alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি আইনি সহায়তা

রাজিউর রহমান ও আবু সালেহ

: শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে মানসিক স্বাস্থ্য বলতে বুঝায় কোন ব্যক্তির এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা যেখানে সে তার ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারে, জীবনের স্বাভাবিক চাপ দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করতে পারে, উৎপাদনশীল এবং ফলপ্রসূভাবে কাজ করতে পারে যার মাধ্যমে সে তার নিজ সমাজে বিশেষ অবদান রাখতে পারে। এটি একজন ব্যক্তির চিন্তা, আবেগ, অনুভূতি এবং আচর কে প্রভাবিত করে।

একজন ব্যক্তি কিভাবে তার মনস্তাত্ত্বিক চাপ মোকাবেলা করবে এবং অন্যদের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে, জীবনের নানাবিধ উপযোগী সিদ্ধান্ত নেবে তাও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। একজন ব্যক্তির মানসিক সুস্বাস্থ্য তার বিশেষ মানবিক অধিকার। কারণ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলেই একজন ব্যক্তি তার নিজের জীবনের যথাযথ মূল্য খুঁজে পান, বিভিন্ন চাপ ও হতাশা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেন, পারস্পরিক সুস্থ সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হন এবং কাজ ও দায়িত্ব পালনে যথাযথ মনোযোগী হয়ে থাকেন।

বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যেমন মানসিক রোগীর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ, মানসিক রোগের সময় উপযুক্ত চিকিৎসা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা, চিকিৎসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে রোগীর সম্মতি নিশ্চিত করা, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতা ও সামাজিক সহায়তা বৃদ্ধি করা এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতিমালা ও বিধিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮ প্রণয়ন করেছে।

উল্লেখ্য, যে উদ্দেশ্য নিয়ে অত্র আইনটি প্রণীত হয়েছে সেটা নানাবিধ কারণে ফলপ্রসূ হচ্ছে না। যেমন আইনটি সম্পর্কে সর্বসাধারণ যথেষ্ট জ্ঞান নেই, আবার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের মত এমন জনবহুল দেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল এবং রেজিস্টার্ড মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা কেন্দ্র ও হাসপাতালের সংখ্যা খুবই সীমিত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে মানসিক স্বাস্থ্য খাতে রাষ্ট্রীয় বাজেট বরাদ্দ অপ্রতুল এমনকি স্থানীয় পর্যায়ে আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক কাঠামো পর্যন্ত নেই। উপরন্ত সামাজিক বিভিন্ন কুসংস্কার মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮ বাস্তবায়নে বিশেষ অন্তরায় হিসেবে বিবেচ্য।

তথাপিও কিছু সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় আইনি সহায়তা পাওয়া সম্ভব যেমন: প্রথমত, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা এর মাধ্যমে যে সকল ব্যক্তি অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল তার সরকার থেকে বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা পাবেন। আইন অনুযায়ী একজন মানসিক রোগী বা তার অভিভাবক ফৌজদারি, দেওয়ানি বা পারিবারিক মামলায় সরকারের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে পারবেন। এক্ষেত্রে জেলা জজ কোর্টে অবস্থিত জেলা লিগাল এইড অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। আবার এ সংক্রান্ত বিষয়ে ১৬৪৩০ নম্বরে ফোন করে সহায়তা চাওয়া যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সামাজিক সেবা বিভাগ যেমন জাতীয় মানসিক শান্তি ইনস্টিটিউট বা অন্যান্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীরা আইনি সমস্যা থাকলে সামাজিক সেবা কর্মীদের মাধ্যমে সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভর্তি পরিবারের অমানবিক আচরণ বা জবরদস্তি চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অভিযোগ থাকলে সহায়তা চাওয়া যেতে পারে।

তৃতীয়ত, মানসিক রোগীর আইনগত অধিকার যদি লঙ্ঘিত হয় যেমন শারীরিক নির্যাতন, আটকে রাখা বা জোরপূর্বক ওষুধ খাওয়ানো ইত্যাদির ক্ষেত্রে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা যায়।

