রাত্রিমণি
গোলাম কিবরিয়া পিনু
রাত্রিমণি তুমি আছো বলে
নৌজীবী হয়েও
নদীতেই রাত কাটাতে পারছি!
নৌপথে যেতে যেতে
রাত্রিবেলায় তোমাকেই শুধু একান্তে পাই!
তুমি পাপপুণ্য বিচার না করেই
আলো ছড়িয়েছো!
পীতবর্ণ পোশাকেও
আমি তোমাকে গ্রহণ করেছি গ্রহণকালে!
এতটা উদার হয়ে এতটা বিস্তৃত হতে পারো
তা অবনীতলের সবাই জানে!
মনে হয় তুমি তোমার সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়ার জন্য
ধ্যানমগ্ন হয়ে থাকো!
গাঙচিলও তোমার সুষম আলো পেয়ে
আমার মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায়,
আমি তখন গাঙ পার হতে থাকি!
প্রদোষ-আলোর পর তোমার আলো না থাকলে
রাত্রির নিকষ অন্ধকারে
কোনো গাঙই পার হতে পারতাম না!
সশস্ত্র সুন্দর
মতিন রায়হান
আমার শব্দেরা আজ ঘিরে ধরেছে তোমাকে!
কোথায় পালাবে! স্বরবৃত্তে তোমাকে নাচাবো!
হেলেদুলে মাত্রাবৃত্তে ছড়াবে সৌন্দর্য! অক্ষরের বৃত্তে
প্রণয়-বাঁধনে বাঁধা পড়ে যাবে; মুক্তছন্দে ছুটে এসে
যদি ভালোবাসা দাও, তবে ঠিক পর্বত ডিঙাবো!
স্রোতল নদীর গানে বাজাবো তোমাকে! যদি বা
অন্যথা করো, তবে জুলেখার ছুরি দিয়ে তোমার
হৃদয় কেটে জনে জনে বিলাবো! চড়াতে চাও শূলে?
তোয়াক্কা করি না! মনসুর হাল্লাজের মতো মৃত্যুঞ্জয়ী
আমার কবিতা! ‘আনাল হক’ ‘আনাল হক’
ধ্বনিতে অক্ষয়! আগুনে পোড়াবে যদি তবে
ছাইভস্মেও আছি, জলেও রয়েছে যেন আমার
কবিতা...ঢেউয়ে ঢেউয়ে দূর সমুদ্দুরগামী...
আকাশের নীলেও রয়েছে আজ আমার ঠিকানা
আছে যত শব্দরাশি সশস্ত্র সুন্দর, কায়মনে ডাকে
আমার কবিতা আজ ঘিরে রেখেছে তোমাকে!
ভ্রান্তির অবসাদ
রাহমান ওয়াহিদ
ছিল ঠিক এক সময়, কীই না ছিল এই সান্ধ্য যাপনে
রোদশাদা দুপুর ছিল, বিকেলের ঘুমঘুম ঘ্রাণ ছিল
টলটলে চোখজলের মায়াবী নিবেদন ছিল।
এখন তো এসব কিছু নেই, থাকেও না, তবু বারবার
কেন কুয়াশা ভেঙে শিস্ দাও দোয়েলের
কেন বিপন্ন বিমূর্ত ঘোরে ভ্রান্তির অবসাদ টেনে আনো।
তুমি তো জানতেই কী করে জলাধার থেকে নদী হয়
নদীপ্রেম থেকে সমুদ্র হলে, সে-ও যে উদাসী বাউল হয়
জানতেই তো এক জনমের ভালোবাসায় ফলে না মুক্তো কোনো।
তাহলে কী পুষেছো তুমি এতকাল চোখের আকরে
কী দিয়ে বেঁধেছিলে বাহুল্য সংসার পারাবারÑ
কেন শুধু শব্দ পোড়াও, কেন অরণ্যছায়া অসুরে ওড়াও?
