alt

opinion » post-editorial

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হয়েছেটা কী

মাছুম বিল্লাহ

: বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চলমান দুর্নীতি, অস্থিরতা, রাজনৈতিক খেলা উচচশিক্ষা ক্ষেত্রে এক হতাশাব্যজ্ঞক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সেই হিসেবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা খোলার প্রস্তাবকে সমর্থন করা যায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ, ইউজিসি এবং সর্বোপরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে অনুরোধ করব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগে প্রকৃত শিক্ষানুরাগী শিক্ষকদের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া এবং তথাকথিত ছাত্ররাজনীতিকে প্রশয় না দেয়ার জন্য। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা একক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই পদের সম্মানটুকু হারাচ্ছেন। তারা যা করে থাকেন সেগুলো হচ্ছে শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তা নিয়োগ ও বিভিন্ন আর্থিক বিষয়ে অনিয়ম করা। নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রিয়তা ও অর্থিক সম্পৃক্ততা, একাডেমিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি ইত্যাদি এখন সাধারণ খবরে পরিণত হয়েছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক তথা প্রশাসনের এই দশা, এই সুযোগে ছাত্র রাজনীতি ধারণ করেছে এক কুৎসিত চিত্র। তারা যা ইচ্ছে তাই করছে। সাধারণ ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা শুধু কোণঠাসা নয়, তাদের ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাতে হয় ক্যাম্পাসে অথচ বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত। এই অবস্থায় জাতির ভবিষ্যৎ কোনদিকে যাচ্ছে সেটি কি আমরা চিন্তা করছি? ছাত্র নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্নীতির চিত্র দেখে নিজেরাই অনেক কিছু হাতে নিয়ে নেন। তাদের সামনে যে উদাহরণ তারা দেখছেন তাতে এর চেয়ে ভালো আর কি করবেন তারা? একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্র সংগঠন দেখলাম ভিসিকে ক্যাস্পাসে অবাঞ্জিত ঘোষণা করেছে। আবার ভিসিরা এদের খুশি করেই চেয়ারে থাকেন। একজন আক্ষেপ করে লিখেছেন সব ছাত্রকে সরকারি ছাত্র সংগঠন মিছিল করার জন্য আটকে রেখেছে। সেখান দিয়ে একজন শিক্ষক যাচ্ছেন তাকেও মিছিলে যেতে বলছেন এবং আরও বলছেন আজ সে সাধারণ শিক্ষক, তাদের সঙ্গে মিছিল করলে প্রভোস্ট বানিয়ে দেবেন। লেখক বলছেন সেই দিন হয়তো বেশি দেরি নয় যেদিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদেরও সরকারি ছাত্র সংগঠনের মিছিল করতে হবে অবস্থার লাগাম যদি টানা না হয়।

একজন ভিসি দায়িত্ব পাওয়ার পরই নিজ পছন্দমতো ও আজ্ঞাবহ লোক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে সব স্তর সাজিয়ে নেন যারা চাটুকারিতায় তুষ্ট রাখেন ভিসিদের। ভিসিরা নিজেদের আত্মীয়-স্বজন, ছেলেমেয়ে বন্ধু-বান্ধবদের ছেলেমেয় যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার উপযুক্ত নয় অথচ শর্ত শিথিল করে, আইন ভঙ্গ করে তাদের শিক্ষক হিসেবে নিযোগ দেন। এ ধরনের ভিসিরা তো সত্য কথাটি জোর করে বলতে পারছেন না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কি ধরনের শিক্ষক আমরা নিয়োগ দিচ্ছি। আর এটি তো একদিন বা দুদিনে তৈরি হয়নি। যেভাবেই নিয়োগ হোক অন্যান্য যে কোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ অধিকতর মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত ও আলোকিত। তাদের কোনভাবে কলঙ্কিত করার সুযোগ তৈরি হতে দেয়া উচিত নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, মানবিকতার স্বার্থে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞানের বাতিঘর। এখানে স্বায়ত্তশাসন প্রয়োজন উচ্চশিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখার জন্য এবং গোটা জাতি ও বিশ্বকে অত্যন্ত মার্জিত, জ্ঞানী, যোগ্য ও দক্ষ জনশক্তি উপহার দেয়ার জন্য যাতে তারা দেশ, জাতি ও মানবতার সেবা করতে পারেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে।

নিজেদের প্রয়োজন ও চাহিদামাফিক শিক্ষক নিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ অন্যান্য শিক্ষা আনুষঙ্গিক বিষয় নিজেদের মতো পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে না পারলে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়

নিজেদের প্রযোজন ও চাহিদামাফিক শিক্ষক নিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ অন্যান্য শিক্ষা আনুষঙ্গিক বিষয় নিজেদের মতো পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে না পারলে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। এজন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়ত্তশাসন দরকার। অথচ রাজনৈতিকভাবে নিযোগপ্রাপ্ত ভিসিদের কারণেই মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সায়ত্তশাসন ভোগ করতে পারছে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ডিন, প্রো-ভিসি ও ভিসি তো কোন রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য ওইসব পদে বসেন না। তারা সবাই অত্যন্ত সম্মানিত শিক্ষক। যে পদেই তারা বসুন না কেন, সবাই শিক্ষক। যেসব পদে বসেছেন সেগুলোও শিক্ষকতার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তাহলে তাদের নির্বাচনের মাধ্যমে ওইসব পদে বসতে হবে কেন? কেন তাদের নীল, সাদা কিংবা গোলাপি দলকে জেতানোর জন্য দলে লোক ভারী করতে হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোটের সময় এলে শিক্ষকদের সে কি দৌড়-ঝাঁপ, ব্যস্ততা দেখা যায় শ্রেণী কার্যক্রম বাদ দিয়ে। মনে হয় ইউনিয়ন কাউন্সিলের নির্বাচন! এগুলো থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে তা না হলে আজ হোক আর কাল হোক বিদেশিরা এদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা খুলবে এবং শিক্ষা বাণিজ্য তারা করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো রেজাল্ট করা এবং আসলেই ভালো ছাত্র তারা তো বিদেশে চলে যাচ্ছেন, যাচ্ছেন কিন্তু আর আসছেন না। তারা সেবা দিচ্ছেন বিদেশকে। এতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তোষামোদকারীরা বেশ আনন্দিত হন অর্থাৎ তাদের বাধা যেন অনেকটা কমে গেল। এখন ভিসি নিয়োগের যে পদ্ধতি তাতে রাজনীতি না করে তো শিক্ষকদের উপায়ও নেই। সিন্ডিকেট বা সিনেটের সদস্যরা যদি ভোট দেন তাতে কোন অধ্যাপক ভিসি হতে পারছেন না। তিনজন ঊর্ধ্বক্রমের অধ্যাপকের মধ্যে একজন ভিসি হবেন। তাকে নিয়োগ দেন চান্সেলর। পার্টির আগ্রহের বাইরে যেসব অধ্যাপকদের অবস্থান তারা যত বড় গবেষকই হোক না কেন, যত বড় অধ্যাপকই হোকনা কেন, ভিসি হতে হলে যে পার্টি যখন ক্ষমতায় সেই পার্টিার স্তুতি গাইতেই হবে। এখন নিজেদের কাছেই যদি আমরা প্রশ্ন করি যে, এই পদ্ধতিতে ভিসি নিয়োগে এবং ভিসিদের কার্যাবলিতে বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা ও দেশ কতটা উপকৃত হয়েছে বা হচ্ছে? নাকি প্রশ্নবিদ্ধই হচ্ছে বিষয়গুলো? তাহলে আমাদের কোনটি করা উচিত?

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘সাইটেশন’ দেখে যেমন তাদের র‌্যাংকিং ও মান ধরা হয় সেখানে আমাদের শিক্ষকদেও ক্ষেত্রে দেখতে হয় তারা কয়টি ছাত্র আন্দোলন সরকারি চাত্র সংগঠন দ্বারা ধামিয়েছেন, কয়টি পুলিশি অ্যাকশন নিয়েছেন, কতজন শিক্ষক কর্মচারী অবৈধভাবে চাকরিতে ঢুকিয়ে দল ভারী করেছেন। আন্তর্জাতিক কোন র‌্যাংকিংয়েই কোন বছর আমাদের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান থাকেনা কারণ উপরোক্ত ক্রাইটিয়াগুলো তো র‌্যাংকিংয়ে সহায়তা করে না। ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবার ক্ষেপে যান যে, তাদের সঠিকভাবে বিচার করা হয়নি।

[লেখক : ব্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত]

চা-জনগোষ্ঠীর দণ্ডপূজা ও উপেক্ষিত অধিকার

মেরিটোক্রেসি: সমাজ ও রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা

রম্যগদ্য: হাতের মুঠোয় বিশ্ব

শারদীয় পূজার দিনলিপি

ঋণের জন্য আত্মহত্যা, ঋণ নিয়েই চল্লিশা

জাকসু নির্বাচন ও হট্টগোল: আমাদের জন্য শিক্ষণীয় কী?

নরসুন্দর পেশার গুরুত্ব ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন

বিভাগভিত্তিক এমপিআর নির্বাচন পদ্ধতি

প্ল্যাটফর্ম সমাজে বাংলাদেশ: জ্ঞানের ভবিষ্যৎ কার হাতে?

আনন্দবেদনার হাসপাতাল: সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ছবি

ভিন্ন ধরনের নির্বাচন, ভিন্ন ধরনের ফল

বেসরকারি খাতে সিআইবি’র যাত্রা: ঋণ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত

স্বাস্থ্যসেবায় মানবিকতা প্রতিষ্ঠা হোক

ছবি

নেপালে সরকার পতন ও বামপন্থীদের ভবিষ্যৎ

ডাকসু নির্বাচন ও সংস্কারপ্রয়াস: রাজনৈতিক চিন্তার নতুন দিগন্ত

নির্বাচন কি সব সমস্যার সমাধান

জিতিয়া উৎসব

ছবি

অলির পর নেপাল কোন পথে?

রম্যগদ্য: “মরেও বাঁচবি নারে পাগলা...”

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শ্রীপুর পৌরসভা

ভূরিভোজ, উচ্ছেদ এবং আদিবাসী পাহাড়িয়া

অনলাইন সংস্কৃতিতে হাস্যরসের সমাজবিজ্ঞান

মামলাজট নিরসনে দেওয়ানি কার্যবিধির সংস্কার

বাস্তব মস্কো বনাম বিভ্রান্ত ইউরোপ

ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি

সড়ক দুর্ঘটনা: কারও মৃত্যু সাধারণ, কারও মৃত্যু বিশেষ

ঐকমত্য ছাড়াও কিছু সংস্কার সম্ভব

আবার বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সংকটে সাধারণ মানুষ

ডায়াবেটিস রোগীর সেবা ও জনসচেতনতা

ভিন্ন ধরনের ডাকসু নির্বাচন

ডাকসু নির্বাচন : পেছনে ফেলে আসি

প্রসঙ্গ : এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ

“কোপা চাটিগাঁ...”

