alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

ভারত : এসআইআর এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন

গৌতম রায়

: রোববার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

অ-বিজেপি রাজনৈতিক দলগুলি এস আই আর ঘিরে আন্দোলনকে কতা উচ্চগ্রামে তুলতে পারবেন, তা ভবিষৎ ই বলবে। কিন্তু স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (বিশেষ নিবিড় সংশোধন) বা এসআইআর প্রক্রিয়া ঘিরে সঙ্ঘ - বিজেপির যে একমাত্র উদ্দেশ্য জাতপাত- ধর্ম- বর্ণ- লিঙ্গ- ভাষার নামে বিভাজন, সেই বিভাজনের প্রক্রিয়ায় তারা প্রথম রাউন্ডে অনেকটাই সফল হয়েছে বলা যেতে পারে।

এসআইআর - এই প্রক্রিয়া পশ্চিমবঙ্গে চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথম যেটা দেখা দিয়েছে, তা হল; মানুষে-মানুষে অবিশ্বাস। মানুষের চলতি লব্জে ঠাঁই করে নিতে শুরু করেছে; আরে , তুই তো বাংলাদেশি

এসআইআর - এই প্রক্রিয়া পশ্চিমবঙ্গে চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথম যেটা দেখা দিয়েছে, তা হল; মানুষে-মানুষে অবিশ্বাস। মানুষের চলতি লব্জে ঠাঁই করে নিতে শুরু করেছে; আরে , তুই তো বাংলাদেশি। প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশের গত এক বছরের রাজনৈতিক বিষয়গুলি এক্ষেত্রে গুরুত্ব পাচ্ছে না। ঠিক যেভাবে গত কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গরীব মানুষ, বাংলায় কথা বলেন - এমন মানুষ। বিশেষকরে ধর্মীয় বিশ্বাসে তারা যদি মুসলমান হন, তাদের ‘ বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়া ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশের একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

গোটা হিন্দুত্ববাদী শিবির দীর্ঘদিন ধরে সযতেœ এই অভ্যাস প্রক্রিয়াটাকে তৈরি করেছে। সেই প্রক্রিয়ার কিছু স্পার্টিকেল এদিক ওদিক , মানে ধর্মনিরপেক্ষ শিবিরের মধ্যেও যে অংশটি চেতনার স্তরে সেভাবে নিজেকে উন্নত করতে পারে নি, তাদের কেও প্রভাবিত করেছে।

এই কাজটা যে হিন্দুত্ববাদীরা মোদি সরকারের দ্বিতীয় দফা থেকে প্রথম শুরু করল, এমনটা ভাবা ভুল। বলা যেতে পারে, তাদের এই বিভাজন প্রক্রিয়াকে সরকারি তকমা, আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়াটা তারা শুরু করে দ্বিতীয় দফার মোদি সরকারের আমলে। কিন্তু বিভাজনের যে বৌদ্ধিক প্রক্রিয়া তারা দীর্ঘদিন ধরে শুরু করেছিল, সেটা অবিজেপি দলগুলি কতা বুঝতে পেরেছিল, আজ এই এস আই আর ঘিরে গোটা দেশের অবস্থা,বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থার নিরিখে প্রশ্নটা খুব তীব্র হয়ে ওঠে।

নাগরিকত্ব, ভোটার - এসব ঘিরে পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে আর এস এস গোটা ভারত জুড়ে যে সূক্ষ্ম রাজনীতি, মুসলমান বিদ্বেষ , জাতিবিদ্বেষ , লিঙ্গ ভিত্তিক বিভাজন- এ সমস্ত কিছুকেই ভারতীয় সমাজে প্রতিষ্ঠিত করবার ষড়যন্ত্র করছে, সেটা বিজেপি পরিমন্ডলের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলি এবং অবশ্য ই বামপন্থীরাও কতা সঠিক ভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন- এ সংশয় থেকেই যায়। বামপন্থীরা যদি এটা সার্বিক ভাবে উপলব্ধি করে থাকতেন, তাহলে একক শক্তিতে ক্ষমতায় না থাকা কংগ্রেস দল ঘিরে তাদের যে মূল্যায়ন আজ তৈরি হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় তারা নিউক্লিয়ার চুক্তি ঘিরে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন প্রথম ইউ পি এ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয়টি ঘিরে পরিণত রাজনৈতিক বোধের পরিচয় দিতেন। কারণ, সাম্প্রদায়িক বিজেপি এবং তাদের নেতৃত্বাধীন নীতিবিহীন- সুবিধাবাদী জোট , এন ডি এ কে পরাজিত করা এবং দিল্লিতে একটা ধর্মনিরপেক্ষ সরকার তৈরি করা- এটাই ছিল ‘০৪ সালের ভোটে বাম এবং বিজেপি শিবিরের বাইরে থাকা দলগুলির মূল রাজনৈতিক কর্মসূচি। তারই ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন প্রথম ইউ পি এ সরকার। সেই সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করেছিলেন বামপন্থীরা। তৈরি হয়েছিল সাধারণ ন্যুনতম কর্মসূচি। যেখানে সাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিরোধ করা এবং ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের সংবিধানকে রক্ষা করা- এটা ছিল অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই বিষয়টি যে তখন হিন্দু সন্ত্রাসী আর এস এস এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপিকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে একটা মহৌষধের ভূমিকা পালন করেছিল- সে বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। অথচ দেশের জ্বলন্ত সমস্যা ‘ সাম্প্রদায়িকতা’ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্কট- এই বিষয়টা প্রথম ইউ পি এ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে বাম দলগুলির নেতৃত্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ গুরুত্ব ই সেভাবে দিলেন না।

প্রথম ইউ পি এ সরকার থেকে বামপন্থীদের সমর্থন প্রত্যাহারের পর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভোট রাজনীতির নিরিখে বামপন্থীরা কোনঠাসা হতে থাকেন। পশ্চিমবঙ্গ এবং পরে ত্রিপুরাতে বামপন্থীদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পিছনে সবথেকে বড় কারণ, সব প্রতিক্রিয়াশীল এবং কায়েমী শক্তিগুলো সেদিন একত্রিত হয়েছিল বামপন্থীদের বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গে কায়েমী শক্তি দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকারের উপর থেকে বামেরা সমর্থন প্রত্যাহারের পর মুহূর্ত থেকেই এ রাজ্যে সর্বস্তরে বিভাজনের রাজনীতিকে একটা চন্ড রূপ দিতে শুরু করে।

আজ এস আই আর ঘিরে যে বিভাজনের রাজনীতিকে আমরা একদম দিনের আলোর মত পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি, এই রাজনীতির চন্ডরূপের সূচনাপর্ব ঘিরে আমরা উদাসীন ছিলাম। ফলে খুব সহজেই মানুষের মনের মধ্যে মিথ্যার বেসাতির মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে বিষের সংস্থাপন ঘটতে শুরু করে। প্রতিবেশি সম্পর্কে সেই বিষ উৎপাটনের ভাবনা তো দূরের কথা, বিষ ঘিরে ধারণা তৈরি হওয়াও বহু ক্ষেত্রে ক্ষমতার মদমত্ততায় আমরা অনুভব ই করতে পারিনি।

নয়ের দশকে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস দল থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস নামে একটা আঞ্চলিক দল করেন। এই দলটির ভারতের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধীকরণ, প্রতীক পাওয়া ইত্যাদি ঘিরে প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস পর্বের লোক , বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবানীর। মমতা কিন্তু তখন ও সরাসরি বিজেপি শিবিরে যাননি। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছেন; বিজেপিকে ফ্রন্টে এনে লড়ব। সেটি ভারতে প্রায় সবকটি প্রথম সারির দৈনিকে প্রকাশিত ও হয়েছিল।

তারপর মমতা তার দল তৃণমূল কংগ্রেসকে সরাসরি শামিল করেন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এন ডি এ জোটে। শ্যামাপ্রসাদের জীবনাবসানের পর ভোট রাজনীতেতে প্রায় লুপ্ত হয়ে যাওয়া হিন্দুত্ববাদী দল যে ধীরে ধীরে ভোট রাজনীতিতে একটা সাফল্যের দিকে এগোতে শুরু করেছে মমতাকে মাধ্যম করে, এটা সেই সময়ের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির প্রথম সারির লোকেরা সেভাবে বুঝতে পারেননি। ক্ষমতায় থাকার দরুণ বামপন্থীদের ভিতরেই একে অপরকে একটু শিক্ষা দেওয়ৃর যে নেশায় তখন মেতেছিল, তার ই ফলশ্রুতি ছিল , তৃণমূল বিজেপি জোটে যাওয়ৃর পরমুহূর্তেই দমদম এবং কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে বামেদের পরাজয়।

বিজেপির তৈরি করে দেওয়া ইস্তাহারে সই করেই মমতা বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে ভোটে লড়েছিলেন। সেই ইস্তাহারে হিন্দুত্ববাদীদের হাতে ধ্বংস হওয়া ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর রামমন্দির তৈরির প্রতিশ্রুতি ছিল। সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা অবলুপ্তির কথা ছিল। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা ছিল। আর এস এসের এই কর্মসূচির সঙ্গে মমতা প্রত্যক্ষ ভাবে প্রায় সাড়ে চার বছর ঘর করেছেন। এই সময়কালে গুজরাট গণহত্যা হয়েছে।

এই পর্বে হিন্দুত্ব- মুসলমান বিদ্বেষ আর মমতা সমার্থক - এই যে রাজনৈতিক অবস্থান- তার বিরোধিতার ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দেওয়ার পরিবর্তে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ব্যস্ত থেকেছে বাম বিরোধিতায়। আর বামেরা ব্যস্ত থেকে মমতার অরাজনৈতিক বিষয়গুলিকে নিয়ে গাওয়া শীবাকীর্তনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে , সেসব অপ্রয়জনীয় বিষয়গুলিকে রাজনৈতিক গুরুত্ব দিতে। মমতাকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করবার ক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল , হিন্দু সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে তিনি কীভাবে পশ্চিমবঙ্গের বুকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করছেন- সেটাকে খিল্লি- খেউরর মাধ্যমে নয়।ব্যঙ্গ - বিদ্রুপ দিয়ে নয়।একদম রাজনীতির ভাষায় মানুষের সামনে তুলে ধরা।

এই কাজটি যে অতীতে ভালোভাবে হয়েছে- এটা যেমন বলা যায় না। তেমনিই মমতার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রত্যক্ষ সংযোগের বিষয়টি যে এখন ও একদম রাজনীতির ভাষায় মানুষের কাছে তুলে ধরা- সেটাও খুব জোরদার ভাবে হচ্ছে তা নয়।এস আই আর নিয়ে বামফ্রন্টের বাইরের বামেরা বিষয়টি ঘিরে আর এস এস - বিজেপির সমালোচনা করেই প্রায় সব ক্ষেত্রে নিজেদের দায় সেরে দিচ্ছে। মমতার সমালোচনার ক্ষেত্রে তারা এখন ও যথেষ্ট কার্পন্যের পরিচয় ই রাখছে। বৃহত্তর বামেদের এস আই আর নিয়ে যৌথ সভা গুলিতে বামফ্রন্টের বাইরের বামেদের মধ্যে সি পি আই এম এল ( লিবারেশন) ছাড়া অন্য বাম দলগুলি মমতার এককালে ভোটার তালিকায় বাংলাদেশের নাগরিক থাকবার তথাকথিত দাবি ঘিরে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, সে সম্পর্কে কেবল নীরব ই থাকছেন না। সেই প্রসঙ্গটি উঠলে তা চেপে দিতে চেষ্টার কসুর করছে না।

সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতা মানে কিন্তু কেবলমাত্র কতকগুলি বাছাই করা শব্দ দিয়ে আর এস এস - বিজেপির বিরোধিতা নয়। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতার অর্থ হলো; আর এস এস - বিজেপির হিন্দুত্বকে মমতা বা তার রাজনীতি কিভাবে সহায়তা করছে, সেই বিষয়টিও । হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরোধিতার অর্থ হলো; ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানের উপর কী ধরণের আর্থ- সামাজিক- সাংস্কৃতিক অত্যাচার হচ্ছে তার স্বরূপ তুলে ধরা। সহ নাগরিক মুসলমানের উপর সমস্ত ধরণের নির্যাতনের কেবল কাগুজে প্রতিবাদ ই নয়। সামাজিক জীবনে, ট্রেনে- ট্রামে - বাসে- হাট - বাজারে কেবলমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের কারনে, শুধু পোষাক - পরিচ্ছদ, দাড়ি- টুপির জন্যে যেভাবে তাদের অকথা- কুকথা শোনাটা নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে— নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে তার প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া । প্রতিরোধে দৃঢ় হওয়া। বাম- তৃণমূলের মধ্যেও যে একটা ব্যাপক অংশে মুখে সংখ্যালঘুপ্রেমি সেজে, প্রয়োগের ক্ষেত্রে চরম মুসলমান বিদ্বেষী লোকজন আছে— তাদের একেবারে নগ্ন করে দিতে না পারলে আমাদের সমাজ জীবনের মধ্যে যেভাবে বিভাজনের বিষ সন্ত্রাসী হিন্দু সাম্প্রদায়িকেরা ঢুকিয়েছে, তাকে নির্মূল করতে পারা যাবে না।

