পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার চিড়াপাড়া পারসাতুরিয়া ইউনিয়নের সুবিদপুর গ্রামের শীতলপাটির সুনাম ছিল সারাদেশে। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই গ্রামের পাটিকররা কোনোমতে ওই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কিন্তু যথাযথ স্বীকৃতি ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দৃষ্টিনন্দন এ শীতল পাটির বিপন্ন দশা।
দেশের যে কয়টি জেলায় শীতল পাটি তৈরি হয় তার মধ্যে পিরোজপুরের কাউখালী অন্যতম। পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে সুবিদপুর গ্রামের অবস্থান। যে গ্রামের ৬০টি পরিবার আজও পাটি শিল্পকে তাদের বাঁচার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে অঁাঁকড়ে রয়েছে। এখানকার তৈরি শীতলপাটি পাইকারদের হাত ঘুরে চলে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, পটুয়াখালী, যশোর ও খুলনার বাজারে।
রপ্তানি পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও শৌখিন ব্যবসায়ী ও বেড়াতে আসা অতিথিদের মাধ্যমে শীতলপাটি যাচ্ছে ভারত, নেপাল, ভূটান, মালয়শিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ব্রিটেনসহ অনেক দেশে। অনেকে আবার ঘরের শোভাবর্ধনে নকশা করা শীতলপাটি দেয়ালে টাঙিয়ে রাখেন।
সুবিদপুর গ্রামের রবিন পাটিকর জানান, কালের বিবর্তনে কাউখালীর পাটি শিল্প আজ বিলীনের পথে। অভাব তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। রাত-দিন পরিশ্রম করেও দু’বেলা দু’মুঠো আহার জোগাতে পারছেন না আবার বাপ দাদার পেশা তাই এ পেশা ছাড়তেও পারছেন না তারা। উচ্চশিক্ষা দূরের কথা নাম দস্তখত শেখারও সুযোগ পায় না তাদের ৭০ ভাগ শিশু।
পাটিকর সীমা রানি জানান, পাঁচ ফুট প্রস্থ ও সাত ফুট দৈর্ঘ্যরে ভালো মানের একটি শীতলপাটি কাউখালীর বাজারে দুই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। মধ্যম মানের একটি পাটির দাম ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। এছাড়া ৪০০-৫০০ টাকায়ও কিছু শীতলপাটি মেলে।
তিনি আরও জানান, একটি শীতলপাটি তৈরি করতে সাধারণত তিন-চার দিন লাগে। একজন বয়স্ক পাটিকর সাত দিনে একটি পাটি তৈরি করতে পারেন।
গড় হিসেবে দেখা যায়, একটি পরিবারের তিন সদস্য মিলে কাজ করলেও মাসে ১০টিরও বেশি পাটি তৈরি সম্ভব নয়। ১০টি পাটি বিক্রি করে মাসে সর্বোচ্চ ছয়-সাত হাজার টাকা আয় হয়। এই আয়েই চলে পাটিকরদের সংসার। পাটি শিল্পের বিকাশে বড় সমস্যা হলো অর্থনৈতিক সংকট। শীতলপাটি তৈরির জন্য পাটিকরদের সরকারি, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কোনো ঋণ দেয় না। সরকার শীতলপাটি রপ্তানির উদ্যোগ নিলে পাটিকরদের সুদিন আসতো।
জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও বিশিষ্ট সমাজসেবক মামুন হোসাইন বাবলু জমাদ্দার বলেন, পাটি শিল্পটি আমাদের ঐহিত্য, এই শিল্পটি বাঁচিয়ে রাখতে সমাজের সব মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
চিরাপাড়া পারসাতুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লাইকুজ্জামান মিন্টু তালুকদার বলেন, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ দেশি-বিদেশি পর্যটক এলাকাটি পরিদর্শন করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্বজনল মোল্লা আশ্বাস দিয়ে বলেন, এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে যা কিছু দরকার তার জন্য আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করবো।
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                        ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                           	                                            সোমবার, ২০ মে ২০২৪
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার চিড়াপাড়া পারসাতুরিয়া ইউনিয়নের সুবিদপুর গ্রামের শীতলপাটির সুনাম ছিল সারাদেশে। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই গ্রামের পাটিকররা কোনোমতে ওই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কিন্তু যথাযথ স্বীকৃতি ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দৃষ্টিনন্দন এ শীতল পাটির বিপন্ন দশা।
দেশের যে কয়টি জেলায় শীতল পাটি তৈরি হয় তার মধ্যে পিরোজপুরের কাউখালী অন্যতম। পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে সুবিদপুর গ্রামের অবস্থান। যে গ্রামের ৬০টি পরিবার আজও পাটি শিল্পকে তাদের বাঁচার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে অঁাঁকড়ে রয়েছে। এখানকার তৈরি শীতলপাটি পাইকারদের হাত ঘুরে চলে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, পটুয়াখালী, যশোর ও খুলনার বাজারে।
রপ্তানি পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও শৌখিন ব্যবসায়ী ও বেড়াতে আসা অতিথিদের মাধ্যমে শীতলপাটি যাচ্ছে ভারত, নেপাল, ভূটান, মালয়শিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ব্রিটেনসহ অনেক দেশে। অনেকে আবার ঘরের শোভাবর্ধনে নকশা করা শীতলপাটি দেয়ালে টাঙিয়ে রাখেন।
সুবিদপুর গ্রামের রবিন পাটিকর জানান, কালের বিবর্তনে কাউখালীর পাটি শিল্প আজ বিলীনের পথে। অভাব তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। রাত-দিন পরিশ্রম করেও দু’বেলা দু’মুঠো আহার জোগাতে পারছেন না আবার বাপ দাদার পেশা তাই এ পেশা ছাড়তেও পারছেন না তারা। উচ্চশিক্ষা দূরের কথা নাম দস্তখত শেখারও সুযোগ পায় না তাদের ৭০ ভাগ শিশু।
পাটিকর সীমা রানি জানান, পাঁচ ফুট প্রস্থ ও সাত ফুট দৈর্ঘ্যরে ভালো মানের একটি শীতলপাটি কাউখালীর বাজারে দুই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। মধ্যম মানের একটি পাটির দাম ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। এছাড়া ৪০০-৫০০ টাকায়ও কিছু শীতলপাটি মেলে।
তিনি আরও জানান, একটি শীতলপাটি তৈরি করতে সাধারণত তিন-চার দিন লাগে। একজন বয়স্ক পাটিকর সাত দিনে একটি পাটি তৈরি করতে পারেন।
গড় হিসেবে দেখা যায়, একটি পরিবারের তিন সদস্য মিলে কাজ করলেও মাসে ১০টিরও বেশি পাটি তৈরি সম্ভব নয়। ১০টি পাটি বিক্রি করে মাসে সর্বোচ্চ ছয়-সাত হাজার টাকা আয় হয়। এই আয়েই চলে পাটিকরদের সংসার। পাটি শিল্পের বিকাশে বড় সমস্যা হলো অর্থনৈতিক সংকট। শীতলপাটি তৈরির জন্য পাটিকরদের সরকারি, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কোনো ঋণ দেয় না। সরকার শীতলপাটি রপ্তানির উদ্যোগ নিলে পাটিকরদের সুদিন আসতো।
জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও বিশিষ্ট সমাজসেবক মামুন হোসাইন বাবলু জমাদ্দার বলেন, পাটি শিল্পটি আমাদের ঐহিত্য, এই শিল্পটি বাঁচিয়ে রাখতে সমাজের সব মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
চিরাপাড়া পারসাতুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লাইকুজ্জামান মিন্টু তালুকদার বলেন, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ দেশি-বিদেশি পর্যটক এলাকাটি পরিদর্শন করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্বজনল মোল্লা আশ্বাস দিয়ে বলেন, এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে যা কিছু দরকার তার জন্য আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করবো।