শূন্যস্থান
আতাউর রহমান মিলাদ
বহুতল ভবনের নিচে অসংখ্য কঙ্কাল
অমীমাংসিত ভ্রমণের অপূর্ণ অর্জন
বেঁচে আছে বহুকালের রক্তাক্ত হৃৎপি-
ওরা আসে,ভাসে ঘরময়
আর্তস্বরে খুলে বসে ইতিহাসের পাতা
সাহসের লাল গালিচায় মুক্তির সহোদর
শেকড় গভীরে কংক্রিটের হাড়
কথার পাঁজরে আত্মগত অভিমান
অবিন্যস্ত সময়ের ফসিল দেয়াল
দ্রবীভূত মেঘের দীর্ঘশ্বাস, স্মৃতির নহর
জংধরা জবানের ধার,বিমূর্ত জখম
ঈশারা ইঙ্গিতে গোপন ট্রাজেডি
ভয়ার্ত পিতলের চোখে
দিনযাপনের ক্ষমাহীন জল!
ফেরা
দিলীপ কির্ত্তুনিয়া
হাতের গ্লাসটা রাগ করে ভাঙলাম।
ভাঙলাম ঠিকই- খেয়ালী বশে
ইচ্ছের পরাগে।
কিন্তু চূর্ণ কাঁচগুলি এবার
সাবধানে ফেলতে হবে ।
খেয়ালীপনার এতটুকু রঙ
প্রশ্রয় দেয়া যাবে না এখানে।
রাগ থেকে কী সুন্দর অনুরাগে ফেরা!
কী ভাল মুহূর্ত!
হাতের জখম এড়িয়ে
কাঁচগুলি খুঁটে খুঁটে ফেলছি।
শীতের শহর
ফারহানা রহমান
শীত নেমে আসা পৃথিবীতে বহুদূরের হারানো
শহরটিতে বরফ জমা ঠা-া হাওয়া দিগন্তে
দোল খায়, ধূসর বৃক্ষরাজির পাশে অন্ধকারে
একাকি হেলান দিয়ে শুয়ে থাকে গাঢ় নীরবতা;
শালবন থেকে ভেসে আসা হাইডেনের হ্রস্ব সুরে
নীল ধূপকাঠি জ্বালিয়ে ক্রমাগত ছুটে গেছি অশ্বত্থের
খুব কাছে যেখানে নির্জনে তীব্র সুখে ঢলে পড়ে
ধবল সারস জলকাদা মেখে ঘুমের গহ্বরে;
আর নিশাচর ভাসে মগ্ন শূন্যতার ভাঁজে ভাঁজে
দারুণ জ্যোৎস্না মত্ত মাতাল তখন অন্ধক্রোধে,
আমি অচেনা পথিক হয়ে লক্ষণ রেখাকে পার
হতে চাই ফের, আদিম সংকেত দিয়ে বহু আগে
সেই কৃষ্ণ নটবর হারিয়ে গিয়েছে পাহাড়ের বাঁকে;
আমাকে অক্লেশে বন্ধি করে রেখে বরফের ঘরে।
নো ম্যানস ল্যান্ড
অঞ্জন মেহেদী
বহুকাল দেখা হবে না আমাদের। বহুকাল ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা লাগবে সমস্ত শহর।
সেই থেকেই আকাশের নক্ষত্রেরা দলছুট, বেসুরো পাখিদের গান!
এরপর পেরিয়ে গেছে আগুনের দিন, এক সমুদ্র নীল বিষাদ।
তাপদাহের দিন আমাদের দেখা হলে, মেট্রোতে দাঁড়িয়েও কারো মুখে কোনো কথা নেই!
নির্বাক মুখের ভাষা জানবে কেবল উত্তরের হাওয়া।
কেউ জানতে চাইবো না কেমন আছো? কেমন গেছে সেইসব দিন?
কেউ কারো মুখের দিকে তাকাবো না, ভীষণ শাসন করবো অবাধ্য চোখ দুটোকে।
বৃষ্টির দিন শেষ বিকেলের কফিশপে হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে মুখ ফেরাবো,
ফুটপাতে হাঁটতে হাঁটতে গায়ে গা ঘষা লাগলেও তর্জনী তুলে ঝগড়া হবে না,
নো ম্যানস ল্যান্ডে দাঁড়িয়ে দু’দ- শ্বাস নেবো। দশ আঙুলে রোদ লাগা চুলগুলো
এলোমেলো করে আবার উল্টো রাস্তায় পা বাড়াবো। মন পোড়া গন্ধ কী তীব্র হয় তুমি টেরই পাবে না!