ই-কমার্স হতে পারে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন

ভারত-চীনের নতুন সমীকরণ

সাইবার যুগে মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা

tab

opinion » post-editorial

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হয়েছেটা কী

মাছুম বিল্লাহ

বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চলমান দুর্নীতি, অস্থিরতা, রাজনৈতিক খেলা উচচশিক্ষা ক্ষেত্রে এক হতাশাব্যজ্ঞক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সেই হিসেবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা খোলার প্রস্তাবকে সমর্থন করা যায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ, ইউজিসি এবং সর্বোপরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে অনুরোধ করব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগে প্রকৃত শিক্ষানুরাগী শিক্ষকদের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া এবং তথাকথিত ছাত্ররাজনীতিকে প্রশয় না দেয়ার জন্য। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা একক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই পদের সম্মানটুকু হারাচ্ছেন। তারা যা করে থাকেন সেগুলো হচ্ছে শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তা নিয়োগ ও বিভিন্ন আর্থিক বিষয়ে অনিয়ম করা। নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রিয়তা ও অর্থিক সম্পৃক্ততা, একাডেমিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি ইত্যাদি এখন সাধারণ খবরে পরিণত হয়েছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক তথা প্রশাসনের এই দশা, এই সুযোগে ছাত্র রাজনীতি ধারণ করেছে এক কুৎসিত চিত্র। তারা যা ইচ্ছে তাই করছে। সাধারণ ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা শুধু কোণঠাসা নয়, তাদের ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাতে হয় ক্যাম্পাসে অথচ বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত। এই অবস্থায় জাতির ভবিষ্যৎ কোনদিকে যাচ্ছে সেটি কি আমরা চিন্তা করছি? ছাত্র নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্নীতির চিত্র দেখে নিজেরাই অনেক কিছু হাতে নিয়ে নেন। তাদের সামনে যে উদাহরণ তারা দেখছেন তাতে এর চেয়ে ভালো আর কি করবেন তারা? একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্র সংগঠন দেখলাম ভিসিকে ক্যাস্পাসে অবাঞ্জিত ঘোষণা করেছে। আবার ভিসিরা এদের খুশি করেই চেয়ারে থাকেন। একজন আক্ষেপ করে লিখেছেন সব ছাত্রকে সরকারি ছাত্র সংগঠন মিছিল করার জন্য আটকে রেখেছে। সেখান দিয়ে একজন শিক্ষক যাচ্ছেন তাকেও মিছিলে যেতে বলছেন এবং আরও বলছেন আজ সে সাধারণ শিক্ষক, তাদের সঙ্গে মিছিল করলে প্রভোস্ট বানিয়ে দেবেন। লেখক বলছেন সেই দিন হয়তো বেশি দেরি নয় যেদিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদেরও সরকারি ছাত্র সংগঠনের মিছিল করতে হবে অবস্থার লাগাম যদি টানা না হয়।

একজন ভিসি দায়িত্ব পাওয়ার পরই নিজ পছন্দমতো ও আজ্ঞাবহ লোক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে সব স্তর সাজিয়ে নেন যারা চাটুকারিতায় তুষ্ট রাখেন ভিসিদের। ভিসিরা নিজেদের আত্মীয়-স্বজন, ছেলেমেয়ে বন্ধু-বান্ধবদের ছেলেমেয় যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার উপযুক্ত নয় অথচ শর্ত শিথিল করে, আইন ভঙ্গ করে তাদের শিক্ষক হিসেবে নিযোগ দেন। এ ধরনের ভিসিরা তো সত্য কথাটি জোর করে বলতে পারছেন না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কি ধরনের শিক্ষক আমরা নিয়োগ দিচ্ছি। আর এটি তো একদিন বা দুদিনে তৈরি হয়নি। যেভাবেই নিয়োগ হোক অন্যান্য যে কোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ অধিকতর মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত ও আলোকিত। তাদের কোনভাবে কলঙ্কিত করার সুযোগ তৈরি হতে দেয়া উচিত নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, মানবিকতার স্বার্থে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞানের বাতিঘর। এখানে স্বায়ত্তশাসন প্রয়োজন উচ্চশিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখার জন্য এবং গোটা জাতি ও বিশ্বকে অত্যন্ত মার্জিত, জ্ঞানী, যোগ্য ও দক্ষ জনশক্তি উপহার দেয়ার জন্য যাতে তারা দেশ, জাতি ও মানবতার সেবা করতে পারেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে।

নিজেদের প্রয়োজন ও চাহিদামাফিক শিক্ষক নিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ অন্যান্য শিক্ষা আনুষঙ্গিক বিষয় নিজেদের মতো পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে না পারলে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়

নিজেদের প্রযোজন ও চাহিদামাফিক শিক্ষক নিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ অন্যান্য শিক্ষা আনুষঙ্গিক বিষয় নিজেদের মতো পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে না পারলে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। এজন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়ত্তশাসন দরকার। অথচ রাজনৈতিকভাবে নিযোগপ্রাপ্ত ভিসিদের কারণেই মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সায়ত্তশাসন ভোগ করতে পারছে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ডিন, প্রো-ভিসি ও ভিসি তো কোন রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য ওইসব পদে বসেন না। তারা সবাই অত্যন্ত সম্মানিত শিক্ষক। যে পদেই তারা বসুন না কেন, সবাই শিক্ষক। যেসব পদে বসেছেন সেগুলোও শিক্ষকতার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তাহলে তাদের নির্বাচনের মাধ্যমে ওইসব পদে বসতে হবে কেন? কেন তাদের নীল, সাদা কিংবা গোলাপি দলকে জেতানোর জন্য দলে লোক ভারী করতে হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোটের সময় এলে শিক্ষকদের সে কি দৌড়-ঝাঁপ, ব্যস্ততা দেখা যায় শ্রেণী কার্যক্রম বাদ দিয়ে। মনে হয় ইউনিয়ন কাউন্সিলের নির্বাচন! এগুলো থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে তা না হলে আজ হোক আর কাল হোক বিদেশিরা এদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা খুলবে এবং শিক্ষা বাণিজ্য তারা করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো রেজাল্ট করা এবং আসলেই ভালো ছাত্র তারা তো বিদেশে চলে যাচ্ছেন, যাচ্ছেন কিন্তু আর আসছেন না। তারা সেবা দিচ্ছেন বিদেশকে। এতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তোষামোদকারীরা বেশ আনন্দিত হন অর্থাৎ তাদের বাধা যেন অনেকটা কমে গেল। এখন ভিসি নিয়োগের যে পদ্ধতি তাতে রাজনীতি না করে তো শিক্ষকদের উপায়ও নেই। সিন্ডিকেট বা সিনেটের সদস্যরা যদি ভোট দেন তাতে কোন অধ্যাপক ভিসি হতে পারছেন না। তিনজন ঊর্ধ্বক্রমের অধ্যাপকের মধ্যে একজন ভিসি হবেন। তাকে নিয়োগ দেন চান্সেলর। পার্টির আগ্রহের বাইরে যেসব অধ্যাপকদের অবস্থান তারা যত বড় গবেষকই হোক না কেন, যত বড় অধ্যাপকই হোকনা কেন, ভিসি হতে হলে যে পার্টি যখন ক্ষমতায় সেই পার্টিার স্তুতি গাইতেই হবে। এখন নিজেদের কাছেই যদি আমরা প্রশ্ন করি যে, এই পদ্ধতিতে ভিসি নিয়োগে এবং ভিসিদের কার্যাবলিতে বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা ও দেশ কতটা উপকৃত হয়েছে বা হচ্ছে? নাকি প্রশ্নবিদ্ধই হচ্ছে বিষয়গুলো? তাহলে আমাদের কোনটি করা উচিত?

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘সাইটেশন’ দেখে যেমন তাদের র‌্যাংকিং ও মান ধরা হয় সেখানে আমাদের শিক্ষকদেও ক্ষেত্রে দেখতে হয় তারা কয়টি ছাত্র আন্দোলন সরকারি চাত্র সংগঠন দ্বারা ধামিয়েছেন, কয়টি পুলিশি অ্যাকশন নিয়েছেন, কতজন শিক্ষক কর্মচারী অবৈধভাবে চাকরিতে ঢুকিয়ে দল ভারী করেছেন। আন্তর্জাতিক কোন র‌্যাংকিংয়েই কোন বছর আমাদের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান থাকেনা কারণ উপরোক্ত ক্রাইটিয়াগুলো তো র‌্যাংকিংয়ে সহায়তা করে না। ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবার ক্ষেপে যান যে, তাদের সঠিকভাবে বিচার করা হয়নি।

[লেখক : ব্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত]

back to top