alt

opinion » post-editorial

সার সংকট, ভর্তুকি ও সিন্ডিকেট

মিহির কুমার রায়

: শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে সারের মোট চাহিদার বড় একটি অংশই আমদানি নির্ভর। দেশের কারখানাগুলোয় উৎপাদিত কিছু ইউরিয়া সার ছাড়া প্রায় সবই আমদানি করতে হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে দেশে রাসায়নিক সারের চাহিদা প্রায় ৭০ লাখ টন, যার প্রায় ৮০ শতাংশই আমদানির ওপর নির্ভরশীল। তবে কৃষি মন্ত্রণালয় দাবি করছেÑ দেশে সারের কোনো সংকট নেই। তাদের বক্তব্য, প্রতিবছর চাহিদা বেড়ে গেলে অতিরিক্ত লাভের আশায় একটি মহল কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করে। বাস্তবে প্রতিটি এলাকায় চাহিদার ভিত্তিতে আগেভাগেই সরবরাহ নিশ্চিত করা থাকে। তাই সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক থাকলে সারের ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।

কিন্তু কৃষকের অভিযোগ ভিন্ন। সরবরাহ না থাকা বা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দিয়ে কিনতে বাধ্য হওয়ার নানা অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যেই সার কারখানায় গ্যাসের দাম দেড়শ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব সরাসরি কৃষক ও বাজারের ওপর পড়তে পারে। তবে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জানিয়েছে, তারা এ গণশুনানিকে ‘লোক দেখানো’ হিসেবে মনে করে এতে অংশ নেবে না।

অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ মনে করেন, গ্যাসের দাম বাড়লে সারের দামও বাড়বে এবং এর প্রভাব খাদ্যদ্রব্যের বাজারে পড়বে। কৃষি উপকরণের খরচ বাড়লে উৎপাদন ব্যয়ও স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। তাই এই প্রভাব নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে সাধারণ মানুষকেই বাড়তি বোঝা বহন করতে হবে। সরকার যদি ভর্তুকি কমিয়ে আনে, তাহলে কৃষকদের পক্ষে বাড়তি খরচ সামলানো কঠিন হবে।

এমন প্রেক্ষাপটে কৃষকেরা সার পেতে চরম ভোগান্তির শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। বিশেষ করে ইউরিয়া, ডিএপি ও টিএসপি সারের জন্য অনেককে ডিলার পয়েন্টে ঘুরেও শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে এমনকি সারের দাবিতে কৃষকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। স্থানীয় কৃষক আবেদ আলী সরদার জানিয়েছেন, টানা তিনদিন ঘুরে শেষমেশ বাড়তি দামে সার কিনতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। রাজবাড়ীর আকুর ম-লও বলেছেন, বস্তাপ্রতি পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনতে হয়েছে। একই অভিযোগ করেছেন পিরোজপুরের কৃষক রাজন মিয়াও।

কৃষকের অভিযোগÑ ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। ফলে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

তবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলছেন, কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়লেই যে সারের দাম অটোমেটিকভাবে বাড়বেÑ এ কথা সঠিক নয়। সেক্ষেত্রে সরকার চাইলে ভর্তুকি বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব যতটা দেওয়া হয়েছে, তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তবে সরকারের উচিত আগেভাগে পরিকল্পনা নেওয়াÑ ভর্তুকি বাড়ানো বা অন্য কোনো ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া।

সারের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি, অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, আমদানি করা সার বন্দর থেকে সরকারি গুদামে পৌঁছানো পর্যন্ত পরিবহন ঠিকাদারের নিয়ন্ত্রণ থাকে। পরিবহন চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সার পৌঁছানোর কথা থাকলেও তা মানা হয় না। ফলে নানা অনিয়মের সুযোগ তৈরি হয়।

বর্তমান সরকার এই অনিয়ম ঠেকাতে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে সিন্ডিকেট ভাঙার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক দরপত্রে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়, যার মধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়। এতে সর্বনিম্ন দরদাতার চেয়েও কম দামে সার আমদানির সুযোগ তৈরি হয়, যার ফলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ২৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকার সাশ্রয় হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে এই দরপ্রক্রিয়া নিয়ে ডিলারদের মধ্যে বিরোধও তৈরি হয়েছে।

এছাড়া আগে বিএডিসি ও বিসিআইসি ডিলার আলাদাভাবে ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া সার বিতরণ করত, ফলে কৃষকদের ভোগান্তি হতো। নতুন নীতিমালায় সব ডিলারকে সরকারি সার ডিলার হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এক জায়গা থেকেই সব ধরনের সার পাওয়া যাবে।

নতুন নীতিমালায় কৃষকের খরচ কমানো এবং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। অনিয়মে জড়িত ডিলারের লাইসেন্স বাতিলের মতো কঠোর পদক্ষেপও নেওয়া হবে। পাশাপাশি আমদানির ক্ষেত্রে এখন থেকে কেবল সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়ার নিয়ম কঠোরভাবে মানা হবে। এর ফলে সার আমদানিতে সরকারের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।

ডিলার সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকার ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এখন থেকে বাজারদর যাচাই করে সর্বনিম্ন হার সরকার নির্ধারণ করবে। সেই ভিত্তিতে ডিলারদের দরপত্র দিতে হবে। এর ফলে সরকারের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে এবং কারসাজির সুযোগ কমে যাবে।

[লেখক: সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা]

দায়িত্বশীল আচরণে গড়ে উঠুক দেশের পর্যটন খাত

এশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নতুন সমীকরণ

বাংলাদেশের গিগ অর্থনীতি: উন্নয়নের হাতিয়ার নাকি অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ?

জলাতঙ্ক: প্রতিরোধযোগ্য তবু প্রাণঘাতী

বেড়ে চলা বৈষম্যের দেওয়াল

নৃশংসতার ভিডিও, নীরব দর্শক আর হারিয়ে যাওয়া মানবতা

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ও জনস্বাস্থ্যের সংকট

জেন জি’র অস্থির অভিযাত্রা

রম্যগদ্য: রবার্ট ব্রুস ও মাকড়শা

জাতিসংঘের নিউইয়র্ক সম্মেলন

বিশ্ব ফুসফুস দিবস: সুস্থ শ্বাসের অঙ্গীকার

সংখ্যার আড়ালে অর্থনীতির অদেখা বাস্তবতা

সঙ্গীত চর্চা ও ধর্ম শিক্ষা: তর্ক-বিতর্কের জায়গাটি কোথায়?

অপুষ্টি ও মাটির অবক্ষয় রোধে সবুজ সার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহাল বিতর্ক

আইসিইউ সেবার সংকট

পরশ্রীকাতরতা: সামাজিক ব্যাধির অদৃশ্য শেকল

চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড: ট্রাম্প কি সহিংসতাকেই রাজনীতির হাতিয়ার বানাচ্ছেন?

যুব বেকারত্ব: অর্থনৈতিক সংকট থেকে সামাজিক বিপর্যয়

চাই স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের পরিবেশ

দ. কোরিয়ার শ্রমবাজার : কোটা পূরণে ব্যর্থ বাংলাদেশ

ভারতের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বনাম আমেরিকার শুল্ক কূটনীতি

সংবিধান কাটাছেঁড়ার সুযোগ আছে কি?

সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব

চা-জনগোষ্ঠীর দণ্ডপূজা ও উপেক্ষিত অধিকার

মেরিটোক্রেসি: সমাজ ও রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা

রম্যগদ্য: হাতের মুঠোয় বিশ্ব

শারদীয় পূজার দিনলিপি

ঋণের জন্য আত্মহত্যা, ঋণ নিয়েই চল্লিশা

জাকসু নির্বাচন ও হট্টগোল: আমাদের জন্য শিক্ষণীয় কী?

নরসুন্দর পেশার গুরুত্ব ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন

বিভাগভিত্তিক এমপিআর নির্বাচন পদ্ধতি

প্ল্যাটফর্ম সমাজে বাংলাদেশ: জ্ঞানের ভবিষ্যৎ কার হাতে?

আনন্দবেদনার হাসপাতাল: সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ছবি

ভিন্ন ধরনের নির্বাচন, ভিন্ন ধরনের ফল

বেসরকারি খাতে সিআইবি’র যাত্রা: ঋণ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত

tab

opinion » post-editorial

সার সংকট, ভর্তুকি ও সিন্ডিকেট

মিহির কুমার রায়

শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে সারের মোট চাহিদার বড় একটি অংশই আমদানি নির্ভর। দেশের কারখানাগুলোয় উৎপাদিত কিছু ইউরিয়া সার ছাড়া প্রায় সবই আমদানি করতে হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে দেশে রাসায়নিক সারের চাহিদা প্রায় ৭০ লাখ টন, যার প্রায় ৮০ শতাংশই আমদানির ওপর নির্ভরশীল। তবে কৃষি মন্ত্রণালয় দাবি করছেÑ দেশে সারের কোনো সংকট নেই। তাদের বক্তব্য, প্রতিবছর চাহিদা বেড়ে গেলে অতিরিক্ত লাভের আশায় একটি মহল কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করে। বাস্তবে প্রতিটি এলাকায় চাহিদার ভিত্তিতে আগেভাগেই সরবরাহ নিশ্চিত করা থাকে। তাই সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক থাকলে সারের ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।

কিন্তু কৃষকের অভিযোগ ভিন্ন। সরবরাহ না থাকা বা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দিয়ে কিনতে বাধ্য হওয়ার নানা অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যেই সার কারখানায় গ্যাসের দাম দেড়শ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব সরাসরি কৃষক ও বাজারের ওপর পড়তে পারে। তবে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জানিয়েছে, তারা এ গণশুনানিকে ‘লোক দেখানো’ হিসেবে মনে করে এতে অংশ নেবে না।

অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ মনে করেন, গ্যাসের দাম বাড়লে সারের দামও বাড়বে এবং এর প্রভাব খাদ্যদ্রব্যের বাজারে পড়বে। কৃষি উপকরণের খরচ বাড়লে উৎপাদন ব্যয়ও স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। তাই এই প্রভাব নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে সাধারণ মানুষকেই বাড়তি বোঝা বহন করতে হবে। সরকার যদি ভর্তুকি কমিয়ে আনে, তাহলে কৃষকদের পক্ষে বাড়তি খরচ সামলানো কঠিন হবে।

এমন প্রেক্ষাপটে কৃষকেরা সার পেতে চরম ভোগান্তির শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। বিশেষ করে ইউরিয়া, ডিএপি ও টিএসপি সারের জন্য অনেককে ডিলার পয়েন্টে ঘুরেও শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে এমনকি সারের দাবিতে কৃষকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। স্থানীয় কৃষক আবেদ আলী সরদার জানিয়েছেন, টানা তিনদিন ঘুরে শেষমেশ বাড়তি দামে সার কিনতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। রাজবাড়ীর আকুর ম-লও বলেছেন, বস্তাপ্রতি পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনতে হয়েছে। একই অভিযোগ করেছেন পিরোজপুরের কৃষক রাজন মিয়াও।

কৃষকের অভিযোগÑ ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। ফলে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

তবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলছেন, কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়লেই যে সারের দাম অটোমেটিকভাবে বাড়বেÑ এ কথা সঠিক নয়। সেক্ষেত্রে সরকার চাইলে ভর্তুকি বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব যতটা দেওয়া হয়েছে, তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তবে সরকারের উচিত আগেভাগে পরিকল্পনা নেওয়াÑ ভর্তুকি বাড়ানো বা অন্য কোনো ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া।

সারের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি, অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, আমদানি করা সার বন্দর থেকে সরকারি গুদামে পৌঁছানো পর্যন্ত পরিবহন ঠিকাদারের নিয়ন্ত্রণ থাকে। পরিবহন চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সার পৌঁছানোর কথা থাকলেও তা মানা হয় না। ফলে নানা অনিয়মের সুযোগ তৈরি হয়।

বর্তমান সরকার এই অনিয়ম ঠেকাতে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে সিন্ডিকেট ভাঙার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক দরপত্রে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়, যার মধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়। এতে সর্বনিম্ন দরদাতার চেয়েও কম দামে সার আমদানির সুযোগ তৈরি হয়, যার ফলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ২৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকার সাশ্রয় হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে এই দরপ্রক্রিয়া নিয়ে ডিলারদের মধ্যে বিরোধও তৈরি হয়েছে।

এছাড়া আগে বিএডিসি ও বিসিআইসি ডিলার আলাদাভাবে ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া সার বিতরণ করত, ফলে কৃষকদের ভোগান্তি হতো। নতুন নীতিমালায় সব ডিলারকে সরকারি সার ডিলার হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এক জায়গা থেকেই সব ধরনের সার পাওয়া যাবে।

নতুন নীতিমালায় কৃষকের খরচ কমানো এবং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। অনিয়মে জড়িত ডিলারের লাইসেন্স বাতিলের মতো কঠোর পদক্ষেপও নেওয়া হবে। পাশাপাশি আমদানির ক্ষেত্রে এখন থেকে কেবল সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়ার নিয়ম কঠোরভাবে মানা হবে। এর ফলে সার আমদানিতে সরকারের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।

ডিলার সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকার ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এখন থেকে বাজারদর যাচাই করে সর্বনিম্ন হার সরকার নির্ধারণ করবে। সেই ভিত্তিতে ডিলারদের দরপত্র দিতে হবে। এর ফলে সরকারের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে এবং কারসাজির সুযোগ কমে যাবে।

[লেখক: সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা]

back to top