alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

করোনাকালে বোধের রোদন

রাশিদা বেগম

: রোববার, ০২ মে ২০২১

মৃত্যু মানুষের জীবনের অনিবার্য পরিণতি। মৃত্যুকে অস্বীকার করার উপায় নেই। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই মানুষ মৃত্যুশোক বহন করে চলেছে। জন্মের পর থেকেই মানুষের বেঁচে থাকার আকাঙ্খা প্রবল। মা-বাবা, ভাই- বোন আর অপূর্ব সৃষ্টি পৃথিবী ছেড়ে পরপারে কেউ যেতে চায় না। মানুষের সবচেয়ে দুর্বল জায়গাটি মমতাময়ী মায়ের কোল। তারপর বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজন। এই আত্মিক সম্পর্কের মধ্যদিয়েই গড়ে উঠেছে সমাজ, রাষ্ট্র। সমাজ মূলত সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করেই টিকে আছে। আজ এই সমাজের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস। বিশ্বজুড়ে চলছে মানুষের ছুটোছুটি। চলছে প্রাণ বাঁচানোর লড়াই। এক অদৃশ্য মারণশক্তির কাছে হেরে যাচ্ছে লাখো প্রাণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি আমরা।

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান রাজধানীতে ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম অশুভ যাত্রা। তারপর তিন মাসের মধ্যে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর শনাক্তের ঘোষণা আসে। এক বছরের বেশি সময় ধরে মারা গেছে ১০ হাজারের বেশি মানুষ। ২০২১ সালে ভয়াবহ রূপে এসেছে দ্বিতীয় ঢেউ। এত মৃত্যু, এত লাশ, এত গণকবর, এত শোক আর আর্তনাদ পৃথিবীর ইতিহাসে আর দেখা যায়নি। বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা ১১৫৭৯ জন। আক্রান্ত প্রায় ৮ লাখ। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ প্রতিটি মানুষ। সেই ভালোবাসা স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর, সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার কিংবা মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের, ভাইয়ের সঙ্গে বোনের এমনকি আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গেও। এই বন্ধনে সামান্য আঘাত আসলে আমারা উদ্বিগ্ন হই, কষ্ট পাই। কারো অসুখ, মৃত্যু স্বজনদের কাঁদায়, শোকে ভাসায়। এক সময় শোক স্তিমিত হয়ে আসে।

কিন্তু বর্তমান করোনাভাইরাস তো পদ্মার ঢেউয়ের মতো একটি ঢেউ আরেকটি ঢেউকে অনিবার্য করে তুলেছে। ঢেউ মিলিয়ে যাচ্ছে নাতো! একজন মা পারে না মৃত সন্তানকে শেষবারের মতো স্পর্শ করতে। স্বামী পারে না স্ত্রীকে একবার দেখতে। সন্তান পারে না মা-বাবাকে একটু ছুঁয়ে দিতে। কেউ আবার হাসপাতালে অজ্ঞান অবস্থায় প্রিয়জন হারিয়েছে। অনেকে হাসপাতালে বেড না পেয়ে রাস্তায় মারা গেছে। আর লাশটি সবার অলক্ষ্যে গণকবরে চলে গেছে। এর চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি কী হতে পারে? প্রিয়জন হারানোর শোক শেষ হয় না। সময়ের ব্যবধানে হয়তো অন্তরে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। তবে কখনও কখনও হৃদয়মূলে নাড়া দিয়ে ওঠে। পুনরায় জেগে ওঠে সেই শোক। কিন্তু করোনায় প্রিয়জন হারানো ভয়াবহরূপে হৃদয়ে ক্ষত তৈরি করছে। হারানোর শূন্যতায় অন্তরে দেখা দিচ্ছে বৃহৎ গহ্বর। এই গহ্বর অপূরণীয়। আমরা পারি না প্রিয়মুখটি কাছে গিয়ে দেখতে। পারি না পরম মমতায় শেষবার ছুঁয়ে দিতে। প্রিয়জন থেকে আজ আমরা বহুদূরে। স্পর্শের বাইরে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। এই বিচ্ছন্নতাবোধের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি যার যার গন্তব্যে। তাই বেঁচে থাকার প্রাণান্ত চেষ্টায় আজ বাবার বিরুদ্ধে মা, সন্তানের বিরুদ্ধে মা-বাবা, স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রী, ভাইবোনের বিরুদ্ধে ভাই-বোন, আত্মীয়ের বিরুদ্ধে আত্মীয় দাঁড়িয়েছে। বাঁচতে হবে। আত্মিক বন্ধন রক্ষা করতে হবে।

প্রিয়জনের হাত ছেড়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার মতো সুখটুকুন কেউ পাচ্ছে না। এমন ট্র্যাজেডি পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। এত মৃত্যু আর লাশের স্তূপে কারও না কারও প্রিয়মুখ। বেঁচে থেকে জীবনের এই নির্মম ট্র্যাজেডি বহন করার মতো নয়। কেউ জানে না এই ট্র্যাজেডির শেষ কোথায়? তবু ভেঙে পড়লে চলবে না। সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয় সহায় হবেন। এই ঘোর অমানিশা দূর হয়ে নতুন ভোর দেখা দেবে। স্বজনহারা ব্যথা ভুলে নতুনভাবে উজ্জীবিত হোক প্রতিটি প্রাণ। প্রকৃতির নির্মল বাতাসে নিশ্বাস ফেলে স্বস্তি ফিরে আসুক সবার জীবনে।

লেখক : প্রভাষক,বাংলা বিভাগ, পাঁচকান্দি ডিগ্রি কলেজ, মনোহরদী, নরসিংদী।

brashida946@gmail.com

বাংলাদেশী উত্তরাধিকার: প্রবাস-জীবন ও আমাদের সংস্কৃতি

রাজনীতিতে ভাষার সহনীয় প্রয়োগ

ভারত : এসআইআর এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন

মনে কী দ্বিধা নিয়ে...

নিরাপদ সড়ক ভাবনা

অপরিকল্পিত বাঁধ-শিল্পায়নে বিপর্যস্ত বরেন্দ্র কৃষি

ছবি

মামদানি দেখালেন নেতৃত্বের মূল পরিচয় কী

চেকের মামলায় বৈধ বিনিময়, লেনদেন, দেনা-পাওনা প্রমাণ ছাড়া আর জেল নয়

নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত ভাবনা

মাদকাসক্তি: শুধু নিরাময় নয়, চাই সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার

আমেরিকার “নো কিংস” আন্দোলন

ঘি তো আমাদের লাগবেই, নো হাংকি পাংকি!

“মামদানি না জামদানি...”

ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষায় নীরব বিপ্লব

উপাত্ত সুরক্ষা আইন : গোপনীয়তা রক্ষা নাকি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ?

সমতা কি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে?

ডেঙ্গু সংকট দূরদৃষ্টির ব্যর্থতা

ষাটের দশকে বামপন্থী ভাবনার উত্থান ও বিবর্তন

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে!

বায়ুর অপর নাম জীবন

ছবি

হাওরের জীবন ও সংস্কৃতি

বিখণ্ডিত আত্মপরিচয়: তরল সহানুভূতিতে নৈতিক মূলধনের সমাজতত্ত্ব

প্রভাষকের ‘প্রভা’ যখন ‘শোক’: শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চনা

যুদ্ধ বিরতি গাজাবাসীর জন্য জরুরি ছিল

লবলং খালের মৃত্যু: স্মৃতিতে নদী, বাস্তবে দূষণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা: অর্থনৈতিক স্থিতির পূর্বশর্ত

হায় যম! আর কতক্ষণ, হবে অপেক্ষা করিতে মোরে?

পোশাক শিল্প : অগ্রগতি ও শ্রমিকের অধিকার

গণভোটের রাজনৈতিক গুরুত্ব

বামঘরানার বাটখারা...

বাগদা ফার্ম : স্মারকলিপি, অবরোধ, অনশন, আন্দোলন- কিছুতেই বরফ গলেনি

ব্যাটারি-শকট: নতুন সংকট

মতপ্রকাশ কিংবা দ্বিমত পোষণ: নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন ব্যাংক কি আদৌ প্রয়োজন

ট্রাম্প ও শি’র ‘কৌশলগত শান্তি’

আশার সমাজতত্ত্ব: বিভ্রান্তির যুগে ভবিষ্যৎ নির্মাণের বিপ্লবী বিজ্ঞান

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

করোনাকালে বোধের রোদন

রাশিদা বেগম

রোববার, ০২ মে ২০২১

মৃত্যু মানুষের জীবনের অনিবার্য পরিণতি। মৃত্যুকে অস্বীকার করার উপায় নেই। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই মানুষ মৃত্যুশোক বহন করে চলেছে। জন্মের পর থেকেই মানুষের বেঁচে থাকার আকাঙ্খা প্রবল। মা-বাবা, ভাই- বোন আর অপূর্ব সৃষ্টি পৃথিবী ছেড়ে পরপারে কেউ যেতে চায় না। মানুষের সবচেয়ে দুর্বল জায়গাটি মমতাময়ী মায়ের কোল। তারপর বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজন। এই আত্মিক সম্পর্কের মধ্যদিয়েই গড়ে উঠেছে সমাজ, রাষ্ট্র। সমাজ মূলত সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করেই টিকে আছে। আজ এই সমাজের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস। বিশ্বজুড়ে চলছে মানুষের ছুটোছুটি। চলছে প্রাণ বাঁচানোর লড়াই। এক অদৃশ্য মারণশক্তির কাছে হেরে যাচ্ছে লাখো প্রাণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি আমরা।

