খোকসা (কুষ্টিয়া) : হামলাকারীদের তছনছ করে রেখে যাওয়া ঘর দেখাচ্ছেন এক নারী -সংবাদ
কুষ্টিয়ার খোকসার গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গভীর রাতে হামলা পাল্টা হামলা চালিয়ে ৬টি বাড়ি ভাংচুর ও লুট পাট করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার দিনগত রাত ৩টার দিকে ওসমানপুর ইউনিয়নে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কলপাড়ায় এ হামলা পাল্টা হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। প্রবাসী এক নারী শ্রমিকের বাড়ি তার দুই ভাই ও এক চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে হামলা করা হয়। হামলার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের ২ বাড়িতে। হামলায় এক গৃহবধূসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। গত ৫ বছরের দুই বাহিনীর দুর্বৃত্তরা কমপক্ষে ২০বার হামলা পাল্টা হামলা চালিয়েছে। লুট করে নিয়েগেছে গরু ছাগলসহ সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র। প্রতি রাতেই হামলা পাল্টা হামলার ভয় নিয়ে গ্রামটির বৌ ঝিড়া ঘরে ঘুমতে যায়। এ রাতে হামলা করা হয় সাবেক মেম্বর ওয়াজেদ আলী, সাগর আলী, প্রবাসী নারী শ্রমিক বিথি খাতুন, এনামূল, মিটন ও মিন্টুর বাড়িতে। এ হামলায় আহত হয়েছে মিন্টুর স্ত্রী রেহানা খাতুন, সাগর আলীসহ আরও দুই নারী। দুই পক্ষের লোকেরাই হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
খোকসা থানা পুলিশ বলছে, গড়াই নদীই পশ্চিম পারের ওসমানপুর ইউনিয়নের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনের প্রধান অন্তরায় নদী। পুলিশ নৌকায় উঠলেই সন্ত্রাসীদের কাছে খবর পৌঁছে যায়। গড়াই নদী পারাপার সমস্যার কারনেই বিবাদমান অস্ত্রবাজ গ্রুপ নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না।
গত শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল কলপাড়ায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রবাসী নারী শ্রমিক বিথির বাড়িতে হামলা করা হয়। হামলা হয়েছে তার ভাইদের বাড়িতে। নতুন পুরাতন টিনের বেড়া গুলো ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করে রেখে গেছে হামলাকারীরা। এখানেই এক নারী দাবি করেন হামলাকারীরা তার ঘরের টিনের সাফবাক্সটিও নিয়ে গেছে। তার ঘরে আর কিছু রেখে যায়নি। পুনঃ হামলার ভয়ে মিটন এর স্ত্রী সুমি খাতুন ঘরে তালা ঝুলিয়ে বাবার বাড়ি চলে গেছে।
ঘাট পাড় হয়ে দেখা হয় সাবেক মেম্বর আয়াজেদ আলীর সাথে। তিনি জানান, অসুস্থ্য মায়ের পাশের ঘরে তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত তিনটার দিকে দুর্বৃত্তরা হঠাৎ তার বাড়ির বিদ্যুতের মিটার ভেঙ্গে দেয়। বাড়ি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হামলা করে তার থাকার ঘরে জানালায়। প্রতিপক্ষের হামলাকারীরা তাজু শেখের ছেলের সাগরের ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাকে উঠানে নিয়ে পিটিয়ে আহত করে ফেলে রেখে যায়। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, সকালে থানা পুলিশ এসে প্রতিপক্ষের লোকদের নিয়ন্ত্রন থেকে রাতে লুট করে নিয়ে যাওয়া কয়েকটি ছাগল উদ্ধার করে। পরে ছাগল গুলো মালিকদের কাছে ফেরৎ দিয়েছে। এ ছাড়া প্রতিপক্ষের বাড়ি থেকে দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করে নিয়ে গেছে পুলিশ।
