মাহতাব হোসাইন মাজেদ
১৭ নভেম্বর ছিল বিশ্ব অপরিণত নবজাতক দিবস ২০২৫। বিশ্বব্যাপী নবজাতকের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি হলো অপরিণত শিশু জন্ম। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ সমস্যা আরও গভীরভাবে দেখা দেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি পাঁচজন নবজাতকের একজন অপরিণত জন্মজনিত জটিলতায় মারা যায়। তাই নবজাতক মৃত্যুহার কমাতে জন্মের পরপরই অপরিণত ও কম ওজনের শিশুর ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ছয় লাখ শিশু অপরিণত জন্মায়, আর বৈশ্বিকভাবে এই সংখ্যা প্রায় ১৫০ লাখ। প্রতি ১০টি নবজাতকের মধ্যে একটি শিশু নির্ধারিত সময়ের আগে জন্ম নেয়। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি হলো অপরিণত জন্ম; প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ১০ লাখ শিশু শুধুই অপরিণত জন্মের কারণে মারা যায়। তাই প্রিম্যাচিওর জন্ম, এর ঝুঁকি, জটিলতা এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতেই বিশ্ব অপরিণত নবজাতক দিবস পালিত হয়।
বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার জীবিত জন্মে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুহার ৩১ এবং নবজাতক মৃত্যুহার ২০। এর মধ্যে প্রায় ২২ শতাংশ মৃত্যু ঘটে অপরিণত ও কম ওজনের শিশুর কারণে। বর্তমানে মোট জন্মগ্রহণকারী শিশুর ১৯ দশমিক ১ শতাংশই অপরিণত-যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তুলনামূলকভাবে অন্যতম বেশি হার।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুহার ২৫ এবং নবজাতক মৃত্যুহার ১২–তে নামিয়ে আনতে হলে অপরিণত শিশুদের চিকিৎসা, পরিচর্যা ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
গর্ভধারণের ৩৮-৪২ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া শিশুকে প্রিম্যাচিওর বলা হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম বা নির্ধারিত প্রসব তারিখের অন্তত তিন সপ্তাহ আগে জন্মকে অপরিণত ধরা হয়। জন্মের সময়কাল ও ওজনের ওপর শিশুর জীবনঝুঁকি নির্ভর করে। ১৫০০ গ্রামের কম ওজন হলে তাকে প্রিটার্ম লো বার্থ ওয়েট বলা হয়।
২০০৮ সালে ইউরোপীয় ফাউন্ডেশন ফর কেয়ার অব নিউবর্ণ ইনফ্যান্টস এবং বিভিন্ন অভিভাবক সংগঠন ১৭ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক প্রিম্যাচিওরিটি দিবস ঘোষণা করে। দিবসটির পেছনে একটি ব্যক্তিগত স্মৃতিও জড়িয়ে আছে-প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের সন্তানের জন্মদিন হওয়ায় তিনি দিনটিকে অপরিণত নবজাতকের সচেতনতার প্রতীক হিসেবে বেছে নেন। ২০১১ সাল থেকে এটি বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে অপরিণত জন্মের হার বাড়ছে নানা কারণে-অতিরিক্ত সিজারিয়ান, আগাম চিকিৎসা-সিদ্ধান্ত, ভয় ও চাপ, মায়ের স্বাস্থ্যগত জটিলতা। বাংলাদেশেও নির্ধারিত সময়ের আগে সিজারিয়ানের প্রবণতা ভয়াবহভাবে বেড়েছে, যা অপরিণত শিশুর সংখ্যা বাড়াচ্ছে। ‘লেট প্রিটার্ম’ অর্থাৎ ৩৪-৩৭ সপ্তাহের শিশুর জটিলতা তুলনামূলক কম হলেও ৩২ সপ্তাহ বা তার আগে জন্মানো শিশু বেশি ঝুঁকিতে থাকে-হার্টের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি, শ্রবণ ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং শেখায় সমস্যা তৈরি হতে পারে।
