রাজশাহী : বরেন্দ্র অঞ্চলের কুয়াশা মোড়া সকালে আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক উৎসব -সংবাদ
বরেন্দ্র অঞ্চলের কুয়াশা মোড়া সকালে বেজে উঠেছে ধামসা আর মাদলের তালে তালে ঐতিহ্যের সুর। প্রাচীন সংস্কৃতির গর্ব নিয়ে আদিবাসী জনপদে শুরু হয়েছে তাদের নিজস্ব উৎসব গানে, নাচে, হাসি-আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে চারদিক। মাদলের ছন্দে, পালকের নৃত্যে আর রঙিন পোশাকের বুননে যেন ফুটে উঠছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বয়ে চলা ঐতিহ্যের কাব্য। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু গ্রামের মাঠে
৮ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর তিন দিন ব্যাপি এই আদিবাসী সাংস্কৃতি উৎসব শুরু হয় । মাদলের তালে তালে যখন মঞ্চ প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল একটাই আহ্বান“ আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের পরিচয়।” রক্ষাগোলা সমাজ সংগঠনসমূহের আয়োজিত বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও মেলাটি যেন শুধু উৎসব নয়, ছিল আদিবাসী জীবনের স্পন্দন, ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ, আর এক টুকরো স্বপ্নের মেলবন্ধন। ছোট-বড় সবার মুখে আনন্দের ঝিলিক, আর চারপাশে ছড়িয়ে থাকা সাঁওতাল, ওঁরাও ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নাচ, গান ও কৃষ্টিসব মিলিয়ে রক্ষাগোলার সেই দিনটি হয়ে উঠেছিল এক জীবন্ত সংস্কৃতির উৎসব। গত শনিবার সকাল থেকেই রঙিন সাজে সজ্জিত প্যান্ডেল, বাঁশের খুঁটিতে গাঁথা পতাকা, আর মঞ্চে বাজতে থাকে একের পর এক ঢোলের তালে নাচের ছন্দ। ছোট-বড় সবার চোখে আনন্দের ঝিলিক। সকাল থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। সাঁওতাল, ওঁরাও, পাহাড়িসহ নানা ধর্মের আদিবাসী নারী-পুরুষ ও শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের গান ও নৃত্য পরিবেশন। সাথে ছিলে আদিবাসীদের বিভিন্ন কৃষ্টি কালচার তুলে ধরার প্রতিযোগিতা। কেউ বাঁশি, কেউ ঢোল, কেউ তবলা, কেউ হারমনির সুরে মাতিয়ে তোলেন অনুষ্ঠান প্রাঙ্গন। তাদের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যবাহী ধামসা-মাদলের তালে তালেও নাচতে থাকেন। প্রতিটি পরিবেশনা যেন জীবনের গল্প প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা এক জনগোষ্ঠীর প্রাণের ভাষা। আয়োজনে ছিল রক্ষাগোলা সমাজ সমন্বয় কমিটি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রক্ষাগোলা সমন্ময় কমিটির সভাপতি সুধির স্বরেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন স্কুল শিক্ষক আব্দুল মান্নান, হরেন্দ্রনাথ সিং, মেরিনা হাসদা, নিরাবুল ইসলাম প্রমুখ। মেলায় ছিল হস্তশিল্প প্রদর্শনী, আদিবাসী পোশাক, বাঁশ-বেতের তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র, লাঙ্গল-জোয়াল, নাঙলি আদিবাসীদের বিভিন্ন খাবারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নারী উদ্যোক্তারা নিজেদের তৈরি গয়না, রঙিন চুড়ি, এবং কাপড় বিক্রি করছিলেন হাসিমুখে। বিকেলের দিকে সূর্য যখন গাছের মাথায় হেলে পড়েছে, তখন মঞ্চে শুরু হয় সমাপনী পর্ব। বিজয়ীীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার, করতালিতে মুখরিত হয় ওঠে পুরো প্রাঙ্গণ।
রাতের আকাশে যখন তারারা জ্বলজ্বল করছিল, তখনও গ্রামজুড়ে ভাসছিল ঢোলের আওয়াজ, আদিবাসী বাশির সুর, আর মানুষের মুখে একটাই উচ্চারণ “আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের পরিচয়।” রক্ষাগোলার এই অনুষ্ঠান শুধু সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা নয়; এটি ছিল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে চলা ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন। যেখানে মানুষ নিজের ভাষা, নাচ, গান আর হাসির মাধ্যমে বলে উঠছে আমরা আছি, আমরা বাঁচব, আমাদের সংস্কৃতি বেঁচে থাকবে। তিনদিন ব্যাাপী এই আদিবাসী সাংস্কৃতি অনুষ্টান শেষ হবে আজ সমবার বিকেলে পুরস্কার বিতরনের মধ্যে দিয়ে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রাজশাহী : বরেন্দ্র অঞ্চলের কুয়াশা মোড়া সকালে আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক উৎসব -সংবাদ
সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
বরেন্দ্র অঞ্চলের কুয়াশা মোড়া সকালে বেজে উঠেছে ধামসা আর মাদলের তালে তালে ঐতিহ্যের সুর। প্রাচীন সংস্কৃতির গর্ব নিয়ে আদিবাসী জনপদে শুরু হয়েছে তাদের নিজস্ব উৎসব গানে, নাচে, হাসি-আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে চারদিক। মাদলের ছন্দে, পালকের নৃত্যে আর রঙিন পোশাকের বুননে যেন ফুটে উঠছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বয়ে চলা ঐতিহ্যের কাব্য। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু গ্রামের মাঠে
৮ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর তিন দিন ব্যাপি এই আদিবাসী সাংস্কৃতি উৎসব শুরু হয় । মাদলের তালে তালে যখন মঞ্চ প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল একটাই আহ্বান“ আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের পরিচয়।” রক্ষাগোলা সমাজ সংগঠনসমূহের আয়োজিত বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও মেলাটি যেন শুধু উৎসব নয়, ছিল আদিবাসী জীবনের স্পন্দন, ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ, আর এক টুকরো স্বপ্নের মেলবন্ধন। ছোট-বড় সবার মুখে আনন্দের ঝিলিক, আর চারপাশে ছড়িয়ে থাকা সাঁওতাল, ওঁরাও ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নাচ, গান ও কৃষ্টিসব মিলিয়ে রক্ষাগোলার সেই দিনটি হয়ে উঠেছিল এক জীবন্ত সংস্কৃতির উৎসব। গত শনিবার সকাল থেকেই রঙিন সাজে সজ্জিত প্যান্ডেল, বাঁশের খুঁটিতে গাঁথা পতাকা, আর মঞ্চে বাজতে থাকে একের পর এক ঢোলের তালে নাচের ছন্দ। ছোট-বড় সবার চোখে আনন্দের ঝিলিক। সকাল থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। সাঁওতাল, ওঁরাও, পাহাড়িসহ নানা ধর্মের আদিবাসী নারী-পুরুষ ও শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের গান ও নৃত্য পরিবেশন। সাথে ছিলে আদিবাসীদের বিভিন্ন কৃষ্টি কালচার তুলে ধরার প্রতিযোগিতা। কেউ বাঁশি, কেউ ঢোল, কেউ তবলা, কেউ হারমনির সুরে মাতিয়ে তোলেন অনুষ্ঠান প্রাঙ্গন। তাদের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যবাহী ধামসা-মাদলের তালে তালেও নাচতে থাকেন। প্রতিটি পরিবেশনা যেন জীবনের গল্প প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা এক জনগোষ্ঠীর প্রাণের ভাষা। আয়োজনে ছিল রক্ষাগোলা সমাজ সমন্বয় কমিটি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রক্ষাগোলা সমন্ময় কমিটির সভাপতি সুধির স্বরেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন স্কুল শিক্ষক আব্দুল মান্নান, হরেন্দ্রনাথ সিং, মেরিনা হাসদা, নিরাবুল ইসলাম প্রমুখ। মেলায় ছিল হস্তশিল্প প্রদর্শনী, আদিবাসী পোশাক, বাঁশ-বেতের তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র, লাঙ্গল-জোয়াল, নাঙলি আদিবাসীদের বিভিন্ন খাবারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নারী উদ্যোক্তারা নিজেদের তৈরি গয়না, রঙিন চুড়ি, এবং কাপড় বিক্রি করছিলেন হাসিমুখে। বিকেলের দিকে সূর্য যখন গাছের মাথায় হেলে পড়েছে, তখন মঞ্চে শুরু হয় সমাপনী পর্ব। বিজয়ীীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার, করতালিতে মুখরিত হয় ওঠে পুরো প্রাঙ্গণ।
রাতের আকাশে যখন তারারা জ্বলজ্বল করছিল, তখনও গ্রামজুড়ে ভাসছিল ঢোলের আওয়াজ, আদিবাসী বাশির সুর, আর মানুষের মুখে একটাই উচ্চারণ “আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের পরিচয়।” রক্ষাগোলার এই অনুষ্ঠান শুধু সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা নয়; এটি ছিল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে চলা ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন। যেখানে মানুষ নিজের ভাষা, নাচ, গান আর হাসির মাধ্যমে বলে উঠছে আমরা আছি, আমরা বাঁচব, আমাদের সংস্কৃতি বেঁচে থাকবে। তিনদিন ব্যাাপী এই আদিবাসী সাংস্কৃতি অনুষ্টান শেষ হবে আজ সমবার বিকেলে পুরস্কার বিতরনের মধ্যে দিয়ে।