বারবার আগুন, কোন প্রতিকার নেই
চকবাজারে প্লাস্টিক কারখানা ও গোডাউনের আগুন নিচতলার একটি হোটেলের ৬ কর্মচারীর মৃত্যুর পর ফের আলোচনায় এসেছে পুরান ঢাকার অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি। পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এখনও শত শত প্লাস্টিক কারখানা, গোডাউন দৃশ্যমান। এসব গোডাউন ও কারখানা আদৌ সরিয়ে নেয়া হবে কি-না তা কেউ বলতে পারছে না। কিন্তু কিছুদিন পর পরই পুরান ঢাকায় আগুনে প্রাণহানী ঘটছে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, পুরান ঢাকায় যেভাবে কেমিক্যাল এবং প্লাস্টিকের কারখানা, গোডাউন রয়েছে তাতে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে পুরান ঢাকা। চকবাজার, লালবাগ, কোতয়ালি, বংশাল, কামারাঙ্গিরচর, সূত্রাপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় এখনও হাজার হাজার গোডাউন কারখানা দৃশ্যমান। এসব এলাকা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। একটি ভবনের সঙ্গে আরেকটি ভবন লাগোয়া। দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ ভবনগুলোতে বসতবাড়ির সঙ্গে রয়েছে কেমিক্যাল ও প্লাস্টিকের গোডাউন বা কারখানা। এসব এলাকায় রাস্তাঘাট অত্যন্ত সরু। কোন আগুন লাগলে অথবা ভবন ধসের ঘটনা ঘটলে উদ্ধার কার্যক্রম কঠিন হয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেনটেইন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, পুরান ঢাকার অনেক ভবনেই যত্রতত্র এ রকম বিভিন্ন ধরনের কারখানা গড়ে উঠেছে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একদিকে ঘিঞ্জি এলাকা অন্যদিকে এসব কারখানায় যখন-তখন যেকোন ঘটনা ঘটে যেতে পারে। পাশাপাশি অনেক ভবনে মানুষ বাস করছেন। তাদের জন্যই ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, পুরান ঢাকায় অনেক প্লাস্টিকের কারখানা আছে। এগুলো সব অনিরাপদ। কোন ভবনেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। ভবনগুলো অনেক নাজুক।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালের ৩ জুন রাতে পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকায় ভয়াবহ ওই আগুনে প্রাণ হারান ১২৭ জন। ওই ঘটনায় দগ্ধ হন দুই শতাধিক মানুষ। এত বড় ট্র্যাজেডির ঘটনায় তখন মামলা পর্যন্তও হয়নি। বিভিন্ন তদন্ত কমিটি রাসায়নিকের গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত বললেও সেই গুদাম মালিককে আইনের মুখোমুখি হতে হয়নি। সুপারিশ অনুযায়ী গত ১২ বছরেও পুরান ঢাকা থেকে সরেনি রাসায়নিকের গুদাম। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকার আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশন নামের গার্মেন্টে লাগা আগুনে প্রাণ হারান ১১৭ শ্রমিক। দগ্ধ ও আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। ওই ঘটনায় মামলা হলেও গত ১০ বছরেও বিচার শেষ হয়নি। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ফের ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকা-। রাসায়নিকের গুদাম থেকে লাগা ওই আগুনে প্রাণ হারান ৭১ ব্যক্তি। ওই ঘটনায় দায়ের মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে দুই বছর পর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দিলেও এখনও বিচার কাজ শেষ হয়নি। ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় প্রাইম প্লাস্টিক কারখানার ভয়াবহ আগুনে ১৭ শ্রমিক নিহত হন। ওই ঘটনাতেও বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি দায়ীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত এক যুগে যত বড় বড় আগুনের ঘটনা ঘটেছে তার অধিকাংশই পুরান ঢাকায়। হয় কেমিক্যাল গোডাউন বা কারখানা অথবা প্লাস্টিক কারখানা বা গোডাউন। বার বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটলেও এসব অঞ্চলে দাহ্য পদার্থের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গোডাউন, কারখান সরছে না। আগুন লাগার পর তদন্ত কমিটি গঠন হয়, প্রতিবেদন দেয়া হয়। কিন্তু সেই প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন আর হয় না।
নিমতলী, চুড়িহাট্টার আগুনে প্রাণহানী হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবার এবং দগ্ধ হয়ে যারা এখনও বেঁচে আছেন তাদের অনেকেই এখনও কষ্টের জীবন কাটাচ্ছেন অনেকেই। ওইসব আগুন কিসের থেকে সৃষ্ট প্রথমে টের না পাওয়া গেলেও পরে ফায়ার সার্ভিসের তদন্তে বেরিয়ে আগে অবৈধ কেমিক্যাল মজুদ, দাহ্য পদার্থ, অবৈধ প্লাস্টিক কারখানা বা গোডাউনে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুনের ভয়াবহতা ও এত প্রাণহাণী। এরপর এ নিয়ে গঠিত হয় একাধিক তদন্ত কমিটি। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেইসব ঘটনায় দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নিমতলী বা চুড়িহাট্টায় আগুনের মতো অবৈধ কেমিক্যাল বা প্লাস্টিক কারখানা গোডাউনের কারণে একাধিক অগ্নিকা- ও প্রাণহানীর ঘটনা ঘটলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নজির দেখা যায়নি। এসব আগুনের পর পুরান ঢাকা থেকে সব ধরনের কেমিক্যাল বা প্লাস্টিকের গোডাউন বা কারখানা সরিয়ে নেয়ার যে নির্দেশনা ছিল তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
বেশিরভাগ ব্যবসায়ী শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই কেমিক্যাল ব্যবসা প্লাস্টিক কারখান গড়ে তুলেছেন পুরান ঢাকায়। এসব কারখানা বা গোডাউনের মালিকরা আইনের বাধ্যবাধকতা মানছেন না। বিস্ফোরক অ্যাক্ট-১৮৮৪ এবং সিলিন্ডার বিধিমালা-১৯৯১ তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠছে এসব অবৈধ কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক কারখানা গোডাউন। অধিকাংশেরই বৈধ কাগজপত্র ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন নেই। বিস্ফোরক অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন ও পুলিশের সামনেই গড়ে উঠে প্লাস্টিক কেমিক্যালের কারখানা, গোডাউন।
বারবার আগুন, কোন প্রতিকার নেই
সোমবার, ১৫ আগস্ট ২০২২
চকবাজারে প্লাস্টিক কারখানা ও গোডাউনের আগুন নিচতলার একটি হোটেলের ৬ কর্মচারীর মৃত্যুর পর ফের আলোচনায় এসেছে পুরান ঢাকার অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি। পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এখনও শত শত প্লাস্টিক কারখানা, গোডাউন দৃশ্যমান। এসব গোডাউন ও কারখানা আদৌ সরিয়ে নেয়া হবে কি-না তা কেউ বলতে পারছে না। কিন্তু কিছুদিন পর পরই পুরান ঢাকায় আগুনে প্রাণহানী ঘটছে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, পুরান ঢাকায় যেভাবে কেমিক্যাল এবং প্লাস্টিকের কারখানা, গোডাউন রয়েছে তাতে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে পুরান ঢাকা। চকবাজার, লালবাগ, কোতয়ালি, বংশাল, কামারাঙ্গিরচর, সূত্রাপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় এখনও হাজার হাজার গোডাউন কারখানা দৃশ্যমান। এসব এলাকা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। একটি ভবনের সঙ্গে আরেকটি ভবন লাগোয়া। দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ ভবনগুলোতে বসতবাড়ির সঙ্গে রয়েছে কেমিক্যাল ও প্লাস্টিকের গোডাউন বা কারখানা। এসব এলাকায় রাস্তাঘাট অত্যন্ত সরু। কোন আগুন লাগলে অথবা ভবন ধসের ঘটনা ঘটলে উদ্ধার কার্যক্রম কঠিন হয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেনটেইন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, পুরান ঢাকার অনেক ভবনেই যত্রতত্র এ রকম বিভিন্ন ধরনের কারখানা গড়ে উঠেছে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একদিকে ঘিঞ্জি এলাকা অন্যদিকে এসব কারখানায় যখন-তখন যেকোন ঘটনা ঘটে যেতে পারে। পাশাপাশি অনেক ভবনে মানুষ বাস করছেন। তাদের জন্যই ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, পুরান ঢাকায় অনেক প্লাস্টিকের কারখানা আছে। এগুলো সব অনিরাপদ। কোন ভবনেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। ভবনগুলো অনেক নাজুক।