আনোয়ারুল হক
সংবিধান হলো একটি দেশের সর্বোচ্চ আইন বা সুপ্রিম ল’। সংবিধান সরকারের গঠন, ক্ষমতা, জনগণের অধিকার এবং সরকারের সাথে জনগণের সম্পর্ককে নির্ধারণ করে। সংবিধানকে একটি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং সংবিধানে উল্লেখিত আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানে ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ নামক কোনো সরকারের অনুমোদন না থাকায় ২০২৪-এর ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানোত্তর পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনকল্পে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়ে রেফারেন্স প্রেরণ করেন। সুপ্রিম কোর্টের মতামতে বলা হয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার নিমিত্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা নিযুক্ত করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি ওইরূপ নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করাতে পারবেন। তবে ইতিপূর্বে আপিল বিভাগের দুই রায়ে বলা আছে, “কোনো কিছুর দোহাই দিয়ে যা অসাংবিধানিক, তাকে সাংবিধানিক বলা যাবে না।"
যাই হোক এক বিশেষ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ও তার উপদেষ্টাদের শপথ পড়িয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের মতামত অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ঐ সরকার রাষ্ট্রের দৈনন্দিন নির্বাহী কাজ পরিচালনা করবে।এর বাইরে কোনো সনদ রচনা করে তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির এখতিয়ার কি অন্তর্বর্তী সরকারের আছে?
গনঅভ্যুত্থানোত্তর পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র পূনর্গঠনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার কর্মসূচি প্রস্তাবনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করলে এলিট সোসাইটি ও শহুরে মানুষের সমর্থন পায়। রাজনৈতিক দলগুলোও ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠকে বসে। রাজনৈতিক দলসমূহ অনেক বিষয়ে ঐক্যমতে এসেছে আবার অনেক বিষয়ে বিশেষত সংবিধানে কোন কিছু যোজন-বিয়োজনের ক্ষেত্রে গুরুতর দ্বিমত আছে। প্রশ্ন হলো সকল রাজনৈতিক দল একমত হলেও বা ঐকমত্যের ভিত্তিতে কোনো সনদে স্বাক্ষর করলেও তা কি সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির জন্য বা সংবিধানে কোনো সংশোধনী আনার জন্য বৈধ হয়? ভোটের রায় ছাড়া সকল দল মিলিতভাবেও সকল জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব করে না।
সংবিধানে কোনো নতুন অন্তর্ভুক্তি বা সংশোধন করতে হলে নির্বাচিত পার্লামেন্টকেই তা করতে হবে। তাই সরকারের ঐকমত্যের কমিশন সর্বসম্মত বা দ্বিমত, ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্টসহ যে সনদ বা সংস্কার কর্মসূচি তৈরি করেছেন তার মধ্যে সংবিধানসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি প্রস্তাবাকারে ভবিষ্যৎ জনপ্রতিনিধিদের বিবেচনার জন্য রেখে যেতে পারেন। এর বাইরে ভিন্ন কিছু করা এই সরকারের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিমূলক কোনো দলিলকেও ‘জনগণের ইচ্ছার একটি সুস্পষ্ট ও সর্বোচ্চ প্রকাশ’ হিসেবে গণ্য করা যায় না।
