দেশে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে এখনও প্রধান বাধা দুর্নীতি, এক জরিপের ওপর ভিত্তি করে বলছে সিপিডি। জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেয়া ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন, তাদের ব্যবসায় প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো দুর্নীতি। লাইসেন্স নিতে, কর দিতে এবং বিভিন্ন পরিসেবার জন্য গেলে সেখানে আর্থিক লেনদেন করতে হয়।
অন্যান্য প্রধান সমস্যার মধ্যে রয়েছে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া এবং অদক্ষ আমলাতন্ত্র। আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীলতা ও নীতি ধারাবাহিকতার অভাব। এসব কারণে দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। এক বছরে বেসরকারি খাতে সুশাসন, নীতিশাস্ত্রের অভাব এবং দুর্বল তদারকির কারণে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের অবনতি হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) রোববার (২৯ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের ফল প্রকাশ করে। বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশবিষয়ক জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থার গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
মূলত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বিশ্বজুড়ে এ জরিপ পরিচালনা করে। গত দুই দশকের মতো এবারও সংস্থাটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে জরিপটি পরিচালনা করে সিপিডি।
সিপিডি জানিয়েছে, ব্যবসায় পরিবেশ জরিপের সময়কাল ছিল গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় অবস্থিত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে জরিপ তৈরি করা হয়েছে।
অন্যান্য প্রধান সমস্যার মধ্যে রয়েছে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া এবং অদক্ষ আমলাতন্ত্র। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীলতা এবং নীতি ধারাবাহিকতার অভাব। এসব কারণে দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি বলে জরিপে জানিয়েছে সিপিডি।
সংস্থাটি বলছে, দেশে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার পরিবেশ আরও খারাপ হয়েছে। করপোরেট গভর্নেন্সের অভাব, দুর্বল নিয়ন্ত্রক তদারকি এবং করপোরেট নীতিশাস্ত্রের অভাব প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ খারাপ হওয়ার কারণ।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘২০২১ সালের তুলনায় ২০২২-এ ব্যবসার পরিবেশ দুর্বল ছিল। কর কাঠামোতে এখনও ভারসাম্য আনা যায়নি। সড়ক, রেল, নৌ-পথে অনেক অবকাঠামো মানসম্মত নয়।’
ব্যবসায়ীরা মনে করেন, বিদেশি সহযোগীদের কাছ থেকে গ্রিন সিটি নির্মাণে আলাদা ঋণ আসা উচিত। এতে পরিবেশদূষণ অনেকাংশে কমবে। আইটি সেবার পরিধি বাড়লেও ডিজিটাল বৈষম্য বাড়ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে ব্যবসায় মাথাচাড়া দিয়েছে মূল্যস্ফীতি, বিদেশি মুদ্রা সংকট ও অস্থিতিশীল নীতির মতো নতুন চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন ও সুদ হার সীমা উন্মুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।
সিপিডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের আর্থিক খাতে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত মেনে চলার অংশ হিসেবে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন, ঋণে সুদ হারের সীমা তুলে নেয়া, বকেয়া ঋণে স্বচ্ছতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এবং ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটির (আইডিআরএ) কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।
জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এনবিআর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে যথাযথ ভূমিকা পালন করা উচিত।
ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে জরিপে। এরমধ্যে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে বিভিন্ন নীতি, কৌশল ও পরিকল্পনা নেয়া। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে একটি বড় সংস্কার নিশ্চিত করা। আরও স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা। নাগরিক এবং ব্যবসায়িক সেবা নিশ্চিত করা। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর্থিক খাতে সংস্কার, নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ করার অঙ্গীকার করা।
অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘দুর্নীতির পাশাপাশি নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ব্যবসাকে আরও সমস্যায় ফেলছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে বৈদেশিক মুদ্রার উত্থান-পতন, আমলাতন্ত্র ও মূল্যস্ফীতি। আর বড় ব্যবসায়ীদের জন্য এসবের পাশাপাশি অবকাঠামোর অপ্রতুলতা সমস্যার সৃষ্টি করছে। এছাড়া জীবনযাত্রার মানবৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপেশাদার আচরণ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।’
রোববার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৩
দেশে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে এখনও প্রধান বাধা দুর্নীতি, এক জরিপের ওপর ভিত্তি করে বলছে সিপিডি। জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেয়া ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন, তাদের ব্যবসায় প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো দুর্নীতি। লাইসেন্স নিতে, কর দিতে এবং বিভিন্ন পরিসেবার জন্য গেলে সেখানে আর্থিক লেনদেন করতে হয়।
অন্যান্য প্রধান সমস্যার মধ্যে রয়েছে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া এবং অদক্ষ আমলাতন্ত্র। আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীলতা ও নীতি ধারাবাহিকতার অভাব। এসব কারণে দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। এক বছরে বেসরকারি খাতে সুশাসন, নীতিশাস্ত্রের অভাব এবং দুর্বল তদারকির কারণে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের অবনতি হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) রোববার (২৯ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের ফল প্রকাশ করে। বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশবিষয়ক জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থার গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
মূলত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বিশ্বজুড়ে এ জরিপ পরিচালনা করে। গত দুই দশকের মতো এবারও সংস্থাটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে জরিপটি পরিচালনা করে সিপিডি।
সিপিডি জানিয়েছে, ব্যবসায় পরিবেশ জরিপের সময়কাল ছিল গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় অবস্থিত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে জরিপ তৈরি করা হয়েছে।
অন্যান্য প্রধান সমস্যার মধ্যে রয়েছে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া এবং অদক্ষ আমলাতন্ত্র। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীলতা এবং নীতি ধারাবাহিকতার অভাব। এসব কারণে দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি বলে জরিপে জানিয়েছে সিপিডি।
সংস্থাটি বলছে, দেশে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার পরিবেশ আরও খারাপ হয়েছে। করপোরেট গভর্নেন্সের অভাব, দুর্বল নিয়ন্ত্রক তদারকি এবং করপোরেট নীতিশাস্ত্রের অভাব প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ খারাপ হওয়ার কারণ।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘২০২১ সালের তুলনায় ২০২২-এ ব্যবসার পরিবেশ দুর্বল ছিল। কর কাঠামোতে এখনও ভারসাম্য আনা যায়নি। সড়ক, রেল, নৌ-পথে অনেক অবকাঠামো মানসম্মত নয়।’
ব্যবসায়ীরা মনে করেন, বিদেশি সহযোগীদের কাছ থেকে গ্রিন সিটি নির্মাণে আলাদা ঋণ আসা উচিত। এতে পরিবেশদূষণ অনেকাংশে কমবে। আইটি সেবার পরিধি বাড়লেও ডিজিটাল বৈষম্য বাড়ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে ব্যবসায় মাথাচাড়া দিয়েছে মূল্যস্ফীতি, বিদেশি মুদ্রা সংকট ও অস্থিতিশীল নীতির মতো নতুন চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন ও সুদ হার সীমা উন্মুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।
সিপিডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের আর্থিক খাতে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত মেনে চলার অংশ হিসেবে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন, ঋণে সুদ হারের সীমা তুলে নেয়া, বকেয়া ঋণে স্বচ্ছতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এবং ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটির (আইডিআরএ) কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।
জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এনবিআর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে যথাযথ ভূমিকা পালন করা উচিত।
ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে জরিপে। এরমধ্যে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে বিভিন্ন নীতি, কৌশল ও পরিকল্পনা নেয়া। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে একটি বড় সংস্কার নিশ্চিত করা। আরও স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা। নাগরিক এবং ব্যবসায়িক সেবা নিশ্চিত করা। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর্থিক খাতে সংস্কার, নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ করার অঙ্গীকার করা।
অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘দুর্নীতির পাশাপাশি নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ব্যবসাকে আরও সমস্যায় ফেলছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে বৈদেশিক মুদ্রার উত্থান-পতন, আমলাতন্ত্র ও মূল্যস্ফীতি। আর বড় ব্যবসায়ীদের জন্য এসবের পাশাপাশি অবকাঠামোর অপ্রতুলতা সমস্যার সৃষ্টি করছে। এছাড়া জীবনযাত্রার মানবৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপেশাদার আচরণ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।’