চতুর্থত, বাংলাদেশে বিভিন্ন এনজিও মানবাধিকার সংস্থা রয়েছে যারা বিভিন্ন উপায়ে আইনগত সহায়তা প্রদান করে থাকে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যেমন ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্র?্যাক হিউম্যান রাইট অ্যান্ড লিগ্যাল এইড সার্ভিস।

এছাড়াও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার প্রতিকারের জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী:

প্রথমত, জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রচারণা চালানো যেতে পারে। ফলশ্রুতিতে জনগণ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন হবে এবং কুসংস্কার দূর করে মানসিক রোগকে একটি চিকিৎসাযোগ্য সমস্যা হিসেবে সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করতে অভ্যস্ত হবে।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলায় মানসিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসক ও পরামর্শ নিয়োগ করা জরুরী। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও এই সংক্রান্ত ক্লিনিক এর সংখ্যা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ মোবাইল বা অনলাইন ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা টেলি কাউন্সিলিং বিষয়টিকে জনসাধারণের জন্য সহজলভ্য করা যেতে পারে।

তৃতীয়ত, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সমাজ ও পরিবারের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। যেমন মানসিক রোগীদের প্রতি অবশ্যই সহানুভূতিশীল হতে হবে, তাদেরকে ভালোবাসতে হবে। উল্লেখ্য যে, পারিবারিক সহায়তা, সহযোগিতা ও ভালোবাসা মানসিক রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

চতুর্থত, প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্ম প্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা উচিত। কর্মস্থলে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ও মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি চালু ও শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ ও উদ্বেগ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।

পঞ্চমত, মেডিটেশন, প্রার্থনা ও ধ্যান, নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্য ও পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়াও পারস্পরিক যোগাযোগ ও সামাজিকায়নের মাধ্যমেও মানসিক চাপ কমে এবং মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত হয়।

ষষ্ঠত, সর্বোপরি সরকারকে ২০১৮ সালের মানসিক স্বাস্থ্য আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন সহ মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক নাগরিকের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। মানসিক রোগীকে সম্মান প্রদর্শন এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা এবং মর্যাদা প্রদান করতে হবে। কোন মানসিক রোগীকে সম্মতি ছাড়া ভর্তি করার ব্যাপারে কঠোরভাবে নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। সরকারের অনুমতি ব্যতীত কেউ মানসিক রোগীকে আবাসিক ভাবে রাখতে পারবে না।

ক্ষেত্রবিশেষ আদালত মানসিক রোগীকে চিকিৎসার জন্য নির্দেশ দিতে পারে। উল্লেখ্য যে মানসিকভাবে অযোগ্য কোনো ব্যক্তি যদি কোন প্রকার অপরাধ সংঘটন করে তাহলে তার বিচারের ক্ষেত্রে আদালত বিশেষ বিবেচনা করে থাকে ।

[লেখক: রাজিউর রহমান- সভাপতি, আইন বিভাগ, সহযোগী অধ্যাপক, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আবু সালেহ- সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়]

কমরেড ইলা মিত্রের শততম জন্মজয়ন্তী

কত মৃত্যু হলে জাগবে বিবেক?

বৈষম্যের বিবিধ মুখ

গাজা : এখন শান্তি রক্ষা করবে কে?

দোসর, বাই ডিফল্ট!

জমি কেনা দাগে দাগে কিন্তু ভোগদখল একদাগে

রাষ্ট্র কি শুধু শিক্ষকদের বেলায় এসে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে?

শতরঞ্জ কি খিলাড়ী

শিক্ষক থাকে রাজপথে, আর পুলিশ ছাড়ে থানা

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা : স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবিষ্যৎ কী?

ছবি

শ্লীলতা, অশ্লীলতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অবক্ষয়ের চোরাবালিতে আলোর দিশারী

অটোমেশন ও দেশের যুব কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ

দুর্যোগে ভয় নয়, প্রস্তুতিই শক্তি

বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন

ছবি

‘আল্লাহ তুই দেহিস’: এ কোন ঘৃণার আগুন, ছড়িয়ে গেল সবখানে!

চেকের মামলায় আসামী যেসব ডিফেন্স নিয়ে খালাস পেতে পারেন

খেলনাশিল্প: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

প্রান্তিক মানুষের হৃদয়ে ফিরে আসা কালো মেঘ

গীর্জায় হামলার নেপথ্যে কী?

সংঘের শতবর্ষের রাজনৈতিক তাৎপর্য

দুর্নীতি আর চাঁদাবাজি রাজনৈতিক-সংস্কৃতির অংশ

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

বাংলার সংস্কৃতি : উৎস, বিবর্তন ও বর্তমান সমাজ-মনন

রম্যগদ্য: শিক্ষা সহজ, বিদ্যা কঠিন

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জনগণের ভূমিকা উপেক্ষিত

শ্রমজীবী মানুষের শোভন কর্মসংস্থান

মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের বাস্তবতা

প্রবারণার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটনের শেষ সুযোগ?

পাহাড় থেকে সমতল: আদিবাসী নারীর নিরাপত্তা

সোশ্যাল মিডিয়ার ‘লাইক’ সংস্কৃতি: আসক্তি নাকি নতুন যোগাযোগ?

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যু

মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক পরিবর্তন: আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি

রম্যগদ্য: “কেশ ফ্যালায় ভাই, কেশ ফ্যালায়...”

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীর অধিকার: বিসিএস ও শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্য

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি আইনি সহায়তা

রাজিউর রহমান ও আবু সালেহ

শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে মানসিক স্বাস্থ্য বলতে বুঝায় কোন ব্যক্তির এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা যেখানে সে তার ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারে, জীবনের স্বাভাবিক চাপ দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করতে পারে, উৎপাদনশীল এবং ফলপ্রসূভাবে কাজ করতে পারে যার মাধ্যমে সে তার নিজ সমাজে বিশেষ অবদান রাখতে পারে। এটি একজন ব্যক্তির চিন্তা, আবেগ, অনুভূতি এবং আচর কে প্রভাবিত করে।

একজন ব্যক্তি কিভাবে তার মনস্তাত্ত্বিক চাপ মোকাবেলা করবে এবং অন্যদের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে, জীবনের নানাবিধ উপযোগী সিদ্ধান্ত নেবে তাও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। একজন ব্যক্তির মানসিক সুস্বাস্থ্য তার বিশেষ মানবিক অধিকার। কারণ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলেই একজন ব্যক্তি তার নিজের জীবনের যথাযথ মূল্য খুঁজে পান, বিভিন্ন চাপ ও হতাশা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেন, পারস্পরিক সুস্থ সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হন এবং কাজ ও দায়িত্ব পালনে যথাযথ মনোযোগী হয়ে থাকেন।

বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যেমন মানসিক রোগীর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ, মানসিক রোগের সময় উপযুক্ত চিকিৎসা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা, চিকিৎসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে রোগীর সম্মতি নিশ্চিত করা, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতা ও সামাজিক সহায়তা বৃদ্ধি করা এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতিমালা ও বিধিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮ প্রণয়ন করেছে।

উল্লেখ্য, যে উদ্দেশ্য নিয়ে অত্র আইনটি প্রণীত হয়েছে সেটা নানাবিধ কারণে ফলপ্রসূ হচ্ছে না। যেমন আইনটি সম্পর্কে সর্বসাধারণ যথেষ্ট জ্ঞান নেই, আবার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের মত এমন জনবহুল দেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল এবং রেজিস্টার্ড মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা কেন্দ্র ও হাসপাতালের সংখ্যা খুবই সীমিত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে মানসিক স্বাস্থ্য খাতে রাষ্ট্রীয় বাজেট বরাদ্দ অপ্রতুল এমনকি স্থানীয় পর্যায়ে আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক কাঠামো পর্যন্ত নেই। উপরন্ত সামাজিক বিভিন্ন কুসংস্কার মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮ বাস্তবায়নে বিশেষ অন্তরায় হিসেবে বিবেচ্য।

তথাপিও কিছু সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় আইনি সহায়তা পাওয়া সম্ভব যেমন: প্রথমত, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা এর মাধ্যমে যে সকল ব্যক্তি অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল তার সরকার থেকে বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা পাবেন। আইন অনুযায়ী একজন মানসিক রোগী বা তার অভিভাবক ফৌজদারি, দেওয়ানি বা পারিবারিক মামলায় সরকারের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে পারবেন। এক্ষেত্রে জেলা জজ কোর্টে অবস্থিত জেলা লিগাল এইড অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। আবার এ সংক্রান্ত বিষয়ে ১৬৪৩০ নম্বরে ফোন করে সহায়তা চাওয়া যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সামাজিক সেবা বিভাগ যেমন জাতীয় মানসিক শান্তি ইনস্টিটিউট বা অন্যান্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীরা আইনি সমস্যা থাকলে সামাজিক সেবা কর্মীদের মাধ্যমে সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভর্তি পরিবারের অমানবিক আচরণ বা জবরদস্তি চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অভিযোগ থাকলে সহায়তা চাওয়া যেতে পারে।

তৃতীয়ত, মানসিক রোগীর আইনগত অধিকার যদি লঙ্ঘিত হয় যেমন শারীরিক নির্যাতন, আটকে রাখা বা জোরপূর্বক ওষুধ খাওয়ানো ইত্যাদির ক্ষেত্রে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা যায়।

চতুর্থত, বাংলাদেশে বিভিন্ন এনজিও মানবাধিকার সংস্থা রয়েছে যারা বিভিন্ন উপায়ে আইনগত সহায়তা প্রদান করে থাকে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যেমন ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্র?্যাক হিউম্যান রাইট অ্যান্ড লিগ্যাল এইড সার্ভিস।

এছাড়াও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার প্রতিকারের জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী:

প্রথমত, জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রচারণা চালানো যেতে পারে। ফলশ্রুতিতে জনগণ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন হবে এবং কুসংস্কার দূর করে মানসিক রোগকে একটি চিকিৎসাযোগ্য সমস্যা হিসেবে সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করতে অভ্যস্ত হবে।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলায় মানসিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসক ও পরামর্শ নিয়োগ করা জরুরী। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও এই সংক্রান্ত ক্লিনিক এর সংখ্যা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ মোবাইল বা অনলাইন ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা টেলি কাউন্সিলিং বিষয়টিকে জনসাধারণের জন্য সহজলভ্য করা যেতে পারে।

তৃতীয়ত, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সমাজ ও পরিবারের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। যেমন মানসিক রোগীদের প্রতি অবশ্যই সহানুভূতিশীল হতে হবে, তাদেরকে ভালোবাসতে হবে। উল্লেখ্য যে, পারিবারিক সহায়তা, সহযোগিতা ও ভালোবাসা মানসিক রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

চতুর্থত, প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্ম প্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা উচিত। কর্মস্থলে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ও মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি চালু ও শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ ও উদ্বেগ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।

পঞ্চমত, মেডিটেশন, প্রার্থনা ও ধ্যান, নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্য ও পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়াও পারস্পরিক যোগাযোগ ও সামাজিকায়নের মাধ্যমেও মানসিক চাপ কমে এবং মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত হয়।

ষষ্ঠত, সর্বোপরি সরকারকে ২০১৮ সালের মানসিক স্বাস্থ্য আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন সহ মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক নাগরিকের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। মানসিক রোগীকে সম্মান প্রদর্শন এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা এবং মর্যাদা প্রদান করতে হবে। কোন মানসিক রোগীকে সম্মতি ছাড়া ভর্তি করার ব্যাপারে কঠোরভাবে নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। সরকারের অনুমতি ব্যতীত কেউ মানসিক রোগীকে আবাসিক ভাবে রাখতে পারবে না।

ক্ষেত্রবিশেষ আদালত মানসিক রোগীকে চিকিৎসার জন্য নির্দেশ দিতে পারে। উল্লেখ্য যে মানসিকভাবে অযোগ্য কোনো ব্যক্তি যদি কোন প্রকার অপরাধ সংঘটন করে তাহলে তার বিচারের ক্ষেত্রে আদালত বিশেষ বিবেচনা করে থাকে ।

[লেখক: রাজিউর রহমান- সভাপতি, আইন বিভাগ, সহযোগী অধ্যাপক, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আবু সালেহ- সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top