alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

জমি-জমার রেকর্ড সংশোধনে নতুন পরিপত্র ও প্রাসঙ্গিক আইন

সিরাজ প্রামাণিক

: শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫

জমির রেকর্ড সংশোধনীতে আর বিড়ম্বনা নয়। আপনি আইন আদালতে না গিয়ে, কোন প্রকার মোকদ্দমা ছাড়াই জমির রেকর্ড ও খতিয়ানে ভুল সংশোধন করে নিতে পারবেন। আপনি জমি কিনেছেন, জমির সঠিক দলিল আছে, যুগ যুগ ধরে জমি ভোগদখল করে আসছেন, কিন্তু জমির রেকর্ড ভু লবশত অন্য কারও নামে হয়ে আছে কিংবা কম রেকর্ড হয়েছে কিংবা জমির দাগ ভুল ভাবে রেকর্ড হয়েছে, কিংবা ১নং খাস খতিয়ানে কিংবা অর্পিত তালিকায় চলে গেছে কিংবা ম্যাপের সংগে রেকর্ডের ভুল হয়েছে। নো টেনশন। আপনি সহজেই আপনার জমির উপরোক্ত সমস্যাগুলো সমাধান করিয়ে নিতে পারবেন।

ভূমি মন্ত্রনালয় ২০২১ সালের ২৯ জুলাই পরিপত্র জারি করে বলেছেন, ভূমি জরিপের পর চূড়ান্তভাবে মুদ্রিত ও প্রকাশিত খতিয়ানের করণিক ভুল, প্রতারণামূলক লিখন এবং যথার্থ ভুল মাঠ পর্যায়েই সংশোধন তথা রেকর্ড সংশোধন করার জন্য এসিল্যান্ডরাই পারবেন। ভূমি জরিপের পর চূড়ান্তভাবে মুদ্রিত ও প্রকাশিত খতিয়ানের করণিক ভুল, প্রতারণামূলক লিখন এবং যথার্থ ভুলের বিভিন্ন সম্ভাব্য ধরণ বর্ণনা করা হয়েছে পরিপত্রে। এসব ভুল সংশোধনের পদ্ধতিও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

এছাড়া পরিপত্রে রেকর্ড সংশোধের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট আবেদনের সঙ্গে আবেদনকারীকে আবেদনের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কোর্ট ফি সংযুক্ত করতে হবে। অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করার সিস্টেম চালু হওয়ার কথাও পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। আবেদনের পর আবেদনটি একটি মিসকেস হিসেবে এন্ট্রি হবে। সংশ্লিষ্ট মিসকেসে রেকর্ড সংশোধনের আদেশ হওয়ার পর আবেদনকারীর কাছ থেকে নামজারি মামলার জন্য নির্ধারিত হারে নোটিশ জারি ফি, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি এবং খতিয়ান সরবরাহ ফি একত্রে ডিসিআর’র মাধ্যমে আদায় করে যথারীতি সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। তবে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ভুল সংশোধনের জন্য আবেদনে কোর্ট ফি কিংবা অন্যান্য ফি আদায় প্রযোজ্য হবে না বলে পরিপত্রে জানানো হয়েছে।

আইনের ব্যাখ্যাগুলোয় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তা বা সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্টেট অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড টেনান্সি অ্যাক্ট ১৯৫০’র ১৪৩ ধারামতে এবং প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫-এর বিধি ২৩(৩) অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ডের করণিক ভুল (ক্ল্যারিকাল মিসটেকস) যেমন-নামের ভুল, অংশ বসানোর হিসেবে ভুল, দাগসূচিতে ভুল, ম্যাপের সঙ্গে রেকর্ডের ভুল ইত্যাদি নিজেই সংশোধন করতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, স্টেট অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড টেনান্সি অ্যাক্ট ১৯৫০’র ১৪৯(৪) ধারামতে ভূমি প্রশাসন বোর্ড বোনাফাইড মিসটেক যেমন-জরিপকালে পিতার মৃত্যুর কারণে সন্তানদের নামে সম্পত্তি রেকর্ড হওয়ার কথা থাকলেও জরিপকারকদের ভুলে তা হয়নি- এমন ভুল সংশোধন করতে পারেন। আবার ভূমি আপিল বোর্ডেরও এ ধরনের ভুল সংশোধনের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এগুলোর এতদিন কোন প্রয়োগ ছিল না। নতুন এ পরিপত্র জারির মধ্যে দিয়ে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।

তবে আবেদনের সঙ্গে যেসব কাগজপত্র জম দিতে পারেন, যেমন ১। সর্বশেষ নামজারি, সিএস, আরএস, এসএ, বিএস, খতিয়ানের সত্যায়িত ফটোকপি বা সার্টিফাইড কপি, ২। সংশ্লিষ্ট মৌজার এসএ ও বিএস মৌজা ম্যাপ, ৩। ওয়ারিশ সনদপত্র যদি প্রয়োজন হয়, তবে অনধিক ০৩ মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত হতে হবে। ৪। মূল দলিলের ফটোকপি/ সার্টিফাইড কপি ৫। সর্বশেষ জরিপের পর থেকে ভায়া/পিট দলিল ৬। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলাপত্র ৭। আদালতের রায়/আদেশ/ডিক্রি থাকলে সেগুলোর সার্টিফাইড কপি, ৯। বিএস জরিপের মাঠপর্চা, ডিপি খতিয়ান ইত্যাদি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, উক্ত পরিপত্রে রেকর্ড সংশোধনী বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও মাঠ পর্যায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসব মানছেন না। ফলে ভুক্তভোগীদের ভোগান্তি কমছে না।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপদ সড়ক

বাংলার সংস্কৃতি কি মূলধারা হারিয়ে ফেলবে?

ছবি

সমদৃষ্টি, বহুত্ববাদী সমাজ এবং সহিষ্ণুতা

খাদ্য অপচয় : ক্ষুধার্ত পৃথিবীর এক নিঃশব্দ ট্র্যাজেডি

টেকসই বাংলাদেশ গঠনে পরিবেশ সংস্কার কেন অপরিহার্য

সে এক রূপকথারই দেশ

উপকূলের খাদ্যসংকট নিয়ে ভাবছেন কি নীতিনির্ধারকেরা?

মানসিক স্বাস্থ্য: মানবাধিকারের নতুন চ্যালেঞ্জ

ঢাকার যানজট ও বিকেন্দ্রীকরণ

নির্বাচনী মাঠে জামায়াতী হেকমত

শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর বৈষম্য ও জাতির অগ্রযাত্রাধ

উপমহাদেশে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

এইচএসসি ফল: সংখ্যার খেল না কি শিক্ষার বাস্তব চিত্র?

বিনা ভোট, নিশি ভোট, ডামি ভোটের পরে এবার নাকি গণভোট!

কমরেড ইলা মিত্রের শততম জন্মজয়ন্তী

কত মৃত্যু হলে জাগবে বিবেক?

বৈষম্যের বিবিধ মুখ

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি আইনি সহায়তা

গাজা : এখন শান্তি রক্ষা করবে কে?

দোসর, বাই ডিফল্ট!

জমি কেনা দাগে দাগে কিন্তু ভোগদখল একদাগে

রাষ্ট্র কি শুধু শিক্ষকদের বেলায় এসে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে?

শতরঞ্জ কি খিলাড়ী

শিক্ষক থাকে রাজপথে, আর পুলিশ ছাড়ে থানা

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা : স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবিষ্যৎ কী?

ছবি

শ্লীলতা, অশ্লীলতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অবক্ষয়ের চোরাবালিতে আলোর দিশারী

অটোমেশন ও দেশের যুব কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ

দুর্যোগে ভয় নয়, প্রস্তুতিই শক্তি

বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন

ছবি

‘আল্লাহ তুই দেহিস’: এ কোন ঘৃণার আগুন, ছড়িয়ে গেল সবখানে!

চেকের মামলায় আসামী যেসব ডিফেন্স নিয়ে খালাস পেতে পারেন

খেলনাশিল্প: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

প্রান্তিক মানুষের হৃদয়ে ফিরে আসা কালো মেঘ

গীর্জায় হামলার নেপথ্যে কী?

সংঘের শতবর্ষের রাজনৈতিক তাৎপর্য

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

জমি-জমার রেকর্ড সংশোধনে নতুন পরিপত্র ও প্রাসঙ্গিক আইন

সিরাজ প্রামাণিক

শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫

জমির রেকর্ড সংশোধনীতে আর বিড়ম্বনা নয়। আপনি আইন আদালতে না গিয়ে, কোন প্রকার মোকদ্দমা ছাড়াই জমির রেকর্ড ও খতিয়ানে ভুল সংশোধন করে নিতে পারবেন। আপনি জমি কিনেছেন, জমির সঠিক দলিল আছে, যুগ যুগ ধরে জমি ভোগদখল করে আসছেন, কিন্তু জমির রেকর্ড ভু লবশত অন্য কারও নামে হয়ে আছে কিংবা কম রেকর্ড হয়েছে কিংবা জমির দাগ ভুল ভাবে রেকর্ড হয়েছে, কিংবা ১নং খাস খতিয়ানে কিংবা অর্পিত তালিকায় চলে গেছে কিংবা ম্যাপের সংগে রেকর্ডের ভুল হয়েছে। নো টেনশন। আপনি সহজেই আপনার জমির উপরোক্ত সমস্যাগুলো সমাধান করিয়ে নিতে পারবেন।