অকালবৃক্ষ
বিনয় বর্মন
মাটি ফুঁড়ে রাতারাতি গজিয়েছে গাছটি
টেনটেকলের মতো শাখাপ্রশাখা তার ছুঁয়েছে দিগন্ত
পাতাগুলো বিশাল আর খসখসে
কাঁটাযুক্ত ছালবাকল
কেউ কেউ নাকি একে স্বপ্ন দেখেছিল
তাই তারা এর নাম দিয়েছে স্বপ্নতরু
আশ্চর্য বটে, তার ডালে
অহর্নিশ ফোটেÑ সে কি ফুল না ফানুস?
মানুষ সেসব মুঠো মুঠো কুড়িয়ে
ছড়িয়ে দেয় পথেপ্রান্তরে বাড়ির উঠোনে
ঝাঁকে ঝাঁকে কাক উড়ে এসে বাসা বেঁধেছে
সারাদিন কা-কা, খাঁ-খাঁ রোদের নিনাদ
এ যেন এক কাকপল্লী
কাকেরা বসে বসে ঠোকড়ায় পচাগলা শুধু
অচিরেই তাদের বিষ্ঠায় গাছটি সাদা হয়ে ওঠে
সে এখন শ্বেতী, প্রেতিনীর মতো কুৎসিত।
প্রেমের মিথলজি
তানজীনা ফেরদৌস
দীর্ঘ জলপ্রপাতের নিচে দাঁড়িয়ে
আগুন জ্বালাতে চেয়েছিÑ
শরীরের নাম দিয়েছি
তুমি নামক সাংবিধানিক এক রাষ্ট্রের নামে...
ভালোবাসা আজন্ম দোষ জেনেও
রোজকার পড়ার টেবিল আর পাঠাভ্যাসে থেকে যাও তুমি,
যেখানে প্রেমের মিথলজি বলতে শুধু তোমার আলিঙ্গন।
অথচ তোমার হৃদয়ে চলছে শীতকালীন অবকাশÑ
যেখানে রকমারি অতিথি পাখিদের আগমনী কলতান।
নিঃসঙ্গ শালিকের মতো আমি চেয়ে থাকি, আর
আমার বারান্দায় গড়িয়ে পড়ে লুকানো সমুদ্র।
শরীর থেকে অনুভূতি মুছে গিয়ে জেগে ওঠে বিস্ময়।
বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫
রাত্রিমণি
গোলাম কিবরিয়া পিনু
রাত্রিমণি তুমি আছো বলে
নৌজীবী হয়েও
নদীতেই রাত কাটাতে পারছি!
নৌপথে যেতে যেতে
রাত্রিবেলায় তোমাকেই শুধু একান্তে পাই!
তুমি পাপপুণ্য বিচার না করেই
আলো ছড়িয়েছো!
পীতবর্ণ পোশাকেও
আমি তোমাকে গ্রহণ করেছি গ্রহণকালে!
এতটা উদার হয়ে এতটা বিস্তৃত হতে পারো
তা অবনীতলের সবাই জানে!
মনে হয় তুমি তোমার সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়ার জন্য
ধ্যানমগ্ন হয়ে থাকো!
গাঙচিলও তোমার সুষম আলো পেয়ে
আমার মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায়,
আমি তখন গাঙ পার হতে থাকি!
প্রদোষ-আলোর পর তোমার আলো না থাকলে
রাত্রির নিকষ অন্ধকারে
কোনো গাঙই পার হতে পারতাম না!
সশস্ত্র সুন্দর
মতিন রায়হান
আমার শব্দেরা আজ ঘিরে ধরেছে তোমাকে!
কোথায় পালাবে! স্বরবৃত্তে তোমাকে নাচাবো!
হেলেদুলে মাত্রাবৃত্তে ছড়াবে সৌন্দর্য! অক্ষরের বৃত্তে
প্রণয়-বাঁধনে বাঁধা পড়ে যাবে; মুক্তছন্দে ছুটে এসে
যদি ভালোবাসা দাও, তবে ঠিক পর্বত ডিঙাবো!
স্রোতল নদীর গানে বাজাবো তোমাকে! যদি বা
অন্যথা করো, তবে জুলেখার ছুরি দিয়ে তোমার
হৃদয় কেটে জনে জনে বিলাবো! চড়াতে চাও শূলে?
তোয়াক্কা করি না! মনসুর হাল্লাজের মতো মৃত্যুঞ্জয়ী
আমার কবিতা! ‘আনাল হক’ ‘আনাল হক’
ধ্বনিতে অক্ষয়! আগুনে পোড়াবে যদি তবে
ছাইভস্মেও আছি, জলেও রয়েছে যেন আমার
কবিতা...ঢেউয়ে ঢেউয়ে দূর সমুদ্দুরগামী...
আকাশের নীলেও রয়েছে আজ আমার ঠিকানা
আছে যত শব্দরাশি সশস্ত্র সুন্দর, কায়মনে ডাকে
আমার কবিতা আজ ঘিরে রেখেছে তোমাকে!
ভ্রান্তির অবসাদ
রাহমান ওয়াহিদ
ছিল ঠিক এক সময়, কীই না ছিল এই সান্ধ্য যাপনে
রোদশাদা দুপুর ছিল, বিকেলের ঘুমঘুম ঘ্রাণ ছিল
টলটলে চোখজলের মায়াবী নিবেদন ছিল।
এখন তো এসব কিছু নেই, থাকেও না, তবু বারবার
কেন কুয়াশা ভেঙে শিস্ দাও দোয়েলের
কেন বিপন্ন বিমূর্ত ঘোরে ভ্রান্তির অবসাদ টেনে আনো।
তুমি তো জানতেই কী করে জলাধার থেকে নদী হয়
নদীপ্রেম থেকে সমুদ্র হলে, সে-ও যে উদাসী বাউল হয়
জানতেই তো এক জনমের ভালোবাসায় ফলে না মুক্তো কোনো।
তাহলে কী পুষেছো তুমি এতকাল চোখের আকরে
কী দিয়ে বেঁধেছিলে বাহুল্য সংসার পারাবারÑ
কেন শুধু শব্দ পোড়াও, কেন অরণ্যছায়া অসুরে ওড়াও?
অকালবৃক্ষ
বিনয় বর্মন
মাটি ফুঁড়ে রাতারাতি গজিয়েছে গাছটি
টেনটেকলের মতো শাখাপ্রশাখা তার ছুঁয়েছে দিগন্ত
পাতাগুলো বিশাল আর খসখসে
কাঁটাযুক্ত ছালবাকল
কেউ কেউ নাকি একে স্বপ্ন দেখেছিল
তাই তারা এর নাম দিয়েছে স্বপ্নতরু
আশ্চর্য বটে, তার ডালে
অহর্নিশ ফোটেÑ সে কি ফুল না ফানুস?
মানুষ সেসব মুঠো মুঠো কুড়িয়ে
ছড়িয়ে দেয় পথেপ্রান্তরে বাড়ির উঠোনে
ঝাঁকে ঝাঁকে কাক উড়ে এসে বাসা বেঁধেছে
সারাদিন কা-কা, খাঁ-খাঁ রোদের নিনাদ
এ যেন এক কাকপল্লী
কাকেরা বসে বসে ঠোকড়ায় পচাগলা শুধু
অচিরেই তাদের বিষ্ঠায় গাছটি সাদা হয়ে ওঠে
সে এখন শ্বেতী, প্রেতিনীর মতো কুৎসিত।
প্রেমের মিথলজি
তানজীনা ফেরদৌস
দীর্ঘ জলপ্রপাতের নিচে দাঁড়িয়ে
আগুন জ্বালাতে চেয়েছিÑ
শরীরের নাম দিয়েছি
তুমি নামক সাংবিধানিক এক রাষ্ট্রের নামে...
ভালোবাসা আজন্ম দোষ জেনেও
রোজকার পড়ার টেবিল আর পাঠাভ্যাসে থেকে যাও তুমি,
যেখানে প্রেমের মিথলজি বলতে শুধু তোমার আলিঙ্গন।
অথচ তোমার হৃদয়ে চলছে শীতকালীন অবকাশÑ
যেখানে রকমারি অতিথি পাখিদের আগমনী কলতান।
নিঃসঙ্গ শালিকের মতো আমি চেয়ে থাকি, আর
আমার বারান্দায় গড়িয়ে পড়ে লুকানো সমুদ্র।
শরীর থেকে অনুভূতি মুছে গিয়ে জেগে ওঠে বিস্ময়।