alt

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫

খেলাঘর
নির্মলেন্দু গুণ

শিশুরা খেলাঘর করে।

তারা হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোসন নিয়ে

বড়দের মতো সংসার সংসার খেলে।

তারপর একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে

ঘুমভাঙ্গার পর শুরু হয় তাদের অন্যখেলা।

এক্কা-দোক্কা, গোল্লাছুট কিংবা

কানামাছি ভোঁ ভোঁ!

বড়োরাও খেলাঘর করে।

তাদের বাসন-কোসনগুলো আকৃতিতে বড়ো,

তাদের কামনা-বাসনার মতো।

তারা তাদের খেলাঘরের নাম রাখে সংসার।

শিশুদের মতো তারাও ক্লান্ত হয় ,

তারাও সংসার ভাঙ্গে, কিন্তু শিশুদের মতো

তারা ঘুমুতে পারে না।

শিরোনামহীন
নাসির আহমেদ

১.

বিপন্নতার ঢেউয়ে কেঁপে ওঠে যখন তোমার জন্মভূমি

মনে কোরো বাহান্ন ও একাত্তরের সেই দুঃখ-কষ্ট তুমি।

যুদ্ধের পরে যুদ্ধ এসেছে লড়েছো অকুতোভয়

এ দেশ কখনো মেনেছে কি পরাজয়?

২.

বিস্তীর্ণ সবুজ স্বপ্নে জেগে থাকো তুমি

প্রিয়তম জননী আমার

এই পোড়া শস্যখেত বিরান ভিটায়

উঠবে নতুন ঘর, সাজাবে খামার।

৩.

অতিথি পাখির মত শীতের এ কষ্ট সে তো

শুধু আসা-যাওয়া

ভয়ে কেন জড়োসড়ো শীত তো ক’দিন?

আসবে নিশ্চিত জেনো বসন্তের হাওয়া।

৪.

প্রকৃতি নিজের ক্ষত নিজেই সারিয়ে নেয়

বহুবিধ উদ্ভিদ চর্চায়

তোমার দুশ্চিন্তা কেন প্রকৃতি-সন্তান?

নিরাময় খুঁজবে তোমায়।

৫.

আগুনে দিয়েছি হাত জেনেশুনে দাহ্যশক্তি তার

কী আর পোড়াবে বলো

আমার অস্তিত্ব সে তো জ্বলন্ত অঙ্গার!

ভাই
রাজা হাসান

গতরাতে প্রথম তোকে স্বপ্নে দেখলাম, ভাই।

তোর কবরের ওপর ঝুঁকে থাকা

শিউলি গাছের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস।

তোর কবরের ওপর ঝরে পড়েছে অজ¯্র শিউলি,

তুই কবরের ওপর ঝরা শিউলির দিকে তাকিয়ে নিমগ্ন।

চাঁদের আলো নয়, গোরস্থানে ইলেকট্রিকের সামান্য আলোয়

ঘোলাটে আবহে

এই রাত্রিতে গোরস্থানে নেমে এসেছে

বিষাদে নিমজ্জিত গভীরতর শান্তি।

তোর শরীর সাদা কাফনে জড়ানো।

শুধু মুখটা খোলা, চোখ দুটো গর্তে বসে গেছে।

মৌন তুই, চিন্তিত দেখাচ্ছে তোকে।

স্বপ্নের মধ্যেও মনে হলো, এ তো স্বপ্ন নয়।

আমি স্পষ্ট দেখছি, আমার জরাজীর্ণ ভাইকে।

আমি কিছুতেই তোর কাছে পৌঁছাতে পারছি না।

আর সেই সাদা বেড়ালটা, যে তোর বিছানায় বসে থাকতো;

