এম এ হোসাইন
সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ আবারও এক গুরুত্বপূর্ণ যুগসন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। যে দেশ একসময় গণতন্ত্র ও আত্ম-অধিকারের জন্য লড়াই করেছিল, সে দেশ এখন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিমজ্জিত। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এই টানাপোড়েনের কেন্দ্রবিন্দু, আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বিতর্কের মূল উৎস। নির্বাচন অনুষ্ঠানে কারও কারও অনীহা গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
তবে এটি কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট নয়; এর প্রভাব আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিসরেও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ কোন পথে এগোবে, তা বোঝার জন্য প্রয়োজন গভীর রাজনৈতিক বিশ্লেষণÑ মূল খেলোয়াড়দের স্বার্থ, রাজনৈতিক কৌশল ও চলমান অস্থিরতার সম্ভাব্য পরিণতি বিবেচনা করা জরুরি।
গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো নির্বাচন। কিন্তু বাংলাদেশে ক্রমশই তা উপেক্ষিত হতে শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছেন যে নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে, অথচ বিভিন্ন সূত্রের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকার পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশল গ্রহণ করেছেÑ সম্ভবত তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত।
তাদের যুক্তি, দেশকে স্থিতিশীল করার জন্য আরও সময় প্রয়োজন। তবে বাস্তবতার নিরিখে এই দাবি অনেকটাই ফাঁপা শোনায়। সরকারের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে এটি স্পষ্ট যে, পুরো বিষয়টি ক্ষমতার একটি সূক্ষ্ম রাজনৈতিক চাল। অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নতুন একটি রাজনৈতিক দলকে ভবিষ্যতের শাসক হিসেবে প্রস্তুত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। এ দলটি মূলত সেই ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি সুবিধা ভোগ করে আসছে।
সরকার সম্প্রতি যে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছে, সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ। এটি বাস্তবিক অর্থে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নয়; বরং বেছে বেছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের একটি কৌশলমাত্র। ফলে, প্রশাসন তার ক্ষমতা সংহত করতে ব্যস্ত, গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে নয়।
প্রকৃত প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের জনগণ কি গণতন্ত্রের এই অনির্দিষ্টকালীন বিলম্ব মেনে নেবে? ইতিহাস সাক্ষী, এদেশ বারবার গণআন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। জনগণের ক্ষোভ যদি সংগঠিত হয় এবং অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে, তবে সরকারের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ এখন যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে, সেখানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ বেছে নেয়া না হলে দেশ দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অচলাবস্থায় নিমজ্জিত হতে পারে। আর এর পরিণতি হবে ভয়াবহÑ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, সামাজিক অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তির অবনতি। এখন সময় এসেছে তার উত্তর খোঁজারÑ প্রশাসন কি জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেবে, নাকি ক্ষমতার চোরাগলিতে হারিয়ে যাবে।
বর্তমান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে আরেকটি বড় প্রতিবন্ধক হলো প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংস্কার। নীতিগতভাবে সংবিধান সংশোধন একটি স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া হতে পারে। তবে যখন এটি একটি অনির্বাচিত সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়, তখন তা নিছক রাজনৈতিক অপকৌশলের অংশ বলে মনে করা হয়।
এই উদ্যোগটি বড় রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছে। তাদের দৃষ্টিতে এটি অন্তর্বর্তী সরকার বা তাদের মদদপুষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সুবিধাজনকভাবে রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা। বাংলাদেশে যেখানে রাজনৈতিক বিভাজন প্রবল, সেখানে জনগণের ব্যাপক মতৈক্য ছাড়া সাংবিধানিক সংস্কার চাপিয়ে দেয়া শুধু অস্থিতিশীলতাই বাড়াবে।
কিন্তু সমস্যা এখানেই থেমে নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্ব অত্যন্ত কেন্দ্রাভিসারী। বড় দলগুলো সাধারণত একজন নেতাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়, যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয় উপর থেকে নিচে, ভিন্নমত দমন করা হয় এবং নীতিগত আলোচনার চেয়ে ব্যক্তিগত আনুগত্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সংস্কার উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া যায় নাÑ এটি শুরু করতে হয় রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কাঠামোর মধ্য থেকে। দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি চালু করা, স্বচ্ছ নেতৃত্ব নির্বাচন এবং নীতি নির্ধারণে প্রকৃত বিতর্কের সুযোগ সৃষ্টি করা হলে বিদ্যমান স্বজনপ্রীতি ও চাটুকারিতার সংস্কৃতি ভাঙা সম্ভব হবে। কিন্তু যারা বিদ্যমান ব্যবস্থার সুবিধাভোগী, তাদের মধ্যে এমন পরিবর্তনের জন্য খুব একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিছক অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নয়; এটি ক্রমশ বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার অংশ হয়ে উঠছে।
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক শক্তির পুনর্বিন্যাস নিয়ে ব্যস্ত। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা সীমিত। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কর্মকর্তাদের উপস্থিতি এই সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে চলমান টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে, নয়াদিল্লি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নিজেদের স্বার্থে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে।
অন্যদিকে, চীন এখন ঢাকাকে কাছে টানতে বেশ সক্রিয়। ইউনূসের বেইজিং সফর এরই ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশ যদি চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে। ফলে বাংলাদেশ এক বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
তবে এই কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জ নতুন কিছু নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির মাঝে পড়ে ছোট দেশগুলোকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করতে হয়, যাতে সার্বভৌমত্ব রক্ষা হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কগুলোর ভারসাম্য বজায় থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক কৌশলে যে দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে, তা কেবল অদূরদর্শিতাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে অবহেলার পরিচায়ক।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অবশ্যই ন্যায় ও পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে, যাতে সম্মান ও সমতা বজায় থাকে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ পাকিস্তান নয়। যে কোনো ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় স্বার্থই প্রধান হওয়া উচিত। প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হলোÑ এমন কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা করা, যা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে।
বাংলাদেশের বর্তমান সংকটকে পুরোপুরি বোঝার জন্য দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতাকে স্বীকার করা জরুরিÑ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। উভয় দলই গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ক্ষয়িষ্ণু করার জন্য দায়ী।
আওয়ামী লীগ, টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর, দুর্নীতি ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের অভিযোগে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে। দলটি যদি পুনরায় বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে চায়, তবে অবশ্যই নিজের ভুলগুলো স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, অতীতের ক্ষমতার অপব্যবহারকে আমলে নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং গণতান্ত্রিক অগ্রাধিকারকে রাজনৈতিক সুবিধাবাদের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। তবে এটাও সত্য যে, আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতি অসম্পূর্ণ।
অন্যদিকে, বিএনপি এখনো দলীয় কাঠামোর দুর্বলতার ভারে নুয়ে পড়েছে। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগে জর্জরিত দলটি এখনো গণতন্ত্রের প্রতি তাদের প্রকৃত দায়বদ্ধতা জনগণকে বিশ্বাস করাতে পারেনি। এর চেয়েও বড় সমস্যা হলো, দলটি এখনো এমন কোনো রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি হাজির করতে পারেনি, যা হতাশ জনগণের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করবে।
জামায়াত-ই-ইসলামী এখনো তার বিতর্কিত অতীতের ভার বইছে, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকার কারণে। দলটির আদর্শিক অবস্থান বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং তারা প্রায়শই ইসলামকে অপব্যাখ্যা করে বিকৃত রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচার করে। বাস্তবে, জামায়াতের তথাকথিত ইসলামী রাজনীতি ধর্মের প্রকৃত নৈতিকতার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে, তাদের নৈতিক দায়িত্ব দেশের মানুষের কাছে ১৯৭১ সালের ভূমিকার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা। তদুপরি, তারা যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অংশ নিতে চায়, তবে অবশ্যই ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, জামায়াত নতুনভাবে সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
সব রাজনৈতিক দলের সামনে এখন দুটি পথÑ হয় আভ্যন্তরীন দলীয় সংস্কার নয়তো বা বিস্মৃতির গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশের জনগণ আর প্রচলিত রাজনৈতিক নাটক মেনে নেয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে উগ্রবাদের ক্রমবর্ধমান বিস্তার। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো শক্তি সঞ্চয় করছে এবং এতে বিদেশি শক্তিরও সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।
ইউনূস প্রশাসনের কিছু কঠোরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠীর প্রতি নমনীয় মনোভাব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। যদি এই উগ্র গোষ্ঠীগুলো আরও শক্তিশালী হয়, তবে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দুষ্টচক্রে জড়িয়ে পড়তে পারে, যা কেবল জাতীয় স্থিতিশীলতাই নয়, দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিরও মারাত্মক ক্ষতি করবে।
এই ক্রমবর্ধমান হুমকির বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ না নিলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। বিনিয়োগকারী ও উন্নয়ন অংশীদাররা এমন একটি দেশে সম্পৃক্ত হতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে, যেখানে উগ্রবাদের ঝুঁকি বাড়ছে।
বাংলাদেশ এখন একটি যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এগিয়ে যাওয়ার পথ অবশ্যই গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারের হতে হবে, অনির্বাচিত প্রশাসনের অধীনে অনির্দিষ্ট স্থবিরতার নয়। বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা আর বিলম্ব মেনে নেবে নাÑ নির্বাচন আরও পিছিয়ে গেলে আরও বড় প্রতিক্রিয়া আসতে পারে।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য বার্তাটি স্পষ্ট: পরিবর্তিত হও, নতুবা জনরোষের ঢেউয়ে ভেসে যাও। অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, জবাবদিহি ও প্রকৃত সংস্কার এখন আর বিকল্প নয়Ñ এগুলো আবশ্যক। পর্দার আড়ালে ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক চাল এবং কৃত্রিম বিলম্বের দিন ফুরিয়ে আসছে।
আগামী কয়েক মাসে নেয়া সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক অগ্রগতির পথে থাকবে নাকি কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে ঝুঁকবে। বিশ্ব তাকিয়ে আছে। জনগণ অপেক্ষা করছে। আর ইতিহাস রায় দেয়ার জন্য প্রস্তুত।
[লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক]
এম এ হোসাইন
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ আবারও এক গুরুত্বপূর্ণ যুগসন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। যে দেশ একসময় গণতন্ত্র ও আত্ম-অধিকারের জন্য লড়াই করেছিল, সে দেশ এখন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিমজ্জিত। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এই টানাপোড়েনের কেন্দ্রবিন্দু, আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বিতর্কের মূল উৎস। নির্বাচন অনুষ্ঠানে কারও কারও অনীহা গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
তবে এটি কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট নয়; এর প্রভাব আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিসরেও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ কোন পথে এগোবে, তা বোঝার জন্য প্রয়োজন গভীর রাজনৈতিক বিশ্লেষণÑ মূল খেলোয়াড়দের স্বার্থ, রাজনৈতিক কৌশল ও চলমান অস্থিরতার সম্ভাব্য পরিণতি বিবেচনা করা জরুরি।
গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো নির্বাচন। কিন্তু বাংলাদেশে ক্রমশই তা উপেক্ষিত হতে শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছেন যে নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে, অথচ বিভিন্ন সূত্রের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকার পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশল গ্রহণ করেছেÑ সম্ভবত তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত।
তাদের যুক্তি, দেশকে স্থিতিশীল করার জন্য আরও সময় প্রয়োজন। তবে বাস্তবতার নিরিখে এই দাবি অনেকটাই ফাঁপা শোনায়। সরকারের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে এটি স্পষ্ট যে, পুরো বিষয়টি ক্ষমতার একটি সূক্ষ্ম রাজনৈতিক চাল। অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নতুন একটি রাজনৈতিক দলকে ভবিষ্যতের শাসক হিসেবে প্রস্তুত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। এ দলটি মূলত সেই ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি সুবিধা ভোগ করে আসছে।
সরকার সম্প্রতি যে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছে, সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ। এটি বাস্তবিক অর্থে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নয়; বরং বেছে বেছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের একটি কৌশলমাত্র। ফলে, প্রশাসন তার ক্ষমতা সংহত করতে ব্যস্ত, গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে নয়।