ভূমি মন্ত্রনালয় ২০২১ সালের ২৯ জুলাই পরিপত্র জারি করে বলেছেন, ভূমি জরিপের পর চূড়ান্তভাবে মুদ্রিত ও প্রকাশিত খতিয়ানের করণিক ভুল, প্রতারণামূলক লিখন এবং যথার্থ ভুল মাঠ পর্যায়েই সংশোধন তথা রেকর্ড সংশোধন করার জন্য এসিল্যান্ডরাই পারবেন। ভূমি জরিপের পর চূড়ান্তভাবে মুদ্রিত ও প্রকাশিত খতিয়ানের করণিক ভুল, প্রতারণামূলক লিখন এবং যথার্থ ভুলের বিভিন্ন সম্ভাব্য ধরণ বর্ণনা করা হয়েছে পরিপত্রে। এসব ভুল সংশোধনের পদ্ধতিও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

এছাড়া পরিপত্রে রেকর্ড সংশোধের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট আবেদনের সঙ্গে আবেদনকারীকে আবেদনের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কোর্ট ফি সংযুক্ত করতে হবে। অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করার সিস্টেম চালু হওয়ার কথাও পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। আবেদনের পর আবেদনটি একটি মিসকেস হিসেবে এন্ট্রি হবে। সংশ্লিষ্ট মিসকেসে রেকর্ড সংশোধনের আদেশ হওয়ার পর আবেদনকারীর কাছ থেকে নামজারি মামলার জন্য নির্ধারিত হারে নোটিশ জারি ফি, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি এবং খতিয়ান সরবরাহ ফি একত্রে ডিসিআর’র মাধ্যমে আদায় করে যথারীতি সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। তবে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ভুল সংশোধনের জন্য আবেদনে কোর্ট ফি কিংবা অন্যান্য ফি আদায় প্রযোজ্য হবে না বলে পরিপত্রে জানানো হয়েছে।

আইনের ব্যাখ্যাগুলোয় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তা বা সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্টেট অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড টেনান্সি অ্যাক্ট ১৯৫০’র ১৪৩ ধারামতে এবং প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫-এর বিধি ২৩(৩) অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ডের করণিক ভুল (ক্ল্যারিকাল মিসটেকস) যেমন-নামের ভুল, অংশ বসানোর হিসেবে ভুল, দাগসূচিতে ভুল, ম্যাপের সঙ্গে রেকর্ডের ভুল ইত্যাদি নিজেই সংশোধন করতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, স্টেট অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড টেনান্সি অ্যাক্ট ১৯৫০’র ১৪৯(৪) ধারামতে ভূমি প্রশাসন বোর্ড বোনাফাইড মিসটেক যেমন-জরিপকালে পিতার মৃত্যুর কারণে সন্তানদের নামে সম্পত্তি রেকর্ড হওয়ার কথা থাকলেও জরিপকারকদের ভুলে তা হয়নি- এমন ভুল সংশোধন করতে পারেন। আবার ভূমি আপিল বোর্ডেরও এ ধরনের ভুল সংশোধনের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এগুলোর এতদিন কোন প্রয়োগ ছিল না। নতুন এ পরিপত্র জারির মধ্যে দিয়ে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।

তবে আবেদনের সঙ্গে যেসব কাগজপত্র জম দিতে পারেন, যেমন ১। সর্বশেষ নামজারি, সিএস, আরএস, এসএ, বিএস, খতিয়ানের সত্যায়িত ফটোকপি বা সার্টিফাইড কপি, ২। সংশ্লিষ্ট মৌজার এসএ ও বিএস মৌজা ম্যাপ, ৩। ওয়ারিশ সনদপত্র যদি প্রয়োজন হয়, তবে অনধিক ০৩ মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত হতে হবে। ৪। মূল দলিলের ফটোকপি/ সার্টিফাইড কপি ৫। সর্বশেষ জরিপের পর থেকে ভায়া/পিট দলিল ৬। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলাপত্র ৭। আদালতের রায়/আদেশ/ডিক্রি থাকলে সেগুলোর সার্টিফাইড কপি, ৯। বিএস জরিপের মাঠপর্চা, ডিপি খতিয়ান ইত্যাদি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, উক্ত পরিপত্রে রেকর্ড সংশোধনী বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও মাঠ পর্যায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসব মানছেন না। ফলে ভুক্তভোগীদের ভোগান্তি কমছে না।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

back to top