তোর মৃত্যুর তিনদিন পরে বাড়ি ছেড়ে

কোথায় যে হারিয়ে গেল।

আমরা কেউ তাকে খুঁজে পাইনি।

এখন দেখছি, সেই সাদা বেড়াল

তোর কবরের কিনার ঘেঁষে চুপচাপ বসে আছে।

না, এ কোনো স্বপ্ন নয়। স্বপ্নের উল্টোপিঠে

ভাঙা বিদীর্ণ চিত্রভাষ্য।

আমি যার কিছুই জানি না, কিছুই বুঝি না।

শীতের কাহন
আদিত্য নজরুল

ঐ যে উত্তরের মাঠে

তালগাছগুলো কিন্ডারগার্টেনের

ছেলেমেয়েদের মতো

সারি সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে

শুনেছি ঐ দিক থেকে

শীতআসে-

শীত বল্লমের টেঁটা

হয়ে ছেলেবুড়োদের জখম করলে

আগুনের কু-লীকে ঘিরে

গ্রামের মানুষ এমনভাবে

আগুন পোহাতে বসে

যেনো শালিসী বসেছে

শীতের নামে...

গ্রামের কারোর

মুখের দিকে তাকানো যায় না

মনে হয় কুবেরের মতো নিঃস্ব রিক্ত

কেবল বাঁচাতে পারে তাকে

কপিলার উষ্ণ প্রেম!

পলাশ রংয়ের হাসি
প্রাণজি বসাক

চৌকাঠ খুলে দিলেই ঘরে ঢোকে দেদার আদিখ্যেতা

আলো আলোকময় ঘরে তুই এলেই জোনাকি ভাসে

তরঙ্গবর্তিকা খেলা করে স্বাধীন স্বাদে অনন্য নিদর্শন

আর তুই কিনা জুড়ে দিলি নিষিদ্ধ শব্দটা এই বেলায়

চরণতলে কত না শব্দ সুর তুলে কৃষ্ণপ্রিয় নামে ডাকে

গাঢ়তম চুমু বড়ই নির্জন আর আমার নানাবিধ অসুখ

পলাশ রংয়ের হাসি বিচলিত করে না কোনো ইতিহাস

তাহাকে তাহার মতো জড়িয়ে সম্পর্ক নেশার্ত মিতালি

কতক বাতাস ওড়ে আঁচল ওড়ে শীত পড়ে কৃষ্ণপ্রিয়

চৌকাঠে পা পড়ে মানুষের ছায়াময় এক অমোঘ প্রেমে

হেঁটে যাই অনন্তের পথে
আহমদ জামাল জাফরী

নিঃসঙ্গ এই ছায়াসন্ধ্যায় বেদনার ধারাজল বহে যায়

ধু ধু বালিয়ারি পরে থাকে সাদা কাশফুলের গভীর প্রচ্ছায়ায়,

গাঢ় লাবণ্যের এই গোধূলির মাঠে

নিঃশীল স্মৃতির রঙ গান হয়ে ভেসে আসে,

ধূসর আলোর ছায়ায় নেমে আসে পাখিরা

প্রাচীন জ্যোৎস্নার জেগে ওঠা অরণ্যে

স্তব্ধতার প্রান্তর জুড়ে উড়ে যায় মত্ত হাওয়ায়,

শূন্যতার এমন আড়ষ্ট দিনে আকাশের পথ ভেঙে

এইসব ছায়া-রোদ জ্যোৎস্নার দৃশ্য আসে।

কোলাহল ও বিভ্রমে জেগে ওঠা নিষাদ

সময়ের উত্তাপে ভেঙে ভেঙে পড়ে

তৃষ্ণার এ ধূলিময় জীবন মিলায় ধূসর শূন্যে,

অধিকারহীন ভগ্নাবশেষ তবু ফিরে এসো প্রাণপণ!

শূন্যবন্ধন থেকে জীবনের ভেতর পথের প্রস্তুতি নিয়ে

বিষণœ পায়ে হেঁটে যাই তবে অনন্তের পথে।

রূপান্তর
সানজিদা সিদ্দিকা

মানুষ নিজ কক্ষপথ থেকে

কখনো কখনো ছিটকে যায় শূন্যতায়,

নিত্য হাঁটা পথ ছেড়ে নেমে পড়ে গভীর জঙ্গলায়।

ক্ষতি কী তাতে?

মানুষের বাসযোগ্য পৃথিবীও কক্ষপথ থেকে

একটু একটু করে-

দূরে যাচ্ছে ভারসাম্যের অভাবে।

গ্রহ ও তার মানুষ একই স্বভাবে

সকল ভারসাম্যহীনতাই জন্ম দেয় নতুন কিছু,

ধ্বংস অতঃপর সৃষ্টি

সৃষ্টি অতঃপর ধ্বংস...

সময় বৃক্ষে বাড়তে থাকবে ডালপালা

পুনরায় শুরু হবে বেলা-অবেলা-কালবেলা;

মানুষের ইতিহাস বয়ে বেড়াবে,

রূপান্তরে রয়ে যাওয়া স্মৃতিচিহ্নের কিয়দংশ।

শিশিরফুল
আদ্যনাথ ঘোষ

সাদা বক উড়ে গেছে নীল রঙ প্রজাপতি মাঠ,

ডানার ভেতর থেকে খসে গেছে শরতের ক্লান্ত পা-ুলিপি।

ফুলে ফেঁপে উঠে গেছে ধ্যানমগ্ন শেফালির সাদার প্রলেপ-

কে যায়? কখন যায়? কীভাবে যে চলে যায় তারা!

জানে শুধু ক্লান্ত পথ, পথের আঁধার, জানে অসম লড়াই।

কিছু দুঃখ, কিছু স্মৃতি আরও কিছু হারিয়ে ফেলে,

ফেরারী হেমন্তের নির্ঘুম পথে হাঁটু গেড়ে বসে আছে

চোখেরই ভ্রান্ত ভুল-

হলুদ মাঠের ভেতর হারিয়ে কি ফেলেছে তারা?

ফসলের আদিগন্ত বুকের ভেতর পুষে রাখা নীল রঙ প্রজাপতি মাঠ!

কী যেন পিছনে ফেলে বিস্মৃত সময়ের সিঁড়ি পার হয়ে

কেবলই নিছক দোহাই দিয়ে খুঁজে চলে দিনভর হেমন্ত শিশির।

পোস্টকার্ড
বাশার মাহফুজ

ফুলের স্পর্শে যে সুবাস বার্তা পাঠালো

তার মূলত কোনো পোস্ট অফিস ছিল না

হাতে হাতে তবু পৌঁছে গেছে সৌন্দর্যের সিমটম।

সুবাসের পাশে ফুটে উঠছে শৈল্পিক হাট

বেসাতি নিয়ে ফিরছে বিমুগ্ধ চোখ

খামহীন ভালোবাসা চুমু খাচ্ছে বরফদুপুর

বরফ ঠোঁটে জমানো ঘৃণাগুলো দেখে দেখে

ফিরে যাচ্ছে তামাটে রোদ

এমন সাগরভর্তি পিপাসায় বিমূর্ত দিন

বায়স্কোপপাড়ায় বসে বসে গল্প লিখছে।

বুনো যন্ত্রণায় ভাসছে পাঠশালা

মগজে জমানো শব্দের পালক লিখে যাচ্ছে

ইচ্ছের আগুন, পোড়া মৃত্যু

আগুনেরা মৃত্যুর আশায় জলে ঝাপ দিলে

বাউলদিনগুলো লিখে রেখো প্রিয় পোস্টকার্ডে।

ফুলের নামে যদি চিঠি আসে মৃত্যুর পর

মুক্তির টেবিলে পাঠ করবে আমাদের স্বপ্ন

জীবনের চেয়ে যে স্বপ্ন বড় হয়ে উঠেছিল

পাহাড়ের চেয়েও যে চূড়া উঁকি দিয়েছিল

আগুনের চেয়েও যে উত্তাপ স্পর্শ করেছিল।

একজীবনে আমার একটি খোলা আকাশ

মৃত্যুর মতো প্রশস্ত

ঈগলের ডানায় উড়ে উড়ে খসে পড়া আর্তনাদ

উসকে দেওয়া শীতের আগুন

অন্ধকারের বৃহৎ জামায় ঢেকে দেওয়া

পুরো একটা পূর্ণিমা!

গোলাপ আমাকে ভুল করে লেখা সুবাস

ফেরত চেয়ে প্রতীক্ষিত বহু বছর

লিখবো লিখবো করে নিজেকেই পাঠালাম।

খামহীন এই জীবন একটি হলুদ পোস্টকার্ড!

ছবি

একটি ভাঙ্গা থালা

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের কবিতা

ছবি

বাদশা আকবর

ছবি

নগুগি ওয়া থিয়াঙ্গ’ও প্রতিরোধ এবং পুনর্জাগরণের প্রতীক নগুগি ওয়া থিয়াঙ্গ’ও

ছবি

সাহিত্যের ভবিষ্যৎ

ছবি

হৃদয় প্রক্ষালক কবি বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর

ছবি

বহুবাচনিকতা ও শিল্পের নন্দন

ছবি

সেদিন দু’দ- এই বাংলার তীর

ছবি

বিকল্প জীবন

সাময়িকী কবিতা

ছবি

হার না মানা নারী জীবনের উপাখ্যান

ছবি

কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা

ছবি

‘যে-কোনো দেশে ভাল সাহিত্য-অনুবাদক খুব কম’

ছবি

দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড-এর কবি এলিয়ট

ছবি

আর এক সুন্দর সকালবেলায়

ছবি

আবার নরকুম্ভির ও মডার্নিজম

ছবি

আত্মজীবনীর আত্মপ্রকাশ প্রসঙ্গে

ছবি

আসাদের অঙ্ক

ছবি

র্যাঁবোর কবিতায় প্রতীকী জীবনের ছায়া

ছবি

ভাষা সংস্কৃতি সাক্ষরতা

ছবি

হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কবিতার আভিজাত্য

ছবি

চেশোয়া মিওশ-এর কবিতা

ছবি

সিলভিয়া প্লাথের মৃত্যু, নিঃসঙ্গতা ও আত্মবিনাশ

ছবি

সমসাময়িক মার্কিনি ‘সহস্রাব্দের কণ্ঠস্বর’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

অন্য নিরিখে দেখা

ছবি

হেলাল হাফিজের চলে যাওয়া

ছবি

হেলাল হাফিজের কবিতা

ছবি

কেন এত পাঠকপ্রিয় হেলাল হাফিজ

ছবি

নারী শিক্ষাবিদ : বেগম রোকেয়া

ছবি

বাসার তাসাউফ

ছবি

‘জগদ্দল’-এর শক্তি ও সমরেশ বসু

ছবি

রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

ছবি

রুবেন দারিও-র কবিতা

‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’

ছবি

কবিতা পড়া, কবিতা লেখা

tab

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫

খেলাঘর
নির্মলেন্দু গুণ

শিশুরা খেলাঘর করে।

তারা হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোসন নিয়ে

বড়দের মতো সংসার সংসার খেলে।

তারপর একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে

ঘুমভাঙ্গার পর শুরু হয় তাদের অন্যখেলা।

এক্কা-দোক্কা, গোল্লাছুট কিংবা

কানামাছি ভোঁ ভোঁ!

বড়োরাও খেলাঘর করে।

তাদের বাসন-কোসনগুলো আকৃতিতে বড়ো,

তাদের কামনা-বাসনার মতো।

তারা তাদের খেলাঘরের নাম রাখে সংসার।

শিশুদের মতো তারাও ক্লান্ত হয় ,

তারাও সংসার ভাঙ্গে, কিন্তু শিশুদের মতো

তারা ঘুমুতে পারে না।

শিরোনামহীন
নাসির আহমেদ

১.

বিপন্নতার ঢেউয়ে কেঁপে ওঠে যখন তোমার জন্মভূমি

মনে কোরো বাহান্ন ও একাত্তরের সেই দুঃখ-কষ্ট তুমি।

যুদ্ধের পরে যুদ্ধ এসেছে লড়েছো অকুতোভয়

এ দেশ কখনো মেনেছে কি পরাজয়?

২.

বিস্তীর্ণ সবুজ স্বপ্নে জেগে থাকো তুমি

প্রিয়তম জননী আমার

এই পোড়া শস্যখেত বিরান ভিটায়

উঠবে নতুন ঘর, সাজাবে খামার।

৩.

অতিথি পাখির মত শীতের এ কষ্ট সে তো

শুধু আসা-যাওয়া

ভয়ে কেন জড়োসড়ো শীত তো ক’দিন?

আসবে নিশ্চিত জেনো বসন্তের হাওয়া।

৪.

প্রকৃতি নিজের ক্ষত নিজেই সারিয়ে নেয়

বহুবিধ উদ্ভিদ চর্চায়

তোমার দুশ্চিন্তা কেন প্রকৃতি-সন্তান?

নিরাময় খুঁজবে তোমায়।

৫.

আগুনে দিয়েছি হাত জেনেশুনে দাহ্যশক্তি তার

কী আর পোড়াবে বলো

আমার অস্তিত্ব সে তো জ্বলন্ত অঙ্গার!

ভাই
রাজা হাসান

গতরাতে প্রথম তোকে স্বপ্নে দেখলাম, ভাই।

তোর কবরের ওপর ঝুঁকে থাকা

শিউলি গাছের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস।

তোর কবরের ওপর ঝরে পড়েছে অজ¯্র শিউলি,

তুই কবরের ওপর ঝরা শিউলির দিকে তাকিয়ে নিমগ্ন।

চাঁদের আলো নয়, গোরস্থানে ইলেকট্রিকের সামান্য আলোয়

ঘোলাটে আবহে

এই রাত্রিতে গোরস্থানে নেমে এসেছে

বিষাদে নিমজ্জিত গভীরতর শান্তি।

তোর শরীর সাদা কাফনে জড়ানো।

শুধু মুখটা খোলা, চোখ দুটো গর্তে বসে গেছে।

মৌন তুই, চিন্তিত দেখাচ্ছে তোকে।

স্বপ্নের মধ্যেও মনে হলো, এ তো স্বপ্ন নয়।

আমি স্পষ্ট দেখছি, আমার জরাজীর্ণ ভাইকে।

আমি কিছুতেই তোর কাছে পৌঁছাতে পারছি না।

আর সেই সাদা বেড়ালটা, যে তোর বিছানায় বসে থাকতো;

তোর মৃত্যুর তিনদিন পরে বাড়ি ছেড়ে

কোথায় যে হারিয়ে গেল।

আমরা কেউ তাকে খুঁজে পাইনি।

এখন দেখছি, সেই সাদা বেড়াল

তোর কবরের কিনার ঘেঁষে চুপচাপ বসে আছে।

না, এ কোনো স্বপ্ন নয়। স্বপ্নের উল্টোপিঠে

ভাঙা বিদীর্ণ চিত্রভাষ্য।

আমি যার কিছুই জানি না, কিছুই বুঝি না।

শীতের কাহন
আদিত্য নজরুল

ঐ যে উত্তরের মাঠে

তালগাছগুলো কিন্ডারগার্টেনের

ছেলেমেয়েদের মতো

সারি সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে

শুনেছি ঐ দিক থেকে

শীতআসে-

শীত বল্লমের টেঁটা

হয়ে ছেলেবুড়োদের জখম করলে

আগুনের কু-লীকে ঘিরে

গ্রামের মানুষ এমনভাবে

আগুন পোহাতে বসে

যেনো শালিসী বসেছে

শীতের নামে...

