alt

উপ-সম্পাদকীয়

অখণ্ড বাংলা তত্ত্ব : বাইনারিজম থেকে মুক্তির পথ

মাহরুফ চৌধুরী

: মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

আমরা এমনিতে জানি যে আমাদের বাংলাদেশের জন্মলগ্নের সময়কালে দ্বিজাতি তত্ত্ব এবং পাকিস্তান প্রস্তাবের গুরুত্ব অনেক। অনেকে তো এটাই মনে করেন যে পাকিস্তান সৃষ্টি না হলে বাংলাদেশের উৎপত্তি কখনই হতো না। যদিও এসব ন্যারেটিভ এখন আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, এখন আমাদের প্রধান ন্যারেটিভ আমরা নিয়ে থাকি ’৭১ থেকে, তবে ’৭১ আসলে পারেও আমাদের মাঝে ছায়া বা বিপরীত শক্তি হিসেবে পাকিস্তান এবং দ্বিজাতি তত্ত্ব আসাটা একদম অবধারিত একটি বিষয়। এমনকি শেখ মুজিব নিজেও পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন, ‘পাকিস্তান দাবির পক্ষে গণভোট’ খ্যাত ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে শেখ মুজিব বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে লীগের ওয়ার্কার ইনচার্জের দায়িত্বে থেকে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। পাকিস্তানের জন্য এবং পরবর্তীতে পূর্ববাংলার জন্য তিনি কাজ করে গেছেন। তবে আমরা হয়তো ইতিহাসের আরেকটি ধারা সম্পর্কে আমরা হয়তো জানি না, যে ধারার সূচনা ঘটেছিল শেরেবাংলা বা হয়তো তারও কিছু পূর্বে। অনেকে লর্ড কার্জনের কথা বলেন এক্ষেত্রে তবে লর্ড কার্জন নিজে সেই সময়ে ভারতকে পরাধীনকারীগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এই কারণে তার প্রসঙ্গ ভারত অথবা বাংলার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আমরা নিয়ে আসছি না। শেরেবাংলার লাহোর প্রস্তাব উত্থাপিত হয় ১৯৪০ সালে ১৯২৮ সালের নেহেরু নেগোশিয়েশসন্স ভেঙে পড়ার পর থেকেই অখ- ভারত নীতি আর কার্যকরী হবে না এই ব্যাপারে অনেকেই নিশ্চিত হয়ে যান। এরপরে জিন্নাহর ১৪ দফা ১৯২৯ সালে উত্থাপিত হয়, তবে সেই সময়ে সাইমন কমিশনকে ব্যর্থ করার দরুন ব্রিটিশ সরকার প্রধান রামসে ম্যাকডোনাল্ড নিজেই কমিউনাল অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা দানের মাধ্যমে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন তৈরি করতে ভূমিকা রাখেন। ১৯৩৮ সালে হিন্দু মহাসভার করা বিরোধিতার দরুন ভারত শাসন আইনও জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি যদিও মুসলিমরা তুলনামূলকভাবে এর পক্ষে ছিলেন, এই সময়েই ১৯৩৮ সালের একটি সভায় জিন্নাহ সাহেব বলেন যে ভারতে হিন্দু এবং মুসলিম দুটি ভিন্ন জাতি। তবে শেরেবাংলা এর থেকেও অনেক বেশি সময়পোযোগী এবং কার্যকরী একটি সমাধান নিয়ে আসেন। তিনি ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব প্রদান করেন। তিনি এই লাহোর প্রস্তাবে প্রদান করেন। লাহোর প্রস্তাবের মূলনীতি হচ্ছে মুসলিমদের অধিকার এবং স্বায়ত্ত্বশাসন প্রতিষ্ঠা

ক) ভারতের উত্তর পূর্ব এবং উত্তর পশ্চিম অঞ্চলসমূহ নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠিত হবে।

খ) গঠিত রাষ্ট্রসমূহ হবে স্বশাসিত এবং সার্বভৌম

গ) পূর্ণাঙ্গ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে রাষ্ট্রসমূহের সংবিধানের মাঝে সংখ্যালঘুদের

অধিকার এবং অভিব্যক্তি সংরক্ষনের জন্য, এটি করা হবে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিগণের সহিত আলোচনার মাধ্যমে।

ঘ) প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি, যোগাযোগ সবকিছুই প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে।

লাহোর প্রস্তাব মূলত পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামের মতো এলাকা, যা অনেকটাই মুসলিম অধ্যুষিত সেটিকেও বাংলাদেশের অন্তর্গত রাখতে ইচ্ছুক ছিল এছাড়া উত্তর-পশ্চিম ভারতের প্রদেশসমূহ, যেমন- জুনাগড় এবং হায়দারাবাদ যদিও সেটি দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত সেই সমস্ত প্রদেশ আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার দাবি রাখতে পারত এই লাহোর প্রস্তাবে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৪৬ সালে অখ- বাংলার প্রস্তাবনা করেন যখন তিনি প্রাদেশিক প্রধান ছিলেন পুর্ব পাকিস্তানের। একই সময়ে শরৎ চন্দ্র বোস অখ- বাংলার দাবি নিয়ে সামনে আসেন, তবে যেখানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মনে করতেন যে বাংলার মাঝে মুসলিম ভাবধারা এবং গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটবে সেখানে শরৎ বসু ছিলেন সমাজতান্ত্রিক মনোভাব সম্পন্ন। তবে এইক্ষেত্রে তাদের মাঝে বিশেষ বিভেদ বা মতপার্থক্য দেখা যায় না, অর্থাৎ তারা দুজনেই ছিলেন অখ- বাংলা এবং প্লুরালিজমের সমর্থক। যে কোন রাষ্ট্র বা সমাজের মাঝে ভি গর্ডন চাইল্ডের কালচারাল ইভ্যুলুশন থিওরি যদি আমরা প্রয়োগ করি তাহলে আমরা দেখতে পারবো যে সমাজ আসলে শত শত বিশ্বাস এবং মতবাদের ন্যারেটিভ মানুষ কেউ একজন অপরজন এর মতো নয় তাদের চিন্তাও এক নয়, এই কারণে প্লুরালিজম বা বহুত্ববাদ মানব সমাজের মুক্তি এবং সম্প্রীতির জন্য একটি অবশ্যম্ভাবী বিষয়। তবে হিন্দু মহাসভা প্রথম হতেই অখ- বাংলার বিরুদ্ধে ছিলেন, কেননা তারা মনে করতেন যে যদি বাংলা অখ- থাকে তাহলে বাংলার মাঝে মুসলিমগণ থাকবে ৫৪% বা সংখ্যাগরিষ্ঠ, এই কারণে তারা ভোট থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা হতে শুরু করে আরও অনেক কিছুতেই দ্বিজাতি তত্ত্ব এবং পার্টিশানের তত্ত্বকে সমর্থন করতে শুরু করেন। শ্যামা প্রসাদ এই বিষয়ে তীব্র সমালোচনা আরম্ভ করেন, এবং তিনি সব কংগ্রেস নেতা বিশেষ করে সর্দার বল্লবভাই প্যাটেলকে এই বিষয়ে বোঝাতে সক্ষম হন যে বাংলাকে দুই ভাগে ভাগ বা বিভক্ত না করলে পারে বাংলা কখনই হিন্দুদের অথবা ভারতীয়দের থাকতে পারে না, তিনি এবং প্রভাকরণ দামোদর সাভারকার তাদের বিখ্যাত হিন্দুত্ববাদের মাঝে এটিও বলেন যে, হিন্দু এবং হিন্দুগণই শুধু ভারতীয় বা ভারতের আসল আদিবাসী। কোনভাবেই কোন মুসলিম অথবা খ্রিস্টান নিজেকে ভারতীয় বলে দাবি করলে পারেও প্রকৃত ভারতীয় হতে সক্ষম নন। এক্ষেত্রে বাংলার অখ-তা ধরে রাখলে পারেও শুধু মুসলিমগণ নিজেকে ভারতকে পিতৃভূমি বলে দাবি করলেও পবিত্রভূমি কখনই দাবি করতে পারবেন না। যে কারণে তারা বাংলার মাঝে বা ভারতের মাঝে নিজের অখন্ড অবস্থান ধরে রাখতে পারবেন না। সেই হিসেবে এই সব হিন্দুত্ববাদী মুসলিমগণকে একরকম পাকিস্তান প্রস্তাবের দিকে যেতে বাধ্য করতে থাকেন। এই কারণে বলা যায় যে পাকিস্তান বা দ্বিজাতি তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদীগণ একধরনের শ্যাডো ক্যাবিনেট বা ছায়া সংসদের ভূমিকা পালন করেন। অর্থাৎ বাংলার অখ-তা ভাঙনের ক্ষেত্রে তারা নিজেদের দায় এড়াতে পারবেন না। অন্যদিকে আবুল হাশিম, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শরৎ বসু, যোগেন মন্ডল শেরে বাংলার পথ ধরে অখ- বাংলা দাবি করেন, যদিও এদের মাঝে আবুল হাশিম এবং সোহরাওয়ার্দী ছিলেন মুসলিম লীগ মওলানা ভাসানী মুসলিম লীগের হলেও ছিলেন বামপন্থী, শরৎ বসু ছিলেন কংগ্রেস, যোগেন মন্ডল ছিলেন দলিত নেতা। বাংলার মুসলিম প্রগতিশীল নেতারা এর পক্ষ হতে আবুল হাশিম এবং শরৎ বসু ১৯৪৬ সালে বসু সোহরাওয়ার্দী প্যাক্ট স্বাক্ষর করেন, যাতে অখ- বাংলার প্রতি তাদের একাত্মতা প্রকাশ করেন। সেই সময়ে শরৎ বসু যিনি ছিলেন বাংলার বিপ্লবী নেতা সুভাস বসুর বড় ভাই, বাংলা বিভাগের বিরোধিতা করে বলেন, দুই বাংলা বিভাজিত হওয়ার মতো তেমন কোন বড় অমিল নেই, তারা এই অখ- বাংলার দাবি নিয়ে গান্ধীজির কাছেও যান এবং গান্ধীজি তাদের এই দাবির প্রতি প্রাথমিক সমর্থন প্রদান করেন। তবে বাংলার মাঝে বাইনারি রাজনীতি তখনও চলমান ছিল এমনকি এই অখ- বাংলা তত্ত্বকে অবাঙালি এলিট কংগ্রেসম্যান, হিন্দু মহাসভাসহ কংগ্রেস এর বেশির ভাগ নেতা প্রত্যাখ্যান করেন, মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই প্রস্তাবকে নাকচ করে দিলেও প্রাদেশিক মুসলিম লীগের নেতাগণের মাঝে এই অখ- বাংলার প্রস্তাব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সেই সময়ে মাওলানা আকরম খাঁ প্রথম দিকে অখ- বাংলা প্রস্তাব সমর্থন করেন। তবে তিনি তার অবস্থান থেকে সরে যান। সেই সময়ে কিছু মুসলিম লীগ নেতা এমন ছিলেন যারা অখ- বাংলাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন যাদের মাঝে ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দিন।

বাংলার মাঝে সেই সময়ের অক্ষীয় রাজনীতি মূলত দুইটি অংশ থেকে চালিত হত এদের মাঝে একটি ছিল হিন্দু মহাসভা এবং অপরটি ছিল প্রো-মুসলিম লীগ বা অবাঙালি মুসলিম লীগ নেতারা। অমৃতবাজার পত্রিকার এক জরিপে সেই সময়ে দাবি করা হয়েছিল যে ৯৮.৬ শতাংশ হিন্দুগণ বাংলা ভাগের পক্ষে ছিলেন তবে তারা মূলত ছিলেন উচ্চ বর্ণের হিন্দু কেননা সেই সময়ে শিডিউল কাস্ট বা তফসিলি হিন্দুগণের মাঝে প্রায় সবাই অখ- বাংলাকে সমর্থন করেছিলেন যারা ছিলেন সেই সময়ের হিন্দুদের প্রায় অর্ধেক। এটার অর্থ অখ- বাংলা আমাদের মাঝে বহুত্ববাদী রাজনীতি এর জন্ম দিয়েছিল। কেননা পূর্বে শ্যামা হক মন্ত্রিসভা এবং বেঙ্গল প্যাক্ট ব্যতিরেকে সরাসরি মুসলিম এবং হিন্দুদের মাঝে তেমন কোন সম্প্রীতির নিদর্শন রাজনৈতিক ভাবে আমরা লাভ করিনা। তবে বসু সোহরাওয়ার্দী প্যাক্ট বাস্তবায়ন হলে পারে সেটি হত আমাদের মাঝে সম্প্রীতির রাজনীতির আরেকটি উদাহারণ এবং পরিষ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকার দরুণ বাংলার মাঝে মুসলিম এবং হিন্দু কেউই একে অপরের ওপরে প্রাধান্য বিস্তার করতে পারত না। হিন্দুত্ববাদ এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির উত্থান তখন কষ্ট কল্পনা হত এবং কৃত্রিম ভারত বিভাজন সম্ভব হত না, ভারত বিভাজন যে কৃত্রিম ছিল সেটি সম্পর্কে আবুল মনসুর আহমদ তার লেখা বইতে উল্লেখ করেছেন, ‘৪৭ সালের বাঁটোয়ারায় ভারতবর্ষের ভূমিটাই ভাগ হইয়াছিল ভারতবাসী ভাগ হন নাই। আদম-এওয়াজ না করিয়াই একটি হিন্দু প্রধান ও একটি মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র গঠিত হইয়াছিল।’ পরবর্তীতে ভারতের মাঝে বহুত্ববাদী সেক্যুলার নয়, বরঞ্চ দ্বিজাতি তত্ত্বভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান ঘটে যেটির ধারাবাহিকতা মওলানা ভাসানীর এন্টি-জিন্নাহ নীতির পরেও সমাপ্ত হয়নি, বরঞ্চ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আরও অধিক মাত্রাতে ঘনীভূত হয়েছে। যেখানে বাংলার জাতীয়তাবাদ হতে পারতো অখ- বাংলাতে বহুত্ববাদী সেক্যুলার সেখানে বাংলার জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশি জাতীয়তা নাকি বাঙালি জাতীয়তা এই প্রসঙ্গে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, আর সংখ্যালঘুসহ উপজাতীয় গণ-বাঙালি জাতীয়তার বাইরে থাকার দরুণ তারাও হয়েছে অবহেলিত, আমাদের বাঙালি জাতির এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একটি মাত্র জাতীয়তা এবং একটি মাত্র ইনক্লুসিভ মতবাদ এবং সেক্যুলার রাজনীতি নির্মাণসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত করণ। ’৭১ পরবর্তীতে আমদের মাঝে সম্প্রীতি এবং অন্তর্ভুক্তি করণের রাজনীতি নেই বললেই চলে, যা আছে হয় সে এন্টি পাকিস্তান অথবা এন্টি-ইন্ডিয়া রাজনীতি, এখানে অখ-তা নেই আর নেই সবার স্থান সবার অবস্থান, আমাদের ভবিষ্যতের বাংলাদেশ যেন সবার সহাবস্থান এর বাংলাদেশ হয় সেটি হোক আমাদের নতুন দিনে চলার পাথেয়। আমাদের এই নতুন বাংলাদেশে আমরা সেই অখ-তার সম্প্রীতির নীতিকে নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে আগ্রহী আমাদের মাঝে বহুত্ব থাকুক এবং থাকুক শিকড়ের প্রতি অনুরাগ থাকুক বাংলাদেশ আর বাঙালিত্ব সব মানুষ এর মনে। সেই খানে একক বাংলাদেশের জায়গায় খ-িত বাংলাদেশ আমাদের মাঝে কী কী সমস্যা তৈরি করেছে সেটি পরবর্তী আলোচনার ক্ষেত্রে তুলে রাখা হলো।

[লেখক : ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য]

গাছে পেরেক ঠোকা

মানুষ ও বন্য হাতি

আলুর চাষ, বীজ উৎপাদন ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ

রূপকথার মতো মনে হলেও তিনি ছিলেন বাস্তবেরই নায়ক

গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইন প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্ত মত প্রকাশের গুরুত্ব

নিরাপদ অভিবাসন ও রেমিট্যান্স প্রবাহ

ভারতব্যাপী সংঘ : বিজেপির নয়া কৌশল

আর্থিক খাত নিয়ে অবিমৃষ্যকারী বক্তব্য

ভূমিকম্পের আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতেই হবে

মনে কী দ্বিধা রেখে নতুন প্রত্যাশায় নতুন দল!

ছবি

উন্নত বিশ্বের নাগরিকত্ব ও দুর্নীতি

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় : শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির নিচে ছাত্র

নারীর অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন

আদালতের ভেতরে ভিডিও ধারণের আইনি দিক

আইনের শাসন না গণপিটুনি?

নারীর ভূমি ও কৃষি অধিকার : ন্যায়বিচারের পথে কতদূর?

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের হালচাল

জনতুষ্টিবাদীরা এগিয়ে আছে যেদিক থেকে

ভিক্ষাবৃত্তি : প্রয়োজন নাকি পেশা?

ছবি

বিনিময় কৌশল নাকি বাণিজ্য যুদ্ধ?

শিশু আদালতের বিচার-প্রক্রিয়ার আইনি ও বাস্তবিক দিক

জনদুর্ভোগের অপসংস্কৃতি ও জনশিক্ষা : আগামীর দিকনির্দেশনা

প্রসঙ্গ : নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি

হরিজনদের পদবি : ঐক্যের পথে বাধা

এল নিনো : দেশের কৃষির চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

আর কীভাবে আর্জি জানালে নিরাপত্তা পাওয়া যায়?

স্বপ্ন ভাঙল সাঁওতাল মুংলু বেসরার

কোনো স্কুলই খারাপ না

ঢাকার যানজটের টেকসই সমাধান কী

বই কেন পড়বেন

ডায়াবেটিসের জটিলতা বাড়ায় তামাক ও ধূমপান

জাতীয় বিমা দিবস

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থা

ভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়া ভুল হয়ে থাকলে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা সঠিক ছিল!

শিক্ষার গুণগত মান পরিবর্তনে শিক্ষকের মূল্যায়ন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

অখণ্ড বাংলা তত্ত্ব : বাইনারিজম থেকে মুক্তির পথ

মাহরুফ চৌধুরী

মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

আমরা এমনিতে জানি যে আমাদের বাংলাদেশের জন্মলগ্নের সময়কালে দ্বিজাতি তত্ত্ব এবং পাকিস্তান প্রস্তাবের গুরুত্ব অনেক। অনেকে তো এটাই মনে করেন যে পাকিস্তান সৃষ্টি না হলে বাংলাদেশের উৎপত্তি কখনই হতো না। যদিও এসব ন্যারেটিভ এখন আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, এখন আমাদের প্রধান ন্যারেটিভ আমরা নিয়ে থাকি ’৭১ থেকে, তবে ’৭১ আসলে পারেও আমাদের মাঝে ছায়া বা বিপরীত শক্তি হিসেবে পাকিস্তান এবং দ্বিজাতি তত্ত্ব আসাটা একদম অবধারিত একটি বিষয়। এমনকি শেখ মুজিব নিজেও পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন, ‘পাকিস্তান দাবির পক্ষে গণভোট’ খ্যাত ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে শেখ মুজিব বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে লীগের ওয়ার্কার ইনচার্জের দায়িত্বে থেকে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। পাকিস্তানের জন্য এবং পরবর্তীতে পূর্ববাংলার জন্য তিনি কাজ করে গেছেন। তবে আমরা হয়তো ইতিহাসের আরেকটি ধারা সম্পর্কে আমরা হয়তো জানি না, যে ধারার সূচনা ঘটেছিল শেরেবাংলা বা হয়তো তারও কিছু পূর্বে। অনেকে লর্ড কার্জনের কথা বলেন এক্ষেত্রে তবে লর্ড কার্জন নিজে সেই সময়ে ভারতকে পরাধীনকারীগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এই কারণে তার প্রসঙ্গ ভারত অথবা বাংলার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আমরা নিয়ে আসছি না। শেরেবাংলার লাহোর প্রস্তাব উত্থাপিত হয় ১৯৪০ সালে ১৯২৮ সালের নেহেরু নেগোশিয়েশসন্স ভেঙে পড়ার পর থেকেই অখ- ভারত নীতি আর কার্যকরী হবে না এই ব্যাপারে অনেকেই নিশ্চিত হয়ে যান। এরপরে জিন্নাহর ১৪ দফা ১৯২৯ সালে উত্থাপিত হয়, তবে সেই সময়ে সাইমন কমিশনকে ব্যর্থ করার দরুন ব্রিটিশ সরকার প্রধান রামসে ম্যাকডোনাল্ড নিজেই কমিউনাল অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা দানের মাধ্যমে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন তৈরি করতে ভূমিকা রাখেন। ১৯৩৮ সালে হিন্দু মহাসভার করা বিরোধিতার দরুন ভারত শাসন আইনও জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি যদিও মুসলিমরা তুলনামূলকভাবে এর পক্ষে ছিলেন, এই সময়েই ১৯৩৮ সালের একটি সভায় জিন্নাহ সাহেব বলেন যে ভারতে হিন্দু এবং মুসলিম দুটি ভিন্ন জাতি। তবে শেরেবাংলা এর থেকেও অনেক বেশি সময়পোযোগী এবং কার্যকরী একটি সমাধান নিয়ে আসেন। তিনি ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব প্রদান করেন। তিনি এই লাহোর প্রস্তাবে প্রদান করেন। লাহোর প্রস্তাবের মূলনীতি হচ্ছে মুসলিমদের অধিকার এবং স্বায়ত্ত্বশাসন প্রতিষ্ঠা

