সিরাজ প্রামাণিক
জমির রেকর্ড সংশোধনীতে আর বিড়ম্বনা নয়। আপনি আইন আদালতে না গিয়ে, কোন প্রকার মোকদ্দমা ছাড়াই জমির রেকর্ড ও খতিয়ানে ভুল সংশোধন করে নিতে পারবেন। আপনি জমি কিনেছেন, জমির সঠিক দলিল আছে, যুগ যুগ ধরে জমি ভোগদখল করে আসছেন, কিন্তু জমির রেকর্ড ভু লবশত অন্য কারও নামে হয়ে আছে কিংবা কম রেকর্ড হয়েছে কিংবা জমির দাগ ভুল ভাবে রেকর্ড হয়েছে, কিংবা ১নং খাস খতিয়ানে কিংবা অর্পিত তালিকায় চলে গেছে কিংবা ম্যাপের সংগে রেকর্ডের ভুল হয়েছে। নো টেনশন। আপনি সহজেই আপনার জমির উপরোক্ত সমস্যাগুলো সমাধান করিয়ে নিতে পারবেন।
ভূমি মন্ত্রনালয় ২০২১ সালের ২৯ জুলাই পরিপত্র জারি করে বলেছেন, ভূমি জরিপের পর চূড়ান্তভাবে মুদ্রিত ও প্রকাশিত খতিয়ানের করণিক ভুল, প্রতারণামূলক লিখন এবং যথার্থ ভুল মাঠ পর্যায়েই সংশোধন তথা রেকর্ড সংশোধন করার জন্য এসিল্যান্ডরাই পারবেন। ভূমি জরিপের পর চূড়ান্তভাবে মুদ্রিত ও প্রকাশিত খতিয়ানের করণিক ভুল, প্রতারণামূলক লিখন এবং যথার্থ ভুলের বিভিন্ন সম্ভাব্য ধরণ বর্ণনা করা হয়েছে পরিপত্রে। এসব ভুল সংশোধনের পদ্ধতিও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
এছাড়া পরিপত্রে রেকর্ড সংশোধের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট আবেদনের সঙ্গে আবেদনকারীকে আবেদনের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কোর্ট ফি সংযুক্ত করতে হবে। অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করার সিস্টেম চালু হওয়ার কথাও পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। আবেদনের পর আবেদনটি একটি মিসকেস হিসেবে এন্ট্রি হবে। সংশ্লিষ্ট মিসকেসে রেকর্ড সংশোধনের আদেশ হওয়ার পর আবেদনকারীর কাছ থেকে নামজারি মামলার জন্য নির্ধারিত হারে নোটিশ জারি ফি, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি এবং খতিয়ান সরবরাহ ফি একত্রে ডিসিআর’র মাধ্যমে আদায় করে যথারীতি সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। তবে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ভুল সংশোধনের জন্য আবেদনে কোর্ট ফি কিংবা অন্যান্য ফি আদায় প্রযোজ্য হবে না বলে পরিপত্রে জানানো হয়েছে।
আইনের ব্যাখ্যাগুলোয় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তা বা সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্টেট অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড টেনান্সি অ্যাক্ট ১৯৫০’র ১৪৩ ধারামতে এবং প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫-এর বিধি ২৩(৩) অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ডের করণিক ভুল (ক্ল্যারিকাল মিসটেকস) যেমন-নামের ভুল, অংশ বসানোর হিসেবে ভুল, দাগসূচিতে ভুল, ম্যাপের সঙ্গে রেকর্ডের ভুল ইত্যাদি নিজেই সংশোধন করতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, স্টেট অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড টেনান্সি অ্যাক্ট ১৯৫০’র ১৪৯(৪) ধারামতে ভূমি প্রশাসন বোর্ড বোনাফাইড মিসটেক যেমন-জরিপকালে পিতার মৃত্যুর কারণে সন্তানদের নামে সম্পত্তি রেকর্ড হওয়ার কথা থাকলেও জরিপকারকদের ভুলে তা হয়নি- এমন ভুল সংশোধন করতে পারেন। আবার ভূমি আপিল বোর্ডেরও এ ধরনের ভুল সংশোধনের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এগুলোর এতদিন কোন প্রয়োগ ছিল না। নতুন এ পরিপত্র জারির মধ্যে দিয়ে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।
তবে আবেদনের সঙ্গে যেসব কাগজপত্র জম দিতে পারেন, যেমন ১। সর্বশেষ নামজারি, সিএস, আরএস, এসএ, বিএস, খতিয়ানের সত্যায়িত ফটোকপি বা সার্টিফাইড কপি, ২। সংশ্লিষ্ট মৌজার এসএ ও বিএস মৌজা ম্যাপ, ৩। ওয়ারিশ সনদপত্র যদি প্রয়োজন হয়, তবে অনধিক ০৩ মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত হতে হবে। ৪। মূল দলিলের ফটোকপি/ সার্টিফাইড কপি ৫। সর্বশেষ জরিপের পর থেকে ভায়া/পিট দলিল ৬। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলাপত্র ৭। আদালতের রায়/আদেশ/ডিক্রি থাকলে সেগুলোর সার্টিফাইড কপি, ৯। বিএস জরিপের মাঠপর্চা, ডিপি খতিয়ান ইত্যাদি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, উক্ত পরিপত্রে রেকর্ড সংশোধনী বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও মাঠ পর্যায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসব মানছেন না। ফলে ভুক্তভোগীদের ভোগান্তি কমছে না।
[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]
সিরাজ প্রামাণিক
শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫
জমির রেকর্ড সংশোধনীতে আর বিড়ম্বনা নয়। আপনি আইন আদালতে না গিয়ে, কোন প্রকার মোকদ্দমা ছাড়াই জমির রেকর্ড ও খতিয়ানে ভুল সংশোধন করে নিতে পারবেন। আপনি জমি কিনেছেন, জমির সঠিক দলিল আছে, যুগ যুগ ধরে জমি ভোগদখল করে আসছেন, কিন্তু জমির রেকর্ড ভু লবশত অন্য কারও নামে হয়ে আছে কিংবা কম রেকর্ড হয়েছে কিংবা জমির দাগ ভুল ভাবে রেকর্ড হয়েছে, কিংবা ১নং খাস খতিয়ানে কিংবা অর্পিত তালিকায় চলে গেছে কিংবা ম্যাপের সংগে রেকর্ডের ভুল হয়েছে। নো টেনশন। আপনি সহজেই আপনার জমির উপরোক্ত সমস্যাগুলো সমাধান করিয়ে নিতে পারবেন।
ভূমি মন্ত্রনালয় ২০২১ সালের ২৯ জুলাই পরিপত্র জারি করে বলেছেন, ভূমি জরিপের পর চূড়ান্তভাবে মুদ্রিত ও প্রকাশিত খতিয়ানের করণিক ভুল, প্রতারণামূলক লিখন এবং যথার্থ ভুল মাঠ পর্যায়েই সংশোধন তথা রেকর্ড সংশোধন করার জন্য এসিল্যান্ডরাই পারবেন। ভূমি জরিপের পর চূড়ান্তভাবে মুদ্রিত ও প্রকাশিত খতিয়ানের করণিক ভুল, প্রতারণামূলক লিখন এবং যথার্থ ভুলের বিভিন্ন সম্ভাব্য ধরণ বর্ণনা করা হয়েছে পরিপত্রে। এসব ভুল সংশোধনের পদ্ধতিও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
এছাড়া পরিপত্রে রেকর্ড সংশোধের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট আবেদনের সঙ্গে আবেদনকারীকে আবেদনের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কোর্ট ফি সংযুক্ত করতে হবে। অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করার সিস্টেম চালু হওয়ার কথাও পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। আবেদনের পর আবেদনটি একটি মিসকেস হিসেবে এন্ট্রি হবে। সংশ্লিষ্ট মিসকেসে রেকর্ড সংশোধনের আদেশ হওয়ার পর আবেদনকারীর কাছ থেকে নামজারি মামলার জন্য নির্ধারিত হারে নোটিশ জারি ফি, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি এবং খতিয়ান সরবরাহ ফি একত্রে ডিসিআর’র মাধ্যমে আদায় করে যথারীতি সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। তবে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ভুল সংশোধনের জন্য আবেদনে কোর্ট ফি কিংবা অন্যান্য ফি আদায় প্রযোজ্য হবে না বলে পরিপত্রে জানানো হয়েছে।
আইনের ব্যাখ্যাগুলোয় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তা বা সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্টেট অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড টেনান্সি অ্যাক্ট ১৯৫০’র ১৪৩ ধারামতে এবং প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫-এর বিধি ২৩(৩) অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ডের করণিক ভুল (ক্ল্যারিকাল মিসটেকস) যেমন-নামের ভুল, অংশ বসানোর হিসেবে ভুল, দাগসূচিতে ভুল, ম্যাপের সঙ্গে রেকর্ডের ভুল ইত্যাদি নিজেই সংশোধন করতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, স্টেট অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড টেনান্সি অ্যাক্ট ১৯৫০’র ১৪৯(৪) ধারামতে ভূমি প্রশাসন বোর্ড বোনাফাইড মিসটেক যেমন-জরিপকালে পিতার মৃত্যুর কারণে সন্তানদের নামে সম্পত্তি রেকর্ড হওয়ার কথা থাকলেও জরিপকারকদের ভুলে তা হয়নি- এমন ভুল সংশোধন করতে পারেন। আবার ভূমি আপিল বোর্ডেরও এ ধরনের ভুল সংশোধনের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এগুলোর এতদিন কোন প্রয়োগ ছিল না। নতুন এ পরিপত্র জারির মধ্যে দিয়ে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।
তবে আবেদনের সঙ্গে যেসব কাগজপত্র জম দিতে পারেন, যেমন ১। সর্বশেষ নামজারি, সিএস, আরএস, এসএ, বিএস, খতিয়ানের সত্যায়িত ফটোকপি বা সার্টিফাইড কপি, ২। সংশ্লিষ্ট মৌজার এসএ ও বিএস মৌজা ম্যাপ, ৩। ওয়ারিশ সনদপত্র যদি প্রয়োজন হয়, তবে অনধিক ০৩ মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত হতে হবে। ৪। মূল দলিলের ফটোকপি/ সার্টিফাইড কপি ৫। সর্বশেষ জরিপের পর থেকে ভায়া/পিট দলিল ৬। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলাপত্র ৭। আদালতের রায়/আদেশ/ডিক্রি থাকলে সেগুলোর সার্টিফাইড কপি, ৯। বিএস জরিপের মাঠপর্চা, ডিপি খতিয়ান ইত্যাদি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, উক্ত পরিপত্রে রেকর্ড সংশোধনী বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও মাঠ পর্যায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসব মানছেন না। ফলে ভুক্তভোগীদের ভোগান্তি কমছে না।
[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]