রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়ার ধার্মিকপাড়া এলাকায় গ্যারেজে থাকা লন্ডন এক্সপ্রেসের (ভলভো কোচ) বিলাসবহুল ১৪টি এসি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। এটি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা সেটি এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে ঈদের আগে একই কোম্পানির বিলাসবহুল এতগুলো বাসে আগুন লাগা, ঘটনার সময় গ্যারেজে দায়িত্বরত প্রহরী না থাকা, গ্যারেজের পেছনের দিকে আগুন লাগা, এতো বড় ক্ষতির পরেও মালিকপক্ষের কোনো অভিযোগ না করার বিষয়গুলো নানা রকম ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-এটি নাশকতা কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি এর পেছনে কারো সংশ্লিষ্টতা থাকে-তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ১ এপ্রিল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সবাই যখন তারাবির নামাজে ব্যস্ত, তখন প্রায় অন্ধকার ওই গ্যারেজে জ্বলে ওঠে আগুন। এক বা একাধিক বাসে আগুন দেখে থমকে দাঁড়ায় পথচারীরা। কিন্তু সেসময় গ্যারেজ ছিল ফাঁকা। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিটের প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভানো হলেও পুড়ে যায় সবগুলো বাস।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনাবাড়ী থেকে মানিক দিয়া সড়কের পাশে চারদিকে টিনের বেড়া দিয়ে সীমানা দেয়া গ্যারেজের ভেতরে ‘লন্ডন এক্সপ্রেস লিমিটেডের’ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ১৪টি যাত্রীবাহী বাস পার্ক করে রাখা হয়েছিল। আগুনে পেছনের সারির ছয়টি ও মাঝখানের সারির পাঁচটি বাস সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এই দুই সারির সামনে ফটকের সামনে তিনটি গাড়ি পুড়ে গেলেও ১১টির চেয়ে একটু কম পুড়েছে। গ্যারেজের ভেতরে গাড়ির তিনটি ইঞ্জিন ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। টিনের বেড়ার পাশ দিয়ে বৈদ্যুতিক তার পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে গ্যারেজের ভেতরের নিরাপত্তার রুমটি অক্ষত ছিল। সেখানে রান্নার কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল, চুলাসহ বিভিন্ন মালামাল অক্ষত ছিল।
ঘটনার সময় গ্যারেজের ২০০ গজ দূরে বাইতুল আকরাম জামে মসজিদে তারাবিহ নামাজ পড়ছিলেন সালাম পোলট্রি নেটওয়ার্কের কর্মচারী ফয়সাল হোসেন। তিনি বলেন, গ্যারেজের নিরাপত্তা প্রহরীসহ তিনি মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন। গ্যারেজের দক্ষিণ দিকে পেছনে একটি বাসে আগুনে লাগে। আগুন দেখতে পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা এসে গ্যারেজের ফটক তালাবদ্ধ দেখতে পান। পরে তিনিসহ কয়েকজন টিনের বেড়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বাতাসের কারণে আগুন পেছন থেকে একে একে অন্য গাড়িগুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পুড়তে থাকে গ্যারেজে রাখা বাসগুলো। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভান। ততক্ষণে গ্যারেজে রাখা ১৪টি বাস পুড়ে যায়।
ফয়সাল হোসেন আরও বলেন, বাসের গ্যারেজের নিরাপত্তা প্রহরী তার সঙ্গে কিছু পথ এলেও তিনি গ্যারেজের দিকে না এসে কোনাপাড়ার দিকে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে চলে যান। তিনি (নিরাপত্তা প্রহরী) এসে দ্রুত গেট খুলে দিলে আগুন নেভানো সহজ হতো। গত তিন-চার মাস আগে এখানে টিনের বেড়া দিয়ে গ্যারেজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এখানে লন্ডন এক্সপ্রেসের বাস রাখা হতো এবং বাস মেরামতের কারখানাও ছিল।
গ্যারেজের পাশে ৫০ গজ দূরে খোকন মিয়ার চায়ের দোকান। তিনি বলেন, চার মাস আগে এখানে গ্যারেজ করা হয়েছে। গাড়ির চালক, নিরাপত্তা প্রহরী ও মিস্ত্রিরা চার-পাঁচজন প্রায়ই তার দোকানে চা খেতে আসতেন। তারা চা খেয়ে চলে যেতেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে গ্যারেজের ভেতরে থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে তিনি সামনে গিয়ে দেখেন, সেখানে অনেক লোকজন ভিড় করছেন। আগুন লাগার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলে আসে। কিন্তু এর আগেই আগুনে গাড়িগুলো পুড়ে গেছে।
এদিকে আগুন লাগার ঘটনায় ঘটনাস্থলে ওই গ্যারেজের নিরাপত্তা প্রহরীকে পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলে র্যাব-১০, ডেমরা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। রাত ১২টার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ক্রাইম সিনের একটি দল ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসে। এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওহিদুল হক মামুন বলেন, ‘আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিরাপত্তা প্রহরীকে পাইনি। তবে মুঠোফোনে তার সঙ্গে কথা হয়েছিল।’ তিনি জানিয়েছেন, অগ্নিকা-ের সময় তিনি নামাজে ছিলেন। ঘটনাস্থলে আসার কথা বললে পরে তিনি আর আসেননি। ঘটনাস্থলে এসে বাসের উপ-পরিচালক (ডেপুটি ডাইরেক্টর) হিসেবে পরিচয় দেয়া নুরুল ইসলাম পুড়ে যাওয়া বাস দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এদিকে অগ্নি দুর্ঘটনায় লন্ডন এক্সপ্রেসের ১৪টি বাস পুড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক জনাব মো. ছালেহ উদ্দিনকে। ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ঢাকা দক্ষিণের উপ-সহকারী পরিচালক এ.কে.এম শামসুজ্জোহা জানান, আগুন লাগে গ্যারেজের পেছন দিক থেকে। বাতাসের কারণে এক গাড়ি থেকে আরেক গাড়িতে দ্রুত আগুন ছড়ায়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ঘটনাস্থলে ছুটে যায় র্যাব ও পুলিশ। বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইমসিন ইউনিট।
ঘটনাস্থলে যাওয়া র্যাব-১০ এর পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন মাহমুদ জানান, পুরো গ্যারেজের দায়িত্বে ছিল দুইজন নিরাপত্তা প্রহরী। কিন্তু তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন না। এটি নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে এ অগ্নিকাণ্ডের পরও লন্ডন এক্সপ্রেসের মালিকপক্ষ বা নিরাপত্তার প্রহরীদের কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ডিএমপির ডেমরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মধুসূদন দাস বলেন, এটি নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা সেটি আমরা নিশ্চিত নই। নাশকতা হলে সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে। প্রাথমিকভাবে এটিকে নাশকতা বলে মনে হয়নি। আমরা মালিক পক্ষকে ডেকে কথা বলেছি। এ ঘটনার পেছনে কারো ষড়যন্ত্র বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ছিল কিনা জানার চেষ্টা করেছি। মালিক পক্ষ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ দেয়নি। মালিক পক্ষের নুরুল নামে একজন আমাদের কাছে এসেছিলেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় তাদের কোনো অভিযোগ নেই। তবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাশকতার কোনো প্রমাণ পেলে তারা অভিযোগ দায়ের করবেন।
এদিকে আগুনের ঘটনা নাশকতা কিনা তা গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, সোমবার রাতে যে বাসগুলো পুড়েছে, সে বিষয়ে আমাদের কাছে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। তারপরও আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে। এটা স্বাভাবিক ঘটনা নাকি নাশকতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খন্দকার আল মঈন বলেন, আমাদের গোয়েন্দারা ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে, তারা কোনো সন্দেহ করলে সেটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হবে। এটা নাশকতা কিনা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো।
মঙ্গলবার, ০২ এপ্রিল ২০২৪
রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়ার ধার্মিকপাড়া এলাকায় গ্যারেজে থাকা লন্ডন এক্সপ্রেসের (ভলভো কোচ) বিলাসবহুল ১৪টি এসি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। এটি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা সেটি এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে ঈদের আগে একই কোম্পানির বিলাসবহুল এতগুলো বাসে আগুন লাগা, ঘটনার সময় গ্যারেজে দায়িত্বরত প্রহরী না থাকা, গ্যারেজের পেছনের দিকে আগুন লাগা, এতো বড় ক্ষতির পরেও মালিকপক্ষের কোনো অভিযোগ না করার বিষয়গুলো নানা রকম ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-এটি নাশকতা কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি এর পেছনে কারো সংশ্লিষ্টতা থাকে-তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ১ এপ্রিল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সবাই যখন তারাবির নামাজে ব্যস্ত, তখন প্রায় অন্ধকার ওই গ্যারেজে জ্বলে ওঠে আগুন। এক বা একাধিক বাসে আগুন দেখে থমকে দাঁড়ায় পথচারীরা। কিন্তু সেসময় গ্যারেজ ছিল ফাঁকা। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিটের প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভানো হলেও পুড়ে যায় সবগুলো বাস।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনাবাড়ী থেকে মানিক দিয়া সড়কের পাশে চারদিকে টিনের বেড়া দিয়ে সীমানা দেয়া গ্যারেজের ভেতরে ‘লন্ডন এক্সপ্রেস লিমিটেডের’ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ১৪টি যাত্রীবাহী বাস পার্ক করে রাখা হয়েছিল। আগুনে পেছনের সারির ছয়টি ও মাঝখানের সারির পাঁচটি বাস সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এই দুই সারির সামনে ফটকের সামনে তিনটি গাড়ি পুড়ে গেলেও ১১টির চেয়ে একটু কম পুড়েছে। গ্যারেজের ভেতরে গাড়ির তিনটি ইঞ্জিন ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। টিনের বেড়ার পাশ দিয়ে বৈদ্যুতিক তার পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে গ্যারেজের ভেতরের নিরাপত্তার রুমটি অক্ষত ছিল। সেখানে রান্নার কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল, চুলাসহ বিভিন্ন মালামাল অক্ষত ছিল।
ঘটনার সময় গ্যারেজের ২০০ গজ দূরে বাইতুল আকরাম জামে মসজিদে তারাবিহ নামাজ পড়ছিলেন সালাম পোলট্রি নেটওয়ার্কের কর্মচারী ফয়সাল হোসেন। তিনি বলেন, গ্যারেজের নিরাপত্তা প্রহরীসহ তিনি মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন। গ্যারেজের দক্ষিণ দিকে পেছনে একটি বাসে আগুনে লাগে। আগুন দেখতে পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা এসে গ্যারেজের ফটক তালাবদ্ধ দেখতে পান। পরে তিনিসহ কয়েকজন টিনের বেড়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বাতাসের কারণে আগুন পেছন থেকে একে একে অন্য গাড়িগুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পুড়তে থাকে গ্যারেজে রাখা বাসগুলো। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভান। ততক্ষণে গ্যারেজে রাখা ১৪টি বাস পুড়ে যায়।
ফয়সাল হোসেন আরও বলেন, বাসের গ্যারেজের নিরাপত্তা প্রহরী তার সঙ্গে কিছু পথ এলেও তিনি গ্যারেজের দিকে না এসে কোনাপাড়ার দিকে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে চলে যান। তিনি (নিরাপত্তা প্রহরী) এসে দ্রুত গেট খুলে দিলে আগুন নেভানো সহজ হতো। গত তিন-চার মাস আগে এখানে টিনের বেড়া দিয়ে গ্যারেজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এখানে লন্ডন এক্সপ্রেসের বাস রাখা হতো এবং বাস মেরামতের কারখানাও ছিল।
গ্যারেজের পাশে ৫০ গজ দূরে খোকন মিয়ার চায়ের দোকান। তিনি বলেন, চার মাস আগে এখানে গ্যারেজ করা হয়েছে। গাড়ির চালক, নিরাপত্তা প্রহরী ও মিস্ত্রিরা চার-পাঁচজন প্রায়ই তার দোকানে চা খেতে আসতেন। তারা চা খেয়ে চলে যেতেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে গ্যারেজের ভেতরে থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে তিনি সামনে গিয়ে দেখেন, সেখানে অনেক লোকজন ভিড় করছেন। আগুন লাগার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলে আসে। কিন্তু এর আগেই আগুনে গাড়িগুলো পুড়ে গেছে।
এদিকে আগুন লাগার ঘটনায় ঘটনাস্থলে ওই গ্যারেজের নিরাপত্তা প্রহরীকে পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলে র্যাব-১০, ডেমরা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। রাত ১২টার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ক্রাইম সিনের একটি দল ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসে। এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওহিদুল হক মামুন বলেন, ‘আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিরাপত্তা প্রহরীকে পাইনি। তবে মুঠোফোনে তার সঙ্গে কথা হয়েছিল।’ তিনি জানিয়েছেন, অগ্নিকা-ের সময় তিনি নামাজে ছিলেন। ঘটনাস্থলে আসার কথা বললে পরে তিনি আর আসেননি। ঘটনাস্থলে এসে বাসের উপ-পরিচালক (ডেপুটি ডাইরেক্টর) হিসেবে পরিচয় দেয়া নুরুল ইসলাম পুড়ে যাওয়া বাস দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এদিকে অগ্নি দুর্ঘটনায় লন্ডন এক্সপ্রেসের ১৪টি বাস পুড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক জনাব মো. ছালেহ উদ্দিনকে। ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ঢাকা দক্ষিণের উপ-সহকারী পরিচালক এ.কে.এম শামসুজ্জোহা জানান, আগুন লাগে গ্যারেজের পেছন দিক থেকে। বাতাসের কারণে এক গাড়ি থেকে আরেক গাড়িতে দ্রুত আগুন ছড়ায়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ঘটনাস্থলে ছুটে যায় র্যাব ও পুলিশ। বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইমসিন ইউনিট।
ঘটনাস্থলে যাওয়া র্যাব-১০ এর পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন মাহমুদ জানান, পুরো গ্যারেজের দায়িত্বে ছিল দুইজন নিরাপত্তা প্রহরী। কিন্তু তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন না। এটি নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে এ অগ্নিকাণ্ডের পরও লন্ডন এক্সপ্রেসের মালিকপক্ষ বা নিরাপত্তার প্রহরীদের কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ডিএমপির ডেমরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মধুসূদন দাস বলেন, এটি নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা সেটি আমরা নিশ্চিত নই। নাশকতা হলে সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে। প্রাথমিকভাবে এটিকে নাশকতা বলে মনে হয়নি। আমরা মালিক পক্ষকে ডেকে কথা বলেছি। এ ঘটনার পেছনে কারো ষড়যন্ত্র বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ছিল কিনা জানার চেষ্টা করেছি। মালিক পক্ষ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ দেয়নি। মালিক পক্ষের নুরুল নামে একজন আমাদের কাছে এসেছিলেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় তাদের কোনো অভিযোগ নেই। তবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাশকতার কোনো প্রমাণ পেলে তারা অভিযোগ দায়ের করবেন।
এদিকে আগুনের ঘটনা নাশকতা কিনা তা গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, সোমবার রাতে যে বাসগুলো পুড়েছে, সে বিষয়ে আমাদের কাছে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। তারপরও আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে। এটা স্বাভাবিক ঘটনা নাকি নাশকতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খন্দকার আল মঈন বলেন, আমাদের গোয়েন্দারা ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে, তারা কোনো সন্দেহ করলে সেটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হবে। এটা নাশকতা কিনা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো।