চরু হক
মহুয়া
সেই আশ্চর্য শূন্যতার বাগানে সঙ্গী হতে চাই তোমার। তাই শুকনো পাতার মর্মরে লিখে এনেছি আবেদনপত্র।
গতকাল রাতে তোমাকে স্বপ্নে দেখলাম। এক সকালে ঝোলাভর্তি গান কাঁধে ঝুলিয়ে আমাদের বাসায় এসেছো। বহুদূর থেকে হেঁটে, বহু পথ পাড়ি দিয়ে। আমি দরজা খুলে দিলাম, তোমাকে বসতে দিলাম আমার ড্রয়িংরুমে।তুমি তোমার গান, সওদাগরি,দিনরাত্রির কবিতা আমাকে দেখাতে শুরু করলে। দেখতে দেখতে একসময় হঠাৎ নিজেরই অজান্তে আমার হাত ছুঁয়ে ফেললো তোমার কোমল হাতের সীমানা,বুঝতেই পারিনি।
বন্ধু এসেছে বাসায়। দুপুরে খাবার আয়োজন করতে হবে। মহুয়া রান্নার কাজে হাত লাগায়। বেগুন ভাজা, সাথে জলপাই দিয়ে পাতলা ডাল,শুকনা মরিচ দিয়ে ডিমের ঝুরি,আর সবশেষে ইলিশ মাছের ঝোল। কাজল কথার ঝুলি সঙ্গে করে এনেছিল, উসখুস করে সে। কিছুক্ষণ সো পিস নাড়াচাড়া করে, শেলফ থেকে “গভীর নির্জন পথে” নামিয়ে পড়ে। পড়ে আর পাশের দরোজার দিকে তাকায়,মহুয়ার দেখা পায় না। শেষে একা বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে খুঁজতে গিয়ে রান্নাঘরের পাশে বেসিনের আয়নায় আবিষ্কার করে,তাকে। মহুয়া কাজলকে দেখে আসছি বলে এক ছুটে নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকে, আর বুঝি বেরোয় না।
রান্না শেষ। ইলিশ মাছের গন্ধে মঁ মঁ করছে ঘর। কাজল খেতে খেতে বললো পলিথিন বর্জ নিয়ে তার নতুন পরিকল্পনার কথা। আগামী মাসে তার গ্রুপের বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে কক্সবাজার যাবে সে। ওখানে একদিন থেকে পরদিন রওয়ানা দেবে সেন্ট মার্টিনের পথে। লক্ষ্য একটাই,অপূর্ব সেই সমুদ্রকন্যাকে পলিথিনমুক্ত করা। কচিকাঁচাদের নিয়ে সবাই মিলে করবে কাজটা।
মহুয়া আর একটা মাছ তার পাতে তুলে দেয়। কাজল খেতে খেতে জানায়, মহুয়া ‘অন্তর্যামী’ তে খুব চমৎকার অভিনয় করেছে, বিশেষত ঐ গেরুয়া শাড়িতে। মহুয়া কাজলের গ্লাসে জল ঢেলে দেয়।
ভোরের আলো এসে লাগলো দু’চোখে। সবটাই তবে স্বপ্ন ছিল! পাখির কিচির মিচির বাতাসে ভাসে। সোনারোদ এসে সুবাস ছড়িয়ে দেয় মহুয়ার চুলে, মুখে। এলোচুলে মহুয়া বারান্দার দরোজায় হেলান দিয়ে বসে। বসে ভাবতে থাকে গতরাতের স্বপ্নটার কথা। ভাবতে থাকে, ভাবতে থাকে,আরো আরো আরো ভাবতে থাকে। সময় হলো কি ফ্রেস হবার, ফ্রেস হয়ে অফিস যাবার মহুয়া কেবল বসেই থাকে,আনমনা।
প্রার্থী হতে চায় তবে যদি শুদ্ধ ভোর, ভৈরবী সুরেতে ডুবে,আমি তাকে কি করে ফেরাই!
জুঁই ফোটার দিন
শুয়ে আছি হাসপাতালের কেবিনে। মনের মধ্যে কত কথাই না ঘুরপাক খাচ্ছে।একটার উপর দিয়ে আরেকটা যেনো লেপ্টে যেতে চায়। আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল শুধাইয়ল না কেহ। রতন,তুমি শুনবে আমার সব কথা
জারুল ফুলগুলো শুকিয়ে গেছে। একই সাথে শুকিয়ে যাচ্ছে আমার ব্রেনের প্রতিটি সেল। তুমি তো সবই জানো,সবাই জানে। শুধু আমাকেই কিছু বলা হয়নি।আমি অবশ্য তোমাদের মুখ থেকে আর কিছু শুনতে চাই না। কিছু কথা না বলাই থাকনা। সেই না বলা কথাগুলোই একদিন শাখা প্রশাখা বিস্তার করে ফুলে ফলে প্রস্ফুটিত হয়ে ঢেকে দেবে সমস্ত নিখিল। আমার আকাশ। অঝোর ধারায় সেদিন বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টি, বৃষ্টি, শুক্লারাতের বৃষ্টি। আহ।
জুঁই, আমার ছোট্ট জানালার পাশে বসে আপনাকে লিখছি। এখানে খুব ঝড় শুরু হয়েছে। আমার কথা শুনে আপনি মৃদু হাসছেন, তাই নাভাবছেন আকাশে ঘন মেঘ,ঝড় তো হবেই। এ আর অবাক করা কি জানেন, তবু আমি অবাক হচ্ছি।এ জেনো নতুন করে দেখা, অদেখা এক বিস্ময়। এই ঝড় আমি আগে কখনো দেখিনি।সারা আকাশ কালো হয়ে এলো।নদীর জল উথাল পাথাল,পাতাগুলো ভীষণভাবে কাঁপছে। প্রকৃতি যেনো হঠাৎ জীবন্ত হয়ে উঠলো। এই সময় যদি ঝর্নার মতো কল কল হাসিতে আপনি আমার পাশে থাকতেন।
জুঁই, মনের চেয়ে পবিত্র আর কিছু নেই।আপনার পবিত্রতা আপনার সারা শরীরে প্রকাশ পাচ্ছে। একে কোনোদিন হারিয়ে যেতে দিয়েন না।
জুঁই, ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে।ভিজবেন
ভিজবো।
বৃষ্টির হাওয়ায় আপনার ঘ্রাণ পাচ্ছি যেনো।
আপনি লাল কালারের ড্রেস আর কপালে লাল টিপ
রাখবেন।
বৃষ্টি হচ্ছে। বিশাল এক ঝিল। আদিগন্ত বিস্তৃত এই ঝিলের জলে যতদূর চোখ যায় কেবল রক্তবর্ণের শাপলা ফুটে আছে। জগতে আর কেউ নেই,কিছু নেই। কেবল সহ¯্র শাপলার ডানা। অদ্ভুত রহস্য ঢেলে চেয়ে আছে।একপাশে এক নৌকা বাঁধা।
এই ঘুমিয়ে গেলেন নাকি বাস তো থেমে গেলো। চলে এসেছেন তো!
চরু হক
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
মহুয়া
সেই আশ্চর্য শূন্যতার বাগানে সঙ্গী হতে চাই তোমার। তাই শুকনো পাতার মর্মরে লিখে এনেছি আবেদনপত্র।
গতকাল রাতে তোমাকে স্বপ্নে দেখলাম। এক সকালে ঝোলাভর্তি গান কাঁধে ঝুলিয়ে আমাদের বাসায় এসেছো। বহুদূর থেকে হেঁটে, বহু পথ পাড়ি দিয়ে। আমি দরজা খুলে দিলাম, তোমাকে বসতে দিলাম আমার ড্রয়িংরুমে।তুমি তোমার গান, সওদাগরি,দিনরাত্রির কবিতা আমাকে দেখাতে শুরু করলে। দেখতে দেখতে একসময় হঠাৎ নিজেরই অজান্তে আমার হাত ছুঁয়ে ফেললো তোমার কোমল হাতের সীমানা,বুঝতেই পারিনি।
বন্ধু এসেছে বাসায়। দুপুরে খাবার আয়োজন করতে হবে। মহুয়া রান্নার কাজে হাত লাগায়। বেগুন ভাজা, সাথে জলপাই দিয়ে পাতলা ডাল,শুকনা মরিচ দিয়ে ডিমের ঝুরি,আর সবশেষে ইলিশ মাছের ঝোল। কাজল কথার ঝুলি সঙ্গে করে এনেছিল, উসখুস করে সে। কিছুক্ষণ সো পিস নাড়াচাড়া করে, শেলফ থেকে “গভীর নির্জন পথে” নামিয়ে পড়ে। পড়ে আর পাশের দরোজার দিকে তাকায়,মহুয়ার দেখা পায় না। শেষে একা বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে খুঁজতে গিয়ে রান্নাঘরের পাশে বেসিনের আয়নায় আবিষ্কার করে,তাকে। মহুয়া কাজলকে দেখে আসছি বলে এক ছুটে নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকে, আর বুঝি বেরোয় না।
রান্না শেষ। ইলিশ মাছের গন্ধে মঁ মঁ করছে ঘর। কাজল খেতে খেতে বললো পলিথিন বর্জ নিয়ে তার নতুন পরিকল্পনার কথা। আগামী মাসে তার গ্রুপের বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে কক্সবাজার যাবে সে। ওখানে একদিন থেকে পরদিন রওয়ানা দেবে সেন্ট মার্টিনের পথে। লক্ষ্য একটাই,অপূর্ব সেই সমুদ্রকন্যাকে পলিথিনমুক্ত করা। কচিকাঁচাদের নিয়ে সবাই মিলে করবে কাজটা।
মহুয়া আর একটা মাছ তার পাতে তুলে দেয়। কাজল খেতে খেতে জানায়, মহুয়া ‘অন্তর্যামী’ তে খুব চমৎকার অভিনয় করেছে, বিশেষত ঐ গেরুয়া শাড়িতে। মহুয়া কাজলের গ্লাসে জল ঢেলে দেয়।
ভোরের আলো এসে লাগলো দু’চোখে। সবটাই তবে স্বপ্ন ছিল! পাখির কিচির মিচির বাতাসে ভাসে। সোনারোদ এসে সুবাস ছড়িয়ে দেয় মহুয়ার চুলে, মুখে। এলোচুলে মহুয়া বারান্দার দরোজায় হেলান দিয়ে বসে। বসে ভাবতে থাকে গতরাতের স্বপ্নটার কথা। ভাবতে থাকে, ভাবতে থাকে,আরো আরো আরো ভাবতে থাকে। সময় হলো কি ফ্রেস হবার, ফ্রেস হয়ে অফিস যাবার মহুয়া কেবল বসেই থাকে,আনমনা।
প্রার্থী হতে চায় তবে যদি শুদ্ধ ভোর, ভৈরবী সুরেতে ডুবে,আমি তাকে কি করে ফেরাই!
জুঁই ফোটার দিন
শুয়ে আছি হাসপাতালের কেবিনে। মনের মধ্যে কত কথাই না ঘুরপাক খাচ্ছে।একটার উপর দিয়ে আরেকটা যেনো লেপ্টে যেতে চায়। আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল শুধাইয়ল না কেহ। রতন,তুমি শুনবে আমার সব কথা
জারুল ফুলগুলো শুকিয়ে গেছে। একই সাথে শুকিয়ে যাচ্ছে আমার ব্রেনের প্রতিটি সেল। তুমি তো সবই জানো,সবাই জানে। শুধু আমাকেই কিছু বলা হয়নি।আমি অবশ্য তোমাদের মুখ থেকে আর কিছু শুনতে চাই না। কিছু কথা না বলাই থাকনা। সেই না বলা কথাগুলোই একদিন শাখা প্রশাখা বিস্তার করে ফুলে ফলে প্রস্ফুটিত হয়ে ঢেকে দেবে সমস্ত নিখিল। আমার আকাশ। অঝোর ধারায় সেদিন বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টি, বৃষ্টি, শুক্লারাতের বৃষ্টি। আহ।
জুঁই, আমার ছোট্ট জানালার পাশে বসে আপনাকে লিখছি। এখানে খুব ঝড় শুরু হয়েছে। আমার কথা শুনে আপনি মৃদু হাসছেন, তাই নাভাবছেন আকাশে ঘন মেঘ,ঝড় তো হবেই। এ আর অবাক করা কি জানেন, তবু আমি অবাক হচ্ছি।এ জেনো নতুন করে দেখা, অদেখা এক বিস্ময়। এই ঝড় আমি আগে কখনো দেখিনি।সারা আকাশ কালো হয়ে এলো।নদীর জল উথাল পাথাল,পাতাগুলো ভীষণভাবে কাঁপছে। প্রকৃতি যেনো হঠাৎ জীবন্ত হয়ে উঠলো। এই সময় যদি ঝর্নার মতো কল কল হাসিতে আপনি আমার পাশে থাকতেন।
জুঁই, মনের চেয়ে পবিত্র আর কিছু নেই।আপনার পবিত্রতা আপনার সারা শরীরে প্রকাশ পাচ্ছে। একে কোনোদিন হারিয়ে যেতে দিয়েন না।
জুঁই, ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে।ভিজবেন
ভিজবো।
বৃষ্টির হাওয়ায় আপনার ঘ্রাণ পাচ্ছি যেনো।
আপনি লাল কালারের ড্রেস আর কপালে লাল টিপ
রাখবেন।
বৃষ্টি হচ্ছে। বিশাল এক ঝিল। আদিগন্ত বিস্তৃত এই ঝিলের জলে যতদূর চোখ যায় কেবল রক্তবর্ণের শাপলা ফুটে আছে। জগতে আর কেউ নেই,কিছু নেই। কেবল সহ¯্র শাপলার ডানা। অদ্ভুত রহস্য ঢেলে চেয়ে আছে।একপাশে এক নৌকা বাঁধা।
এই ঘুমিয়ে গেলেন নাকি বাস তো থেমে গেলো। চলে এসেছেন তো!