২০২৪ - এর জুলাই মাস জুড়ে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-ছাত্রীদের বীরত্বগাথা, সরকারি-বেসরকারি বাহিনীর গুলি ও হামলায় অগণিত মৃত্যু, আহতের আর্তনাদ, স্বজনহারা পরিবারের মানুষগুলোর আহাজারি গোটা জাতির বিবেককে স্পর্ষ করে। মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে দেশে-বিদেশে অগ্রহণযোগ্য তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে এক দীর্ঘ সময় জবরদস্তিমূলক ক্ষমতা আঁকড়ে রাখায় শেখ হাসিনার সরকারের জনবিচ্ছিন্নতা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে এবং নাগরিক সমাজ ও ছাত্রদের এক দফার সমর্থনে এক পর্যায়ে রাজনৈতিক দলসমূহ ও জনসাধারণ রাস্তায় নেমে আসে। সামরিক বাহিনী জনসাধারণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে তাদের অনাগ্রহ ও আপত্তি প্রকাশ করলে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং দেশত্যাগ করেন। ক্ষমতায় আসীন হয় প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এক অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং সর্বপর্যায়ে যে সীমাহীন বৈষম্য, লুন্ঠন, অবিচার, নিপীড়ন তার বিপরীতে এক বৈষম্যমুক্ত সমাজের আকুতির বিমূর্ত প্রকাশ আন্দোলনে শামিল ছাত্র-জনতার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু সে ধরনের কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তনের রাজনৈতিক সামাজিক শক্তি এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়নি। বরং রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে কখনো দমনমূলক এবং কখনো আপসমূলকভাবে মোকাবেলা করা শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামোর এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির উত্থান ঘটে। ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের এবং পরবর্তীতে তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতাকে তারা প্রভাবিত করতে সক্ষম হন। অন্তর্বর্তী সরকার ও স্টাবলিশমেন্টের একাংশের প্রচ্ছন্ন সমর্থন অর্জনেও তারা সফল হন।
এ ধরনের এক জটিল পরিস্থিতিতে দেশের গণতান্ত্রিক পূনর্গঠনের লক্ষ্যে অবাধ নিরপেক্ষ অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে এড়িয়ে তারা নানা ধরনের সংবিধান পরিপন্থী দাবি উত্থাপন করছেন। বক্তব্য-বিবৃতিতে একটা কৌশলী লিবারেল ভাবমূর্তি রেখে কার্যত দেশকে ধর্মীয় ভিত্তিতে পুনর্গঠন করার লক্ষ্য নিয়েই তারা অগ্রসর হচ্ছেন। তরুণদের রাজনৈতিক দলও ‘জনআকাক্সক্ষা বা অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা’ বলে অনেকটা একই ধরনের দাবি উত্থাপন করছে। তাদের দাবিসমূহ যদি জনআকাক্সক্ষাই হয়ে থাকে তবে এসব কর্মসূচি তাদের মেনিফেস্টোতে অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানসম্মত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায় নিয়ে তা কার্যকর করতে তাদের ভয় কিসের? বহুপক্ষের অংশগ্রহণে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন সেখানে সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে চাইলে সমাজ ও রাষ্ট্রে বিভাজন আরো বাড়বে। দেশ আরো অস্থিতিশীলতার দিকে যাবে। নিজস্ব রাজনৈতিক আকাক্সক্ষা অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে চাইলে বড় ধরনের ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। দেশের ভাগ্য ব্যালটের মাধ্যমে নির্ধারণের পন্থা অবলম্বন করেই বর্তমান সংকট থেকে আপাত উত্তরণ সম্ভব।
অযৌক্তিক দাবি উত্থাপন করে নির্বাচনকে অনিশ্চিত করতে চাওয়ার প্রধান কারণ হলো জামায়াত, হেফাজত, চর মোনাই, এনসিপি, এবিসিডি পার্টির অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে যে ক্ষমতায়ন হয়েছে এবং তারা যে রাজনৈতিক দাপট প্রদর্শন করছেন নির্বাচিত সরকার আসলে তা অন্তত এই পর্যায়ে থাকবে না। তাই তারা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচন ছাড়াই তো বেশ ভাল চলছে। নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ক্ষমতার এমন দাপট থাকবে না। প্রশাসনের উপর ছড়ি ঘোরানো যাবে না। তাই তাদের ‘দু’নয়নে ভয় আছে, মনে সংশয় আছে ....‘ যে, তখন তো আর ‘যখন চাহে এ মন যা’ এমন কিছু করা যাবে না । তাই ‘এই বেশ ভাল আছি!’
