত প্রায় এক বছর যাবত দেখছি একজন মধ্য বয়সী লোক তার বামহাত ব্যান্ডেজ করা এবং একটা ছেঁড়া লুঙ্গি গলা থেকে শরীরের বামদিকে প্যাঁচিয়ে ডানহাতে থালা নিয়ে ভিক্ষা করছে। আমি নিজেও এক দুইবার টাকা দিয়েছি। লোকটা বেশভূষায় ভিক্ষুকের মতোই দেখতে। ভিক্ষা করতে করতে একদিন আমার বাসায় এসে ভিক্ষার জন্য হাঁক ছাড়ে। আমি তাকে দেখে একটু সময় নিয়ে কথা বলি। সে অকপটে স্বীকার করে তার প্রতারণার কথা। এবং সে এটাও বলে প্রথম প্রথম ভিক্ষা বেশি পেত। এখন অনেকেই তার প্রতারণা জেনে যাওয়ায় আয় কমে গেছে। তবে যারা নতুন বা চেনে না তারা টাকা-পয়সা দিয়ে থাকে। সে আরও বলে। কাজ করতে তার ভালো লাগে না। ভিক্ষা করতেই ভালো লাগে। আমি আগ্রহ নিয়ে বললাম, যদি কেউ মাইর দেয়। সে খুব বিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর দিল, স্যার আমরা গরিব মানুষ। যারা জানে তাদের কেউ কেউ বকা দেয় কিন্তু মারে না।
দ্বিতীয় ঘটনাটি হচ্ছেÑপ্রতিদিনই সিএনজি পাম্পে গ্যাস নিতে হয় আমাকে। গাড়ি পাম্পে ঢুকলে অন্তত দুই থেকে তিনজন ভিক্ষুক আসবে ভিক্ষার জন্য। পোড়াবাড়ি খান পাম্পের ঘটনা। মধ্যবয়সী মহিলা ভিক্ষা চাইলেন। আমি বললাম আপনি কাজ করেন না কেন? উত্তর দিলেন-টাকা দিলে দেন না দিলে না দেন। আবার উল্টো প্রশ্ন করেন কেন? আমি বললাম, ভিক্ষা করা তো ভালো কাজ না। এবার মহিলা ক্ষেপে গেল এবং আমার প্রতি রাগ দেখাতে দেখাতে দূরে গিয়ে দাঁড়াল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে সিএনজি দেয়া লোকটা বলল, স্যার এদের কাজ দিলেও কাজ করবে না। সারাদিনে এরা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করে। আপনি হয়তো টাকা-পয়সা দেবেন না কিন্তু এমন এমন মানুষ আসে যারা ১০০, ৫০০ টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকে। এভাবে টাকা পায় বলে তাদের নেশা হয়ে গেছে। অন্য কাজ করে না। অন্য কাজ এদের ভালোও লাগে না। আমি লোকটাকে বললাম, এদের কারণে তো প্রকৃত অসহায়রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের মতো মানুষ বুঝি না কে দারিদ্র্যের কারণে ভিক্ষা করছে আর কে স্বভাব দোষে ভিক্ষা করছে।
আরও আশ্চর্য বিষয় হচ্ছেÑএই রকম ভিক্ষা চাওয়ায় আমি একদিন এক মহিলাকে ভিক্ষার জন্য ৫ টাকার একটা কয়েন প্রদান করি। মহিলা পরিষ্কার ভাষায় আমাকে জানিয়ে দেয়, সে ৫ টাকা ভিক্ষা নেয় না। তার কথায় আমি অবাক হই!
আমাদের দেশে ভিক্ষাবৃত্তি কেন বেশি? বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন, প্রয়োজন তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা। একটা সমাজে মানুষের কাজ দেখে বোঝা যায় সমাজ জীবনের প্রকৃত চিত্র। ভিক্ষাবৃত্তি কখনো ভালো কাজ নয়। সব ধর্মে ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
এখন কথা হলোÑআমাদের দেশে অসহায় কারা? সাহায্য সহযোগিতা কারা পাবে? যাদের শারীরিক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে, যারা অসহায়, প্রতিবন্ধী, যাদের সাহায্য করার মতো কেউ নেই তারাই মূলত সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। অন্ধ কিংবা একেবারেই চোখে দেখে না, হাঁটাচলা করতে পারে না, বয়স্ক অসহায় মানুষ, বিভিন্ন কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে সব হারানো অসহায় মানুষ। এই সব মানুষ সাহায্য সহযোগিতা চাইতে পারে (সাময়িক সময়ের জন্য)। এই সব ক্ষেত্রে সমাজের মানুষের এবং রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব রয়েছে সহযোগিতা করার।
আমাদের দেশের ভিক্ষাবৃত্তির বাস্তব চিত্র ভয়াবহ এবং করুণ। ছোট শিশু থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী, মধ্য বয়সী পুরুষ-মহিলা এবং বয়স্ক নারী-পুরুষ পর্যন্ত ভিক্ষাবৃত্তির মতো ঘৃণ্য কাজটি করে। ভিক্ষাবৃত্তিকে এখন সামাজিক পেশা বানিয়ে ফেলা হয়েছে। কারণ হচ্ছে-ভিক্ষা যারা করে তারা পেশাজীবীদের মতো সকালে নাস্তা খেয়ে বের হয়, সারাদিন একই জায়গায় ভিক্ষা করে। সন্ধ্যা বা তার পরে বাড়ি ফিরে আসে। এটাকে পেশা না বলার কোনো কারণ নেই। রাজধানী ঢাকা শহরসহ বাংলাদেশের বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহরগুলোতেও এই দৃশ্য দেখা যায়।
ভিক্ষা যারা করে এটা তাদের এক ধরনের নেশা বলা যায়। দুটো বিষয়ের সঙ্গে এরা অভ্যস্ত হয়ে যায়- ১. প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে ইন্টারেকশন হয়। ২. কম বেশি টাকা হাতে আসেই। দুজন তিনজন হয়তো ফিরিয়ে দেয় কিন্তু এর মধ্যে একজন টাকা-পয়সা দিয়ে যায়। টাকা হাতে পাওয়াটাই এক ধরনের নেশা।
আমাদের দেশের মানুষ আবেগপ্রবণ। বিশেষ করে ধর্মীয় আবেগ খুব বেশি। সওয়াব হবে, জান্নাত পাবে, সুখ শান্তি হবে, উন্নতি হবে ইত্যাদির আশায় দান-খয়রাত করে থাকে। এ ক্ষেত্রে হাতপাতা মানুষগুলোকে ফিরিয়ে দিতে চায় না। আর এভাবেই ভিক্ষাবৃত্তি জিইয়ে থাকছে সমাজে। ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মানুষ রয়েছে এরা কাজ করতে অনীহাবোধ করে। ফলে ভিক্ষা করেই চলে সবসময়।
ভিক্ষাবৃত্তিকে একটা শ্রেণীর মানুষ প্রতারণা হিসাবে নিয়ে অপরাধ অপকর্মে জড়িয়ে থাকে। এরা লেবাস পরিবর্তন করে ভিক্ষাবৃত্তি করে। আবার সুযোগ পেলে চুরি ডাকাতিও করে। মানুষকে মিথ্যা বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে থাকে। ভিক্ষাবৃত্তি এখন বড় ধরনের ব্যবসা সিন্ডিকেট। এক শ্রেণীর লোক এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এরা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে, ছোট ছোট শিশু ও পথশিশুদের প্রতিবন্ধী বানিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার করে, অনেক সংখ্যক ভিক্ষুক নিয়ে দলবাজি করে অপরাধ সংগঠন করে। এসব করে থাকে মূলত অর্থ উপার্জন করার জন্য। ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তারা প্রায় সবাই মাদকাসক্ত। ভিক্ষাবৃত্তি যেমন ভালো কাজ নয় তেমনি ভিক্ষাবৃত্তি সমাজের নৈতিক ও আর্থিক চরিত্রকেও বাস্তবে প্রকাশ করে। একটা রাষ্ট্রের মৌলিক উন্নয়ন হলো-সার্বজনীন উন্নয়ন। এর জন্য রাষ্ট্রকে ভিক্ষাবৃত্তি নিরুৎসাহিত করতে হবে, প্রয়োজনে বন্ধ করতে হবে। প্রকৃত অসহায়দের খুঁজে বের করে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নিতে হবে। আর স্বেচ্ছায় ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণকারী প্রতারণাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে পারলে সমাজে আরও অনেক অপরাধ কমে আসবে।
[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর ]