রাতের শেষভাগে হালকা শীত, সকালে ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু আর ভোরের কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আমেজ। ফলে গ্রামীণ জনপদে এখন শীতের আগমনী হাওয়া বইছে। শীতের এই আবহে সবকিছু যেন বদলে যেতে শুরু করেছে। জানান দিচ্ছে খেজুরের রস ও গুড়ের স্বাদের কথা।
শীত এখনও না নামলেও খেজুরের রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেছেন নওগাঁর গাছিরা। আর কদিন পর শুরু হবে রস সংগ্রহ, তাই গাছিদেরও বেড়েছে ব্যস্ততা। আগামী ৪-৫ মাস চলবে রস সংগ্রহের কর্মযজ্ঞ, যা থেকে থেকে তৈরি হয় সুমিষ্ট পাটালি ও লালি গুড়।
নওগাঁর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়- জমির আইল, রাস্তার পাশ এবং পুকুর পাড়ে বছরজুড়ে অযত্ন-অবহেলায় খেজুর গাছগুলো পড়ে থাকলেও এখন কদর বেড়েছে। কারণ এসব গাছ দিবে শীত মৌসুমজুড়ে আহরিত সুমিষ্ট রস। তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এক গাছ থেকে অন্য গাছে ডাল কেটে পরিষ্কার করতে ছুটছেন গাছিরা। হাতে দা, কোমরে রশি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ তৈরি করছেন তারা। এরই মধ্যে অনেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছে নলি গাঁথা শুরু করেছেন।
গাছিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে খেজুরের গাছ তোলা (গাছের উপরিভাগ চেঁছে পরিষ্কার করা) হয়। কয়েকদিন রেখে দিয়ে গাছের তোলা অংশ শুকানো হয়। এরপর খেজুরগাছ চেঁছে ওপরের দিকে দুটি চোখ কাটা হয়। নিচের দিকে বসানো হয় নলি। পরে সেখান থেকে রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শীত মৌসুমে ৪-৫ মাস খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যায়। যত বেশি শীত পড়ে, গাছ থেকে তত বেশি রস সংগ্রহ করা হয়। তবে গ্রামের মাঠে আর মেঠোপথের ধারে কিছু গাছ থাকলে বিভিন্ন কারণে দিনে দিনে কমছে খেজুরের গাছের সংখ্যা বলে জানান তারা।
আত্রাই উপজেলা সাহাগোলা এলাকায় নাটোরের লালপুর থেকে এসেছেন গাছি সোহেল রানা। তিনি ২৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, ‘এ বছরও ৭০টির বেশি খেজুরের গাছ তোলার (পরিচর্যার) কাজ শুরু করেছি। আমি গুড় তৈরি করি। শীত মৌসুমে ভালো আয় হয়। খেজুরের গাছ কেটেই বছরের ৬ মাস সংসার চালাই। এখন নতুন গাছি আর পাওয়া যায় না। কেউ এসব কাজে আসতে চান না। খেজুর গাছও কমছে, গাছিও হারিয়ে যাচ্ছে।’
সাহাগোলা এলাকার আরেক গাছি আব্দুল খালেক বলেন, ‘২০টি গাছ থেকে এবার রস সংগ্রহ করবো। নিজের ১০ গাছ আর ১০ গাছ চুক্তি করে নিয়েছি এক গাছ মালিকের কাছে থেকে।
প্রতি গাছ থেকে মালিককে দিতে হবে ৫ কেজি করে লালি। এক খেজুরগাছ থেকে প্রতিদিন চার কেজির মতো রস পাওয়া যায়। আর ৬ কেজি রস থেকে ১ কেজি গুড় পাওয়া যায়। লালির ক্ষেত্রে ৩ কেজি রসে মেলে ১ কেজি। প্রতি কেজি গুড় ১৮০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।’
সদর উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামের গাছি আকামত আলী বলেন, ‘আমি আগে প্রায় ১০০ গাছ কাটতাম। এখন সেটি এসে দাঁড়িয়েছে ৩০-৪০টি। শীতের শুরুতে রস কম পাওয়া যায়। যত বেশি শীত পড়ে, গাছ থেকে তত বেশি রস পাওয়া যায়। কাঁচা রস বিক্রির পাশাপাশি পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। তবে বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, হয়তো এক সময় আমাদের এলাকায় খেজুর গাছ খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
রাতের শেষভাগে হালকা শীত, সকালে ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু আর ভোরের কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আমেজ। ফলে গ্রামীণ জনপদে এখন শীতের আগমনী হাওয়া বইছে। শীতের এই আবহে সবকিছু যেন বদলে যেতে শুরু করেছে। জানান দিচ্ছে খেজুরের রস ও গুড়ের স্বাদের কথা।
শীত এখনও না নামলেও খেজুরের রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেছেন নওগাঁর গাছিরা। আর কদিন পর শুরু হবে রস সংগ্রহ, তাই গাছিদেরও বেড়েছে ব্যস্ততা। আগামী ৪-৫ মাস চলবে রস সংগ্রহের কর্মযজ্ঞ, যা থেকে থেকে তৈরি হয় সুমিষ্ট পাটালি ও লালি গুড়।
নওগাঁর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়- জমির আইল, রাস্তার পাশ এবং পুকুর পাড়ে বছরজুড়ে অযত্ন-অবহেলায় খেজুর গাছগুলো পড়ে থাকলেও এখন কদর বেড়েছে। কারণ এসব গাছ দিবে শীত মৌসুমজুড়ে আহরিত সুমিষ্ট রস। তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এক গাছ থেকে অন্য গাছে ডাল কেটে পরিষ্কার করতে ছুটছেন গাছিরা। হাতে দা, কোমরে রশি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ তৈরি করছেন তারা। এরই মধ্যে অনেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছে নলি গাঁথা শুরু করেছেন।
গাছিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে খেজুরের গাছ তোলা (গাছের উপরিভাগ চেঁছে পরিষ্কার করা) হয়। কয়েকদিন রেখে দিয়ে গাছের তোলা অংশ শুকানো হয়। এরপর খেজুরগাছ চেঁছে ওপরের দিকে দুটি চোখ কাটা হয়। নিচের দিকে বসানো হয় নলি। পরে সেখান থেকে রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শীত মৌসুমে ৪-৫ মাস খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যায়। যত বেশি শীত পড়ে, গাছ থেকে তত বেশি রস সংগ্রহ করা হয়। তবে গ্রামের মাঠে আর মেঠোপথের ধারে কিছু গাছ থাকলে বিভিন্ন কারণে দিনে দিনে কমছে খেজুরের গাছের সংখ্যা বলে জানান তারা।
আত্রাই উপজেলা সাহাগোলা এলাকায় নাটোরের লালপুর থেকে এসেছেন গাছি সোহেল রানা। তিনি ২৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, ‘এ বছরও ৭০টির বেশি খেজুরের গাছ তোলার (পরিচর্যার) কাজ শুরু করেছি। আমি গুড় তৈরি করি। শীত মৌসুমে ভালো আয় হয়। খেজুরের গাছ কেটেই বছরের ৬ মাস সংসার চালাই। এখন নতুন গাছি আর পাওয়া যায় না। কেউ এসব কাজে আসতে চান না। খেজুর গাছও কমছে, গাছিও হারিয়ে যাচ্ছে।’
সাহাগোলা এলাকার আরেক গাছি আব্দুল খালেক বলেন, ‘২০টি গাছ থেকে এবার রস সংগ্রহ করবো। নিজের ১০ গাছ আর ১০ গাছ চুক্তি করে নিয়েছি এক গাছ মালিকের কাছে থেকে।
প্রতি গাছ থেকে মালিককে দিতে হবে ৫ কেজি করে লালি। এক খেজুরগাছ থেকে প্রতিদিন চার কেজির মতো রস পাওয়া যায়। আর ৬ কেজি রস থেকে ১ কেজি গুড় পাওয়া যায়। লালির ক্ষেত্রে ৩ কেজি রসে মেলে ১ কেজি। প্রতি কেজি গুড় ১৮০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।’
সদর উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামের গাছি আকামত আলী বলেন, ‘আমি আগে প্রায় ১০০ গাছ কাটতাম। এখন সেটি এসে দাঁড়িয়েছে ৩০-৪০টি। শীতের শুরুতে রস কম পাওয়া যায়। যত বেশি শীত পড়ে, গাছ থেকে তত বেশি রস পাওয়া যায়। কাঁচা রস বিক্রির পাশাপাশি পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। তবে বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, হয়তো এক সময় আমাদের এলাকায় খেজুর গাছ খুঁজে পাওয়া যাবে না।’