বড়শিগাঁথা শীতসকাল
শেলী সেনগুপ্তা
কুয়াশাঘেরা জলের ভেতর
ডুবেছিলো আস্ত একটি শীতকাল
বড়শি গেঁথে তুলতেই
শুনিÑ
ভেজা শাড়ির সোঁদা গন্ধ
আর
মাটির গল্পকথা
রোদশিকারি মাছের ঝাঁক ভাসছে জলের ওপর
এক পায়ে দাঁড়ানো বক ভুলেছে জলকেলির কথা,
এই দৃশ্য দেখে কেউ কেউ
মানুষ এবং প্রকৃতির মেলবন্ধন খুঁজে
কোথাও কিছু নেই,
তবুও উত্তরের হাওয়া দেখছেÑ
ভেজা শরীরী বাগানের
আনাচে কানাচে জেগে ওঠা
কিছু নির্বিকার চুম্বন
আজ সকালের ঘুম যাপনে রোদ্দুরও মশগুল...
গ্র্যাভিটি হোল
অনিল সেন
তোমাকে না বলা কথাগুলো আমাকে যজ্ঞের
আগুনে নিবেদন করেছে।
বহুদিন পর তুমি দৃষ্টি ছিঁড়ে সম্মুখধ্বনিতে
দাঁড়ালে।
না বলা কথাগুলো লজ্জায় মুখ ফেরাতে চায় না
দুচোখে আঁধার ভরা দৃষ্টি খোলা
শুধু আমি থেকে গেলাম তুমি হারা।
যেখানে বসে দুজনে মুখ ফিরিয়ে কথা হতো
সেখানকার জায়গাটা এখন গ্র্যাভিটি হোল
পাখপাখালিরা প্রতিদিন সেখানে স্নান সেরে
মুখ ফিরিয়ে তুমুল গল্পে মজে।
বলা কথাগুলো আর কথার মতো শোনায় না
মুখটা মৃত্যুর পরের মুখের মতো
ঠিক ঠাহর করা যায় না।
যে কণ্ঠস্বরে অভ্যস্ত সেটা এখন
খুব বেসুরো ভাবে কানে লাগে
সন্ধ্যাবেলায় ভৈরবী গাওয়ার মতো।
ইদানীং ইমন রাগের তীব্র স্বর আমাকে গভীর
তলে আটকিয়ে রাখে
সেখানে সাঁতার কেটে একটার পর একটা
মৎস্য শিকার করি।
তুমি আমার মৎস্যমুখে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলে
আমার এইটুকু মনে আছে।
তুমি না এসে না বলা কথাগুলোকে পাঠিয়ে দিয়েছ
আমার গভীর নিস্তব্ধতায়।
ইশকের সুগন্ধ
সায়্যিদ লুমরান
পবিত্র পদ্মের মত মেলে দাও তোমার হৃদয়:
বন্ধু,
সত্যের সন্ধানে মরমের শ্রম লাগে, মগজের নয়।
ইন্দ্রিয়কে নয়,
অন্তরকেই মানো তোমার প্রথম মুরশিদ।
মুখোমুখি হও, ধরো বাজি-রুহ ও নফসের দ্বন্দ্বে।
যুদ্ধের জমিনে রুহই হবে জয়ী ইশকের সুগন্ধে।
সেই ইশকের গুনেই রুহকে ভরো আরশের খামে,
জেনো নিজেকে, যা তোমাকে পৌঁছে দিবে এলাহী মোকামে।
অন্ত্যমিল
হাসিদা মুন
ছন্দের যুগল সন্ধি সমতালে দোলে
প্রচীন চীনের থেকে অপর ভাষায়
আরবি ছড়ার ছন্দÑ সুরেলা ‘কাসিদা’
পেরিয়ে শতাব্দী-পথ পৌঁছাল বাংলায়
আদিতে সাহিত্য ছিল মুখে-মুখে ফেরা
এক দাঁড়িদুই দাঁড়ি, ভাবের কথন
চরণে স্তবকে পর্বে, ভাষার লালিত্যে
কবির নন্দন চিন্তাÑ ধ্রুপদী প্রকাশ
জো-মেলানো পাখি, যেন দম্পতির
সুখের প্রশান্তি-প্রীতিÑ ঋদ্ধ অন্ত্যমিলে...
উপেক্ষার দেউলদ্বারে জীবনানন্দ এসেছিলো
রোখসানা ইয়াসমিন মণি
কতো বেদনারা ঘুমিয়ে গেছে আজ রাতে
মেঘের ফিসফাসে লুকিয়ে আছে দীর্ঘশ্বাস
ঘুম চোখেরা কাকে যেনো বের করে আনে
স্মৃতিচিহ্ন খুলে দেখি সে জীবনানন্দ দাশ।
নভেম্বরের বৃষ্টির মতো একজোড়া চোখ
উপেক্ষার বেদনায় দাঁড়িয়ে দেউলদ্বারে;
প্রিয় ঘামগন্ধ লুকিয়ে রেখে হৃদয় তলায়
মৃতগাঙে কে আগুন জ্বালাতে পারে
দগ্ধময় জীবনকে মিছে ফাঁকি দিয়ে
কে পারে দাঁড়াতে মেঘের কিনারে
সে কি মৃত্তিকার গোপন শেকড়
যে বহু তাপ সয়ে উদ্ভিদ প্রসব করে
বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫
বড়শিগাঁথা শীতসকাল
শেলী সেনগুপ্তা
কুয়াশাঘেরা জলের ভেতর
ডুবেছিলো আস্ত একটি শীতকাল
বড়শি গেঁথে তুলতেই
শুনিÑ
ভেজা শাড়ির সোঁদা গন্ধ
আর
মাটির গল্পকথা
রোদশিকারি মাছের ঝাঁক ভাসছে জলের ওপর
এক পায়ে দাঁড়ানো বক ভুলেছে জলকেলির কথা,
এই দৃশ্য দেখে কেউ কেউ
মানুষ এবং প্রকৃতির মেলবন্ধন খুঁজে
কোথাও কিছু নেই,
তবুও উত্তরের হাওয়া দেখছেÑ
ভেজা শরীরী বাগানের
আনাচে কানাচে জেগে ওঠা
কিছু নির্বিকার চুম্বন
আজ সকালের ঘুম যাপনে রোদ্দুরও মশগুল...
গ্র্যাভিটি হোল
অনিল সেন
তোমাকে না বলা কথাগুলো আমাকে যজ্ঞের
আগুনে নিবেদন করেছে।
বহুদিন পর তুমি দৃষ্টি ছিঁড়ে সম্মুখধ্বনিতে
দাঁড়ালে।
না বলা কথাগুলো লজ্জায় মুখ ফেরাতে চায় না
দুচোখে আঁধার ভরা দৃষ্টি খোলা
শুধু আমি থেকে গেলাম তুমি হারা।
যেখানে বসে দুজনে মুখ ফিরিয়ে কথা হতো
সেখানকার জায়গাটা এখন গ্র্যাভিটি হোল
পাখপাখালিরা প্রতিদিন সেখানে স্নান সেরে
মুখ ফিরিয়ে তুমুল গল্পে মজে।
বলা কথাগুলো আর কথার মতো শোনায় না
মুখটা মৃত্যুর পরের মুখের মতো
ঠিক ঠাহর করা যায় না।
যে কণ্ঠস্বরে অভ্যস্ত সেটা এখন
খুব বেসুরো ভাবে কানে লাগে
সন্ধ্যাবেলায় ভৈরবী গাওয়ার মতো।
ইদানীং ইমন রাগের তীব্র স্বর আমাকে গভীর
তলে আটকিয়ে রাখে
সেখানে সাঁতার কেটে একটার পর একটা
মৎস্য শিকার করি।
তুমি আমার মৎস্যমুখে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলে
আমার এইটুকু মনে আছে।
তুমি না এসে না বলা কথাগুলোকে পাঠিয়ে দিয়েছ
আমার গভীর নিস্তব্ধতায়।
ইশকের সুগন্ধ
সায়্যিদ লুমরান
পবিত্র পদ্মের মত মেলে দাও তোমার হৃদয়:
বন্ধু,
সত্যের সন্ধানে মরমের শ্রম লাগে, মগজের নয়।
ইন্দ্রিয়কে নয়,
অন্তরকেই মানো তোমার প্রথম মুরশিদ।
মুখোমুখি হও, ধরো বাজি-রুহ ও নফসের দ্বন্দ্বে।
যুদ্ধের জমিনে রুহই হবে জয়ী ইশকের সুগন্ধে।
সেই ইশকের গুনেই রুহকে ভরো আরশের খামে,
জেনো নিজেকে, যা তোমাকে পৌঁছে দিবে এলাহী মোকামে।
অন্ত্যমিল
হাসিদা মুন
ছন্দের যুগল সন্ধি সমতালে দোলে
প্রচীন চীনের থেকে অপর ভাষায়
আরবি ছড়ার ছন্দÑ সুরেলা ‘কাসিদা’
পেরিয়ে শতাব্দী-পথ পৌঁছাল বাংলায়
আদিতে সাহিত্য ছিল মুখে-মুখে ফেরা
এক দাঁড়িদুই দাঁড়ি, ভাবের কথন
চরণে স্তবকে পর্বে, ভাষার লালিত্যে
কবির নন্দন চিন্তাÑ ধ্রুপদী প্রকাশ
জো-মেলানো পাখি, যেন দম্পতির
সুখের প্রশান্তি-প্রীতিÑ ঋদ্ধ অন্ত্যমিলে...
উপেক্ষার দেউলদ্বারে জীবনানন্দ এসেছিলো
রোখসানা ইয়াসমিন মণি
কতো বেদনারা ঘুমিয়ে গেছে আজ রাতে
মেঘের ফিসফাসে লুকিয়ে আছে দীর্ঘশ্বাস
ঘুম চোখেরা কাকে যেনো বের করে আনে
স্মৃতিচিহ্ন খুলে দেখি সে জীবনানন্দ দাশ।
নভেম্বরের বৃষ্টির মতো একজোড়া চোখ
উপেক্ষার বেদনায় দাঁড়িয়ে দেউলদ্বারে;
প্রিয় ঘামগন্ধ লুকিয়ে রেখে হৃদয় তলায়
মৃতগাঙে কে আগুন জ্বালাতে পারে
দগ্ধময় জীবনকে মিছে ফাঁকি দিয়ে
কে পারে দাঁড়াতে মেঘের কিনারে
সে কি মৃত্তিকার গোপন শেকড়
যে বহু তাপ সয়ে উদ্ভিদ প্রসব করে