তবে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো নির্মাণের প্রয়োজনে বিচার বিভাগসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্বাহী বিভাগের আজ্ঞাবহ অবস্থা থেকে মুক্ত করে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা, সাংবিধানিক পদাধিকারীগণের জন্য স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, প্রধানমন্ত্রীর হাতে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা কমানো ও রাষ্ট্রপতির পদকে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর আজ্ঞাবহ অবস্থা থেকে বের করে আনা, রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়ন ও পরিবারতন্ত্রের অবসানে প্রয়োজনীয় সংস্কারের আকাক্সক্ষা বিমূর্তভাবে হলেও মানুষের মাঝে রয়েছে। নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি তো দীর্ঘদিনের। সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে যে অগণতান্ত্রিক বিধানসমূহ যুক্ত করা হয়েছে তা সংশোধন করা, রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সংবিধানে এমন সংযোজনীকে বাতিল করা, আদিবাসীসহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ নানাবিধ সংস্কারকাজ সামনের দিনগুলোতে রয়েছে।
তবে বর্তমানে ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার নিয়ে বাহাসের আড়ালে চলছে শুধুমাত্র ভোটের অঙ্ক ও ক্ষমতার অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্রকে আরো ধর্মভিত্তিক করার লক্ষ্যে উগ্রবাদী ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর বিরামহীন প্রচেষ্টা। তাইতো এত শত শত সংস্কারের প্রস্তাব আসছে, অথচ নারী আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে সরাসরি নির্বাচনের জন্য নারী সমাজের যে প্রত্যাশা সংস্কার আলোচনার চ্যাম্পিয়নরা সে বিষয়ে কোনো গুরুত্বই দিলেন না। অথচ সংস্কারের নামে নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে তারা হঠাৎ করে যুগপৎ কর্মসূচির নামে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছেন। মবতন্ত্রের কাছে কাবু সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে তারা কার্যত তাদের এজেন্ডা চাপিয়ে দিতে চান।
এক বছর আগে সংস্কার নিয়ে যে আগ্রহ অন্তত শহুরে মানুষের মধ্যে দেখা গিয়েছিল তা আজ আর নেই। যে সরকার এক বছরেরও অধিক সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারলো না, যে সরকার নূন্যতম আইনের শাসন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলো না Ñ বরং মবতন্ত্রের হাতে বন্দী, সেই সরকারের কন্ঠে সংস্কারের আওয়াজ এখন মানুষের কাছে বড়ই বেমানান লাগছে। মানুষ তো সব দেখছে। হাসিনা আমলে বিচার ব্যবস্থাকে যেভাবে নির্বাহী আদেশে পরিচালনা করা হতো এখনো ঠিক সেভাবেই চলছে। মানুষ কিন্তু আইনের শাসন ও সুবিচার আছে কিনা, বাকস্বাধীনতা আছে কিনা এটা দেখেই একটা সরকারকে প্রাথমিক মূল্যায়ন করে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা থাকে, অন্যথায় তা কর্তৃত্ববাদে পরিণত হয় Ñ যা মানুষ আগেও দেখেছে, এখনো দেখছে।
এক সময়ে গণঅধিকার পরিষদের নেতা নূরুল হক নূর অন্তর্বর্তী সরকারকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘আধমরা সরকার’ হিসাবে। যে সরকারের আমলে ভয়ংকর মব সংস্কৃতির চাষাবাদ চলছে, কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে, যে সরকারের আমলে নির্বিঘেœ দেশের শতাধিক মাজার, সুফি সমাধি, দরগাহ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দিরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট হলো এমনকি নূরুল হক নূরকে মেরে আধমরা করে ফেলা হলো সে সরকারকে আধমরা সরকার ছাড়া আর কীই বা বলা যায়! যে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে এ সরকার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তা আজ আর নেই। জনজীবনে স্বস্তি নেই। সকল ক্ষেত্রে এক অনিশ্চয়তা। আর অনিশ্চয়তার কারণেই অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং জীবন-জীবিকায় একধরনের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত তৈরি হচ্ছে। অনিশ্চয়তার অবসানই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সে কারণে নানা দাবির আড়ালে নির্বাচনকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাওয়ার শক্তির তৎপরতা খুবই দৃশ্যমান।