মমতার রাজনীতির সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে , অরাজনৈতিক বিষয়গুলি ঘিরে ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা। ভুল মন্তব্য করা। ইতিহাসের তথ্যকে ভুল বলা।ইতিহাসের ঘটনাকে ভুল বলা। ইতিহাস পুরুষদের নামের ভুল বা বিকৃত উচ্চারণ করা। ধর্ম বিষয়ক নামধাম- মন্ত্রের ভুল উচ্চারণ করা।

এগুলি মমতা করেন অত্যন্ত সচেতন ভাবে।যে কোনও বড় ধরণের রাজনৈতিক ঘটনাক্রম থেকে মানুষের দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এই ধরণের কথা মমতা বলেন। আচরণ করেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো; প্রকৃত ঘটনা, রাজনীতি থেকে মানুষের মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্যে অত্যন্ত সচেতন ভাবে, বাণিজ্যিক পরামর্শদাতাদের পরামর্শক্রমে এই কাজগুলো মমতা করেন। কিন্তু মমতার এই সুচতুর রাজনৈতিক কৌশল বামপন্থী শিবিরের দুই একজন ছাড়া আর কেউ সেবাবে কি বুঝে উঠতে পারেন? তা নাহলে, প্রকৃত ঘটনা থেকে, রাজনৈতিক অভিপ্রায় থেকে মানুষের মন - মানসিকতাকে এই যে অন্যখাতে ঘুরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশে মমতার সুচিন্তিত কৌশল - সেটা ঘিরে ধর্মনিরপেক্ষ শিবিরের সাধারণ নেতৃত্বের একটা অংশ , যারা টেলিভিশনে দলের হয়ে বলেন, সাধারণ সভা - সমিতিতে বলেন— তাদের মনোযোগের অভাব , সাধারণ মানুষকে বিজেপি - আর এস এসের কৌশল কে সফল করতে মমতার যে কার্যক্রম, সেটা বুঝে ওঠা টা খুব দুস্কর হয়ে ওঠে।

[লেখক: ভারতীয় ইতিহাসবিদ]

মনে কী দ্বিধা নিয়ে...

নিরাপদ সড়ক ভাবনা

অপরিকল্পিত বাঁধ-শিল্পায়নে বিপর্যস্ত বরেন্দ্র কৃষি

ছবি

মামদানি দেখালেন নেতৃত্বের মূল পরিচয় কী

চেকের মামলায় বৈধ বিনিময়, লেনদেন, দেনা-পাওনা প্রমাণ ছাড়া আর জেল নয়

নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত ভাবনা

মাদকাসক্তি: শুধু নিরাময় নয়, চাই সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার

আমেরিকার “নো কিংস” আন্দোলন

ঘি তো আমাদের লাগবেই, নো হাংকি পাংকি!

“মামদানি না জামদানি...”

ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষায় নীরব বিপ্লব

উপাত্ত সুরক্ষা আইন : গোপনীয়তা রক্ষা নাকি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ?

সমতা কি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে?

ডেঙ্গু সংকট দূরদৃষ্টির ব্যর্থতা

ষাটের দশকে বামপন্থী ভাবনার উত্থান ও বিবর্তন

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে!

বায়ুর অপর নাম জীবন

ছবি

হাওরের জীবন ও সংস্কৃতি

বিখণ্ডিত আত্মপরিচয়: তরল সহানুভূতিতে নৈতিক মূলধনের সমাজতত্ত্ব

প্রভাষকের ‘প্রভা’ যখন ‘শোক’: শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চনা

যুদ্ধ বিরতি গাজাবাসীর জন্য জরুরি ছিল

লবলং খালের মৃত্যু: স্মৃতিতে নদী, বাস্তবে দূষণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা: অর্থনৈতিক স্থিতির পূর্বশর্ত

হায় যম! আর কতক্ষণ, হবে অপেক্ষা করিতে মোরে?

পোশাক শিল্প : অগ্রগতি ও শ্রমিকের অধিকার

গণভোটের রাজনৈতিক গুরুত্ব

বামঘরানার বাটখারা...

বাগদা ফার্ম : স্মারকলিপি, অবরোধ, অনশন, আন্দোলন- কিছুতেই বরফ গলেনি

ব্যাটারি-শকট: নতুন সংকট

মতপ্রকাশ কিংবা দ্বিমত পোষণ: নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন ব্যাংক কি আদৌ প্রয়োজন

ট্রাম্প ও শি’র ‘কৌশলগত শান্তি’

আশার সমাজতত্ত্ব: বিভ্রান্তির যুগে ভবিষ্যৎ নির্মাণের বিপ্লবী বিজ্ঞান

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

ডিম নয় তবু অশ্বডিম্ব!

ছবি

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নির্বাচন

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

ভারত : এসআইআর এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন

গৌতম রায়

রোববার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

অ-বিজেপি রাজনৈতিক দলগুলি এস আই আর ঘিরে আন্দোলনকে কতা উচ্চগ্রামে তুলতে পারবেন, তা ভবিষৎ ই বলবে। কিন্তু স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (বিশেষ নিবিড় সংশোধন) বা এসআইআর প্রক্রিয়া ঘিরে সঙ্ঘ - বিজেপির যে একমাত্র উদ্দেশ্য জাতপাত- ধর্ম- বর্ণ- লিঙ্গ- ভাষার নামে বিভাজন, সেই বিভাজনের প্রক্রিয়ায় তারা প্রথম রাউন্ডে অনেকটাই সফল হয়েছে বলা যেতে পারে।

এসআইআর - এই প্রক্রিয়া পশ্চিমবঙ্গে চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথম যেটা দেখা দিয়েছে, তা হল; মানুষে-মানুষে অবিশ্বাস। মানুষের চলতি লব্জে ঠাঁই করে নিতে শুরু করেছে; আরে , তুই তো বাংলাদেশি

এসআইআর - এই প্রক্রিয়া পশ্চিমবঙ্গে চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথম যেটা দেখা দিয়েছে, তা হল; মানুষে-মানুষে অবিশ্বাস। মানুষের চলতি লব্জে ঠাঁই করে নিতে শুরু করেছে; আরে , তুই তো বাংলাদেশি। প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশের গত এক বছরের রাজনৈতিক বিষয়গুলি এক্ষেত্রে গুরুত্ব পাচ্ছে না। ঠিক যেভাবে গত কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গরীব মানুষ, বাংলায় কথা বলেন - এমন মানুষ। বিশেষকরে ধর্মীয় বিশ্বাসে তারা যদি মুসলমান হন, তাদের ‘ বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়া ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশের একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

গোটা হিন্দুত্ববাদী শিবির দীর্ঘদিন ধরে সযতেœ এই অভ্যাস প্রক্রিয়াটাকে তৈরি করেছে। সেই প্রক্রিয়ার কিছু স্পার্টিকেল এদিক ওদিক , মানে ধর্মনিরপেক্ষ শিবিরের মধ্যেও যে অংশটি চেতনার স্তরে সেভাবে নিজেকে উন্নত করতে পারে নি, তাদের কেও প্রভাবিত করেছে।

এই কাজটা যে হিন্দুত্ববাদীরা মোদি সরকারের দ্বিতীয় দফা থেকে প্রথম শুরু করল, এমনটা ভাবা ভুল। বলা যেতে পারে, তাদের এই বিভাজন প্রক্রিয়াকে সরকারি তকমা, আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়াটা তারা শুরু করে দ্বিতীয় দফার মোদি সরকারের আমলে। কিন্তু বিভাজনের যে বৌদ্ধিক প্রক্রিয়া তারা দীর্ঘদিন ধরে শুরু করেছিল, সেটা অবিজেপি দলগুলি কতা বুঝতে পেরেছিল, আজ এই এস আই আর ঘিরে গোটা দেশের অবস্থা,বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থার নিরিখে প্রশ্নটা খুব তীব্র হয়ে ওঠে।

নাগরিকত্ব, ভোটার - এসব ঘিরে পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে আর এস এস গোটা ভারত জুড়ে যে সূক্ষ্ম রাজনীতি, মুসলমান বিদ্বেষ , জাতিবিদ্বেষ , লিঙ্গ ভিত্তিক বিভাজন- এ সমস্ত কিছুকেই ভারতীয় সমাজে প্রতিষ্ঠিত করবার ষড়যন্ত্র করছে, সেটা বিজেপি পরিমন্ডলের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলি এবং অবশ্য ই বামপন্থীরাও কতা সঠিক ভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন- এ সংশয় থেকেই যায়। বামপন্থীরা যদি এটা সার্বিক ভাবে উপলব্ধি করে থাকতেন, তাহলে একক শক্তিতে ক্ষমতায় না থাকা কংগ্রেস দল ঘিরে তাদের যে মূল্যায়ন আজ তৈরি হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় তারা নিউক্লিয়ার চুক্তি ঘিরে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন প্রথম ইউ পি এ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয়টি ঘিরে পরিণত রাজনৈতিক বোধের পরিচয় দিতেন। কারণ, সাম্প্রদায়িক বিজেপি এবং তাদের নেতৃত্বাধীন নীতিবিহীন- সুবিধাবাদী জোট , এন ডি এ কে পরাজিত করা এবং দিল্লিতে একটা ধর্মনিরপেক্ষ সরকার তৈরি করা- এটাই ছিল ‘০৪ সালের ভোটে বাম এবং বিজেপি শিবিরের বাইরে থাকা দলগুলির মূল রাজনৈতিক কর্মসূচি। তারই ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন প্রথম ইউ পি এ সরকার। সেই সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করেছিলেন বামপন্থীরা। তৈরি হয়েছিল সাধারণ ন্যুনতম কর্মসূচি। যেখানে সাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিরোধ করা এবং ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের সংবিধানকে রক্ষা করা- এটা ছিল অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই বিষয়টি যে তখন হিন্দু সন্ত্রাসী আর এস এস এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপিকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে একটা মহৌষধের ভূমিকা পালন করেছিল- সে বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। অথচ দেশের জ্বলন্ত সমস্যা ‘ সাম্প্রদায়িকতা’ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্কট- এই বিষয়টা প্রথম ইউ পি এ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে বাম দলগুলির নেতৃত্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ গুরুত্ব ই সেভাবে দিলেন না।

প্রথম ইউ পি এ সরকার থেকে বামপন্থীদের সমর্থন প্রত্যাহারের পর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভোট রাজনীতির নিরিখে বামপন্থীরা কোনঠাসা হতে থাকেন। পশ্চিমবঙ্গ এবং পরে ত্রিপুরাতে বামপন্থীদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পিছনে সবথেকে বড় কারণ, সব প্রতিক্রিয়াশীল এবং কায়েমী শক্তিগুলো সেদিন একত্রিত হয়েছিল বামপন্থীদের বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গে কায়েমী শক্তি দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকারের উপর থেকে বামেরা সমর্থন প্রত্যাহারের পর মুহূর্ত থেকেই এ রাজ্যে সর্বস্তরে বিভাজনের রাজনীতিকে একটা চন্ড রূপ দিতে শুরু করে।

আজ এস আই আর ঘিরে যে বিভাজনের রাজনীতিকে আমরা একদম দিনের আলোর মত পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি, এই রাজনীতির চন্ডরূপের সূচনাপর্ব ঘিরে আমরা উদাসীন ছিলাম। ফলে খুব সহজেই মানুষের মনের মধ্যে মিথ্যার বেসাতির মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে বিষের সংস্থাপন ঘটতে শুরু করে। প্রতিবেশি সম্পর্কে সেই বিষ উৎপাটনের ভাবনা তো দূরের কথা, বিষ ঘিরে ধারণা তৈরি হওয়াও বহু ক্ষেত্রে ক্ষমতার মদমত্ততায় আমরা অনুভব ই করতে পারিনি।

নয়ের দশকে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস দল থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস নামে একটা আঞ্চলিক দল করেন। এই দলটির ভারতের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধীকরণ, প্রতীক পাওয়া ইত্যাদি ঘিরে প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস পর্বের লোক , বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবানীর। মমতা কিন্তু তখন ও সরাসরি বিজেপি শিবিরে যাননি। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছেন; বিজেপিকে ফ্রন্টে এনে লড়ব। সেটি ভারতে প্রায় সবকটি প্রথম সারির দৈনিকে প্রকাশিত ও হয়েছিল।

তারপর মমতা তার দল তৃণমূল কংগ্রেসকে সরাসরি শামিল করেন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এন ডি এ জোটে। শ্যামাপ্রসাদের জীবনাবসানের পর ভোট রাজনীতেতে প্রায় লুপ্ত হয়ে যাওয়া হিন্দুত্ববাদী দল যে ধীরে ধীরে ভোট রাজনীতিতে একটা সাফল্যের দিকে এগোতে শুরু করেছে মমতাকে মাধ্যম করে, এটা সেই সময়ের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির প্রথম সারির লোকেরা সেভাবে বুঝতে পারেননি। ক্ষমতায় থাকার দরুণ বামপন্থীদের ভিতরেই একে অপরকে একটু শিক্ষা দেওয়ৃর যে নেশায় তখন মেতেছিল, তার ই ফলশ্রুতি ছিল , তৃণমূল বিজেপি জোটে যাওয়ৃর পরমুহূর্তেই দমদম এবং কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে বামেদের পরাজয়।

বিজেপির তৈরি করে দেওয়া ইস্তাহারে সই করেই মমতা বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে ভোটে লড়েছিলেন। সেই ইস্তাহারে হিন্দুত্ববাদীদের হাতে ধ্বংস হওয়া ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর রামমন্দির তৈরির প্রতিশ্রুতি ছিল। সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা অবলুপ্তির কথা ছিল। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা ছিল। আর এস এসের এই কর্মসূচির সঙ্গে মমতা প্রত্যক্ষ ভাবে প্রায় সাড়ে চার বছর ঘর করেছেন। এই সময়কালে গুজরাট গণহত্যা হয়েছে।

এই পর্বে হিন্দুত্ব- মুসলমান বিদ্বেষ আর মমতা সমার্থক - এই যে রাজনৈতিক অবস্থান- তার বিরোধিতার ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দেওয়ার পরিবর্তে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ব্যস্ত থেকেছে বাম বিরোধিতায়। আর বামেরা ব্যস্ত থেকে মমতার অরাজনৈতিক বিষয়গুলিকে নিয়ে গাওয়া শীবাকীর্তনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে , সেসব অপ্রয়জনীয় বিষয়গুলিকে রাজনৈতিক গুরুত্ব দিতে। মমতাকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করবার ক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল , হিন্দু সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে তিনি কীভাবে পশ্চিমবঙ্গের বুকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করছেন- সেটাকে খিল্লি- খেউরর মাধ্যমে নয়।ব্যঙ্গ - বিদ্রুপ দিয়ে নয়।একদম রাজনীতির ভাষায় মানুষের সামনে তুলে ধরা।

এই কাজটি যে অতীতে ভালোভাবে হয়েছে- এটা যেমন বলা যায় না। তেমনিই মমতার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রত্যক্ষ সংযোগের বিষয়টি যে এখন ও একদম রাজনীতির ভাষায় মানুষের কাছে তুলে ধরা- সেটাও খুব জোরদার ভাবে হচ্ছে তা নয়।এস আই আর নিয়ে বামফ্রন্টের বাইরের বামেরা বিষয়টি ঘিরে আর এস এস - বিজেপির সমালোচনা করেই প্রায় সব ক্ষেত্রে নিজেদের দায় সেরে দিচ্ছে। মমতার সমালোচনার ক্ষেত্রে তারা এখন ও যথেষ্ট কার্পন্যের পরিচয় ই রাখছে। বৃহত্তর বামেদের এস আই আর নিয়ে যৌথ সভা গুলিতে বামফ্রন্টের বাইরের বামেদের মধ্যে সি পি আই এম এল ( লিবারেশন) ছাড়া অন্য বাম দলগুলি মমতার এককালে ভোটার তালিকায় বাংলাদেশের নাগরিক থাকবার তথাকথিত দাবি ঘিরে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, সে সম্পর্কে কেবল নীরব ই থাকছেন না। সেই প্রসঙ্গটি উঠলে তা চেপে দিতে চেষ্টার কসুর করছে না।

সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতা মানে কিন্তু কেবলমাত্র কতকগুলি বাছাই করা শব্দ দিয়ে আর এস এস - বিজেপির বিরোধিতা নয়। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতার অর্থ হলো; আর এস এস - বিজেপির হিন্দুত্বকে মমতা বা তার রাজনীতি কিভাবে সহায়তা করছে, সেই বিষয়টিও । হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরোধিতার অর্থ হলো; ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানের উপর কী ধরণের আর্থ- সামাজিক- সাংস্কৃতিক অত্যাচার হচ্ছে তার স্বরূপ তুলে ধরা। সহ নাগরিক মুসলমানের উপর সমস্ত ধরণের নির্যাতনের কেবল কাগুজে প্রতিবাদ ই নয়। সামাজিক জীবনে, ট্রেনে- ট্রামে - বাসে- হাট - বাজারে কেবলমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের কারনে, শুধু পোষাক - পরিচ্ছদ, দাড়ি- টুপির জন্যে যেভাবে তাদের অকথা- কুকথা শোনাটা নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে— নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে তার প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া । প্রতিরোধে দৃঢ় হওয়া। বাম- তৃণমূলের মধ্যেও যে একটা ব্যাপক অংশে মুখে সংখ্যালঘুপ্রেমি সেজে, প্রয়োগের ক্ষেত্রে চরম মুসলমান বিদ্বেষী লোকজন আছে— তাদের একেবারে নগ্ন করে দিতে না পারলে আমাদের সমাজ জীবনের মধ্যে যেভাবে বিভাজনের বিষ সন্ত্রাসী হিন্দু সাম্প্রদায়িকেরা ঢুকিয়েছে, তাকে নির্মূল করতে পারা যাবে না।

মমতার রাজনীতির সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে , অরাজনৈতিক বিষয়গুলি ঘিরে ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা। ভুল মন্তব্য করা। ইতিহাসের তথ্যকে ভুল বলা।ইতিহাসের ঘটনাকে ভুল বলা। ইতিহাস পুরুষদের নামের ভুল বা বিকৃত উচ্চারণ করা। ধর্ম বিষয়ক নামধাম- মন্ত্রের ভুল উচ্চারণ করা।

এগুলি মমতা করেন অত্যন্ত সচেতন ভাবে।যে কোনও বড় ধরণের রাজনৈতিক ঘটনাক্রম থেকে মানুষের দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এই ধরণের কথা মমতা বলেন। আচরণ করেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো; প্রকৃত ঘটনা, রাজনীতি থেকে মানুষের মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্যে অত্যন্ত সচেতন ভাবে, বাণিজ্যিক পরামর্শদাতাদের পরামর্শক্রমে এই কাজগুলো মমতা করেন। কিন্তু মমতার এই সুচতুর রাজনৈতিক কৌশল বামপন্থী শিবিরের দুই একজন ছাড়া আর কেউ সেবাবে কি বুঝে উঠতে পারেন? তা নাহলে, প্রকৃত ঘটনা থেকে, রাজনৈতিক অভিপ্রায় থেকে মানুষের মন - মানসিকতাকে এই যে অন্যখাতে ঘুরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশে মমতার সুচিন্তিত কৌশল - সেটা ঘিরে ধর্মনিরপেক্ষ শিবিরের সাধারণ নেতৃত্বের একটা অংশ , যারা টেলিভিশনে দলের হয়ে বলেন, সাধারণ সভা - সমিতিতে বলেন— তাদের মনোযোগের অভাব , সাধারণ মানুষকে বিজেপি - আর এস এসের কৌশল কে সফল করতে মমতার যে কার্যক্রম, সেটা বুঝে ওঠা টা খুব দুস্কর হয়ে ওঠে।

[লেখক: ভারতীয় ইতিহাসবিদ]

back to top