প্রকৃত প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের জনগণ কি গণতন্ত্রের এই অনির্দিষ্টকালীন বিলম্ব মেনে নেবে? ইতিহাস সাক্ষী, এদেশ বারবার গণআন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। জনগণের ক্ষোভ যদি সংগঠিত হয় এবং অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে, তবে সরকারের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ এখন যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে, সেখানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ বেছে নেয়া না হলে দেশ দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অচলাবস্থায় নিমজ্জিত হতে পারে। আর এর পরিণতি হবে ভয়াবহÑ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, সামাজিক অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তির অবনতি। এখন সময় এসেছে তার উত্তর খোঁজারÑ প্রশাসন কি জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেবে, নাকি ক্ষমতার চোরাগলিতে হারিয়ে যাবে।
বর্তমান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে আরেকটি বড় প্রতিবন্ধক হলো প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংস্কার। নীতিগতভাবে সংবিধান সংশোধন একটি স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া হতে পারে। তবে যখন এটি একটি অনির্বাচিত সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়, তখন তা নিছক রাজনৈতিক অপকৌশলের অংশ বলে মনে করা হয়।
এই উদ্যোগটি বড় রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছে। তাদের দৃষ্টিতে এটি অন্তর্বর্তী সরকার বা তাদের মদদপুষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সুবিধাজনকভাবে রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা। বাংলাদেশে যেখানে রাজনৈতিক বিভাজন প্রবল, সেখানে জনগণের ব্যাপক মতৈক্য ছাড়া সাংবিধানিক সংস্কার চাপিয়ে দেয়া শুধু অস্থিতিশীলতাই বাড়াবে।
কিন্তু সমস্যা এখানেই থেমে নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্ব অত্যন্ত কেন্দ্রাভিসারী। বড় দলগুলো সাধারণত একজন নেতাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়, যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয় উপর থেকে নিচে, ভিন্নমত দমন করা হয় এবং নীতিগত আলোচনার চেয়ে ব্যক্তিগত আনুগত্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সংস্কার উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া যায় নাÑ এটি শুরু করতে হয় রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কাঠামোর মধ্য থেকে। দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি চালু করা, স্বচ্ছ নেতৃত্ব নির্বাচন এবং নীতি নির্ধারণে প্রকৃত বিতর্কের সুযোগ সৃষ্টি করা হলে বিদ্যমান স্বজনপ্রীতি ও চাটুকারিতার সংস্কৃতি ভাঙা সম্ভব হবে। কিন্তু যারা বিদ্যমান ব্যবস্থার সুবিধাভোগী, তাদের মধ্যে এমন পরিবর্তনের জন্য খুব একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিছক অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নয়; এটি ক্রমশ বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার অংশ হয়ে উঠছে।
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক শক্তির পুনর্বিন্যাস নিয়ে ব্যস্ত। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা সীমিত। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কর্মকর্তাদের উপস্থিতি এই সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে চলমান টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে, নয়াদিল্লি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নিজেদের স্বার্থে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে।
অন্যদিকে, চীন এখন ঢাকাকে কাছে টানতে বেশ সক্রিয়। ইউনূসের বেইজিং সফর এরই ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশ যদি চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে। ফলে বাংলাদেশ এক বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
তবে এই কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জ নতুন কিছু নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির মাঝে পড়ে ছোট দেশগুলোকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করতে হয়, যাতে সার্বভৌমত্ব রক্ষা হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কগুলোর ভারসাম্য বজায় থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক কৌশলে যে দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে, তা কেবল অদূরদর্শিতাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে অবহেলার পরিচায়ক।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অবশ্যই ন্যায় ও পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে, যাতে সম্মান ও সমতা বজায় থাকে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ পাকিস্তান নয়। যে কোনো ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় স্বার্থই প্রধান হওয়া উচিত। প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হলোÑ এমন কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা করা, যা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে।
বাংলাদেশের বর্তমান সংকটকে পুরোপুরি বোঝার জন্য দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতাকে স্বীকার করা জরুরিÑ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। উভয় দলই গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ক্ষয়িষ্ণু করার জন্য দায়ী।
আওয়ামী লীগ, টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর, দুর্নীতি ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের অভিযোগে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে। দলটি যদি পুনরায় বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে চায়, তবে অবশ্যই নিজের ভুলগুলো স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, অতীতের ক্ষমতার অপব্যবহারকে আমলে নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং গণতান্ত্রিক অগ্রাধিকারকে রাজনৈতিক সুবিধাবাদের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। তবে এটাও সত্য যে, আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতি অসম্পূর্ণ।
অন্যদিকে, বিএনপি এখনো দলীয় কাঠামোর দুর্বলতার ভারে নুয়ে পড়েছে। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগে জর্জরিত দলটি এখনো গণতন্ত্রের প্রতি তাদের প্রকৃত দায়বদ্ধতা জনগণকে বিশ্বাস করাতে পারেনি। এর চেয়েও বড় সমস্যা হলো, দলটি এখনো এমন কোনো রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি হাজির করতে পারেনি, যা হতাশ জনগণের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করবে।
জামায়াত-ই-ইসলামী এখনো তার বিতর্কিত অতীতের ভার বইছে, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকার কারণে। দলটির আদর্শিক অবস্থান বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং তারা প্রায়শই ইসলামকে অপব্যাখ্যা করে বিকৃত রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচার করে। বাস্তবে, জামায়াতের তথাকথিত ইসলামী রাজনীতি ধর্মের প্রকৃত নৈতিকতার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে, তাদের নৈতিক দায়িত্ব দেশের মানুষের কাছে ১৯৭১ সালের ভূমিকার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা। তদুপরি, তারা যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অংশ নিতে চায়, তবে অবশ্যই ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, জামায়াত নতুনভাবে সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
সব রাজনৈতিক দলের সামনে এখন দুটি পথÑ হয় আভ্যন্তরীন দলীয় সংস্কার নয়তো বা বিস্মৃতির গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশের জনগণ আর প্রচলিত রাজনৈতিক নাটক মেনে নেয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে উগ্রবাদের ক্রমবর্ধমান বিস্তার। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো শক্তি সঞ্চয় করছে এবং এতে বিদেশি শক্তিরও সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।
ইউনূস প্রশাসনের কিছু কঠোরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠীর প্রতি নমনীয় মনোভাব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। যদি এই উগ্র গোষ্ঠীগুলো আরও শক্তিশালী হয়, তবে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দুষ্টচক্রে জড়িয়ে পড়তে পারে, যা কেবল জাতীয় স্থিতিশীলতাই নয়, দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিরও মারাত্মক ক্ষতি করবে।
এই ক্রমবর্ধমান হুমকির বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ না নিলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। বিনিয়োগকারী ও উন্নয়ন অংশীদাররা এমন একটি দেশে সম্পৃক্ত হতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে, যেখানে উগ্রবাদের ঝুঁকি বাড়ছে।
বাংলাদেশ এখন একটি যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এগিয়ে যাওয়ার পথ অবশ্যই গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারের হতে হবে, অনির্বাচিত প্রশাসনের অধীনে অনির্দিষ্ট স্থবিরতার নয়। বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা আর বিলম্ব মেনে নেবে নাÑ নির্বাচন আরও পিছিয়ে গেলে আরও বড় প্রতিক্রিয়া আসতে পারে।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য বার্তাটি স্পষ্ট: পরিবর্তিত হও, নতুবা জনরোষের ঢেউয়ে ভেসে যাও। অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, জবাবদিহি ও প্রকৃত সংস্কার এখন আর বিকল্প নয়Ñ এগুলো আবশ্যক। পর্দার আড়ালে ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক চাল এবং কৃত্রিম বিলম্বের দিন ফুরিয়ে আসছে।
আগামী কয়েক মাসে নেয়া সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক অগ্রগতির পথে থাকবে নাকি কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে ঝুঁকবে। বিশ্ব তাকিয়ে আছে। জনগণ অপেক্ষা করছে। আর ইতিহাস রায় দেয়ার জন্য প্রস্তুত।
[লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক]