রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মা হোসাইন সাতারের অনুশীলনের সময় প্রশিক্ষকের সামনেই ডুবে গিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে উপস্থিত ছিলেন দুই প্রশিক্ষক। অথচ কেউ টেরই পাননি। যখন খেয়াল করেছেন ততক্ষণে প্রায় ২০ মিনিট পেরিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক তদন্ত তাই বলছে।
সেদিন প্রশিক্ষকদের চোখ ছিলো না পুলের দিকে, ব্যস্ত ছিলেন নিজেদের গল্পে। পুলের নিচে নিঃশ্বাসের জন্য লড়ছিলেন সায়মা— উপরে ছিলো নিস্তব্ধতা।
বিষয়টি বুঝতে পেরে যখন তাকে উদ্ধার করা হয়, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বুক চাপ দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করেন, কিন্তু সায়মার মুখ দিয়ে বের হয় শুধু পানি নয়, খাবারও। দ্রুত নেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে, সেখানকার চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পাঠান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
কিন্তু সেখানেও যেন চলেছে একের পর এক অব্যবস্থাপনা। রওনা দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সে ছিলো না অক্সিজেন সিলিন্ডার। পরে জরুরি বিভাগ থেকে এনে তাও দেখা যায় প্রায় খালি। সিলিন্ডার বদলে গাড়ি তৈরি হতেও কেটে যায় আরও আট মিনিট— যেখানে প্রতিটি সেকেন্ড ছিলো সায়মার জীবনের লড়াই।
এই ভয়াবহ অবহেলার চিত্রই উঠে এসেছে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে। সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, “দুইজন প্রশিক্ষক পুলের পাশে ছিলেন, কিন্তু তারা গল্পে মগ্ন ছিলেন। একজন শিক্ষার্থী পানির নিচে ডুবে গেলেও ২০ মিনিট পর্যন্ত তারা বুঝতেই পারেননি। এটা নিঃসন্দেহে দায়িত্বে গাফিলতি।”
তিনি আরও জানান, সায়মা কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতা দলের সদস্য ছিলেন না। তবুও তিনি অনুশীলনে অংশ নিয়েছিলেন, আর মন্নুজান হলে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক প্রশিক্ষকের পদও শূন্য ছিলো।
সায়মার পরিবারের বরাত দিয়ে আহ্বায়ক বলেন, “সায়মার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিলো, ইনহেলার ব্যবহার করতেন তিনি। কিন্তু সেদিন তার অসুস্থতা বা ঝুঁকি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।”
তদন্ত কমিটি প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি সুইমিংপুল তদারকির জন্য স্থায়ীভাবে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগেরও প্রস্তাব দিয়েছে।
জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থার বিশৃঙ্খল নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা।
তিনি বলেন, “জরুরি বিভাগে থাকা নার্সদের অভিজ্ঞতার ঘাটতির কারণে সিলিন্ডারে অক্সিজেন ছিল কি না তা বুঝতে সময় নষ্ট হয়েছে। ফলে সেখানেও মূল্যবান সময় হারিয়ে যায়।”
*শিক্ষক হেনস্তার অভিযোগ: বিক্ষোভ, ক্লাস বর্জন, অনশন*
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময় নতুন এক নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল ইসলামকে হেনস্তার অভিযোগে সিনেট ভবনেই স্লোগান শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে তারা প্রশাসন ভবন তালাবদ্ধ করে বিক্ষোভে নামে এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে ক্লাস বর্জন ও আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করে।
অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সিনেট ভবনে তাদের শিক্ষককে প্রশ্ন করতে বাধা দেন ও অপমান করেন এই কর্মকর্তারা।
প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের সঙ্গে অধ্যাপক আমিনুল ইসলামের কোনো ধরনের এমন ঘটনা ঘটেনি। তিনি নিজেই ভালো বলতে পারবেন।”
এর আগে ২৬ অক্টোবর বিকেলে সায়মার আকস্মিক মৃত্যু ঘিরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে তারা আন্দোলন শুরু করলে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তদন্তের আশ্বাস দেন। কিন্তু তিনদিন পার হয়ে গেলেও প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভে নামে।
 
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                        ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                           	                                            শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মা হোসাইন সাতারের অনুশীলনের সময় প্রশিক্ষকের সামনেই ডুবে গিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে উপস্থিত ছিলেন দুই প্রশিক্ষক। অথচ কেউ টেরই পাননি। যখন খেয়াল করেছেন ততক্ষণে প্রায় ২০ মিনিট পেরিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক তদন্ত তাই বলছে।
সেদিন প্রশিক্ষকদের চোখ ছিলো না পুলের দিকে, ব্যস্ত ছিলেন নিজেদের গল্পে। পুলের নিচে নিঃশ্বাসের জন্য লড়ছিলেন সায়মা— উপরে ছিলো নিস্তব্ধতা।
বিষয়টি বুঝতে পেরে যখন তাকে উদ্ধার করা হয়, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বুক চাপ দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করেন, কিন্তু সায়মার মুখ দিয়ে বের হয় শুধু পানি নয়, খাবারও। দ্রুত নেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে, সেখানকার চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পাঠান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
কিন্তু সেখানেও যেন চলেছে একের পর এক অব্যবস্থাপনা। রওনা দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সে ছিলো না অক্সিজেন সিলিন্ডার। পরে জরুরি বিভাগ থেকে এনে তাও দেখা যায় প্রায় খালি। সিলিন্ডার বদলে গাড়ি তৈরি হতেও কেটে যায় আরও আট মিনিট— যেখানে প্রতিটি সেকেন্ড ছিলো সায়মার জীবনের লড়াই।
এই ভয়াবহ অবহেলার চিত্রই উঠে এসেছে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে। সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, “দুইজন প্রশিক্ষক পুলের পাশে ছিলেন, কিন্তু তারা গল্পে মগ্ন ছিলেন। একজন শিক্ষার্থী পানির নিচে ডুবে গেলেও ২০ মিনিট পর্যন্ত তারা বুঝতেই পারেননি। এটা নিঃসন্দেহে দায়িত্বে গাফিলতি।”
তিনি আরও জানান, সায়মা কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতা দলের সদস্য ছিলেন না। তবুও তিনি অনুশীলনে অংশ নিয়েছিলেন, আর মন্নুজান হলে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক প্রশিক্ষকের পদও শূন্য ছিলো।
সায়মার পরিবারের বরাত দিয়ে আহ্বায়ক বলেন, “সায়মার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিলো, ইনহেলার ব্যবহার করতেন তিনি। কিন্তু সেদিন তার অসুস্থতা বা ঝুঁকি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।”
তদন্ত কমিটি প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি সুইমিংপুল তদারকির জন্য স্থায়ীভাবে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগেরও প্রস্তাব দিয়েছে।
জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থার বিশৃঙ্খল নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা।
তিনি বলেন, “জরুরি বিভাগে থাকা নার্সদের অভিজ্ঞতার ঘাটতির কারণে সিলিন্ডারে অক্সিজেন ছিল কি না তা বুঝতে সময় নষ্ট হয়েছে। ফলে সেখানেও মূল্যবান সময় হারিয়ে যায়।”
*শিক্ষক হেনস্তার অভিযোগ: বিক্ষোভ, ক্লাস বর্জন, অনশন*
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময় নতুন এক নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল ইসলামকে হেনস্তার অভিযোগে সিনেট ভবনেই স্লোগান শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে তারা প্রশাসন ভবন তালাবদ্ধ করে বিক্ষোভে নামে এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে ক্লাস বর্জন ও আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করে।
অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সিনেট ভবনে তাদের শিক্ষককে প্রশ্ন করতে বাধা দেন ও অপমান করেন এই কর্মকর্তারা।
প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের সঙ্গে অধ্যাপক আমিনুল ইসলামের কোনো ধরনের এমন ঘটনা ঘটেনি। তিনি নিজেই ভালো বলতে পারবেন।”
এর আগে ২৬ অক্টোবর বিকেলে সায়মার আকস্মিক মৃত্যু ঘিরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে তারা আন্দোলন শুরু করলে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তদন্তের আশ্বাস দেন। কিন্তু তিনদিন পার হয়ে গেলেও প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভে নামে।
