alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

মনে কী দ্বিধা নিয়ে...

আনোয়ারুল হক

: রোববার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

প্রাথমিকে পড়ার সময় যেদিন স্কুলে যেতে ইচ্ছে হত না সকালে ঘুম থেকে উঠেই পেট চেপে ধরে ব্যথা ব্যথা বলে কান্না করতাম। কয়েক দফা এ অভিনয় করে স্কুল কামাই দেওয়ার পর মফস্বল সফর শেষে বাবা ফেরার পর সাব্যস্ত হল নামকরা মেডিসিনের চিকিৎসকের কাছে আমাকে নিয়ে যাওয়ার।

একটি অনির্বাচিত সরকার ঢাকার পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল এবং চট্টগ্রামের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দিতে কেনো এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তা নিয়েও মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ

চিকিৎসকের কাছে রওনা হওয়ার সময়ে মা আমাকে বললেন ডাক্তারকে ব্যথার কথা একটু বেশি বেশি করে বলবি। কড়া ঔষধ দেবে। তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবি। মনে অনেক দ্বিধা নিয়ে ডাক্তারকে বেশি বেশি বলতাম। ডাক্তার সাহেব তখন ঔষধ না দিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ডায়োগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দিতেন। বিলম্বিত চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় মায়ের মন খারাপ হয়ে যেত। আমার মনের মধ্যেও দ্বিধা বেড়ে যেতো। একসময় বলতাম অনেকদিন ধরে তো আর ব্যাথা করছে না। ভালো হয়ে গেছি। ঔষধ লাগবে না।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ শোনার পর ছোটবেলার সেই ফাঁকিবাজীর কথা মনে পড়ে গেলো। প্রফেসর ইউনূস সংস্কার কথামালা রচনা করার জন্য মার্কিন মুলুক থেকে উড়িয়ে নিয়ে আসা অধ্যাপক আলী রীয়াজকে বলে দিলেন একটু বেশি বেশি করে লিখবেন। আমি প্রস্তাবসমূহ পরীক্ষাগারে নিয়ে একেবারে মাইক্রোস্কোúিক পরীক্ষা করে সব পক্ষকে কিছু কিছু ছাড় দিয়ে যেন বলতে পারি সবার কথা রেখেছি। বাস্তবায়ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য না হওয়ায় মার্কিনি অধ্যাপক একতরফাভাবে বা ‘বেশি বেশি করে লিখে’ কমিশনের প্রস্তাবনা অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট পেশ করেন - যা ঐক্যের বদলে রাজনৈতিক দলসমূহের মাঝে বড় ধরনের বিভাজন সৃষ্টি করে।

অতঃপর অন্তর্বর্তী সরকার গত বৃহস্পতিবার জুলাই জাতীয় সনদ নাম দিয়ে সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন আদেশ জারি করেছে। প্রথমে ‘একটু বেশি বেশি করে’ বলা হচ্ছিলো বা ভাব দেখানো হচ্ছিলো যে প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষরে সাংবিধানিক আদেশ জারি করে দেখিয়ে দেওয়া হবে গণঅভ্যুত্থানের সরকার আদেশ জারির যে সংবিধানসম্মত পন্থা তা মানতে বাধ্য নয়। তবে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরেই আদেশ জারি হয়েছে। তবে এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে সংবিধান বলবৎ থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতি সংবিধান সংস্কার আদেশ জারি করতে পারেন কিনা। এ আদেশ ভবিষ্যতে আইন-আদালতে চ্যালেঞ্জ হওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।

গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই তারিখে অনুষ্ঠিত করার ঘোষণা দেওয়ায় এবং সংস্কার প্রস্তাবে সংসদে অটোপাসের বিধান না রাখায় বিএনপি মনে নানা দ্বিধা রেখেও প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে। আবার উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে আসন বন্টন করার ঘোষণা আসায় জামায়াত এবং এনসিপি অন্যান্য ইস্যুতে বিশেষত অটোপাস না থাকায় মনে অনেক দ্বিধা নিয়েও মুখে যা-ই বলুক না কেনো এক ধরনের সন্তুষ্টিতে রয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূস সবার চেয়ে বেশি খুশি। বিতর্কিত এ ধরনের আদেশ জারিতে তাকে স্বাক্ষর করতে হলো না আবার একই সাথে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে জানিয়ে দিতে পারলেন এ দেশ সংস্কারে ও জাতিকে সভ্য বানাতে তিনিই জাতির পথপ্রদর্শক। এবং এই খুশিতে মার্কিনি অধ্যাপককে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় তার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দিলেন। বিদেশ থেকে এতো এতো সংস্কারক আমদানি করায় কোনো কোনো মহল বেজার হলেও ‘জাতি হিসেবে যতদিন না আমরা পরিপূর্ণভাবে সভ্যতা অর্জন করতে পারছি’ আমাদের এ ধরনের বিদেশী সম্পদকে সম্মান দেখাতেই হবে।

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির ও বিশৃঙ্খল হলেও সামগ্রিক অর্থে নির্বাচনমুখীন। তবে ভোট নিয়ে মানুষের মাঝে যে উৎসাহ ছিলো তাতে কিছুটা ভাটা আছে। সাম্প্রতিককালে জামায়াত-হেফাজত-এনসিপির হুংকার, বিএনপিরও কোনো কোনো নেতৃবৃন্দের পাল্টা উক্তিতে ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে কিনা, যাকে খুশি তাকে ভোট দিতে পারবে কিনা - এ সব নিয়ে মনে দ্বিধা, সংশয়,সন্দেহ বাড়ছে। আওয়ামীলীগকে নির্বাচন করতে দেয়া হবে না - প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণা এবং ট্রাইব্যুনালের রায় ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নির্বাসিত নেতৃবৃন্দ দেশের অভ্যন্তরে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টায় আছেন। তারা জানেন এসব করে তারা মানুষের মন জয় করতে পারবেন না, কিন্ত দলীয় কর্মীদের ও বিশাল অন্ধ সমর্থক গোষ্ঠীকে চাঙ্গা রাখতে পারবেন এই বলে যে, ‘আওয়ামী লীগ জিন্দা হ্যায়’। এ সব মিলিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল ভাবার সুযোগ নেই।

সনদ, সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে ইউনূস বলেছেন ইতোমধ্যে “অধ্যাদেশের মাধ্যমে বা বিদ্যমান আইন সংশোধন করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বিচার ব্যবস্থাপনা ..., দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভিন্ন সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে।” আসলে কি তাই? মানুষ কি এটা বিশ্বাস করে। শেখ হাসিনার রাজত্বকে আমরা অভিযুক্ত করেছি যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিলো না, নির্বাহী বিভাগের পরামর্শেই বিচার বিভাগ পরিচালিত হয় এবং সে অনুযায়ী রায় আসে। ইউনূস আমলেও নির্বিচার গণগ্রেপ্তার এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যাকেতাকে নির্বিচার খুনের মামলার আসামী বানিয়ে, যুক্তিহীনভাবে আদালতে জামিন নামঞ্জুর করে, উচ্চ আদালত জামিন দিলেও সরকার পক্ষ তা অ্যাপিলেট ডিভিশন নিয়ে যেয়ে জামিন স্থগিতের ব্যবস্থা করছেন। যার যা অপরাধ সেই ইস্যুতে বিচার হোক। কিন্তু তা না করে সবার বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে খুনের মিথ্যা মামলা দিয়ে এবং বিচারক সব কিছু জেনে বুঝে জামিন না দেয়ায় হাসিনা আমলের চেয়েও প্রতিহিংসাপরায়ন বিচার ব্যবস্থা চলছে।

নারায়নগঞ্জের মেয়র আইভীর উদাহরণই যথেষ্ট। সারা বাংলাদেশ জানে নারায়নগঞ্জের বুকে শামিম ওসমানের খুন ও সন্ত্রাসের রাজত্বের বিরুদ্ধে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আইভি নিজ দলের মধ্যে তার সমর্থকদেরসহ অন্যান্য রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের যুক্ত করে বিরামহীন লড়াই চালিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ করেও তাকে এ লড়াই থেকে নিবৃত্ত করতে পারেন নাই। আর সেই আইভীর বিরুদ্ধে একটার পর একটা খুনের মামলা দিয়ে, জামিন না মঞ্জুর করে এবং উচ্চ আদালত জামিন দিলেও নির্বাহী বিভাগের তৎপরতায় তা স্থগিত করার ব্যবস্থা করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ঘোষণাকে অসত্য ও হাস্যকর করে তুলছে। আর এ ধরনের ঘটনা তো একটি নয় সারাদেশে কয়েক হাজার। সুশাসনের প্রধান শর্ত হচ্ছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। সেটাই যখন ১৬ মাসে হলো না, তখন মনে দ্বিধা নিয়ে প্রশ্ন জাগে কিভাবে ‘আমরা সভ্য হলাম’?