গ্রামের কারোর

মুখের দিকে তাকানো যায় না

মনে হয় কুবেরের মতো নিঃস্ব রিক্ত

কেবল বাঁচাতে পারে তাকে

কপিলার উষ্ণ প্রেম!

পলাশ রংয়ের হাসি
প্রাণজি বসাক

চৌকাঠ খুলে দিলেই ঘরে ঢোকে দেদার আদিখ্যেতা

আলো আলোকময় ঘরে তুই এলেই জোনাকি ভাসে

তরঙ্গবর্তিকা খেলা করে স্বাধীন স্বাদে অনন্য নিদর্শন

আর তুই কিনা জুড়ে দিলি নিষিদ্ধ শব্দটা এই বেলায়

চরণতলে কত না শব্দ সুর তুলে কৃষ্ণপ্রিয় নামে ডাকে

গাঢ়তম চুমু বড়ই নির্জন আর আমার নানাবিধ অসুখ

পলাশ রংয়ের হাসি বিচলিত করে না কোনো ইতিহাস

তাহাকে তাহার মতো জড়িয়ে সম্পর্ক নেশার্ত মিতালি

কতক বাতাস ওড়ে আঁচল ওড়ে শীত পড়ে কৃষ্ণপ্রিয়

চৌকাঠে পা পড়ে মানুষের ছায়াময় এক অমোঘ প্রেমে

হেঁটে যাই অনন্তের পথে
আহমদ জামাল জাফরী

নিঃসঙ্গ এই ছায়াসন্ধ্যায় বেদনার ধারাজল বহে যায়

ধু ধু বালিয়ারি পরে থাকে সাদা কাশফুলের গভীর প্রচ্ছায়ায়,

গাঢ় লাবণ্যের এই গোধূলির মাঠে

নিঃশীল স্মৃতির রঙ গান হয়ে ভেসে আসে,

ধূসর আলোর ছায়ায় নেমে আসে পাখিরা

প্রাচীন জ্যোৎস্নার জেগে ওঠা অরণ্যে

স্তব্ধতার প্রান্তর জুড়ে উড়ে যায় মত্ত হাওয়ায়,

শূন্যতার এমন আড়ষ্ট দিনে আকাশের পথ ভেঙে

এইসব ছায়া-রোদ জ্যোৎস্নার দৃশ্য আসে।

কোলাহল ও বিভ্রমে জেগে ওঠা নিষাদ

সময়ের উত্তাপে ভেঙে ভেঙে পড়ে

তৃষ্ণার এ ধূলিময় জীবন মিলায় ধূসর শূন্যে,

অধিকারহীন ভগ্নাবশেষ তবু ফিরে এসো প্রাণপণ!

শূন্যবন্ধন থেকে জীবনের ভেতর পথের প্রস্তুতি নিয়ে

বিষণœ পায়ে হেঁটে যাই তবে অনন্তের পথে।

রূপান্তর
সানজিদা সিদ্দিকা

মানুষ নিজ কক্ষপথ থেকে

কখনো কখনো ছিটকে যায় শূন্যতায়,

নিত্য হাঁটা পথ ছেড়ে নেমে পড়ে গভীর জঙ্গলায়।

ক্ষতি কী তাতে?

মানুষের বাসযোগ্য পৃথিবীও কক্ষপথ থেকে

একটু একটু করে-

দূরে যাচ্ছে ভারসাম্যের অভাবে।

গ্রহ ও তার মানুষ একই স্বভাবে

সকল ভারসাম্যহীনতাই জন্ম দেয় নতুন কিছু,

ধ্বংস অতঃপর সৃষ্টি

সৃষ্টি অতঃপর ধ্বংস...