ক) ভারতের উত্তর পূর্ব এবং উত্তর পশ্চিম অঞ্চলসমূহ নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠিত হবে।

খ) গঠিত রাষ্ট্রসমূহ হবে স্বশাসিত এবং সার্বভৌম

গ) পূর্ণাঙ্গ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে রাষ্ট্রসমূহের সংবিধানের মাঝে সংখ্যালঘুদের

অধিকার এবং অভিব্যক্তি সংরক্ষনের জন্য, এটি করা হবে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিগণের সহিত আলোচনার মাধ্যমে।

ঘ) প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি, যোগাযোগ সবকিছুই প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে।

লাহোর প্রস্তাব মূলত পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামের মতো এলাকা, যা অনেকটাই মুসলিম অধ্যুষিত সেটিকেও বাংলাদেশের অন্তর্গত রাখতে ইচ্ছুক ছিল এছাড়া উত্তর-পশ্চিম ভারতের প্রদেশসমূহ, যেমন- জুনাগড় এবং হায়দারাবাদ যদিও সেটি দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত সেই সমস্ত প্রদেশ আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার দাবি রাখতে পারত এই লাহোর প্রস্তাবে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৪৬ সালে অখ- বাংলার প্রস্তাবনা করেন যখন তিনি প্রাদেশিক প্রধান ছিলেন পুর্ব পাকিস্তানের। একই সময়ে শরৎ চন্দ্র বোস অখ- বাংলার দাবি নিয়ে সামনে আসেন, তবে যেখানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মনে করতেন যে বাংলার মাঝে মুসলিম ভাবধারা এবং গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটবে সেখানে শরৎ বসু ছিলেন সমাজতান্ত্রিক মনোভাব সম্পন্ন। তবে এইক্ষেত্রে তাদের মাঝে বিশেষ বিভেদ বা মতপার্থক্য দেখা যায় না, অর্থাৎ তারা দুজনেই ছিলেন অখ- বাংলা এবং প্লুরালিজমের সমর্থক। যে কোন রাষ্ট্র বা সমাজের মাঝে ভি গর্ডন চাইল্ডের কালচারাল ইভ্যুলুশন থিওরি যদি আমরা প্রয়োগ করি তাহলে আমরা দেখতে পারবো যে সমাজ আসলে শত শত বিশ্বাস এবং মতবাদের ন্যারেটিভ মানুষ কেউ একজন অপরজন এর মতো নয় তাদের চিন্তাও এক নয়, এই কারণে প্লুরালিজম বা বহুত্ববাদ মানব সমাজের মুক্তি এবং সম্প্রীতির জন্য একটি অবশ্যম্ভাবী বিষয়। তবে হিন্দু মহাসভা প্রথম হতেই অখ- বাংলার বিরুদ্ধে ছিলেন, কেননা তারা মনে করতেন যে যদি বাংলা অখ- থাকে তাহলে বাংলার মাঝে মুসলিমগণ থাকবে ৫৪% বা সংখ্যাগরিষ্ঠ, এই কারণে তারা ভোট থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা হতে শুরু করে আরও অনেক কিছুতেই দ্বিজাতি তত্ত্ব এবং পার্টিশানের তত্ত্বকে সমর্থন করতে শুরু করেন। শ্যামা প্রসাদ এই বিষয়ে তীব্র সমালোচনা আরম্ভ করেন, এবং তিনি সব কংগ্রেস নেতা বিশেষ করে সর্দার বল্লবভাই প্যাটেলকে এই বিষয়ে বোঝাতে সক্ষম হন যে বাংলাকে দুই ভাগে ভাগ বা বিভক্ত না করলে পারে বাংলা কখনই হিন্দুদের অথবা ভারতীয়দের থাকতে পারে না, তিনি এবং প্রভাকরণ দামোদর সাভারকার তাদের বিখ্যাত হিন্দুত্ববাদের মাঝে এটিও বলেন যে, হিন্দু এবং হিন্দুগণই শুধু ভারতীয় বা ভারতের আসল আদিবাসী। কোনভাবেই কোন মুসলিম অথবা খ্রিস্টান নিজেকে ভারতীয় বলে দাবি করলে পারেও প্রকৃত ভারতীয় হতে সক্ষম নন। এক্ষেত্রে বাংলার অখ-তা ধরে রাখলে পারেও শুধু মুসলিমগণ নিজেকে ভারতকে পিতৃভূমি বলে দাবি করলেও পবিত্রভূমি কখনই দাবি করতে পারবেন না। যে কারণে তারা বাংলার মাঝে বা ভারতের মাঝে নিজের অখন্ড অবস্থান ধরে রাখতে পারবেন না। সেই হিসেবে এই সব হিন্দুত্ববাদী মুসলিমগণকে একরকম পাকিস্তান প্রস্তাবের দিকে যেতে বাধ্য করতে থাকেন। এই কারণে বলা যায় যে পাকিস্তান বা দ্বিজাতি তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদীগণ একধরনের শ্যাডো ক্যাবিনেট বা ছায়া সংসদের ভূমিকা পালন করেন। অর্থাৎ বাংলার অখ-তা ভাঙনের ক্ষেত্রে তারা নিজেদের দায় এড়াতে পারবেন না। অন্যদিকে আবুল হাশিম, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শরৎ বসু, যোগেন মন্ডল শেরে বাংলার পথ ধরে অখ- বাংলা দাবি করেন, যদিও এদের মাঝে আবুল হাশিম এবং সোহরাওয়ার্দী ছিলেন মুসলিম লীগ মওলানা ভাসানী মুসলিম লীগের হলেও ছিলেন বামপন্থী, শরৎ বসু ছিলেন কংগ্রেস, যোগেন মন্ডল ছিলেন দলিত নেতা। বাংলার মুসলিম প্রগতিশীল নেতারা এর পক্ষ হতে আবুল হাশিম এবং শরৎ বসু ১৯৪৬ সালে বসু সোহরাওয়ার্দী প্যাক্ট স্বাক্ষর করেন, যাতে অখ- বাংলার প্রতি তাদের একাত্মতা প্রকাশ করেন। সেই সময়ে শরৎ বসু যিনি ছিলেন বাংলার বিপ্লবী নেতা সুভাস বসুর বড় ভাই, বাংলা বিভাগের বিরোধিতা করে বলেন, দুই বাংলা বিভাজিত হওয়ার মতো তেমন কোন বড় অমিল নেই, তারা এই অখ- বাংলার দাবি নিয়ে গান্ধীজির কাছেও যান এবং গান্ধীজি তাদের এই দাবির প্রতি প্রাথমিক সমর্থন প্রদান করেন। তবে বাংলার মাঝে বাইনারি রাজনীতি তখনও চলমান ছিল এমনকি এই অখ- বাংলা তত্ত্বকে অবাঙালি এলিট কংগ্রেসম্যান, হিন্দু মহাসভাসহ কংগ্রেস এর বেশির ভাগ নেতা প্রত্যাখ্যান করেন, মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই প্রস্তাবকে নাকচ করে দিলেও প্রাদেশিক মুসলিম লীগের নেতাগণের মাঝে এই অখ- বাংলার প্রস্তাব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সেই সময়ে মাওলানা আকরম খাঁ প্রথম দিকে অখ- বাংলা প্রস্তাব সমর্থন করেন। তবে তিনি তার অবস্থান থেকে সরে যান। সেই সময়ে কিছু মুসলিম লীগ নেতা এমন ছিলেন যারা অখ- বাংলাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন যাদের মাঝে ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দিন।