উন্নত দেশে ২৫-২৬ সপ্তাহ বয়সী ‘মাইক্রো প্রিমি’ শিশুদেরও এনআইসিইউ–তে বাঁচিয়ে তোলার সক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশেও এসব সুবিধা দ্রুত উন্নত হচ্ছে।
অপরিণত শিশুর চোখের রোগ জঙচ-রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচিউরিটি-জন্মের কয়েক সপ্তাহ পর দ্রুত বাড়তে পারে এবং সময়মতো স্ক্রিনিং না হলে স্থায়ী অন্ধত্ব তৈরি করতে পারে। তাই ৩৫ সপ্তাহের আগে জন্ম এবং ২০০০ গ্রামের কম ওজনের শিশুদের ৩০ দিনের মধ্যে, আর ২৮ সপ্তাহের আগে জন্ম ও ১২০০ গ্রামের কম ওজনের শিশুদের ২০ দিনের মধ্যে বাধ্যতামূলক স্ক্রিনিং প্রয়োজন।
অপরিণত জন্মের কারণ হিসেবে গবেষণায় ৫০টিরও বেশি বিষয় শনাক্ত করা হয়েছে: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, একাধিক সন্তান ধারণ, সংক্রমণ, অপুষ্টি, ধূমপান, মানসিক চাপ, প্লাসেন্টার জটিলতা, অল্প বা বেশি বয়সে গর্ভধারণ। কখনো কোনো কারণ ছাড়াও প্রিম্যাচিওর বার্থ ঘটতে পারে।
অপরিণত শিশুর সাধারণ জটিলতার মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, কম ওজন, তাপমাত্রা ধরে রাখতে না পারা, বুকের দুধ খেতে সমস্যা, খিঁচুনি, ফ্যাকাশে বা হলুদ ত্বক, হার্ট ফেইলিওর, ডিহাইড্রেশন, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে রক্তক্ষরণ, হাইপোগ্লাইসেমিয়া ও নিউমোনিয়া।
প্রিম্যাচিওর জন্ম প্রতিরোধে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ও অ্যানিমিয়া নিয়ন্ত্রণ, সংক্রমণ চিকিৎসা, পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত প্রেনাটাল চেকআপ অত্যন্ত জরুরি। এতে প্রিম্যাচিওর জন্ম ৩০-৪০ শতাংশ কমানো সম্ভব। প্রি-টার্ম লেবার শুরু হলে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে প্রসব বিলম্ব, অ্যান্টিবায়োটিক ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম কার্যকর হতে পারে। প্রয়োজনে কর্টিকোস্টেরয়েড দিয়ে নবজাতকের ফুসফুস পরিণত করার প্রস্তুতিও নিতে হয়।
অপরিণত শিশুর পরিচর্যায় ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার, প্রশিক্ষিত নার্সিং, এনআইসিইউ–সুবিধা, মায়ের বুকের দুধ ও নিয়মিত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে জনসচেতনতায় সেমিনার, ক্যাম্পেইন, গণমাধ্যম প্রচার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা, হাসপাতালভিত্তিক ক্যাঙ্গারু কেয়ার প্রশিক্ষণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
অপরিণত শিশুর জন্ম পরিবারে মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সব স্তরেই চাপ তৈরি করে। তবুও যথাসময়ে চিকিৎসা, সঠিক পরিচর্যা, পরিবারের সহায়তা এবং প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে অনেক অপরিণত শিশুই সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে এবং জীবনে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে। অনেকেই পরবর্তীতে বিজ্ঞানী, লেখক, স্বাস্থ্যকর্মী বা সমাজনেতা হয়ে সমাজকে সমৃদ্ধ করেন। সঠিক যত্ন ও সচেতনতা পেলেই এই শিশুরাই হতে পারে আগামী দিনের দৃঢ় নায়ক-যারা পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার শক্তি রাখে।
[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মাহতাব হোসাইন মাজেদ
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
১৭ নভেম্বর ছিল বিশ্ব অপরিণত নবজাতক দিবস ২০২৫। বিশ্বব্যাপী নবজাতকের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি হলো অপরিণত শিশু জন্ম। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ সমস্যা আরও গভীরভাবে দেখা দেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি পাঁচজন নবজাতকের একজন অপরিণত জন্মজনিত জটিলতায় মারা যায়। তাই নবজাতক মৃত্যুহার কমাতে জন্মের পরপরই অপরিণত ও কম ওজনের শিশুর ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ছয় লাখ শিশু অপরিণত জন্মায়, আর বৈশ্বিকভাবে এই সংখ্যা প্রায় ১৫০ লাখ। প্রতি ১০টি নবজাতকের মধ্যে একটি শিশু নির্ধারিত সময়ের আগে জন্ম নেয়। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি হলো অপরিণত জন্ম; প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ১০ লাখ শিশু শুধুই অপরিণত জন্মের কারণে মারা যায়। তাই প্রিম্যাচিওর জন্ম, এর ঝুঁকি, জটিলতা এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতেই বিশ্ব অপরিণত নবজাতক দিবস পালিত হয়।
বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার জীবিত জন্মে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুহার ৩১ এবং নবজাতক মৃত্যুহার ২০। এর মধ্যে প্রায় ২২ শতাংশ মৃত্যু ঘটে অপরিণত ও কম ওজনের শিশুর কারণে। বর্তমানে মোট জন্মগ্রহণকারী শিশুর ১৯ দশমিক ১ শতাংশই অপরিণত-যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তুলনামূলকভাবে অন্যতম বেশি হার।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুহার ২৫ এবং নবজাতক মৃত্যুহার ১২–তে নামিয়ে আনতে হলে অপরিণত শিশুদের চিকিৎসা, পরিচর্যা ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
গর্ভধারণের ৩৮-৪২ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া শিশুকে প্রিম্যাচিওর বলা হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম বা নির্ধারিত প্রসব তারিখের অন্তত তিন সপ্তাহ আগে জন্মকে অপরিণত ধরা হয়। জন্মের সময়কাল ও ওজনের ওপর শিশুর জীবনঝুঁকি নির্ভর করে। ১৫০০ গ্রামের কম ওজন হলে তাকে প্রিটার্ম লো বার্থ ওয়েট বলা হয়।
২০০৮ সালে ইউরোপীয় ফাউন্ডেশন ফর কেয়ার অব নিউবর্ণ ইনফ্যান্টস এবং বিভিন্ন অভিভাবক সংগঠন ১৭ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক প্রিম্যাচিওরিটি দিবস ঘোষণা করে। দিবসটির পেছনে একটি ব্যক্তিগত স্মৃতিও জড়িয়ে আছে-প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের সন্তানের জন্মদিন হওয়ায় তিনি দিনটিকে অপরিণত নবজাতকের সচেতনতার প্রতীক হিসেবে বেছে নেন। ২০১১ সাল থেকে এটি বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে অপরিণত জন্মের হার বাড়ছে নানা কারণে-অতিরিক্ত সিজারিয়ান, আগাম চিকিৎসা-সিদ্ধান্ত, ভয় ও চাপ, মায়ের স্বাস্থ্যগত জটিলতা। বাংলাদেশেও নির্ধারিত সময়ের আগে সিজারিয়ানের প্রবণতা ভয়াবহভাবে বেড়েছে, যা অপরিণত শিশুর সংখ্যা বাড়াচ্ছে। ‘লেট প্রিটার্ম’ অর্থাৎ ৩৪-৩৭ সপ্তাহের শিশুর জটিলতা তুলনামূলক কম হলেও ৩২ সপ্তাহ বা তার আগে জন্মানো শিশু বেশি ঝুঁকিতে থাকে-হার্টের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি, শ্রবণ ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং শেখায় সমস্যা তৈরি হতে পারে।