তবে এটাও ঠিক ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবসমূহ রাজনীতির মাঠে থাকবে। সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন যৌক্তিক বিষয়গুলোয় যতটুকুতে ঐক্যমত আছে তা এখনই কার্যকরও করা যেতে পারে। আর গণতন্ত্রে উত্তরণ পর্ব সফল হলে ভবিষ্যতে সংবিধান সংশোধন বা সংস্কার সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ই হয়তোবা বিবেচনায় নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। সংবিধানের সংশোধন, সংযোজন ও গণতান্ত্রিক রূপ দিতে পারেন জনগনের ম্যানডেট নিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। অর্থাৎ সংবিধানের কাঠামোতে থেকেই সংবিধানের সংশোধন ও সংস্কার করতে হবে। রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাপন বা কোনো ফরমান বলে বা কোনো ছিদ্রপথের মাধ্যমে সংবিধানের পরিবর্তন করলে তা ক্ষমতার অপব্যবহার হবে। অতীতে একমাত্র সামরিক শাসকেরাই সংবিধান বা সংবিধানের কিছু ধারা স্থগিত করে এ ধরনের ফরমান জারি করেছিলেন - যা পরবর্তীতে আদালত এবং সংসদেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। রাষ্ট্র ক্ষমতা হাতে থাকলে ইচ্ছামতো করলে তো যা ইচ্ছা তা করা যায়। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন শত আলোচনা-সমালোচনা থাকার পরও বিদ্যমান সংবিধানের অধীনেই সরকার শপথ নিয়েছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা একেবারেই উচিত হবে না যাতে সরকারের ক্ষমতার বিস্তৃতি কতদূর পর্যন্ত বা ঐকমত্য কমিশনের বৈধতা কতটুকু Ñ এসব প্রশ্ন কেউ উত্থাপন করতে পারে।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
[লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা]
আনোয়ারুল হক
শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবিধান হলো একটি দেশের সর্বোচ্চ আইন বা সুপ্রিম ল’। সংবিধান সরকারের গঠন, ক্ষমতা, জনগণের অধিকার এবং সরকারের সাথে জনগণের সম্পর্ককে নির্ধারণ করে। সংবিধানকে একটি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং সংবিধানে উল্লেখিত আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানে ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ নামক কোনো সরকারের অনুমোদন না থাকায় ২০২৪-এর ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানোত্তর পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনকল্পে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়ে রেফারেন্স প্রেরণ করেন। সুপ্রিম কোর্টের মতামতে বলা হয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার নিমিত্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা নিযুক্ত করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি ওইরূপ নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করাতে পারবেন। তবে ইতিপূর্বে আপিল বিভাগের দুই রায়ে বলা আছে, “কোনো কিছুর দোহাই দিয়ে যা অসাংবিধানিক, তাকে সাংবিধানিক বলা যাবে না।"
যাই হোক এক বিশেষ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ও তার উপদেষ্টাদের শপথ পড়িয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের মতামত অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ঐ সরকার রাষ্ট্রের দৈনন্দিন নির্বাহী কাজ পরিচালনা করবে।এর বাইরে কোনো সনদ রচনা করে তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির এখতিয়ার কি অন্তর্বর্তী সরকারের আছে?
গনঅভ্যুত্থানোত্তর পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র পূনর্গঠনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার কর্মসূচি প্রস্তাবনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করলে এলিট সোসাইটি ও শহুরে মানুষের সমর্থন পায়। রাজনৈতিক দলগুলোও ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠকে বসে। রাজনৈতিক দলসমূহ অনেক বিষয়ে ঐক্যমতে এসেছে আবার অনেক বিষয়ে বিশেষত সংবিধানে কোন কিছু যোজন-বিয়োজনের ক্ষেত্রে গুরুতর দ্বিমত আছে। প্রশ্ন হলো সকল রাজনৈতিক দল একমত হলেও বা ঐকমত্যের ভিত্তিতে কোনো সনদে স্বাক্ষর করলেও তা কি সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির জন্য বা সংবিধানে কোনো সংশোধনী আনার জন্য বৈধ হয়? ভোটের রায় ছাড়া সকল দল মিলিতভাবেও সকল জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব করে না।
সংবিধানে কোনো নতুন অন্তর্ভুক্তি বা সংশোধন করতে হলে নির্বাচিত পার্লামেন্টকেই তা করতে হবে। তাই সরকারের ঐকমত্যের কমিশন সর্বসম্মত বা দ্বিমত, ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্টসহ যে সনদ বা সংস্কার কর্মসূচি তৈরি করেছেন তার মধ্যে সংবিধানসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি প্রস্তাবাকারে ভবিষ্যৎ জনপ্রতিনিধিদের বিবেচনার জন্য রেখে যেতে পারেন। এর বাইরে ভিন্ন কিছু করা এই সরকারের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিমূলক কোনো দলিলকেও ‘জনগণের ইচ্ছার একটি সুস্পষ্ট ও সর্বোচ্চ প্রকাশ’ হিসেবে গণ্য করা যায় না।
২০২৪ - এর জুলাই মাস জুড়ে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-ছাত্রীদের বীরত্বগাথা, সরকারি-বেসরকারি বাহিনীর গুলি ও হামলায় অগণিত মৃত্যু, আহতের আর্তনাদ, স্বজনহারা পরিবারের মানুষগুলোর আহাজারি গোটা জাতির বিবেককে স্পর্ষ করে। মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে দেশে-বিদেশে অগ্রহণযোগ্য তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে এক দীর্ঘ সময় জবরদস্তিমূলক ক্ষমতা আঁকড়ে রাখায় শেখ হাসিনার সরকারের জনবিচ্ছিন্নতা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে এবং নাগরিক সমাজ ও ছাত্রদের এক দফার সমর্থনে এক পর্যায়ে রাজনৈতিক দলসমূহ ও জনসাধারণ রাস্তায় নেমে আসে। সামরিক বাহিনী জনসাধারণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে তাদের অনাগ্রহ ও আপত্তি প্রকাশ করলে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং দেশত্যাগ করেন। ক্ষমতায় আসীন হয় প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এক অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং সর্বপর্যায়ে যে সীমাহীন বৈষম্য, লুন্ঠন, অবিচার, নিপীড়ন তার বিপরীতে এক বৈষম্যমুক্ত সমাজের আকুতির বিমূর্ত প্রকাশ আন্দোলনে শামিল ছাত্র-জনতার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু সে ধরনের কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তনের রাজনৈতিক সামাজিক শক্তি এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়নি। বরং রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে কখনো দমনমূলক এবং কখনো আপসমূলকভাবে মোকাবেলা করা শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামোর এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির উত্থান ঘটে। ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের এবং পরবর্তীতে তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতাকে তারা প্রভাবিত করতে সক্ষম হন। অন্তর্বর্তী সরকার ও স্টাবলিশমেন্টের একাংশের প্রচ্ছন্ন সমর্থন অর্জনেও তারা সফল হন।
এ ধরনের এক জটিল পরিস্থিতিতে দেশের গণতান্ত্রিক পূনর্গঠনের লক্ষ্যে অবাধ নিরপেক্ষ অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে এড়িয়ে তারা নানা ধরনের সংবিধান পরিপন্থী দাবি উত্থাপন করছেন। বক্তব্য-বিবৃতিতে একটা কৌশলী লিবারেল ভাবমূর্তি রেখে কার্যত দেশকে ধর্মীয় ভিত্তিতে পুনর্গঠন করার লক্ষ্য নিয়েই তারা অগ্রসর হচ্ছেন। তরুণদের রাজনৈতিক দলও ‘জনআকাক্সক্ষা বা অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা’ বলে অনেকটা একই ধরনের দাবি উত্থাপন করছে। তাদের দাবিসমূহ যদি জনআকাক্সক্ষাই হয়ে থাকে তবে এসব কর্মসূচি তাদের মেনিফেস্টোতে অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানসম্মত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায় নিয়ে তা কার্যকর করতে তাদের ভয় কিসের? বহুপক্ষের অংশগ্রহণে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন সেখানে সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে চাইলে সমাজ ও রাষ্ট্রে বিভাজন আরো বাড়বে। দেশ আরো অস্থিতিশীলতার দিকে যাবে। নিজস্ব রাজনৈতিক আকাক্সক্ষা অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে চাইলে বড় ধরনের ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। দেশের ভাগ্য ব্যালটের মাধ্যমে নির্ধারণের পন্থা অবলম্বন করেই বর্তমান সংকট থেকে আপাত উত্তরণ সম্ভব।
অযৌক্তিক দাবি উত্থাপন করে নির্বাচনকে অনিশ্চিত করতে চাওয়ার প্রধান কারণ হলো জামায়াত, হেফাজত, চর মোনাই, এনসিপি, এবিসিডি পার্টির অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে যে ক্ষমতায়ন হয়েছে এবং তারা যে রাজনৈতিক দাপট প্রদর্শন করছেন নির্বাচিত সরকার আসলে তা অন্তত এই পর্যায়ে থাকবে না। তাই তারা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচন ছাড়াই তো বেশ ভাল চলছে। নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ক্ষমতার এমন দাপট থাকবে না। প্রশাসনের উপর ছড়ি ঘোরানো যাবে না। তাই তাদের ‘দু’নয়নে ভয় আছে, মনে সংশয় আছে ....‘ যে, তখন তো আর ‘যখন চাহে এ মন যা’ এমন কিছু করা যাবে না । তাই ‘এই বেশ ভাল আছি!’
তবে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো নির্মাণের প্রয়োজনে বিচার বিভাগসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্বাহী বিভাগের আজ্ঞাবহ অবস্থা থেকে মুক্ত করে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা, সাংবিধানিক পদাধিকারীগণের জন্য স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, প্রধানমন্ত্রীর হাতে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা কমানো ও রাষ্ট্রপতির পদকে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর আজ্ঞাবহ অবস্থা থেকে বের করে আনা, রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়ন ও পরিবারতন্ত্রের অবসানে প্রয়োজনীয় সংস্কারের আকাক্সক্ষা বিমূর্তভাবে হলেও মানুষের মাঝে রয়েছে। নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি তো দীর্ঘদিনের। সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে যে অগণতান্ত্রিক বিধানসমূহ যুক্ত করা হয়েছে তা সংশোধন করা, রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সংবিধানে এমন সংযোজনীকে বাতিল করা, আদিবাসীসহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ নানাবিধ সংস্কারকাজ সামনের দিনগুলোতে রয়েছে।
তবে বর্তমানে ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার নিয়ে বাহাসের আড়ালে চলছে শুধুমাত্র ভোটের অঙ্ক ও ক্ষমতার অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্রকে আরো ধর্মভিত্তিক করার লক্ষ্যে উগ্রবাদী ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর বিরামহীন প্রচেষ্টা। তাইতো এত শত শত সংস্কারের প্রস্তাব আসছে, অথচ নারী আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে সরাসরি নির্বাচনের জন্য নারী সমাজের যে প্রত্যাশা সংস্কার আলোচনার চ্যাম্পিয়নরা সে বিষয়ে কোনো গুরুত্বই দিলেন না। অথচ সংস্কারের নামে নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে তারা হঠাৎ করে যুগপৎ কর্মসূচির নামে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছেন। মবতন্ত্রের কাছে কাবু সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে তারা কার্যত তাদের এজেন্ডা চাপিয়ে দিতে চান।
এক বছর আগে সংস্কার নিয়ে যে আগ্রহ অন্তত শহুরে মানুষের মধ্যে দেখা গিয়েছিল তা আজ আর নেই। যে সরকার এক বছরেরও অধিক সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারলো না, যে সরকার নূন্যতম আইনের শাসন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলো না Ñ বরং মবতন্ত্রের হাতে বন্দী, সেই সরকারের কন্ঠে সংস্কারের আওয়াজ এখন মানুষের কাছে বড়ই বেমানান লাগছে। মানুষ তো সব দেখছে। হাসিনা আমলে বিচার ব্যবস্থাকে যেভাবে নির্বাহী আদেশে পরিচালনা করা হতো এখনো ঠিক সেভাবেই চলছে। মানুষ কিন্তু আইনের শাসন ও সুবিচার আছে কিনা, বাকস্বাধীনতা আছে কিনা এটা দেখেই একটা সরকারকে প্রাথমিক মূল্যায়ন করে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা থাকে, অন্যথায় তা কর্তৃত্ববাদে পরিণত হয় Ñ যা মানুষ আগেও দেখেছে, এখনো দেখছে।
এক সময়ে গণঅধিকার পরিষদের নেতা নূরুল হক নূর অন্তর্বর্তী সরকারকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘আধমরা সরকার’ হিসাবে। যে সরকারের আমলে ভয়ংকর মব সংস্কৃতির চাষাবাদ চলছে, কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে, যে সরকারের আমলে নির্বিঘেœ দেশের শতাধিক মাজার, সুফি সমাধি, দরগাহ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দিরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট হলো এমনকি নূরুল হক নূরকে মেরে আধমরা করে ফেলা হলো সে সরকারকে আধমরা সরকার ছাড়া আর কীই বা বলা যায়! যে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে এ সরকার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তা আজ আর নেই। জনজীবনে স্বস্তি নেই। সকল ক্ষেত্রে এক অনিশ্চয়তা। আর অনিশ্চয়তার কারণেই অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং জীবন-জীবিকায় একধরনের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত তৈরি হচ্ছে। অনিশ্চয়তার অবসানই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সে কারণে নানা দাবির আড়ালে নির্বাচনকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাওয়ার শক্তির তৎপরতা খুবই দৃশ্যমান।
তবে এটাও ঠিক ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবসমূহ রাজনীতির মাঠে থাকবে। সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন যৌক্তিক বিষয়গুলোয় যতটুকুতে ঐক্যমত আছে তা এখনই কার্যকরও করা যেতে পারে। আর গণতন্ত্রে উত্তরণ পর্ব সফল হলে ভবিষ্যতে সংবিধান সংশোধন বা সংস্কার সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ই হয়তোবা বিবেচনায় নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। সংবিধানের সংশোধন, সংযোজন ও গণতান্ত্রিক রূপ দিতে পারেন জনগনের ম্যানডেট নিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। অর্থাৎ সংবিধানের কাঠামোতে থেকেই সংবিধানের সংশোধন ও সংস্কার করতে হবে। রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাপন বা কোনো ফরমান বলে বা কোনো ছিদ্রপথের মাধ্যমে সংবিধানের পরিবর্তন করলে তা ক্ষমতার অপব্যবহার হবে। অতীতে একমাত্র সামরিক শাসকেরাই সংবিধান বা সংবিধানের কিছু ধারা স্থগিত করে এ ধরনের ফরমান জারি করেছিলেন - যা পরবর্তীতে আদালত এবং সংসদেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। রাষ্ট্র ক্ষমতা হাতে থাকলে ইচ্ছামতো করলে তো যা ইচ্ছা তা করা যায়। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন শত আলোচনা-সমালোচনা থাকার পরও বিদ্যমান সংবিধানের অধীনেই সরকার শপথ নিয়েছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা একেবারেই উচিত হবে না যাতে সরকারের ক্ষমতার বিস্তৃতি কতদূর পর্যন্ত বা ঐকমত্য কমিশনের বৈধতা কতটুকু Ñ এসব প্রশ্ন কেউ উত্থাপন করতে পারে।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
[লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা]