মৃত্যুর আগে মুক্তিপণ চেয়েছিল খুনিরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের গণপিটুনিতে নিহত পাথরঘাটার মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলের (৩০) মরদেহ জানাজা শেষে মা-বাবা ভাইয়ের পাশে দাফন করা হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টায় বরগুনার পাথরঘাটার তালুকের চরদুয়ানীতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে, সকাল ৯টার দিকে চরদুয়ানী মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর তোফাজ্জলের হত্যাকা-ে জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা। নিহত তোফাজ্জল হোসেন পাথরঘাটার তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে।
৪ বছর আগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মেয়ের সঙ্গে প্রেম সংক্রান্ত কারণে চেয়ারম্যান ও তার ছেলে বেধম মারপিটের কারণে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন বলে জানান তোফাজ্জলের স্বজনরা। পরে তার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় এবং মা ও ভাই ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার পরিবারের কোনো সদস্য জীবিত নেই। এক ধরনের ভবঘুরে জীবন ছিল তোফাজ্জলের। মানসিক ভারসাম্যর আগে কাঁঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তোফাজ্জল।
জানা যায়, ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হলে প্রবেশ করেন তোফাজ্জল। ওই সময় চোর সন্দেহে তাকে আটক করে শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ১০টার দিকে হলের গেস্ট রুমে কয়েক দফা মারধর করা হয়। একপর্যায়ে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়। তারপর পুনরায় মারধর করা হয়। দীর্ঘ সময় মারধরের ফলে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তোফাজ্জল ভালো একটি ছেলে, সে দীর্ঘদিন যাবত মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় জীবনযাপন করছে, সে কখনো চুরির কোন ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না।
কিন্তু কেন তাকে ঢাকা ভার্সিটির মতো দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা বর্বর ও পাশবিক নির্যাতন করে জীবন্ত মানুষটাকে মেরে ফেলেছে? এরা শিক্ষা জাতির জন্য কলঙ্ক?। কলঙ্কিত করেছে ঢাকা ভার্সিটিকে। আমরা পাথরঘাটাবাসীর পক্ষ থেকে তার হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- কামনা করছি।
তোফাজ্জলের ভাবি শরিফা বলেন, ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে অপরিচিত একটি নম্বর (০১৭৪৩৭৪৫৪২৬) থেকে আমার ফোনে কল আসে। কলটি ধরার পরেই অপর প্রান্ত থেকে এক লোক তোফাজ্জলের কি হই জানতে চান। পরিচয় দিলে তিনি বলেন, ‘সে চুরি করে ধরা পড়েছে, তাকে বাঁচাতে হলে ২ লাখ টাকা দিতে হবে।’ এরপর তারা ফোনে ধমক দিতে থাকেন এবং বলেন, কোনো মিথ্যা কথা বলবেন না, তাহলে সমস্যা হবে। তাদের সঙ্গে কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পরে বিভিন্ন লোকজন জানান তোফাজ্জল মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামীর বংশ-পরিচয় দেয়ার মতো আর কেউ রইল না। আমার দুই সন্তান বাবাহারা, তাদের একজন চাচা ছিল, তা-ও শেষ করে দিল। আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম, সরকারের কাছে দাবি যাতে করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেয়া হয়।
তোফাজ্জলের চাচা ফজলুর রহমান বলেন, ‘তোফাজ্জলের বাবা আব্দুর রহমান প্রায় ১০ বছর আগে মারা যান। এর তিন বছর পর তার মা মারা যান। এর পর থেকেই মানসিকভাবে তিনি ভেঙে পড়েন এবং বড় ভাই নাসিরের আশ্রয়ে থাকতে শুরু করেন। ভাইও দুই বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েন তোফাজ্জল। এর কিছুদিন পর একটি প্রেম গঠিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাজারের ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুর রহমান ও তার লোকজন তাকে মারধর করেন। এর পর থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি।
তিনি বলেন তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও কাউকে কিছুই করতেন না। শুধু পরিচিত লোকজনের সঙ্গে দেখা হলে ২০-৫০ টাকা টাকা চেয়ে নিতেন। আমি কখনোই তাকে চুরি করতে দেখিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে যে চুরির অপবাদ দেয়া হয়েছে, এর কোনো সত্যতা পাইনি। আমরা অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, ‘তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল, এটা আমি জানি। তার সঙ্গে যেটা হয়েছে এটা অমানবিক। যেসব নম্বর থেকে পরিবারের কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে, সেসব নম্বর বর্তমানে বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
মৃত্যুর আগে মুক্তিপণ চেয়েছিল খুনিরা
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের গণপিটুনিতে নিহত পাথরঘাটার মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলের (৩০) মরদেহ জানাজা শেষে মা-বাবা ভাইয়ের পাশে দাফন করা হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টায় বরগুনার পাথরঘাটার তালুকের চরদুয়ানীতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে, সকাল ৯টার দিকে চরদুয়ানী মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর তোফাজ্জলের হত্যাকা-ে জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা। নিহত তোফাজ্জল হোসেন পাথরঘাটার তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে।
৪ বছর আগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মেয়ের সঙ্গে প্রেম সংক্রান্ত কারণে চেয়ারম্যান ও তার ছেলে বেধম মারপিটের কারণে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন বলে জানান তোফাজ্জলের স্বজনরা। পরে তার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় এবং মা ও ভাই ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার পরিবারের কোনো সদস্য জীবিত নেই। এক ধরনের ভবঘুরে জীবন ছিল তোফাজ্জলের। মানসিক ভারসাম্যর আগে কাঁঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তোফাজ্জল।
জানা যায়, ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হলে প্রবেশ করেন তোফাজ্জল। ওই সময় চোর সন্দেহে তাকে আটক করে শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ১০টার দিকে হলের গেস্ট রুমে কয়েক দফা মারধর করা হয়। একপর্যায়ে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়। তারপর পুনরায় মারধর করা হয়। দীর্ঘ সময় মারধরের ফলে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তোফাজ্জল ভালো একটি ছেলে, সে দীর্ঘদিন যাবত মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় জীবনযাপন করছে, সে কখনো চুরির কোন ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না।
কিন্তু কেন তাকে ঢাকা ভার্সিটির মতো দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা বর্বর ও পাশবিক নির্যাতন করে জীবন্ত মানুষটাকে মেরে ফেলেছে? এরা শিক্ষা জাতির জন্য কলঙ্ক?। কলঙ্কিত করেছে ঢাকা ভার্সিটিকে। আমরা পাথরঘাটাবাসীর পক্ষ থেকে তার হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- কামনা করছি।
তোফাজ্জলের ভাবি শরিফা বলেন, ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে অপরিচিত একটি নম্বর (০১৭৪৩৭৪৫৪২৬) থেকে আমার ফোনে কল আসে। কলটি ধরার পরেই অপর প্রান্ত থেকে এক লোক তোফাজ্জলের কি হই জানতে চান। পরিচয় দিলে তিনি বলেন, ‘সে চুরি করে ধরা পড়েছে, তাকে বাঁচাতে হলে ২ লাখ টাকা দিতে হবে।’ এরপর তারা ফোনে ধমক দিতে থাকেন এবং বলেন, কোনো মিথ্যা কথা বলবেন না, তাহলে সমস্যা হবে। তাদের সঙ্গে কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পরে বিভিন্ন লোকজন জানান তোফাজ্জল মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামীর বংশ-পরিচয় দেয়ার মতো আর কেউ রইল না। আমার দুই সন্তান বাবাহারা, তাদের একজন চাচা ছিল, তা-ও শেষ করে দিল। আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম, সরকারের কাছে দাবি যাতে করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেয়া হয়।
তোফাজ্জলের চাচা ফজলুর রহমান বলেন, ‘তোফাজ্জলের বাবা আব্দুর রহমান প্রায় ১০ বছর আগে মারা যান। এর তিন বছর পর তার মা মারা যান। এর পর থেকেই মানসিকভাবে তিনি ভেঙে পড়েন এবং বড় ভাই নাসিরের আশ্রয়ে থাকতে শুরু করেন। ভাইও দুই বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েন তোফাজ্জল। এর কিছুদিন পর একটি প্রেম গঠিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাজারের ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুর রহমান ও তার লোকজন তাকে মারধর করেন। এর পর থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি।
তিনি বলেন তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও কাউকে কিছুই করতেন না। শুধু পরিচিত লোকজনের সঙ্গে দেখা হলে ২০-৫০ টাকা টাকা চেয়ে নিতেন। আমি কখনোই তাকে চুরি করতে দেখিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে যে চুরির অপবাদ দেয়া হয়েছে, এর কোনো সত্যতা পাইনি। আমরা অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, ‘তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল, এটা আমি জানি। তার সঙ্গে যেটা হয়েছে এটা অমানবিক। যেসব নম্বর থেকে পরিবারের কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে, সেসব নম্বর বর্তমানে বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।