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালের ৩ জুন রাতে পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকায় ভয়াবহ ওই আগুনে প্রাণ হারান ১২৭ জন। ওই ঘটনায় দগ্ধ হন দুই শতাধিক মানুষ। এত বড় ট্র্যাজেডির ঘটনায় তখন মামলা পর্যন্তও হয়নি। বিভিন্ন তদন্ত কমিটি রাসায়নিকের গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত বললেও সেই গুদাম মালিককে আইনের মুখোমুখি হতে হয়নি। সুপারিশ অনুযায়ী গত ১২ বছরেও পুরান ঢাকা থেকে সরেনি রাসায়নিকের গুদাম। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকার আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশন নামের গার্মেন্টে লাগা আগুনে প্রাণ হারান ১১৭ শ্রমিক। দগ্ধ ও আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। ওই ঘটনায় মামলা হলেও গত ১০ বছরেও বিচার শেষ হয়নি। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ফের ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকা-। রাসায়নিকের গুদাম থেকে লাগা ওই আগুনে প্রাণ হারান ৭১ ব্যক্তি। ওই ঘটনায় দায়ের মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে দুই বছর পর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দিলেও এখনও বিচার কাজ শেষ হয়নি। ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় প্রাইম প্লাস্টিক কারখানার ভয়াবহ আগুনে ১৭ শ্রমিক নিহত হন। ওই ঘটনাতেও বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি দায়ীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত এক যুগে যত বড় বড় আগুনের ঘটনা ঘটেছে তার অধিকাংশই পুরান ঢাকায়। হয় কেমিক্যাল গোডাউন বা কারখানা অথবা প্লাস্টিক কারখানা বা গোডাউন। বার বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটলেও এসব অঞ্চলে দাহ্য পদার্থের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গোডাউন, কারখান সরছে না। আগুন লাগার পর তদন্ত কমিটি গঠন হয়, প্রতিবেদন দেয়া হয়। কিন্তু সেই প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন আর হয় না।
নিমতলী, চুড়িহাট্টার আগুনে প্রাণহানী হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবার এবং দগ্ধ হয়ে যারা এখনও বেঁচে আছেন তাদের অনেকেই এখনও কষ্টের জীবন কাটাচ্ছেন অনেকেই। ওইসব আগুন কিসের থেকে সৃষ্ট প্রথমে টের না পাওয়া গেলেও পরে ফায়ার সার্ভিসের তদন্তে বেরিয়ে আগে অবৈধ কেমিক্যাল মজুদ, দাহ্য পদার্থ, অবৈধ প্লাস্টিক কারখানা বা গোডাউনে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুনের ভয়াবহতা ও এত প্রাণহাণী। এরপর এ নিয়ে গঠিত হয় একাধিক তদন্ত কমিটি। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেইসব ঘটনায় দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নিমতলী বা চুড়িহাট্টায় আগুনের মতো অবৈধ কেমিক্যাল বা প্লাস্টিক কারখানা গোডাউনের কারণে একাধিক অগ্নিকা- ও প্রাণহানীর ঘটনা ঘটলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নজির দেখা যায়নি। এসব আগুনের পর পুরান ঢাকা থেকে সব ধরনের কেমিক্যাল বা প্লাস্টিকের গোডাউন বা কারখানা সরিয়ে নেয়ার যে নির্দেশনা ছিল তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
বেশিরভাগ ব্যবসায়ী শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই কেমিক্যাল ব্যবসা প্লাস্টিক কারখান গড়ে তুলেছেন পুরান ঢাকায়। এসব কারখানা বা গোডাউনের মালিকরা আইনের বাধ্যবাধকতা মানছেন না। বিস্ফোরক অ্যাক্ট-১৮৮৪ এবং সিলিন্ডার বিধিমালা-১৯৯১ তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠছে এসব অবৈধ কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক কারখানা গোডাউন। অধিকাংশেরই বৈধ কাগজপত্র ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন নেই। বিস্ফোরক অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন ও পুলিশের সামনেই গড়ে উঠে প্লাস্টিক কেমিক্যালের কারখানা, গোডাউন।