সময় বৃক্ষে বাড়তে থাকবে ডালপালা

পুনরায় শুরু হবে বেলা-অবেলা-কালবেলা;

মানুষের ইতিহাস বয়ে বেড়াবে,

রূপান্তরে রয়ে যাওয়া স্মৃতিচিহ্নের কিয়দংশ।

শিশিরফুল
আদ্যনাথ ঘোষ

সাদা বক উড়ে গেছে নীল রঙ প্রজাপতি মাঠ,

ডানার ভেতর থেকে খসে গেছে শরতের ক্লান্ত পা-ুলিপি।

ফুলে ফেঁপে উঠে গেছে ধ্যানমগ্ন শেফালির সাদার প্রলেপ-

কে যায়? কখন যায়? কীভাবে যে চলে যায় তারা!

জানে শুধু ক্লান্ত পথ, পথের আঁধার, জানে অসম লড়াই।

কিছু দুঃখ, কিছু স্মৃতি আরও কিছু হারিয়ে ফেলে,

ফেরারী হেমন্তের নির্ঘুম পথে হাঁটু গেড়ে বসে আছে

চোখেরই ভ্রান্ত ভুল-

হলুদ মাঠের ভেতর হারিয়ে কি ফেলেছে তারা?

ফসলের আদিগন্ত বুকের ভেতর পুষে রাখা নীল রঙ প্রজাপতি মাঠ!

কী যেন পিছনে ফেলে বিস্মৃত সময়ের সিঁড়ি পার হয়ে

কেবলই নিছক দোহাই দিয়ে খুঁজে চলে দিনভর হেমন্ত শিশির।

পোস্টকার্ড
বাশার মাহফুজ

ফুলের স্পর্শে যে সুবাস বার্তা পাঠালো

তার মূলত কোনো পোস্ট অফিস ছিল না

হাতে হাতে তবু পৌঁছে গেছে সৌন্দর্যের সিমটম।

সুবাসের পাশে ফুটে উঠছে শৈল্পিক হাট

বেসাতি নিয়ে ফিরছে বিমুগ্ধ চোখ

খামহীন ভালোবাসা চুমু খাচ্ছে বরফদুপুর

বরফ ঠোঁটে জমানো ঘৃণাগুলো দেখে দেখে

ফিরে যাচ্ছে তামাটে রোদ

এমন সাগরভর্তি পিপাসায় বিমূর্ত দিন

বায়স্কোপপাড়ায় বসে বসে গল্প লিখছে।

বুনো যন্ত্রণায় ভাসছে পাঠশালা

মগজে জমানো শব্দের পালক লিখে যাচ্ছে

ইচ্ছের আগুন, পোড়া মৃত্যু

আগুনেরা মৃত্যুর আশায় জলে ঝাপ দিলে

বাউলদিনগুলো লিখে রেখো প্রিয় পোস্টকার্ডে।

ফুলের নামে যদি চিঠি আসে মৃত্যুর পর

মুক্তির টেবিলে পাঠ করবে আমাদের স্বপ্ন

জীবনের চেয়ে যে স্বপ্ন বড় হয়ে উঠেছিল

পাহাড়ের চেয়েও যে চূড়া উঁকি দিয়েছিল

আগুনের চেয়েও যে উত্তাপ স্পর্শ করেছিল।

একজীবনে আমার একটি খোলা আকাশ

মৃত্যুর মতো প্রশস্ত

ঈগলের ডানায় উড়ে উড়ে খসে পড়া আর্তনাদ

উসকে দেওয়া শীতের আগুন

অন্ধকারের বৃহৎ জামায় ঢেকে দেওয়া

পুরো একটা পূর্ণিমা!

গোলাপ আমাকে ভুল করে লেখা সুবাস

ফেরত চেয়ে প্রতীক্ষিত বহু বছর

লিখবো লিখবো করে নিজেকেই পাঠালাম।

খামহীন এই জীবন একটি হলুদ পোস্টকার্ড!

back to top