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান রাজধানীতে ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম অশুভ যাত্রা। তারপর তিন মাসের মধ্যে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর শনাক্তের ঘোষণা আসে। এক বছরের বেশি সময় ধরে মারা গেছে ১০ হাজারের বেশি মানুষ। ২০২১ সালে ভয়াবহ রূপে এসেছে দ্বিতীয় ঢেউ। এত মৃত্যু, এত লাশ, এত গণকবর, এত শোক আর আর্তনাদ পৃথিবীর ইতিহাসে আর দেখা যায়নি। বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা ১১৫৭৯ জন। আক্রান্ত প্রায় ৮ লাখ। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ প্রতিটি মানুষ। সেই ভালোবাসা স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর, সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার কিংবা মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের, ভাইয়ের সঙ্গে বোনের এমনকি আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গেও। এই বন্ধনে সামান্য আঘাত আসলে আমারা উদ্বিগ্ন হই, কষ্ট পাই। কারো অসুখ, মৃত্যু স্বজনদের কাঁদায়, শোকে ভাসায়। এক সময় শোক স্তিমিত হয়ে আসে।

কিন্তু বর্তমান করোনাভাইরাস তো পদ্মার ঢেউয়ের মতো একটি ঢেউ আরেকটি ঢেউকে অনিবার্য করে তুলেছে। ঢেউ মিলিয়ে যাচ্ছে নাতো! একজন মা পারে না মৃত সন্তানকে শেষবারের মতো স্পর্শ করতে। স্বামী পারে না স্ত্রীকে একবার দেখতে। সন্তান পারে না মা-বাবাকে একটু ছুঁয়ে দিতে। কেউ আবার হাসপাতালে অজ্ঞান অবস্থায় প্রিয়জন হারিয়েছে। অনেকে হাসপাতালে বেড না পেয়ে রাস্তায় মারা গেছে। আর লাশটি সবার অলক্ষ্যে গণকবরে চলে গেছে। এর চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি কী হতে পারে? প্রিয়জন হারানোর শোক শেষ হয় না। সময়ের ব্যবধানে হয়তো অন্তরে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। তবে কখনও কখনও হৃদয়মূলে নাড়া দিয়ে ওঠে। পুনরায় জেগে ওঠে সেই শোক। কিন্তু করোনায় প্রিয়জন হারানো ভয়াবহরূপে হৃদয়ে ক্ষত তৈরি করছে। হারানোর শূন্যতায় অন্তরে দেখা দিচ্ছে বৃহৎ গহ্বর। এই গহ্বর অপূরণীয়। আমরা পারি না প্রিয়মুখটি কাছে গিয়ে দেখতে। পারি না পরম মমতায় শেষবার ছুঁয়ে দিতে। প্রিয়জন থেকে আজ আমরা বহুদূরে। স্পর্শের বাইরে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। এই বিচ্ছন্নতাবোধের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি যার যার গন্তব্যে। তাই বেঁচে থাকার প্রাণান্ত চেষ্টায় আজ বাবার বিরুদ্ধে মা, সন্তানের বিরুদ্ধে মা-বাবা, স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রী, ভাইবোনের বিরুদ্ধে ভাই-বোন, আত্মীয়ের বিরুদ্ধে আত্মীয় দাঁড়িয়েছে। বাঁচতে হবে। আত্মিক বন্ধন রক্ষা করতে হবে।

প্রিয়জনের হাত ছেড়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার মতো সুখটুকুন কেউ পাচ্ছে না। এমন ট্র্যাজেডি পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। এত মৃত্যু আর লাশের স্তূপে কারও না কারও প্রিয়মুখ। বেঁচে থেকে জীবনের এই নির্মম ট্র্যাজেডি বহন করার মতো নয়। কেউ জানে না এই ট্র্যাজেডির শেষ কোথায়? তবু ভেঙে পড়লে চলবে না। সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয় সহায় হবেন। এই ঘোর অমানিশা দূর হয়ে নতুন ভোর দেখা দেবে। স্বজনহারা ব্যথা ভুলে নতুনভাবে উজ্জীবিত হোক প্রতিটি প্রাণ। প্রকৃতির নির্মল বাতাসে নিশ্বাস ফেলে স্বস্তি ফিরে আসুক সবার জীবনে।

লেখক : প্রভাষক,বাংলা বিভাগ, পাঁচকান্দি ডিগ্রি কলেজ, মনোহরদী, নরসিংদী।

brashida946@gmail.com

back to top