প্রতিপক্ষের হামলায় আহত মিন্টুর স্ত্রী রেহানা খাতুন জানান, স্বামী সন্তন নিয়ে নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এমন সময় প্রতিপক্ষের লোকেরা তার ঘরে হামলা চালায়। হামলাকারীদের হাত থেকে অসুস্থ্য স্বামীকে রক্ষা করার অপরাধে তার উপর হামলা চালানো হয়। এ নারী তার পায়ের ক্ষত স্থান দেখান। প্রবাসী নারী শ্রমিক বিথি খাতুন জানান, ৫মাস আগে দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে দুই দফা হামলার শিকার হলেন। দেশে ফেরার কয়েক দিনের মাথায় তার বাড়িতে প্রথম বার হামলা হয়। হামলাকারীরা তার এমিটিশনের গহনাও নিয়ে গিয়ে ছিলো। এখন আর সে নিজের বাবার বাড়িতে টাকা পয়সাও রাখেন না।
এনামূলের স্ত্রী চম্পা খাতুন জানান, গত ৫ বছর ধরে প্রতিরাতেই হামলার আতঙ্ক নিয়ে ঘুমাতে যান। গত বুধবার রাতে দুই পুত্রবধূ নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ৪ টার দিকে হামলকারীরা তার স্বামীর নাম ধরে ডাক দিলেই তিনি পুত্রবধূদের ঘরে তালা দিয়ে বেড়িয়ে আসেন। তার চেনা এক হামলাকারী তার হাতে পিস্তল দিয়ে আঘাত করে। তার চোখের সামনে তার ঘর থেকে টিনের সাফবাক্স পর্যন্ত লুট করে নিয়ে গেছে। খোকসা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকায় এতোদিন পাপ্পু ও বর্তমান মেম্বর সামিরুল গ্রুপের বিবাদ ছিলো। সান্টু নামের আর একজন নতুন করে যোগ হওয়ায় বিরোধে নতুন মাত্রা পেয়েছে। তিনি এই ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রনে চেষ্টা করছেন। পুলিশ নৌকায় উঠলেই ওরা খবর পেয়ে যায়। আর কোন গ্রুপের ট্রেস পওয়া যায় না। গত বুধবার রাতের হামলার ঘটনায় দুই পক্ষ থানায় আসবে। কেউ মামলা দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনা স্থলে টহল পুলিশ রয়েছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
খোকসা (কুষ্টিয়া) : হামলাকারীদের তছনছ করে রেখে যাওয়া ঘর দেখাচ্ছেন এক নারী -সংবাদ
শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
কুষ্টিয়ার খোকসার গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গভীর রাতে হামলা পাল্টা হামলা চালিয়ে ৬টি বাড়ি ভাংচুর ও লুট পাট করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার দিনগত রাত ৩টার দিকে ওসমানপুর ইউনিয়নে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কলপাড়ায় এ হামলা পাল্টা হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। প্রবাসী এক নারী শ্রমিকের বাড়ি তার দুই ভাই ও এক চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে হামলা করা হয়। হামলার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের ২ বাড়িতে। হামলায় এক গৃহবধূসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। গত ৫ বছরের দুই বাহিনীর দুর্বৃত্তরা কমপক্ষে ২০বার হামলা পাল্টা হামলা চালিয়েছে। লুট করে নিয়েগেছে গরু ছাগলসহ সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র। প্রতি রাতেই হামলা পাল্টা হামলার ভয় নিয়ে গ্রামটির বৌ ঝিড়া ঘরে ঘুমতে যায়। এ রাতে হামলা করা হয় সাবেক মেম্বর ওয়াজেদ আলী, সাগর আলী, প্রবাসী নারী শ্রমিক বিথি খাতুন, এনামূল, মিটন ও মিন্টুর বাড়িতে। এ হামলায় আহত হয়েছে মিন্টুর স্ত্রী রেহানা খাতুন, সাগর আলীসহ আরও দুই নারী। দুই পক্ষের লোকেরাই হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
খোকসা থানা পুলিশ বলছে, গড়াই নদীই পশ্চিম পারের ওসমানপুর ইউনিয়নের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনের প্রধান অন্তরায় নদী। পুলিশ নৌকায় উঠলেই সন্ত্রাসীদের কাছে খবর পৌঁছে যায়। গড়াই নদী পারাপার সমস্যার কারনেই বিবাদমান অস্ত্রবাজ গ্রুপ নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না।
গত শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল কলপাড়ায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রবাসী নারী শ্রমিক বিথির বাড়িতে হামলা করা হয়। হামলা হয়েছে তার ভাইদের বাড়িতে। নতুন পুরাতন টিনের বেড়া গুলো ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করে রেখে গেছে হামলাকারীরা। এখানেই এক নারী দাবি করেন হামলাকারীরা তার ঘরের টিনের সাফবাক্সটিও নিয়ে গেছে। তার ঘরে আর কিছু রেখে যায়নি। পুনঃ হামলার ভয়ে মিটন এর স্ত্রী সুমি খাতুন ঘরে তালা ঝুলিয়ে বাবার বাড়ি চলে গেছে।
ঘাট পাড় হয়ে দেখা হয় সাবেক মেম্বর আয়াজেদ আলীর সাথে। তিনি জানান, অসুস্থ্য মায়ের পাশের ঘরে তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত তিনটার দিকে দুর্বৃত্তরা হঠাৎ তার বাড়ির বিদ্যুতের মিটার ভেঙ্গে দেয়। বাড়ি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হামলা করে তার থাকার ঘরে জানালায়। প্রতিপক্ষের হামলাকারীরা তাজু শেখের ছেলের সাগরের ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাকে উঠানে নিয়ে পিটিয়ে আহত করে ফেলে রেখে যায়। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, সকালে থানা পুলিশ এসে প্রতিপক্ষের লোকদের নিয়ন্ত্রন থেকে রাতে লুট করে নিয়ে যাওয়া কয়েকটি ছাগল উদ্ধার করে। পরে ছাগল গুলো মালিকদের কাছে ফেরৎ দিয়েছে। এ ছাড়া প্রতিপক্ষের বাড়ি থেকে দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করে নিয়ে গেছে পুলিশ।
প্রতিপক্ষের হামলায় আহত মিন্টুর স্ত্রী রেহানা খাতুন জানান, স্বামী সন্তন নিয়ে নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এমন সময় প্রতিপক্ষের লোকেরা তার ঘরে হামলা চালায়। হামলাকারীদের হাত থেকে অসুস্থ্য স্বামীকে রক্ষা করার অপরাধে তার উপর হামলা চালানো হয়। এ নারী তার পায়ের ক্ষত স্থান দেখান। প্রবাসী নারী শ্রমিক বিথি খাতুন জানান, ৫মাস আগে দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে দুই দফা হামলার শিকার হলেন। দেশে ফেরার কয়েক দিনের মাথায় তার বাড়িতে প্রথম বার হামলা হয়। হামলাকারীরা তার এমিটিশনের গহনাও নিয়ে গিয়ে ছিলো। এখন আর সে নিজের বাবার বাড়িতে টাকা পয়সাও রাখেন না।
এনামূলের স্ত্রী চম্পা খাতুন জানান, গত ৫ বছর ধরে প্রতিরাতেই হামলার আতঙ্ক নিয়ে ঘুমাতে যান। গত বুধবার রাতে দুই পুত্রবধূ নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ৪ টার দিকে হামলকারীরা তার স্বামীর নাম ধরে ডাক দিলেই তিনি পুত্রবধূদের ঘরে তালা দিয়ে বেড়িয়ে আসেন। তার চেনা এক হামলাকারী তার হাতে পিস্তল দিয়ে আঘাত করে। তার চোখের সামনে তার ঘর থেকে টিনের সাফবাক্স পর্যন্ত লুট করে নিয়ে গেছে। খোকসা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকায় এতোদিন পাপ্পু ও বর্তমান মেম্বর সামিরুল গ্রুপের বিবাদ ছিলো। সান্টু নামের আর একজন নতুন করে যোগ হওয়ায় বিরোধে নতুন মাত্রা পেয়েছে। তিনি এই ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রনে চেষ্টা করছেন। পুলিশ নৌকায় উঠলেই ওরা খবর পেয়ে যায়। আর কোন গ্রুপের ট্রেস পওয়া যায় না। গত বুধবার রাতের হামলার ঘটনায় দুই পক্ষ থানায় আসবে। কেউ মামলা দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনা স্থলে টহল পুলিশ রয়েছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।