তারপর বহুদিন আর আমাদের দেখা হবে না, বহুকাল একা থাকার অভ্যেস আমাদের পেয়ে বসবে।
ঝুল বারান্দায় ভুল জীবন
পুলক রঞ্জন
ঝুল বারান্দায় উঠেছিল যে পা’জোড়া
ভুল করে তা আর নামানো যায়নি;
যে বারান্দায় বসে যুগল দেখেছিলো
নরম ভোর, মধ্য দুপুরের রৌদ্রস্নানে
বেলা গড়িয়েছিলো গোধূলির কানায়;
অবশেষে তা সান্ধ্য কুহকে হামাগুড়ি
দিয়ে দিয়ে তখন মধ্যরাত।
চায়ের পেয়ালায় শেষ চুমুক দেয়া হয়নি
তখনো; স্মৃতির পেন্ডোরার ঝাঁপি
খুলতে খুলতে; পৃথিবী তখন অস্থির সময়ের
পে-ুলামে; মানুষ স্মৃতি নিয়ে বাঁচে নাকি
ভবিষ্যতে; তর্ক দলাদলি, সংঘাত সংঘর্ষ
নিরূপন হয়নি কোনো মতবাদে বা তথ্যে।
অব্যয় অমীমাংসিত এসব জরুরি জীবন
আমাদের কাছে রেখে গেছে মৃতলোকের
মতোন; এখন যেমন বসে আছি মুখোমুখি
সমাধান ছাড়া; মাথার মধ্যে ঘোরে
অগনন জিজ্ঞাসা;
ঝুল বারান্দায় ভুল করে যুগল যাপন।
এই জীবনে, এই জনারণ্যে
তারিক মেহের
এই জীবনে, এই জনারণ্যে
কেন যে এত কিছুর আয়োজন
বুঝতে না বুঝতেই কেটে যায় জীবন;
এইভাবে কাটতে কাটতে একদিন
জীবন অবসর নিলে শুরু হয়
মৃত্যুর চরকায় সুতো কাটবার কাল।
কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে, রৌদ্রস্নাত মধ্যাহ্নে
কিংবা গোধূলি বেলায় মাঝে মাঝে
কখনো কখনো এবং সহসা
মায়মুনার কথা মনে পড়লে
আমি বুঝতে পারি
মায়মুনা আমার জীবন থেকে
বৃক্ষের পাতার মতন,
শরীরের কোষের মতন ঝরে গিয়ে
আমাকে জানিয়ে গেছে
ঝরে যাওয়াটাই শেষ পর্যন্ত অনিবার্য।
জীবন আর কতদিন আয়ুষ্মান থাকবে?
আর কতটা দম, কত মুহূর্তের আয়ু
সঞ্চিত রয়েছে আমার?
ক্রমশ ধূসর হয়ে আসছে দৃষ্টি
বিস্মৃতির দৌরাত্ম্যে দিন কে দিন
মলিন হয়ে আসছে তোমার দীপ্তিমান মুখশ্রী-
আমাকে ছেড়ে পিছিয়ে যাচ্ছে
আমার শৈশবের দিন, কৈশোরের স্কুল-
হিম ঠা-া হয়ে আসছে কলেজ ক্যান্টিনের চা।
যতই দিন যাচ্ছে, যত নিকটবর্তী হচ্ছি মৃত্যুর
মধ্যাকর্ষণ শক্তি আরো জোরে টানছে আমায়
যেনবা সুযোগ পেলে গেঁথে নেবে মাটির গভীরে।
কেন যে এই জীবনে, কেন যে জনারণ্যে
জীবনের পাঠ নিতে নিতে
তোমার নিকটে যাবার পরিবর্তে
প্রতি মুহূর্তে ছেড়ে যাওয়া তোমাকে?
মায়াবী আঙুলের ঘোর
শ্যামল নাথ
এখানে নয়, এইখানে এসো চিনতে কি পারছো আমায়
ঘড়ায় তুলি জল, ছোট এ জীবন সব বলে দিবো তোমায়।
নিকানো উঠোন ঝড়ে জেগে ওঠে অলৌকিক ভোর
ছায়ার নিচে জড়ো হবে মায়াবী আঙুলের ঘোর।
সবগুলো পালক ঝরে যায়, ঝরে গেলে নামে সন্ধ্যা
আমাদের বেঁচে থাকা যেন আজ দুর্ভিক্ষে মন্দা।
কেউ ঘুমাচ্ছে না, আকাশে মাটিতে, পাটিতে কোথাও না
বাতাসের ওপর ভাসছে আকাশ তোমাকে পালাতে দেবো না;
তোমার চোখের পাতায়, বুকের চূড়ার অক্ষরে আঁকি হোলি
একাকী এক মেঘের মতো ঘুরে বেড়াই কানা গলি।
বিবর্ণ এক মধ্যরাত কেঁপে কেঁপে ঝরে পড়ে পাপড়ির ওপর;
তোমার বুকের চূড়ায় আমার চোখের পাতা মেলা ভার
ক্ষমা করো, ক্ষমা করো আমাকে, মাতাল হয়ে গেছে সময়
এখন তো নয় কেবল মৃত্যু নিয়ে রসিকতার করার অসময়।
খেন্টাই পর্বতের গায়ে
মারুফ আহমেদ নয়ন
সুন্দরী হংসী, তোমার প্রত্যাখান মনে রেখেছি।
ত্বকের লাবণ্যে ধরে রাখো কীটপতঙ্গের হৃদয়।
যদি সন্ধি প্রস্তাব সফল হতো, ভাটার বিপরীতে
গড়ে উঠতো সংসার। তবুও কেন মু-া যুবতীর
নিমন্ত্রণে এসেছি তাঁহার বিবাহ দিনে। ঝুমুর ও
নৃত্যগীতির সুরে পান করেছি হাড়িয়া। তারপর
মাতাল দশা, নিজেকে মুঘল স¤্রাট বলে ভ্রম
হয়। মঙ্গোলীয় সেনা ভেবে ভুল হয়। ঘোড়ার
রক্ত পানে মিটিয়েছি তৃষ্ণা। তোমার রূপে ফিদা
হয়ে হারিয়েছি ঠোঁট, বাচন ভঙ্গিমা। শরমিন্দা
করো না বন্ধু। দুধের গাজনে প্রস্তুত হবে মদ।
আমরা ঢলে পড়বো খেন্টাই পর্বতের গায়ে।
রং
মীর্জা আবু হেনা কায়সার
মানুষের মুখেও এখন
রং মাখা
মানুষের চোখেও এখন
রং মাখা
রং মাখা মানুষের সুখেও।
এতো রং কী দিয়ে ঢাকি
চারপাশে শুধুই রং মাখা দেখি।
বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শূন্যস্থান
আতাউর রহমান মিলাদ
বহুতল ভবনের নিচে অসংখ্য কঙ্কাল
অমীমাংসিত ভ্রমণের অপূর্ণ অর্জন
বেঁচে আছে বহুকালের রক্তাক্ত হৃৎপি-
ওরা আসে,ভাসে ঘরময়
আর্তস্বরে খুলে বসে ইতিহাসের পাতা
সাহসের লাল গালিচায় মুক্তির সহোদর
শেকড় গভীরে কংক্রিটের হাড়
কথার পাঁজরে আত্মগত অভিমান
অবিন্যস্ত সময়ের ফসিল দেয়াল
দ্রবীভূত মেঘের দীর্ঘশ্বাস, স্মৃতির নহর
জংধরা জবানের ধার,বিমূর্ত জখম
ঈশারা ইঙ্গিতে গোপন ট্রাজেডি
ভয়ার্ত পিতলের চোখে
দিনযাপনের ক্ষমাহীন জল!
ফেরা
দিলীপ কির্ত্তুনিয়া
হাতের গ্লাসটা রাগ করে ভাঙলাম।
ভাঙলাম ঠিকই- খেয়ালী বশে
ইচ্ছের পরাগে।
কিন্তু চূর্ণ কাঁচগুলি এবার
সাবধানে ফেলতে হবে ।
খেয়ালীপনার এতটুকু রঙ
প্রশ্রয় দেয়া যাবে না এখানে।
রাগ থেকে কী সুন্দর অনুরাগে ফেরা!
কী ভাল মুহূর্ত!
হাতের জখম এড়িয়ে
কাঁচগুলি খুঁটে খুঁটে ফেলছি।
শীতের শহর
ফারহানা রহমান
শীত নেমে আসা পৃথিবীতে বহুদূরের হারানো
শহরটিতে বরফ জমা ঠা-া হাওয়া দিগন্তে
দোল খায়, ধূসর বৃক্ষরাজির পাশে অন্ধকারে
একাকি হেলান দিয়ে শুয়ে থাকে গাঢ় নীরবতা;
শালবন থেকে ভেসে আসা হাইডেনের হ্রস্ব সুরে
নীল ধূপকাঠি জ্বালিয়ে ক্রমাগত ছুটে গেছি অশ্বত্থের
খুব কাছে যেখানে নির্জনে তীব্র সুখে ঢলে পড়ে
ধবল সারস জলকাদা মেখে ঘুমের গহ্বরে;
আর নিশাচর ভাসে মগ্ন শূন্যতার ভাঁজে ভাঁজে
দারুণ জ্যোৎস্না মত্ত মাতাল তখন অন্ধক্রোধে,
আমি অচেনা পথিক হয়ে লক্ষণ রেখাকে পার
হতে চাই ফের, আদিম সংকেত দিয়ে বহু আগে
সেই কৃষ্ণ নটবর হারিয়ে গিয়েছে পাহাড়ের বাঁকে;
আমাকে অক্লেশে বন্ধি করে রেখে বরফের ঘরে।
নো ম্যানস ল্যান্ড
অঞ্জন মেহেদী
বহুকাল দেখা হবে না আমাদের। বহুকাল ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা লাগবে সমস্ত শহর।
সেই থেকেই আকাশের নক্ষত্রেরা দলছুট, বেসুরো পাখিদের গান!
এরপর পেরিয়ে গেছে আগুনের দিন, এক সমুদ্র নীল বিষাদ।
তাপদাহের দিন আমাদের দেখা হলে, মেট্রোতে দাঁড়িয়েও কারো মুখে কোনো কথা নেই!
নির্বাক মুখের ভাষা জানবে কেবল উত্তরের হাওয়া।
কেউ জানতে চাইবো না কেমন আছো? কেমন গেছে সেইসব দিন?
কেউ কারো মুখের দিকে তাকাবো না, ভীষণ শাসন করবো অবাধ্য চোখ দুটোকে।
বৃষ্টির দিন শেষ বিকেলের কফিশপে হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে মুখ ফেরাবো,
ফুটপাতে হাঁটতে হাঁটতে গায়ে গা ঘষা লাগলেও তর্জনী তুলে ঝগড়া হবে না,
নো ম্যানস ল্যান্ডে দাঁড়িয়ে দু’দ- শ্বাস নেবো। দশ আঙুলে রোদ লাগা চুলগুলো
এলোমেলো করে আবার উল্টো রাস্তায় পা বাড়াবো। মন পোড়া গন্ধ কী তীব্র হয় তুমি টেরই পাবে না!
তারপর বহুদিন আর আমাদের দেখা হবে না, বহুকাল একা থাকার অভ্যেস আমাদের পেয়ে বসবে।
ঝুল বারান্দায় ভুল জীবন
পুলক রঞ্জন
ঝুল বারান্দায় উঠেছিল যে পা’জোড়া
ভুল করে তা আর নামানো যায়নি;
যে বারান্দায় বসে যুগল দেখেছিলো
নরম ভোর, মধ্য দুপুরের রৌদ্রস্নানে
বেলা গড়িয়েছিলো গোধূলির কানায়;
অবশেষে তা সান্ধ্য কুহকে হামাগুড়ি
দিয়ে দিয়ে তখন মধ্যরাত।
চায়ের পেয়ালায় শেষ চুমুক দেয়া হয়নি
তখনো; স্মৃতির পেন্ডোরার ঝাঁপি
খুলতে খুলতে; পৃথিবী তখন অস্থির সময়ের
পে-ুলামে; মানুষ স্মৃতি নিয়ে বাঁচে নাকি
ভবিষ্যতে; তর্ক দলাদলি, সংঘাত সংঘর্ষ
নিরূপন হয়নি কোনো মতবাদে বা তথ্যে।
অব্যয় অমীমাংসিত এসব জরুরি জীবন
আমাদের কাছে রেখে গেছে মৃতলোকের
মতোন; এখন যেমন বসে আছি মুখোমুখি
সমাধান ছাড়া; মাথার মধ্যে ঘোরে
অগনন জিজ্ঞাসা;
ঝুল বারান্দায় ভুল করে যুগল যাপন।
এই জীবনে, এই জনারণ্যে
তারিক মেহের
এই জীবনে, এই জনারণ্যে
কেন যে এত কিছুর আয়োজন
বুঝতে না বুঝতেই কেটে যায় জীবন;
এইভাবে কাটতে কাটতে একদিন
জীবন অবসর নিলে শুরু হয়
মৃত্যুর চরকায় সুতো কাটবার কাল।
কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে, রৌদ্রস্নাত মধ্যাহ্নে
কিংবা গোধূলি বেলায় মাঝে মাঝে
কখনো কখনো এবং সহসা
মায়মুনার কথা মনে পড়লে
আমি বুঝতে পারি
মায়মুনা আমার জীবন থেকে
বৃক্ষের পাতার মতন,
শরীরের কোষের মতন ঝরে গিয়ে
আমাকে জানিয়ে গেছে
ঝরে যাওয়াটাই শেষ পর্যন্ত অনিবার্য।
জীবন আর কতদিন আয়ুষ্মান থাকবে?
