নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ভারত থেকে আসা মেঘালয় কন্যা সোমেশ্বরী নদীতেই একমাত্র মহাশোল মাছের আবাসভূমি। মহাশোল মাছটিকে অনেকেই মহাশের, মাশোল, টর, চন্দনা প্রভৃতি নামে ডেকে থাকে। মহাশোলের দুটি প্রজাতি। একটির বৈজ্ঞানিক নাম Tortor, অন্যটি Torputitora আমাদের দেশে দুই প্রজাতির মহাশোলই পাওয়া যায়। প্রায় শত বছর পূর্বে সুসঙ্গ মহারাজার আমলে ১৯৪০খ্রি. থেকে ১৯৬৫খ্রি. পর্যন্ত এই মাছের এখানে ছিল বিরাট সমাহার। মেঘালয় কন্যা সোমেশ্বরী নদীটি বিশাল খরস্রোতা ও গভীরতা ছিল অনেক। ঢাকা থেকে অনেক মহাজনরা চার ও পাট গুঞ্জি বাদাম টানিয়ে ১০/১২ জন মাঝি মাল্লাসহ পণ্য নিয়ে সোমেশ্বরী নদীতে আসা যাওয়া করত। আজ রাজাও নেই নদীটিও মৃতপ্রায়। সুসং দুর্গাপুর খ্যাত সুসঙ্গ এর লাচো, নানিদসহ মহাশোল মাছ এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। নদীর পাথর-নূড়ির ফাঁকে ফাঁকে ‘পেরিফাইটন’ নামের এক রকমের শ্যাওলা জন্মে। এগুলোই মহাশোলের প্রধান খাদ্য। মহাশোল সাধারণত ৫২ সেন্টিমিটার লম্বা ও নয় কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। এর এক একটি আছিলা (আইছলা) চা এর প্লেটের মতো। এর দেহ লম্বা, মুখ অধোমুখী, মাথা অপেক্ষাকৃত ছোট। দেহের বর্ণ উপরের দিকটা বাদামী সবুজ, পেটের দিকটা রূপালী এবং পিঠের পাখনা লালচে বর্ণের হয়ে থাকে। মহাশোল দেখতে খুব সুন্দর, অনেকটা মৃগেল মাছের মতো। এ বিষয়ে প্রবীণ মৎস্যচাষী ঈন্দ্রমোহন, বাদশা, মোতালেবসহ প্রায় ১০/১৫জন সংবাদকে জানান, দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীর মহাশোল মাছের উৎস মুখ গুলো বন্ধ হয়ে গেছে। শুকনো মৌসুমে কংশ ও সোমেশ্বরী নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বসবাস ও বংশবৃদ্ধির জায়গা নষ্ট হওয়ার ফলে মহাশোল মাছ কমতে থাকে। বর্তমানে কোন কোন সময় পাওয়া গেলেও তা তিন থেকে চার হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। সোমেশ্বরী ও কংস নদী ছাড়াও আশপাশের হাওর, বিল-ঝিল না অন্য কোনো মিঠা পানির নদ-নদীতেও হঠাৎ দেখা পাওয়া যায় মাছের রানী মহাশোল। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে জীবজগতের স্বাভাবিক আচরণগত বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন আসায় মাছের ক্ষেত্রেও এই প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। স্থানীয় পর্যবেক্ষক মহল এই মাছের বংশ বিস্তারে সরকারী ভাবে উদ্দ্যেগ নিতে হবে। নইলে বিলুপ্তই হয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী মহাশোল মাছ। সোমেশ্বরী নদীতে অপরিকল্পিত ভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনের কারনে নদীর জলজ উদ্ভিদ গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাংলা ড্রেজারের প্রপেলারের আঘাত ও সেলো মেশিনগুলো থেকে নির্গত পোড়া মবিল পানিতে সংমিশ্রণের কারনে নদীগুলো থেকে মূল্যবান নানিদ, মহাশোল ও প্রসীদ্ধ মাছ গুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ সকল মাছের বংশ বিস্তারে সোমেশ্বরী নদী খনন, অপরিকল্পিত বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। এ নিয়ে দুর্গাপুর উপজেলা খামার ব্যবস্থাপক গোপাল চন্দ্র দাস সংবাদকে বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী মাছ মহাশোল। অত্র অঞ্চলের নদীগুলো হচ্ছে এর বংশ বিস্তারের স্থল। নানা সমস্যার কারনেই নদীগুলোতে এখন আর বংশ বিস্তার করতে পারছে না মহাশোল মাছ। তবে মহাশোল মাছের বংশ বিস্তারে নতুন নতুন উদ্ভাবনে ময়মনসিংহে মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রোববার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ভারত থেকে আসা মেঘালয় কন্যা সোমেশ্বরী নদীতেই একমাত্র মহাশোল মাছের আবাসভূমি। মহাশোল মাছটিকে অনেকেই মহাশের, মাশোল, টর, চন্দনা প্রভৃতি নামে ডেকে থাকে। মহাশোলের দুটি প্রজাতি। একটির বৈজ্ঞানিক নাম Tortor, অন্যটি Torputitora আমাদের দেশে দুই প্রজাতির মহাশোলই পাওয়া যায়। প্রায় শত বছর পূর্বে সুসঙ্গ মহারাজার আমলে ১৯৪০খ্রি. থেকে ১৯৬৫খ্রি. পর্যন্ত এই মাছের এখানে ছিল বিরাট সমাহার। মেঘালয় কন্যা সোমেশ্বরী নদীটি বিশাল খরস্রোতা ও গভীরতা ছিল অনেক। ঢাকা থেকে অনেক মহাজনরা চার ও পাট গুঞ্জি বাদাম টানিয়ে ১০/১২ জন মাঝি মাল্লাসহ পণ্য নিয়ে সোমেশ্বরী নদীতে আসা যাওয়া করত। আজ রাজাও নেই নদীটিও মৃতপ্রায়। সুসং দুর্গাপুর খ্যাত সুসঙ্গ এর লাচো, নানিদসহ মহাশোল মাছ এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। নদীর পাথর-নূড়ির ফাঁকে ফাঁকে ‘পেরিফাইটন’ নামের এক রকমের শ্যাওলা জন্মে। এগুলোই মহাশোলের প্রধান খাদ্য। মহাশোল সাধারণত ৫২ সেন্টিমিটার লম্বা ও নয় কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। এর এক একটি আছিলা (আইছলা) চা এর প্লেটের মতো। এর দেহ লম্বা, মুখ অধোমুখী, মাথা অপেক্ষাকৃত ছোট। দেহের বর্ণ উপরের দিকটা বাদামী সবুজ, পেটের দিকটা রূপালী এবং পিঠের পাখনা লালচে বর্ণের হয়ে থাকে। মহাশোল দেখতে খুব সুন্দর, অনেকটা মৃগেল মাছের মতো। এ বিষয়ে প্রবীণ মৎস্যচাষী ঈন্দ্রমোহন, বাদশা, মোতালেবসহ প্রায় ১০/১৫জন সংবাদকে জানান, দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীর মহাশোল মাছের উৎস মুখ গুলো বন্ধ হয়ে গেছে। শুকনো মৌসুমে কংশ ও সোমেশ্বরী নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বসবাস ও বংশবৃদ্ধির জায়গা নষ্ট হওয়ার ফলে মহাশোল মাছ কমতে থাকে। বর্তমানে কোন কোন সময় পাওয়া গেলেও তা তিন থেকে চার হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। সোমেশ্বরী ও কংস নদী ছাড়াও আশপাশের হাওর, বিল-ঝিল না অন্য কোনো মিঠা পানির নদ-নদীতেও হঠাৎ দেখা পাওয়া যায় মাছের রানী মহাশোল। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে জীবজগতের স্বাভাবিক আচরণগত বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন আসায় মাছের ক্ষেত্রেও এই প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। স্থানীয় পর্যবেক্ষক মহল এই মাছের বংশ বিস্তারে সরকারী ভাবে উদ্দ্যেগ নিতে হবে। নইলে বিলুপ্তই হয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী মহাশোল মাছ। সোমেশ্বরী নদীতে অপরিকল্পিত ভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনের কারনে নদীর জলজ উদ্ভিদ গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাংলা ড্রেজারের প্রপেলারের আঘাত ও সেলো মেশিনগুলো থেকে নির্গত পোড়া মবিল পানিতে সংমিশ্রণের কারনে নদীগুলো থেকে মূল্যবান নানিদ, মহাশোল ও প্রসীদ্ধ মাছ গুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ সকল মাছের বংশ বিস্তারে সোমেশ্বরী নদী খনন, অপরিকল্পিত বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। এ নিয়ে দুর্গাপুর উপজেলা খামার ব্যবস্থাপক গোপাল চন্দ্র দাস সংবাদকে বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী মাছ মহাশোল। অত্র অঞ্চলের নদীগুলো হচ্ছে এর বংশ বিস্তারের স্থল। নানা সমস্যার কারনেই নদীগুলোতে এখন আর বংশ বিস্তার করতে পারছে না মহাশোল মাছ। তবে মহাশোল মাছের বংশ বিস্তারে নতুন নতুন উদ্ভাবনে ময়মনসিংহে মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে।