জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজু সাহার বিরুদ্ধে সাবেক এক নারী শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির অভিযোগ দায়ের করায় পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ৫০ লাখ টাকার মানহানির মামলা করেছেন অভিযুক্ত ঐ শিক্ষক।
সোমবার (১ এপ্রিল) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেল বরাবর পাঠানো এক মেইলে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। অপরদিকে এদিন দুপুরেই ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করেন অধ্যাপক সাজু সাহা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সেলের প্রধান অধ্যাপক জেবউননেছা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাজু সাহা ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। তিনি রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এবং বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নির্বাহী সদস্য।
এর আগে, ১৫ মার্চ (শুক্রবার) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহনন দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করলে তারই প্রেক্ষিতে মূলত ঘটনার সুত্রপাত হয়।
গত ১৯ মার্চ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নিজ ফেসবুক ওয়ালে জবি শিক্ষার্থীর আত্মহননের খবর শেয়ার করে লেখেন, ‘এটা অহরহ হয়! আমার নিজেরও একজনের নাম বলে দিতে খুব ইচ্ছা করছে...। কী বিভৎস গেছে আমার সময়গুলো, একজন শিক্ষকের জন্য।’
পরবর্তীতে গত ২৩ মার্চ (শনিবার) করা ফেসবুকে অপর এক পোস্টে শিক্ষকের নাম উল্লেখপূর্বক তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘ওনার নাম সাজু সাহা.. অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র।’
অভিযুক্ত শিক্ষকের পূর্বের আচরণের কথা উল্লেখ করে ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারিনি উনি এই ধরনের কাজ করতে পারেন.. এত অমায়িক, এত ভালো একটা আচরণ! আমার খারাপ সময়ে আমাকে এত সাপোর্ট দেওয়া। বুঝতে এত দেরি করে ফেলেছি যে, উনি আসলেই মুখোশধারী। তিনি আমাকে ডিরেক্টলি বলছেন, আমি ভুল মানুষকে চুজ করেছি। আমি ভেবেছিলাম তুমি লিবারেল। তুমি হুক-আপ কালচারে বিশ্বাস কর.. কিন্তু তুমি দেখি কনজারভেটিভ।’ ... উনি মেসেজ ডিলিট করেছেন। আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে কল দিতেন, আর এতে আমি কিছুই নাকি প্রমাণ করতে পারবো না। উনি শুধু বলেছেন, ওনার হেল্প লাগবে দেশের বাইরে এমবিএ করা নিয়ে। তিনি আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য রেস্টুরেন্টে পা পর্যন্ত ধরতে চেয়েছিলেন। এসব অত্যাচারে কারণে আমি ঠিকমতো ক্লাস পর্যন্ত করতে পারিনি।’’
অভিযোগকারী শিক্ষার্থী তার ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, সাজু সাহার জন্য আমি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করতে পারিনি। অন্যসব বিষয়ের চেয়ে ওনার বিরক্ত করা ছিল অন্যতম প্রধান কারন। স্নাতকের শেষ সেমিস্টার থেকেই আমাকে হয়রানি শুরু করে। যে কারণে শেষ সেমিস্টারে আমার ফলাফলও ভালো হয়নি। আমার কাছে সব তথ্য-প্রমাণ আছে। সময়মতো আমি সব উপস্থাপন করব।
এদিকে ছাত্রীর অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার বিষয়ে সাজু সাহা বলেন, অভিযোগকারী সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য প্রচার করে আমার মানহানি করেছে। আমি তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রক্টর বরাবর অভিযোগ করেছি। এর আগে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছিলাম। কিন্তু সে আমার মানহানি করেই যাচ্ছে তাই আদালতে মামলা করেছি। প্রথমে দারুস সালাম থানায় মামলা করতে গেলে সেখান থেকে তারা আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়।
এ বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. আরিফুল হক বলেন, নিপীড়নবিরোধী সেলে পাঠানো অভিযোগপত্রটি আমিও পেয়েছি। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হোক। তাকে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরবর্তীতে বিভাগীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য মনোনীত হয়েছেন সাজু সাহা। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম বোর্ড অফ গভর্ন্যান্স নিয়োগ আটকে দিয়েছে।
এবিষয়ে সিলেকশন বোর্ডের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ‘বিষয়টি আজ বোর্ড অফ গভর্ন্যান্সে উঠেছিল। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। সেখান থেকে এটি আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য।’
মঙ্গলবার, ০২ এপ্রিল ২০২৪
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজু সাহার বিরুদ্ধে সাবেক এক নারী শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির অভিযোগ দায়ের করায় পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ৫০ লাখ টাকার মানহানির মামলা করেছেন অভিযুক্ত ঐ শিক্ষক।
সোমবার (১ এপ্রিল) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেল বরাবর পাঠানো এক মেইলে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। অপরদিকে এদিন দুপুরেই ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করেন অধ্যাপক সাজু সাহা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সেলের প্রধান অধ্যাপক জেবউননেছা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাজু সাহা ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। তিনি রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এবং বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নির্বাহী সদস্য।
এর আগে, ১৫ মার্চ (শুক্রবার) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহনন দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করলে তারই প্রেক্ষিতে মূলত ঘটনার সুত্রপাত হয়।
গত ১৯ মার্চ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নিজ ফেসবুক ওয়ালে জবি শিক্ষার্থীর আত্মহননের খবর শেয়ার করে লেখেন, ‘এটা অহরহ হয়! আমার নিজেরও একজনের নাম বলে দিতে খুব ইচ্ছা করছে...। কী বিভৎস গেছে আমার সময়গুলো, একজন শিক্ষকের জন্য।’
পরবর্তীতে গত ২৩ মার্চ (শনিবার) করা ফেসবুকে অপর এক পোস্টে শিক্ষকের নাম উল্লেখপূর্বক তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘ওনার নাম সাজু সাহা.. অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র।’
অভিযুক্ত শিক্ষকের পূর্বের আচরণের কথা উল্লেখ করে ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারিনি উনি এই ধরনের কাজ করতে পারেন.. এত অমায়িক, এত ভালো একটা আচরণ! আমার খারাপ সময়ে আমাকে এত সাপোর্ট দেওয়া। বুঝতে এত দেরি করে ফেলেছি যে, উনি আসলেই মুখোশধারী। তিনি আমাকে ডিরেক্টলি বলছেন, আমি ভুল মানুষকে চুজ করেছি। আমি ভেবেছিলাম তুমি লিবারেল। তুমি হুক-আপ কালচারে বিশ্বাস কর.. কিন্তু তুমি দেখি কনজারভেটিভ।’ ... উনি মেসেজ ডিলিট করেছেন। আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে কল দিতেন, আর এতে আমি কিছুই নাকি প্রমাণ করতে পারবো না। উনি শুধু বলেছেন, ওনার হেল্প লাগবে দেশের বাইরে এমবিএ করা নিয়ে। তিনি আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য রেস্টুরেন্টে পা পর্যন্ত ধরতে চেয়েছিলেন। এসব অত্যাচারে কারণে আমি ঠিকমতো ক্লাস পর্যন্ত করতে পারিনি।’’
অভিযোগকারী শিক্ষার্থী তার ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, সাজু সাহার জন্য আমি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করতে পারিনি। অন্যসব বিষয়ের চেয়ে ওনার বিরক্ত করা ছিল অন্যতম প্রধান কারন। স্নাতকের শেষ সেমিস্টার থেকেই আমাকে হয়রানি শুরু করে। যে কারণে শেষ সেমিস্টারে আমার ফলাফলও ভালো হয়নি। আমার কাছে সব তথ্য-প্রমাণ আছে। সময়মতো আমি সব উপস্থাপন করব।
এদিকে ছাত্রীর অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার বিষয়ে সাজু সাহা বলেন, অভিযোগকারী সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য প্রচার করে আমার মানহানি করেছে। আমি তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রক্টর বরাবর অভিযোগ করেছি। এর আগে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছিলাম। কিন্তু সে আমার মানহানি করেই যাচ্ছে তাই আদালতে মামলা করেছি। প্রথমে দারুস সালাম থানায় মামলা করতে গেলে সেখান থেকে তারা আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়।
এ বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. আরিফুল হক বলেন, নিপীড়নবিরোধী সেলে পাঠানো অভিযোগপত্রটি আমিও পেয়েছি। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হোক। তাকে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরবর্তীতে বিভাগীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য মনোনীত হয়েছেন সাজু সাহা। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম বোর্ড অফ গভর্ন্যান্স নিয়োগ আটকে দিয়েছে।
এবিষয়ে সিলেকশন বোর্ডের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ‘বিষয়টি আজ বোর্ড অফ গভর্ন্যান্সে উঠেছিল। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। সেখান থেকে এটি আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য।’