আর এ ভাবে বিচার বিভাগকে হাস্যকর করার মধ্য দিয়ে সবচেয়ে যে বড় বিচার - ট্রাইব্যুনালের বিচারে যে রায়ই হোক তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ করে দেয়া হলো। নানামহল হয়তোবা বিভিন্ন যৌক্তিক উদাহরণ টেনে বলার চেষ্টা করবে রায় নির্বাহী বিভাগ দ্বারা প্রভাবিত। দেশে যখন এই প্রশ্ন উঠেছে যে সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয় এবং সরকার তার মত করে কিছু নির্বাচনী সংস্কার করেই নির্বাচনের পথে অগ্রসর হচ্ছে তখন এ প্রশ্ন ওঠাও যৌক্তিক যে, তাড়াহুড়ো না করে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের কতৃত্ব থেকে মুক্ত করে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা উচিত। সে ক্ষেত্রে বিচার বা রায় নিয়ে দেশে বিদেশে কোনো প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ থাকতো না। সরকারি তাড়াহুড়ো দেখে মানুষ মনে করছে - একটা রায় দেওয়ার প্রয়োজনে রায় হচ্ছে, কার্যকর করার জন্য নয়!

রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমন অস্থিতিশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রেও তাই। ব্যাংক সেক্টরে কিছু সংস্কার (যা নিয়েও বিতর্ক আছে) ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে সংস্কার নাই। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। কারখানার শ্রমিকদের, গ্রামের দিনমজুরদের শহরে এসে রিকশা চালাতে হচ্ছে। সরকার যতই রেমিট্যান্স আর রিজার্ভের বাহাদুরি দেখাক না কেনো দেশে দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব বাড়ছে। অর্থনীতির বিকাশের স্বার্থে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি - যার নিশ্চয়তা নিয়ে মানুষের মনে দ্বিধা সংশয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি অনির্বাচিত সরকার ঢাকার পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল এবং চট্টগ্রামের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দিতে কেনো এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তা নিয়েও মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালও আগামী মাসে বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া বে টার্মিনাল প্রকল্পের দুটি টার্মিনালও বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন। এ বিষয়টি তো অস্পষ্ট নয় যে চট্টগ্রাম বন্দর শুধুমাত্র বন্দর নয়, এর সাথে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত। সরকারের এ সব নিয়ে অতিতৎপরতায় নানা সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি দ্বিধা সৃষ্টি হয়েছে গণভোট নিয়ে। চারটি প্রশ্নের উপরে গনভোট চাওয়া হবে। কিন্তু উত্তর দিতে হবে একত্রে একটি হ্যাঁ বা নাতে টিক দিয়ে। কারো কাছে যদি দুইটা প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ মনে হয় আর দুইটা প্রশ্নের উত্তর না মনে হয় তিনি কিভাবে তার মত প্রকাশ করবেন? তাছাড়া একটি প্রশ্নের মধ্যে বলা হচ্ছে- “বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে ...।” বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কি জানেন, কি লেখা আছে ঐ ৩০টি প্রস্তাবে? আর একটি প্রশ্নে লেখা - “জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।” কী সেই অন্যান্য সংস্কার, মানুষ কি জানে? আর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়নের প্রশ্ন যখন আসছে তখন তো নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো অনুযায়ী যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন সে দলের উপরই তা কার্যকর করার দায়িত্ব জনসাধারণ অর্পন করেছে বলে বিবেচিত হবে।

কার্যত নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরই শেষ পর্যন্ত তাদের প্রতিশ্রুতি, নির্বাচনী ইশতেহার এবং পার্লামেন্টে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য বা প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সংবিধান সংস্কারের সংবিধানসম্মত পন্থায় হাঁটতে হবে। মানুষের মনে দ্বিধা ও সংশয় জাগছে যে, তাহলে কি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার জন্যই সংস্কার সংস্কার করছে? এ কথা তো ঠিক ঐকমত্য কমিশনকে বা অন্তর্বর্তী সরকারকে মানুষ তো সংবিধান রচনার দায়িত্ব প্রদান করে নাই। তাই দ্রুত এবং সম্ভব হলে জানুয়ারির মধ্যভাগের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা নিলেই মানুষের মাঝে সরকার সম্পর্কে যে দ্বিধা সন্দেহ অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে তা দূর হয়ে নির্বাচন অভিমুখে যাত্রা শুরু হবে।

[লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা]

ভারত : এসআইআর এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন

নিরাপদ সড়ক ভাবনা

অপরিকল্পিত বাঁধ-শিল্পায়নে বিপর্যস্ত বরেন্দ্র কৃষি

ছবি

মামদানি দেখালেন নেতৃত্বের মূল পরিচয় কী

চেকের মামলায় বৈধ বিনিময়, লেনদেন, দেনা-পাওনা প্রমাণ ছাড়া আর জেল নয়

নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত ভাবনা

মাদকাসক্তি: শুধু নিরাময় নয়, চাই সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার

আমেরিকার “নো কিংস” আন্দোলন

ঘি তো আমাদের লাগবেই, নো হাংকি পাংকি!

“মামদানি না জামদানি...”

ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষায় নীরব বিপ্লব

উপাত্ত সুরক্ষা আইন : গোপনীয়তা রক্ষা নাকি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ?

সমতা কি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে?

ডেঙ্গু সংকট দূরদৃষ্টির ব্যর্থতা

ষাটের দশকে বামপন্থী ভাবনার উত্থান ও বিবর্তন

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে!

বায়ুর অপর নাম জীবন

ছবি

হাওরের জীবন ও সংস্কৃতি

বিখণ্ডিত আত্মপরিচয়: তরল সহানুভূতিতে নৈতিক মূলধনের সমাজতত্ত্ব

প্রভাষকের ‘প্রভা’ যখন ‘শোক’: শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চনা

যুদ্ধ বিরতি গাজাবাসীর জন্য জরুরি ছিল

লবলং খালের মৃত্যু: স্মৃতিতে নদী, বাস্তবে দূষণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা: অর্থনৈতিক স্থিতির পূর্বশর্ত

হায় যম! আর কতক্ষণ, হবে অপেক্ষা করিতে মোরে?

পোশাক শিল্প : অগ্রগতি ও শ্রমিকের অধিকার

গণভোটের রাজনৈতিক গুরুত্ব

বামঘরানার বাটখারা...

বাগদা ফার্ম : স্মারকলিপি, অবরোধ, অনশন, আন্দোলন- কিছুতেই বরফ গলেনি

ব্যাটারি-শকট: নতুন সংকট

মতপ্রকাশ কিংবা দ্বিমত পোষণ: নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন ব্যাংক কি আদৌ প্রয়োজন

ট্রাম্প ও শি’র ‘কৌশলগত শান্তি’

আশার সমাজতত্ত্ব: বিভ্রান্তির যুগে ভবিষ্যৎ নির্মাণের বিপ্লবী বিজ্ঞান

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

ডিম নয় তবু অশ্বডিম্ব!

ছবি

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নির্বাচন

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

মনে কী দ্বিধা নিয়ে...

আনোয়ারুল হক

রোববার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

প্রাথমিকে পড়ার সময় যেদিন স্কুলে যেতে ইচ্ছে হত না সকালে ঘুম থেকে উঠেই পেট চেপে ধরে ব্যথা ব্যথা বলে কান্না করতাম। কয়েক দফা এ অভিনয় করে স্কুল কামাই দেওয়ার পর মফস্বল সফর শেষে বাবা ফেরার পর সাব্যস্ত হল নামকরা মেডিসিনের চিকিৎসকের কাছে আমাকে নিয়ে যাওয়ার।

একটি অনির্বাচিত সরকার ঢাকার পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল এবং চট্টগ্রামের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দিতে কেনো এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তা নিয়েও মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ

চিকিৎসকের কাছে রওনা হওয়ার সময়ে মা আমাকে বললেন ডাক্তারকে ব্যথার কথা একটু বেশি বেশি করে বলবি। কড়া ঔষধ দেবে। তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবি। মনে অনেক দ্বিধা নিয়ে ডাক্তারকে বেশি বেশি বলতাম। ডাক্তার সাহেব তখন ঔষধ না দিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ডায়োগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দিতেন। বিলম্বিত চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় মায়ের মন খারাপ হয়ে যেত। আমার মনের মধ্যেও দ্বিধা বেড়ে যেতো। একসময় বলতাম অনেকদিন ধরে তো আর ব্যাথা করছে না। ভালো হয়ে গেছি। ঔষধ লাগবে না।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ শোনার পর ছোটবেলার সেই ফাঁকিবাজীর কথা মনে পড়ে গেলো। প্রফেসর ইউনূস সংস্কার কথামালা রচনা করার জন্য মার্কিন মুলুক থেকে উড়িয়ে নিয়ে আসা অধ্যাপক আলী রীয়াজকে বলে দিলেন একটু বেশি বেশি করে লিখবেন। আমি প্রস্তাবসমূহ পরীক্ষাগারে নিয়ে একেবারে মাইক্রোস্কোúিক পরীক্ষা করে সব পক্ষকে কিছু কিছু ছাড় দিয়ে যেন বলতে পারি সবার কথা রেখেছি। বাস্তবায়ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য না হওয়ায় মার্কিনি অধ্যাপক একতরফাভাবে বা ‘বেশি বেশি করে লিখে’ কমিশনের প্রস্তাবনা অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট পেশ করেন - যা ঐক্যের বদলে রাজনৈতিক দলসমূহের মাঝে বড় ধরনের বিভাজন সৃষ্টি করে।

অতঃপর অন্তর্বর্তী সরকার গত বৃহস্পতিবার জুলাই জাতীয় সনদ নাম দিয়ে সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন আদেশ জারি করেছে। প্রথমে ‘একটু বেশি বেশি করে’ বলা হচ্ছিলো বা ভাব দেখানো হচ্ছিলো যে প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষরে সাংবিধানিক আদেশ জারি করে দেখিয়ে দেওয়া হবে গণঅভ্যুত্থানের সরকার আদেশ জারির যে সংবিধানসম্মত পন্থা তা মানতে বাধ্য নয়। তবে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরেই আদেশ জারি হয়েছে। তবে এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে সংবিধান বলবৎ থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতি সংবিধান সংস্কার আদেশ জারি করতে পারেন কিনা। এ আদেশ ভবিষ্যতে আইন-আদালতে চ্যালেঞ্জ হওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।

গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই তারিখে অনুষ্ঠিত করার ঘোষণা দেওয়ায় এবং সংস্কার প্রস্তাবে সংসদে অটোপাসের বিধান না রাখায় বিএনপি মনে নানা দ্বিধা রেখেও প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে। আবার উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে আসন বন্টন করার ঘোষণা আসায় জামায়াত এবং এনসিপি অন্যান্য ইস্যুতে বিশেষত অটোপাস না থাকায় মনে অনেক দ্বিধা নিয়েও মুখে যা-ই বলুক না কেনো এক ধরনের সন্তুষ্টিতে রয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূস সবার চেয়ে বেশি খুশি। বিতর্কিত এ ধরনের আদেশ জারিতে তাকে স্বাক্ষর করতে হলো না আবার একই সাথে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে জানিয়ে দিতে পারলেন এ দেশ সংস্কারে ও জাতিকে সভ্য বানাতে তিনিই জাতির পথপ্রদর্শক। এবং এই খুশিতে মার্কিনি অধ্যাপককে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় তার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দিলেন। বিদেশ থেকে এতো এতো সংস্কারক আমদানি করায় কোনো কোনো মহল বেজার হলেও ‘জাতি হিসেবে যতদিন না আমরা পরিপূর্ণভাবে সভ্যতা অর্জন করতে পারছি’ আমাদের এ ধরনের বিদেশী সম্পদকে সম্মান দেখাতেই হবে।

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির ও বিশৃঙ্খল হলেও সামগ্রিক অর্থে নির্বাচনমুখীন। তবে ভোট নিয়ে মানুষের মাঝে যে উৎসাহ ছিলো তাতে কিছুটা ভাটা আছে। সাম্প্রতিককালে জামায়াত-হেফাজত-এনসিপির হুংকার, বিএনপিরও কোনো কোনো নেতৃবৃন্দের পাল্টা উক্তিতে ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে কিনা, যাকে খুশি তাকে ভোট দিতে পারবে কিনা - এ সব নিয়ে মনে দ্বিধা, সংশয়,সন্দেহ বাড়ছে। আওয়ামীলীগকে নির্বাচন করতে দেয়া হবে না - প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণা এবং ট্রাইব্যুনালের রায় ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নির্বাসিত নেতৃবৃন্দ দেশের অভ্যন্তরে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টায় আছেন। তারা জানেন এসব করে তারা মানুষের মন জয় করতে পারবেন না, কিন্ত দলীয় কর্মীদের ও বিশাল অন্ধ সমর্থক গোষ্ঠীকে চাঙ্গা রাখতে পারবেন এই বলে যে, ‘আওয়ামী লীগ জিন্দা হ্যায়’। এ সব মিলিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল ভাবার সুযোগ নেই।

সনদ, সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে ইউনূস বলেছেন ইতোমধ্যে “অধ্যাদেশের মাধ্যমে বা বিদ্যমান আইন সংশোধন করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বিচার ব্যবস্থাপনা ..., দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভিন্ন সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে।” আসলে কি তাই? মানুষ কি এটা বিশ্বাস করে। শেখ হাসিনার রাজত্বকে আমরা অভিযুক্ত করেছি যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিলো না, নির্বাহী বিভাগের পরামর্শেই বিচার বিভাগ পরিচালিত হয় এবং সে অনুযায়ী রায় আসে। ইউনূস আমলেও নির্বিচার গণগ্রেপ্তার এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যাকেতাকে নির্বিচার খুনের মামলার আসামী বানিয়ে, যুক্তিহীনভাবে আদালতে জামিন নামঞ্জুর করে, উচ্চ আদালত জামিন দিলেও সরকার পক্ষ তা অ্যাপিলেট ডিভিশন নিয়ে যেয়ে জামিন স্থগিতের ব্যবস্থা করছেন। যার যা অপরাধ সেই ইস্যুতে বিচার হোক। কিন্তু তা না করে সবার বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে খুনের মিথ্যা মামলা দিয়ে এবং বিচারক সব কিছু জেনে বুঝে জামিন না দেয়ায় হাসিনা আমলের চেয়েও প্রতিহিংসাপরায়ন বিচার ব্যবস্থা চলছে।

নারায়নগঞ্জের মেয়র আইভীর উদাহরণই যথেষ্ট। সারা বাংলাদেশ জানে নারায়নগঞ্জের বুকে শামিম ওসমানের খুন ও সন্ত্রাসের রাজত্বের বিরুদ্ধে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আইভি নিজ দলের মধ্যে তার সমর্থকদেরসহ অন্যান্য রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের যুক্ত করে বিরামহীন লড়াই চালিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ করেও তাকে এ লড়াই থেকে নিবৃত্ত করতে পারেন নাই। আর সেই আইভীর বিরুদ্ধে একটার পর একটা খুনের মামলা দিয়ে, জামিন না মঞ্জুর করে এবং উচ্চ আদালত জামিন দিলেও নির্বাহী বিভাগের তৎপরতায় তা স্থগিত করার ব্যবস্থা করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ঘোষণাকে অসত্য ও হাস্যকর করে তুলছে। আর এ ধরনের ঘটনা তো একটি নয় সারাদেশে কয়েক হাজার। সুশাসনের প্রধান শর্ত হচ্ছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। সেটাই যখন ১৬ মাসে হলো না, তখন মনে দ্বিধা নিয়ে প্রশ্ন জাগে কিভাবে ‘আমরা সভ্য হলাম’?

আর এ ভাবে বিচার বিভাগকে হাস্যকর করার মধ্য দিয়ে সবচেয়ে যে বড় বিচার - ট্রাইব্যুনালের বিচারে যে রায়ই হোক তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ করে দেয়া হলো। নানামহল হয়তোবা বিভিন্ন যৌক্তিক উদাহরণ টেনে বলার চেষ্টা করবে রায় নির্বাহী বিভাগ দ্বারা প্রভাবিত। দেশে যখন এই প্রশ্ন উঠেছে যে সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয় এবং সরকার তার মত করে কিছু নির্বাচনী সংস্কার করেই নির্বাচনের পথে অগ্রসর হচ্ছে তখন এ প্রশ্ন ওঠাও যৌক্তিক যে, তাড়াহুড়ো না করে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের কতৃত্ব থেকে মুক্ত করে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা উচিত। সে ক্ষেত্রে বিচার বা রায় নিয়ে দেশে বিদেশে কোনো প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ থাকতো না। সরকারি তাড়াহুড়ো দেখে মানুষ মনে করছে - একটা রায় দেওয়ার প্রয়োজনে রায় হচ্ছে, কার্যকর করার জন্য নয়!

রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমন অস্থিতিশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রেও তাই। ব্যাংক সেক্টরে কিছু সংস্কার (যা নিয়েও বিতর্ক আছে) ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে সংস্কার নাই। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। কারখানার শ্রমিকদের, গ্রামের দিনমজুরদের শহরে এসে রিকশা চালাতে হচ্ছে। সরকার যতই রেমিট্যান্স আর রিজার্ভের বাহাদুরি দেখাক না কেনো দেশে দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব বাড়ছে। অর্থনীতির বিকাশের স্বার্থে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি - যার নিশ্চয়তা নিয়ে মানুষের মনে দ্বিধা সংশয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি অনির্বাচিত সরকার ঢাকার পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল এবং চট্টগ্রামের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দিতে কেনো এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তা নিয়েও মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালও আগামী মাসে বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া বে টার্মিনাল প্রকল্পের দুটি টার্মিনালও বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন। এ বিষয়টি তো অস্পষ্ট নয় যে চট্টগ্রাম বন্দর শুধুমাত্র বন্দর নয়, এর সাথে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত। সরকারের এ সব নিয়ে অতিতৎপরতায় নানা সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি দ্বিধা সৃষ্টি হয়েছে গণভোট নিয়ে। চারটি প্রশ্নের উপরে গনভোট চাওয়া হবে। কিন্তু উত্তর দিতে হবে একত্রে একটি হ্যাঁ বা নাতে টিক দিয়ে। কারো কাছে যদি দুইটা প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ মনে হয় আর দুইটা প্রশ্নের উত্তর না মনে হয় তিনি কিভাবে তার মত প্রকাশ করবেন? তাছাড়া একটি প্রশ্নের মধ্যে বলা হচ্ছে- “বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে ...।” বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কি জানেন, কি লেখা আছে ঐ ৩০টি প্রস্তাবে? আর একটি প্রশ্নে লেখা - “জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।” কী সেই অন্যান্য সংস্কার, মানুষ কি জানে? আর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়নের প্রশ্ন যখন আসছে তখন তো নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো অনুযায়ী যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন সে দলের উপরই তা কার্যকর করার দায়িত্ব জনসাধারণ অর্পন করেছে বলে বিবেচিত হবে।

কার্যত নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরই শেষ পর্যন্ত তাদের প্রতিশ্রুতি, নির্বাচনী ইশতেহার এবং পার্লামেন্টে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য বা প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সংবিধান সংস্কারের সংবিধানসম্মত পন্থায় হাঁটতে হবে। মানুষের মনে দ্বিধা ও সংশয় জাগছে যে, তাহলে কি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার জন্যই সংস্কার সংস্কার করছে? এ কথা তো ঠিক ঐকমত্য কমিশনকে বা অন্তর্বর্তী সরকারকে মানুষ তো সংবিধান রচনার দায়িত্ব প্রদান করে নাই। তাই দ্রুত এবং সম্ভব হলে জানুয়ারির মধ্যভাগের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা নিলেই মানুষের মাঝে সরকার সম্পর্কে যে দ্বিধা সন্দেহ অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে তা দূর হয়ে নির্বাচন অভিমুখে যাত্রা শুরু হবে।

[লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা]

back to top