নারীদের মিছিলের খবর প্রকাশ করায়
আফগানিস্তানে নারীদের বিক্ষোভ মিছিলের খবর প্রকাশের জন্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের মারধর করেছে তালেবান। হামলার শিকার সাংবাদিকদের একজন বিদেশিও ছিলেন। এক প্রতিবেদনে এএফপি জানিয়েছে, কাবুলে আফগান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে নারীদের একটি বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। প্রায় ২০ জন নারী হাতে লেখা প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল নিয়ে মন্ত্রণালয়ের ফটকের কাছে আসেন এবং সমাবেশ করেন।
ওই সময় নারীরা প্ল্যাকার্ড হাতে শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি বন্ধ কর স্লোগান দেন। তাদের প্ল্যাকার্ডে আমাদের পড়াশোনা ও কাজ করার অধিকার নেই ও বেকারত্ব, দারিদ্র্য, ক্ষুধার অবসান চাই লেখা ছিল। ওই নারীদের দেড় ঘণ্টা বিক্ষোভের অনুমতি দেয় তালেবান কর্তৃপক্ষ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল তালেবান সরকারের রক্ষীবাহিনীর সদস্যরাও। তাদের কারো হতে ছিল এম ১৬, কারো হাতে ছিল একে ৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল। কয়েকজন পরেছিলেন বুলেট প্রুফ ভেস্টও। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে এই মিছিল ও সমাবেশ। তারপর আচমকা এক তালেবান রক্ষী ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক বিদেশি সাংবাদিককে বন্দুকের বাঁট দিয়ে আঘাত করে। একই সময়ে আরেক ফটো সাংবাদিক অপর এক রক্ষীর লাথির আঘাতে সড়কে পড়ে যান। এ ছাড়া কমপক্ষে আরও দুই সাংবাদিক ওই সময় তালেবান যোদ্ধাদের হামলার শিকার হন।
প্রতিবাদ মিছিলের অন্যতম সংগঠক জাহরা মোহাম্মদি এ সম্পর্কে বলেন, আজকের ঘটনায় আরেকবার প্রমাণিত হলো- তালেবান শাসনের অধীনে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক কিংবা নারী- কেউই নিরাপদ নয়। ঝুঁকি সত্ত্বেও আফগান নারীরা নিজেদের অধিকারের জন্য মিছিল করেছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি হচ্ছে, দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, নারী থেকে শুরু করে কাউকেই সম্মান করছে না তালেবান। তালেবান আমাদের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নিয়েছে, কিন্তু অবশ্যে তা পুনরায় ফিরিয়ে দিতে হবে তাদের। মেয়েদের স্কুলকগুলো অবিলম্বে খুলে দিতে হবে। আমরা সব আফগান কিশোরী ও তরুণীদের উদ্দেশে বলতে চাই, তালেবানদের ভয় পেয়ো না, নিজেদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নামো।
চলতি বছরের মধ্য আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। এরপর দেড় মাসের বেশি ধরে দেশটির মাধ্যমিক স্কুলের মেয়েশিক্ষার্থীরা স্কুল যেতে পারছে না। পাশাপাশি আফগান নারীদের কর্মস্থলে কাজ করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটি।
মোহাম্মাদি বলেন, আফগান সব মেয়ে ও নারীর প্রতি আমার বার্তা হচ্ছে, তালেবানকে ভয় পেও না। এমনকি তোমাদের পরিবারের সদস্যরা ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি না দিলেও ভয় পাবে না। ঘরের বাইরে বের হও। আত্মত্যাগ কর। নিজের অধিকারের জন্য লড়াই কর। পরের প্রজন্ম যাতে শান্তিতে থাকতে পারে, এ জন্য আমাদের আত্মত্যাগ করতে হবে। বিক্ষোভের সময় নারীদের মিছিলের পাশাপাশি শিশুদেরও হাঁটতে দেখা যায়। তবে তারা মিছিলের অংশ ছিল কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এর আগে ২৬ আগস্ট কাবুলে আফগান সংবাদমাধ্যম টোলোনিউজের সাংবাদিক জিয়ার খান ইয়াদ ও তার ক্যামেরাম্যান তালেবানের আক্রমণের শিকার হন। পরে ১০ সেপ্টেম্বর অন্য আরেক নারী বিক্ষোভের প্রতিবেদন তৈরির সময়
কমপক্ষে পাঁচ সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে তালেবান। তাদের মধ্যে দুজনকে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্মমভাবে পেটানো হয়।
গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখলের মধ্যে দিয়ে আফগানিস্তানের জাতীয় ক্ষমুায় আসীন হয় কট্টর সুন্নি ইসলামপন্থি গোষ্ঠী তালেবান। ক্ষমতা দখলের পরপরই কো এডুকেশন ও মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয় এই গোষ্ঠী। প্রায় আড়াই মাস ধরে এই স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে দেশটির নারী শিক্ষা ব্যবস্থা। অবশ্য জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের কাছে তালেবান সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে- খুব দ্রুতই ফের চালু করা হবে আফগানিস্তানের মেয়ে স্কুলগুলো। দেশটির ৩৪টি প্রদেশের ৫টিতে ইতোমধ্যে মেয়ে স্কুলগুলো খুলে দেয়া হয়েছে বলেও জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে তালেবান।
নারীদের মিছিলের খবর প্রকাশ করায়
বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর ২০২১
আফগানিস্তানে নারীদের বিক্ষোভ মিছিলের খবর প্রকাশের জন্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের মারধর করেছে তালেবান। হামলার শিকার সাংবাদিকদের একজন বিদেশিও ছিলেন। এক প্রতিবেদনে এএফপি জানিয়েছে, কাবুলে আফগান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে নারীদের একটি বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। প্রায় ২০ জন নারী হাতে লেখা প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল নিয়ে মন্ত্রণালয়ের ফটকের কাছে আসেন এবং সমাবেশ করেন।
ওই সময় নারীরা প্ল্যাকার্ড হাতে শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি বন্ধ কর স্লোগান দেন। তাদের প্ল্যাকার্ডে আমাদের পড়াশোনা ও কাজ করার অধিকার নেই ও বেকারত্ব, দারিদ্র্য, ক্ষুধার অবসান চাই লেখা ছিল। ওই নারীদের দেড় ঘণ্টা বিক্ষোভের অনুমতি দেয় তালেবান কর্তৃপক্ষ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল তালেবান সরকারের রক্ষীবাহিনীর সদস্যরাও। তাদের কারো হতে ছিল এম ১৬, কারো হাতে ছিল একে ৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল। কয়েকজন পরেছিলেন বুলেট প্রুফ ভেস্টও। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে এই মিছিল ও সমাবেশ। তারপর আচমকা এক তালেবান রক্ষী ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক বিদেশি সাংবাদিককে বন্দুকের বাঁট দিয়ে আঘাত করে। একই সময়ে আরেক ফটো সাংবাদিক অপর এক রক্ষীর লাথির আঘাতে সড়কে পড়ে যান। এ ছাড়া কমপক্ষে আরও দুই সাংবাদিক ওই সময় তালেবান যোদ্ধাদের হামলার শিকার হন।
প্রতিবাদ মিছিলের অন্যতম সংগঠক জাহরা মোহাম্মদি এ সম্পর্কে বলেন, আজকের ঘটনায় আরেকবার প্রমাণিত হলো- তালেবান শাসনের অধীনে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক কিংবা নারী- কেউই নিরাপদ নয়। ঝুঁকি সত্ত্বেও আফগান নারীরা নিজেদের অধিকারের জন্য মিছিল করেছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি হচ্ছে, দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, নারী থেকে শুরু করে কাউকেই সম্মান করছে না তালেবান। তালেবান আমাদের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নিয়েছে, কিন্তু অবশ্যে তা পুনরায় ফিরিয়ে দিতে হবে তাদের। মেয়েদের স্কুলকগুলো অবিলম্বে খুলে দিতে হবে। আমরা সব আফগান কিশোরী ও তরুণীদের উদ্দেশে বলতে চাই, তালেবানদের ভয় পেয়ো না, নিজেদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নামো।
চলতি বছরের মধ্য আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। এরপর দেড় মাসের বেশি ধরে দেশটির মাধ্যমিক স্কুলের মেয়েশিক্ষার্থীরা স্কুল যেতে পারছে না। পাশাপাশি আফগান নারীদের কর্মস্থলে কাজ করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটি।
মোহাম্মাদি বলেন, আফগান সব মেয়ে ও নারীর প্রতি আমার বার্তা হচ্ছে, তালেবানকে ভয় পেও না। এমনকি তোমাদের পরিবারের সদস্যরা ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি না দিলেও ভয় পাবে না। ঘরের বাইরে বের হও। আত্মত্যাগ কর। নিজের অধিকারের জন্য লড়াই কর। পরের প্রজন্ম যাতে শান্তিতে থাকতে পারে, এ জন্য আমাদের আত্মত্যাগ করতে হবে। বিক্ষোভের সময় নারীদের মিছিলের পাশাপাশি শিশুদেরও হাঁটতে দেখা যায়। তবে তারা মিছিলের অংশ ছিল কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এর আগে ২৬ আগস্ট কাবুলে আফগান সংবাদমাধ্যম টোলোনিউজের সাংবাদিক জিয়ার খান ইয়াদ ও তার ক্যামেরাম্যান তালেবানের আক্রমণের শিকার হন। পরে ১০ সেপ্টেম্বর অন্য আরেক নারী বিক্ষোভের প্রতিবেদন তৈরির সময়
কমপক্ষে পাঁচ সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে তালেবান। তাদের মধ্যে দুজনকে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্মমভাবে পেটানো হয়।
গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখলের মধ্যে দিয়ে আফগানিস্তানের জাতীয় ক্ষমুায় আসীন হয় কট্টর সুন্নি ইসলামপন্থি গোষ্ঠী তালেবান। ক্ষমতা দখলের পরপরই কো এডুকেশন ও মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয় এই গোষ্ঠী। প্রায় আড়াই মাস ধরে এই স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে দেশটির নারী শিক্ষা ব্যবস্থা। অবশ্য জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের কাছে তালেবান সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে- খুব দ্রুতই ফের চালু করা হবে আফগানিস্তানের মেয়ে স্কুলগুলো। দেশটির ৩৪টি প্রদেশের ৫টিতে ইতোমধ্যে মেয়ে স্কুলগুলো খুলে দেয়া হয়েছে বলেও জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে তালেবান।