বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাবেক উমেদার (চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী) আব্দুল মান্নান তালুকদারসহ আরও ৪ জনের বিরুদ্ধে ২৪৫ কোটি টাকার মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। বৃহস্পতিবার,(০৬ নভেম্বর ২০২৫) সিআইডির প্রধান কার্যালয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার অন্য অভিযুক্তরা হলো- আনিসুর রহমান, সালেহা বেগম, জেসমিন নাহার (সাবেক উমেদার আব্দুল মান্নান তালুকদারের স্ত্রী)।
সন্দেহভাজন অভিযুক্তরা নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য উচ্চ মুনাফা দেয়ার লোভ দেখিয়ে ১৯ হাজার ৯৬৭ জন সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ২৪৫ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আমানত নিয়ে অন্যত্র স্থানান্তর সংক্রান্ত মানিলন্ডারিং অনুসন্ধানের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।
সিআইডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রাক্তন উমেদার ( চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী) আব্দুল মান্নান তালুকদার ১৯৮৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এমএলএসঅএস পদে চাকরি করতো। ২০১০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। চাকরিরত অবস্থাতেই জমি কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।
ডিসি অফিসে চাকরির সুবাধে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। জায়গা জমির বিষয়ে তার অগাধ জ্ঞান ছিল। অবসর গ্রহণের পর সে ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই স্লোগানে ‘নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’ নামে একটি আর্থিক লেনদেন প্রতিষ্ঠান চালু করে।
প্রতিষ্ঠানটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অ্যান্ড ফার্মস-এর ঢাকা কার্যালয় হতে নিবন্ধিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার ধরন ছিল রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ও জমি ক্রয়-বিক্রয় এবং এর মালিকানা স্বত্ব ছিল মাত্র কয়েকজন ব্যক্তি কেন্দ্রিক। তবে উক্ত প্রতিষ্ঠানের শতকরা ৯৫ ভাগ শেয়ারের মালিক আব্দুল মান্নান তালুকদার ও তার পরিবার এবং মাত্র ৫ ভাগ শেয়ারের মালিক মামলার দুই নম্বর অভিযুক্ত আনিসুর রহমান।
নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে আমানতকারীদের অর্থের নিশ্চয়তাসহ সুদমুক্ত হালাল ব্যসার মাধ্যমে লাভবান হওয়ার বিষয়ে প্রচারণা চালানো হয়। এই প্রচারণার আলোকে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লি.-এ বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের ৫ হাজার হতে সর্বোচ্চ যে কোনো পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করার মাধ্যমে ৪-৫ বছরের বিনিয়োগকৃত অর্থ দ্বিগুন করার নিশ্চয়তা দেয়া হয়।
কোম্পানির মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন এর শর্তানুযায়ী শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ না করে উচ্চ মুনাফা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সূচনা লগ্ন থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে ১৯ হাজার ৯৬৭ জন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২৪৫ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আমানত গ্রহণ করেছে।
পরবর্তীতে অভিযুক্ত আব্দুল মান্নান তালুকদার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ হতে সংগৃহীত অর্থের মধ্য থেকে মোট ৬৬ কোটি ২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা তারই মালিকানাধীন সাবিল গ্রুপের ৬টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন।
অর্থ স্থানান্তর সংক্রান্ত সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- এ্যাজাক্স জুট মিলস লিমিটেড-মীরের ডাঙ্গা, ফুলবাড়ি গেইট-খুলনা, সাবিল ড্রেজিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড-বাগেরহাট, সাবিল জেনারেল হাসপাতাল-পিরোজপুর, সাবিল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প-বাগেরহাট, সাবিল ল প্লাজা ও সাবিল মৎস্য প্রকল্প-বাগেরহাট। বাকি অর্থ নামে বেনামে অন্য প্রতিষ্ঠান সমূহে স্থানান্তর করেছে।
প্রতারণার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২৪৫ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা নিজ মালিকানাধীন অন্য প্রতিষ্ঠানে লিজের নামে স্থানান্তর করেছে। প্রতারণার ঘটনা প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় সিআইডি বাদী হয়ে আব্দুল মান্নানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে বাগেরহাট সদর থানায় মামলা দায়ের করেছে। মামলা নম্বর-৮। তারিখ-৫/১১/২৫।
বর্তমানে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট পরিচালনা করছে। অপরাধের আরও পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত আছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাবেক উমেদার (চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী) আব্দুল মান্নান তালুকদারসহ আরও ৪ জনের বিরুদ্ধে ২৪৫ কোটি টাকার মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। বৃহস্পতিবার,(০৬ নভেম্বর ২০২৫) সিআইডির প্রধান কার্যালয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার অন্য অভিযুক্তরা হলো- আনিসুর রহমান, সালেহা বেগম, জেসমিন নাহার (সাবেক উমেদার আব্দুল মান্নান তালুকদারের স্ত্রী)।
সন্দেহভাজন অভিযুক্তরা নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য উচ্চ মুনাফা দেয়ার লোভ দেখিয়ে ১৯ হাজার ৯৬৭ জন সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ২৪৫ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আমানত নিয়ে অন্যত্র স্থানান্তর সংক্রান্ত মানিলন্ডারিং অনুসন্ধানের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।
সিআইডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রাক্তন উমেদার ( চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী) আব্দুল মান্নান তালুকদার ১৯৮৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এমএলএসঅএস পদে চাকরি করতো। ২০১০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। চাকরিরত অবস্থাতেই জমি কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।
ডিসি অফিসে চাকরির সুবাধে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। জায়গা জমির বিষয়ে তার অগাধ জ্ঞান ছিল। অবসর গ্রহণের পর সে ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই স্লোগানে ‘নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’ নামে একটি আর্থিক লেনদেন প্রতিষ্ঠান চালু করে।
প্রতিষ্ঠানটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অ্যান্ড ফার্মস-এর ঢাকা কার্যালয় হতে নিবন্ধিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার ধরন ছিল রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ও জমি ক্রয়-বিক্রয় এবং এর মালিকানা স্বত্ব ছিল মাত্র কয়েকজন ব্যক্তি কেন্দ্রিক। তবে উক্ত প্রতিষ্ঠানের শতকরা ৯৫ ভাগ শেয়ারের মালিক আব্দুল মান্নান তালুকদার ও তার পরিবার এবং মাত্র ৫ ভাগ শেয়ারের মালিক মামলার দুই নম্বর অভিযুক্ত আনিসুর রহমান।
নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে আমানতকারীদের অর্থের নিশ্চয়তাসহ সুদমুক্ত হালাল ব্যসার মাধ্যমে লাভবান হওয়ার বিষয়ে প্রচারণা চালানো হয়। এই প্রচারণার আলোকে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লি.-এ বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের ৫ হাজার হতে সর্বোচ্চ যে কোনো পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করার মাধ্যমে ৪-৫ বছরের বিনিয়োগকৃত অর্থ দ্বিগুন করার নিশ্চয়তা দেয়া হয়।
কোম্পানির মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন এর শর্তানুযায়ী শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ না করে উচ্চ মুনাফা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সূচনা লগ্ন থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে ১৯ হাজার ৯৬৭ জন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২৪৫ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আমানত গ্রহণ করেছে।
পরবর্তীতে অভিযুক্ত আব্দুল মান্নান তালুকদার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ হতে সংগৃহীত অর্থের মধ্য থেকে মোট ৬৬ কোটি ২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা তারই মালিকানাধীন সাবিল গ্রুপের ৬টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন।
অর্থ স্থানান্তর সংক্রান্ত সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- এ্যাজাক্স জুট মিলস লিমিটেড-মীরের ডাঙ্গা, ফুলবাড়ি গেইট-খুলনা, সাবিল ড্রেজিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড-বাগেরহাট, সাবিল জেনারেল হাসপাতাল-পিরোজপুর, সাবিল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প-বাগেরহাট, সাবিল ল প্লাজা ও সাবিল মৎস্য প্রকল্প-বাগেরহাট। বাকি অর্থ নামে বেনামে অন্য প্রতিষ্ঠান সমূহে স্থানান্তর করেছে।
প্রতারণার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২৪৫ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা নিজ মালিকানাধীন অন্য প্রতিষ্ঠানে লিজের নামে স্থানান্তর করেছে। প্রতারণার ঘটনা প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় সিআইডি বাদী হয়ে আব্দুল মান্নানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে বাগেরহাট সদর থানায় মামলা দায়ের করেছে। মামলা নম্বর-৮। তারিখ-৫/১১/২৫।
বর্তমানে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট পরিচালনা করছে। অপরাধের আরও পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত আছে।