বাংলার মাঝে সেই সময়ের অক্ষীয় রাজনীতি মূলত দুইটি অংশ থেকে চালিত হত এদের মাঝে একটি ছিল হিন্দু মহাসভা এবং অপরটি ছিল প্রো-মুসলিম লীগ বা অবাঙালি মুসলিম লীগ নেতারা। অমৃতবাজার পত্রিকার এক জরিপে সেই সময়ে দাবি করা হয়েছিল যে ৯৮.৬ শতাংশ হিন্দুগণ বাংলা ভাগের পক্ষে ছিলেন তবে তারা মূলত ছিলেন উচ্চ বর্ণের হিন্দু কেননা সেই সময়ে শিডিউল কাস্ট বা তফসিলি হিন্দুগণের মাঝে প্রায় সবাই অখ- বাংলাকে সমর্থন করেছিলেন যারা ছিলেন সেই সময়ের হিন্দুদের প্রায় অর্ধেক। এটার অর্থ অখ- বাংলা আমাদের মাঝে বহুত্ববাদী রাজনীতি এর জন্ম দিয়েছিল। কেননা পূর্বে শ্যামা হক মন্ত্রিসভা এবং বেঙ্গল প্যাক্ট ব্যতিরেকে সরাসরি মুসলিম এবং হিন্দুদের মাঝে তেমন কোন সম্প্রীতির নিদর্শন রাজনৈতিক ভাবে আমরা লাভ করিনা। তবে বসু সোহরাওয়ার্দী প্যাক্ট বাস্তবায়ন হলে পারে সেটি হত আমাদের মাঝে সম্প্রীতির রাজনীতির আরেকটি উদাহারণ এবং পরিষ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকার দরুণ বাংলার মাঝে মুসলিম এবং হিন্দু কেউই একে অপরের ওপরে প্রাধান্য বিস্তার করতে পারত না। হিন্দুত্ববাদ এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির উত্থান তখন কষ্ট কল্পনা হত এবং কৃত্রিম ভারত বিভাজন সম্ভব হত না, ভারত বিভাজন যে কৃত্রিম ছিল সেটি সম্পর্কে আবুল মনসুর আহমদ তার লেখা বইতে উল্লেখ করেছেন, ‘৪৭ সালের বাঁটোয়ারায় ভারতবর্ষের ভূমিটাই ভাগ হইয়াছিল ভারতবাসী ভাগ হন নাই। আদম-এওয়াজ না করিয়াই একটি হিন্দু প্রধান ও একটি মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র গঠিত হইয়াছিল।’ পরবর্তীতে ভারতের মাঝে বহুত্ববাদী সেক্যুলার নয়, বরঞ্চ দ্বিজাতি তত্ত্বভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান ঘটে যেটির ধারাবাহিকতা মওলানা ভাসানীর এন্টি-জিন্নাহ নীতির পরেও সমাপ্ত হয়নি, বরঞ্চ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আরও অধিক মাত্রাতে ঘনীভূত হয়েছে। যেখানে বাংলার জাতীয়তাবাদ হতে পারতো অখ- বাংলাতে বহুত্ববাদী সেক্যুলার সেখানে বাংলার জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশি জাতীয়তা নাকি বাঙালি জাতীয়তা এই প্রসঙ্গে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, আর সংখ্যালঘুসহ উপজাতীয় গণ-বাঙালি জাতীয়তার বাইরে থাকার দরুণ তারাও হয়েছে অবহেলিত, আমাদের বাঙালি জাতির এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একটি মাত্র জাতীয়তা এবং একটি মাত্র ইনক্লুসিভ মতবাদ এবং সেক্যুলার রাজনীতি নির্মাণসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত করণ। ’৭১ পরবর্তীতে আমদের মাঝে সম্প্রীতি এবং অন্তর্ভুক্তি করণের রাজনীতি নেই বললেই চলে, যা আছে হয় সে এন্টি পাকিস্তান অথবা এন্টি-ইন্ডিয়া রাজনীতি, এখানে অখ-তা নেই আর নেই সবার স্থান সবার অবস্থান, আমাদের ভবিষ্যতের বাংলাদেশ যেন সবার সহাবস্থান এর বাংলাদেশ হয় সেটি হোক আমাদের নতুন দিনে চলার পাথেয়। আমাদের এই নতুন বাংলাদেশে আমরা সেই অখ-তার সম্প্রীতির নীতিকে নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে আগ্রহী আমাদের মাঝে বহুত্ব থাকুক এবং থাকুক শিকড়ের প্রতি অনুরাগ থাকুক বাংলাদেশ আর বাঙালিত্ব সব মানুষ এর মনে। সেই খানে একক বাংলাদেশের জায়গায় খ-িত বাংলাদেশ আমাদের মাঝে কী কী সমস্যা তৈরি করেছে সেটি পরবর্তী আলোচনার ক্ষেত্রে তুলে রাখা হলো।

[লেখক : ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য]

back to top