উন্নত দেশে ২৫-২৬ সপ্তাহ বয়সী ‘মাইক্রো প্রিমি’ শিশুদেরও এনআইসিইউ–তে বাঁচিয়ে তোলার সক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশেও এসব সুবিধা দ্রুত উন্নত হচ্ছে।
অপরিণত শিশুর চোখের রোগ জঙচ-রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচিউরিটি-জন্মের কয়েক সপ্তাহ পর দ্রুত বাড়তে পারে এবং সময়মতো স্ক্রিনিং না হলে স্থায়ী অন্ধত্ব তৈরি করতে পারে। তাই ৩৫ সপ্তাহের আগে জন্ম এবং ২০০০ গ্রামের কম ওজনের শিশুদের ৩০ দিনের মধ্যে, আর ২৮ সপ্তাহের আগে জন্ম ও ১২০০ গ্রামের কম ওজনের শিশুদের ২০ দিনের মধ্যে বাধ্যতামূলক স্ক্রিনিং প্রয়োজন।
অপরিণত জন্মের কারণ হিসেবে গবেষণায় ৫০টিরও বেশি বিষয় শনাক্ত করা হয়েছে: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, একাধিক সন্তান ধারণ, সংক্রমণ, অপুষ্টি, ধূমপান, মানসিক চাপ, প্লাসেন্টার জটিলতা, অল্প বা বেশি বয়সে গর্ভধারণ। কখনো কোনো কারণ ছাড়াও প্রিম্যাচিওর বার্থ ঘটতে পারে।
অপরিণত শিশুর সাধারণ জটিলতার মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, কম ওজন, তাপমাত্রা ধরে রাখতে না পারা, বুকের দুধ খেতে সমস্যা, খিঁচুনি, ফ্যাকাশে বা হলুদ ত্বক, হার্ট ফেইলিওর, ডিহাইড্রেশন, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে রক্তক্ষরণ, হাইপোগ্লাইসেমিয়া ও নিউমোনিয়া।
প্রিম্যাচিওর জন্ম প্রতিরোধে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ও অ্যানিমিয়া নিয়ন্ত্রণ, সংক্রমণ চিকিৎসা, পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত প্রেনাটাল চেকআপ অত্যন্ত জরুরি। এতে প্রিম্যাচিওর জন্ম ৩০-৪০ শতাংশ কমানো সম্ভব। প্রি-টার্ম লেবার শুরু হলে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে প্রসব বিলম্ব, অ্যান্টিবায়োটিক ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম কার্যকর হতে পারে। প্রয়োজনে কর্টিকোস্টেরয়েড দিয়ে নবজাতকের ফুসফুস পরিণত করার প্রস্তুতিও নিতে হয়।
অপরিণত শিশুর পরিচর্যায় ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার, প্রশিক্ষিত নার্সিং, এনআইসিইউ–সুবিধা, মায়ের বুকের দুধ ও নিয়মিত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে জনসচেতনতায় সেমিনার, ক্যাম্পেইন, গণমাধ্যম প্রচার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা, হাসপাতালভিত্তিক ক্যাঙ্গারু কেয়ার প্রশিক্ষণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
অপরিণত শিশুর জন্ম পরিবারে মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সব স্তরেই চাপ তৈরি করে। তবুও যথাসময়ে চিকিৎসা, সঠিক পরিচর্যা, পরিবারের সহায়তা এবং প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে অনেক অপরিণত শিশুই সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে এবং জীবনে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে। অনেকেই পরবর্তীতে বিজ্ঞানী, লেখক, স্বাস্থ্যকর্মী বা সমাজনেতা হয়ে সমাজকে সমৃদ্ধ করেন। সঠিক যত্ন ও সচেতনতা পেলেই এই শিশুরাই হতে পারে আগামী দিনের দৃঢ় নায়ক-যারা পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার শক্তি রাখে।
[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]