আর কতটা দম, কত মুহূর্তের আয়ু
সঞ্চিত রয়েছে আমার?
ক্রমশ ধূসর হয়ে আসছে দৃষ্টি
বিস্মৃতির দৌরাত্ম্যে দিন কে দিন
মলিন হয়ে আসছে তোমার দীপ্তিমান মুখশ্রী-
আমাকে ছেড়ে পিছিয়ে যাচ্ছে
আমার শৈশবের দিন, কৈশোরের স্কুল-
হিম ঠা-া হয়ে আসছে কলেজ ক্যান্টিনের চা।
যতই দিন যাচ্ছে, যত নিকটবর্তী হচ্ছি মৃত্যুর
মধ্যাকর্ষণ শক্তি আরো জোরে টানছে আমায়
যেনবা সুযোগ পেলে গেঁথে নেবে মাটির গভীরে।
কেন যে এই জীবনে, কেন যে জনারণ্যে
জীবনের পাঠ নিতে নিতে
তোমার নিকটে যাবার পরিবর্তে
প্রতি মুহূর্তে ছেড়ে যাওয়া তোমাকে?
মায়াবী আঙুলের ঘোর
শ্যামল নাথ
এখানে নয়, এইখানে এসো চিনতে কি পারছো আমায়
ঘড়ায় তুলি জল, ছোট এ জীবন সব বলে দিবো তোমায়।
নিকানো উঠোন ঝড়ে জেগে ওঠে অলৌকিক ভোর
ছায়ার নিচে জড়ো হবে মায়াবী আঙুলের ঘোর।
সবগুলো পালক ঝরে যায়, ঝরে গেলে নামে সন্ধ্যা
আমাদের বেঁচে থাকা যেন আজ দুর্ভিক্ষে মন্দা।
কেউ ঘুমাচ্ছে না, আকাশে মাটিতে, পাটিতে কোথাও না
বাতাসের ওপর ভাসছে আকাশ তোমাকে পালাতে দেবো না;
তোমার চোখের পাতায়, বুকের চূড়ার অক্ষরে আঁকি হোলি
একাকী এক মেঘের মতো ঘুরে বেড়াই কানা গলি।
বিবর্ণ এক মধ্যরাত কেঁপে কেঁপে ঝরে পড়ে পাপড়ির ওপর;
তোমার বুকের চূড়ায় আমার চোখের পাতা মেলা ভার
ক্ষমা করো, ক্ষমা করো আমাকে, মাতাল হয়ে গেছে সময়
এখন তো নয় কেবল মৃত্যু নিয়ে রসিকতার করার অসময়।
খেন্টাই পর্বতের গায়ে
মারুফ আহমেদ নয়ন
সুন্দরী হংসী, তোমার প্রত্যাখান মনে রেখেছি।
ত্বকের লাবণ্যে ধরে রাখো কীটপতঙ্গের হৃদয়।
যদি সন্ধি প্রস্তাব সফল হতো, ভাটার বিপরীতে
গড়ে উঠতো সংসার। তবুও কেন মু-া যুবতীর
নিমন্ত্রণে এসেছি তাঁহার বিবাহ দিনে। ঝুমুর ও
নৃত্যগীতির সুরে পান করেছি হাড়িয়া। তারপর
মাতাল দশা, নিজেকে মুঘল স¤্রাট বলে ভ্রম
হয়। মঙ্গোলীয় সেনা ভেবে ভুল হয়। ঘোড়ার
রক্ত পানে মিটিয়েছি তৃষ্ণা। তোমার রূপে ফিদা
হয়ে হারিয়েছি ঠোঁট, বাচন ভঙ্গিমা। শরমিন্দা
করো না বন্ধু। দুধের গাজনে প্রস্তুত হবে মদ।
আমরা ঢলে পড়বো খেন্টাই পর্বতের গায়ে।
রং
মীর্জা আবু হেনা কায়সার
মানুষের মুখেও এখন
রং মাখা
মানুষের চোখেও এখন
রং মাখা
রং মাখা মানুষের সুখেও।
এতো রং কী দিয়ে ঢাকি
চারপাশে শুধুই রং মাখা দেখি।