‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান, মিলিয়া বাউলা গান আর জারি সারি আর মুর্শিদি গান গাইতাম, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম। আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।’ বাউল সাধক শাহ আব্দুল করিমেরর এ গানে ছিল হিন্দু-মুসলিমদের সম্প্রীতির বন্ধনের এক অনবদ্য প্রকাশ। সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে ছিল ভ্রাতৃত্ববোধের এক অটুট মেলবন্ধন। এখন এসব গান আর কথার মর্মার্থ যে অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে।
ধর্ম-কর্ম, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ওষুধ-পথ্য কোনো কিছুই মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে না। মৃত্যুর পর প্রচলিত স্বস্ব ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী প্রতিটি মানুষকেই চির বিদায় জানাতে হয়। এ বিদায়কে কেউ বলে দাফন-কাফন, কেউ বলে সৎকার, শেষকৃত্য, আবার কেউ বলে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া।
যখন হিন্দু ধর্মের কোন ব্যক্তি মারা যায়, তখন ধর্মীয় প্রথা অনুসারে মৃতদেহের সৎকারের দায়িত্ব মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের ওপর বর্তায়। হিন্দু ধর্মের রীতি অনুযায়ী মৃতদেহের স্নান, সংলেপন ও কাপড় দিয়ে ঢেকে, যতটা সম্ভব চন্দন কাঠ বা অন্যান্য জ্বালানির সহযোগে মৃতদেহটি দাহ করতে হয়। আর এখানেই দেখা দেয় ভোগান্তির পালা। মৃতদেহ শ্মশান ঘাটে নিয়ে যাওয়ার কোনটির রাস্তা নেই। আবার কোনোটির রাস্তা দখল করে ফেলেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। শুধু রাস্তায় নয়, দখল করে নিচ্ছে শ্মশান ঘাটও। সনাতন ধর্মই বলেন আর অন্য ধর্মই বলেন, সব ধর্মের লোকজন এখন তাদের আত্মীয়-স্বজনের অন্তিম যাত্রার জন্য সুন্দর একটি পরিবেশ চায়। যেসব শ্মশানঘাট আছে, ওইসব শ্মশান ঘাট প্রশাসনের তদারকি করে রাস্তাঘাট নির্মাণ ও মৃতদেহ সৎকারের যথাযথ জায়গার ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি।
আমাদের এ আধুনিক যুগে প্রকাশ্যে উদারতা দেখালেও ভিতরে চলছে মনুষ্যত্বের বলিদান। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের রেহাই নেই তাদের বিদায় বেলাও। শেষকৃত্য বা সৎকারের জন্য শ্মশান ঘাটগুলো দখল করে আছে প্রভাবশালী লোকজন ও মাদকসেবীদের দল। যেখানে দিনের বেলায়ও সাধারণ মানুষ যেতে ভয় পায়। রাতের আধারে হয়ে ওঠে মাদকসেবীদের আড্ডা আর চোর-ডাকাতদের অভয়াশ্রম। ভৈরব পৌর এলাকায় ৩টি শ্মশান ঘাট রয়েছে। এর মধ্যে একটি চ-িবের, একটি রামশংকরপুর ও অপরটি হলো পঞ্চবটি শ্মশান ঘাট। এছাড়াও রয়েছে উপজেলার শিমুলকান্দি পাঁচঘর হাটি শ্মশান ঘাট, কালিকাপ্রসাদ শ্মশান ঘাট। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শ্মশানটি হলো পঞ্চবটি শ্মশান ঘাট। এলাকাবাসী ও হিন্দু সম্প্রদায় লোকজনের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি, শ্মশান ঘাটের রাস্তাটি নির্মাণ করা। শ্মশান ঘাটটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মারা গেলেও শ্মশান ঘাটে নেয়ার কোন রাস্তা নেই। আবার শ্মশান ঘাটের মূল অংশেও ফাটল ধরেছে, অনেক জায়গায় আবার ভেঙে পড়েছে। আবার এদিকে চ-িবের শ্মশান ঘাটটি এক ধরণের প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। এ শ্মশানের চতুরদিক দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। যার ফলে কেউ মারা গেলেও এখানে শেষকৃত্য করা সম্ভব হয় না। শেষকৃত্য করতে গেলে আশপাশের লোকজন হিন্দু সম্পদায়ের লোকজনদের উপর চড়াও হয়।
ভৈরব উপজেলার শিমুলকান্দি পাঁচঘর হাটি শ্মশান ঘাটের সভাপতি শুভজিৎ দাস বলেন, আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সমাজে এমনিতেই অবহেলিত। তারমধ্যে আমাদের কেউ মারা গেলে শেষকৃত্য বা অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার জন্য যে জায়গাটি রয়েছে, ওই জায়গায় মৃতদেহ নিয়ে যেতে কোন রাস্তা নেই। শুধু আমাদের শ্মশান ঘাটের রাস্তাই নয়, অনেক শ্মশান ঘাটেরই রাস্তা নেই। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আমাদের এই শ্মশান ঘাটের রাস্তাগুলি যেন নির্মাণ করে দেন। যাতে সহজে মৃতদেহ নিয়ে শ্মশান ঘাটে পৌঁছানো যায়।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন বলেন, আমি পঞ্চবটি শ্মশান ঘাটটি পরিদর্শন করেছি। শ্মশান ঘাটের রাস্তাটি আসলেই নাজুক অবস্থায় আছে। শ্মশান ঘাটটির রাস্তা নির্মাণের জন্য আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছি। আমার সাথে নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ সারোয়ার বাতেন, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি চন্দন কুমার পাল, পৌর কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিতাই দেবনাথ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ শ্রীমন্ত পাল, অধ্যক্ষ দীপক সাহা, গোপাল জিউর মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বপন দেবনাথও ছিলেন। খুব শীঘ্রই যেন রাস্তাটির নির্মাণ করা যায় তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আমি যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। যেভাবে রাস্তাটি নির্মাণ করা হলে এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের শ্মশান খলায় যাতায়াতের সুবিধা হবে, সেভাবে রাস্তাটি করার উদ্যোগ নিয়েছি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান, মিলিয়া বাউলা গান আর জারি সারি আর মুর্শিদি গান গাইতাম, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম। আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।’ বাউল সাধক শাহ আব্দুল করিমেরর এ গানে ছিল হিন্দু-মুসলিমদের সম্প্রীতির বন্ধনের এক অনবদ্য প্রকাশ। সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে ছিল ভ্রাতৃত্ববোধের এক অটুট মেলবন্ধন। এখন এসব গান আর কথার মর্মার্থ যে অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে।
ধর্ম-কর্ম, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ওষুধ-পথ্য কোনো কিছুই মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে না। মৃত্যুর পর প্রচলিত স্বস্ব ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী প্রতিটি মানুষকেই চির বিদায় জানাতে হয়। এ বিদায়কে কেউ বলে দাফন-কাফন, কেউ বলে সৎকার, শেষকৃত্য, আবার কেউ বলে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া।
যখন হিন্দু ধর্মের কোন ব্যক্তি মারা যায়, তখন ধর্মীয় প্রথা অনুসারে মৃতদেহের সৎকারের দায়িত্ব মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের ওপর বর্তায়। হিন্দু ধর্মের রীতি অনুযায়ী মৃতদেহের স্নান, সংলেপন ও কাপড় দিয়ে ঢেকে, যতটা সম্ভব চন্দন কাঠ বা অন্যান্য জ্বালানির সহযোগে মৃতদেহটি দাহ করতে হয়। আর এখানেই দেখা দেয় ভোগান্তির পালা। মৃতদেহ শ্মশান ঘাটে নিয়ে যাওয়ার কোনটির রাস্তা নেই। আবার কোনোটির রাস্তা দখল করে ফেলেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। শুধু রাস্তায় নয়, দখল করে নিচ্ছে শ্মশান ঘাটও। সনাতন ধর্মই বলেন আর অন্য ধর্মই বলেন, সব ধর্মের লোকজন এখন তাদের আত্মীয়-স্বজনের অন্তিম যাত্রার জন্য সুন্দর একটি পরিবেশ চায়। যেসব শ্মশানঘাট আছে, ওইসব শ্মশান ঘাট প্রশাসনের তদারকি করে রাস্তাঘাট নির্মাণ ও মৃতদেহ সৎকারের যথাযথ জায়গার ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি।
আমাদের এ আধুনিক যুগে প্রকাশ্যে উদারতা দেখালেও ভিতরে চলছে মনুষ্যত্বের বলিদান। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের রেহাই নেই তাদের বিদায় বেলাও। শেষকৃত্য বা সৎকারের জন্য শ্মশান ঘাটগুলো দখল করে আছে প্রভাবশালী লোকজন ও মাদকসেবীদের দল। যেখানে দিনের বেলায়ও সাধারণ মানুষ যেতে ভয় পায়। রাতের আধারে হয়ে ওঠে মাদকসেবীদের আড্ডা আর চোর-ডাকাতদের অভয়াশ্রম। ভৈরব পৌর এলাকায় ৩টি শ্মশান ঘাট রয়েছে। এর মধ্যে একটি চ-িবের, একটি রামশংকরপুর ও অপরটি হলো পঞ্চবটি শ্মশান ঘাট। এছাড়াও রয়েছে উপজেলার শিমুলকান্দি পাঁচঘর হাটি শ্মশান ঘাট, কালিকাপ্রসাদ শ্মশান ঘাট। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শ্মশানটি হলো পঞ্চবটি শ্মশান ঘাট। এলাকাবাসী ও হিন্দু সম্প্রদায় লোকজনের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি, শ্মশান ঘাটের রাস্তাটি নির্মাণ করা। শ্মশান ঘাটটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মারা গেলেও শ্মশান ঘাটে নেয়ার কোন রাস্তা নেই। আবার শ্মশান ঘাটের মূল অংশেও ফাটল ধরেছে, অনেক জায়গায় আবার ভেঙে পড়েছে। আবার এদিকে চ-িবের শ্মশান ঘাটটি এক ধরণের প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। এ শ্মশানের চতুরদিক দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। যার ফলে কেউ মারা গেলেও এখানে শেষকৃত্য করা সম্ভব হয় না। শেষকৃত্য করতে গেলে আশপাশের লোকজন হিন্দু সম্পদায়ের লোকজনদের উপর চড়াও হয়।
ভৈরব উপজেলার শিমুলকান্দি পাঁচঘর হাটি শ্মশান ঘাটের সভাপতি শুভজিৎ দাস বলেন, আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সমাজে এমনিতেই অবহেলিত। তারমধ্যে আমাদের কেউ মারা গেলে শেষকৃত্য বা অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার জন্য যে জায়গাটি রয়েছে, ওই জায়গায় মৃতদেহ নিয়ে যেতে কোন রাস্তা নেই। শুধু আমাদের শ্মশান ঘাটের রাস্তাই নয়, অনেক শ্মশান ঘাটেরই রাস্তা নেই। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আমাদের এই শ্মশান ঘাটের রাস্তাগুলি যেন নির্মাণ করে দেন। যাতে সহজে মৃতদেহ নিয়ে শ্মশান ঘাটে পৌঁছানো যায়।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন বলেন, আমি পঞ্চবটি শ্মশান ঘাটটি পরিদর্শন করেছি। শ্মশান ঘাটের রাস্তাটি আসলেই নাজুক অবস্থায় আছে। শ্মশান ঘাটটির রাস্তা নির্মাণের জন্য আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছি। আমার সাথে নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ সারোয়ার বাতেন, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি চন্দন কুমার পাল, পৌর কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিতাই দেবনাথ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ শ্রীমন্ত পাল, অধ্যক্ষ দীপক সাহা, গোপাল জিউর মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বপন দেবনাথও ছিলেন। খুব শীঘ্রই যেন রাস্তাটির নির্মাণ করা যায় তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আমি যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। যেভাবে রাস্তাটি নির্মাণ করা হলে এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের শ্মশান খলায় যাতায়াতের সুবিধা হবে, সেভাবে রাস্তাটি করার উদ্যোগ নিয়েছি।